অধ্যায়২
গিলক্রিস্ট আর হিন্দুস্তানির সংজ্ঞা
হিন্দুস্থানির তিনটি বাচনিক স্তর-আঙ্গিকের কথা বলেছেন গিলক্রিস্ট – হাইকোর্ট ফারসি
আঙ্গিক, মধ্যম বা জেনুইন হিন্দুস্থানি আঙ্গিক এবং অপকৃষ্ট(ভালগার) হিন্দৌভি।
প্রথম আঙ্গিকের উদাহরণ সৌদা, বালী, মীর দর্দ এবং অন্যান্য কবির কবিতায়। তিনি
লিখলেন, এটি আড়ম্বরপূর্ণ এবং আঙ্গিক সর্বস্ব সাহিত্যিক এবং রাজনীতির ভাষা। এতে
বিপুল আরবি আর ফারসির মিশেল রয়েছে। দ্বিতীয় স্তরের যে ভাষাকে তিনি আসল
হিন্দুস্থানী বলতে চাইলেন, সেটি হল জনগণের ভাষা এবং এটি পাওয়া যায় মিস্কিনের এলিজিতে
বা সৌদার ব্যঙ্গে আর যুদ্ধ সংক্রান্ত লেখালিখির অনুবাদে। তৃতীয়স্তরের অপকৃষ্ট হিন্দৌভিটির
উদাহরণ হল ফস্টারের অনুদিত রেগুলেশনস অব গভর্ন্মমেন্ট... অধিকাংশ হিন্দুস্থানী
লেখালিখি নাগরি লিপিতেই হয়ে থাকে, আর এই ভাষাটা বলে হিন্দু ঘরের নিম্নশ্রেণীর
চাকবাকরেরা আর হিন্দুস্থানের চাষাভুষোরা।
গিলক্রিস্ট ভালভাবে জানতেন তিনি যে ভাষাটি নিয়ে আলোচনা করছেন তা ক্ষণস্থায়ী,
আলোছায়ায় ভরা এবং অস্থিরতায় ভরা। তিনি মনে করছেন, তার কাজ আরও কঠিন করেদিয়েছিল হিন্দু
মুসলমান নির্বিশেষে যারা পেশাদারভাবে ভাষাকে ব্যবহার করতেন, তারা, এবং যাদের কাজে
জ্ঞান মানেই অকারণ পণ্ডিতিপনা ... ইন আ আকন্ট্রি হয়ার পেদান্ট্রি ইজ এস্টিমড [এজ] দ্য
টাচস্টোন অব লার্নিং, দ্য লার্নেড মুসলমান গ্লোরিজ ইন হিজ আরবিক এন্ড পার্সিয়ান
... দ্য হিন্দু ইজ নো লেস এতাচড টু স্যাংস্কৃট এন্ড হিন্দৌভি।
গিলক্রিস্ট বললেন ভাষার আঙ্গিক নির্নয় করা হবে তার ইতিহাস নির্মান করে। তিনি
বিশ্বাস করতেন, মুসলমানের আসার এবং ছেয়ে যাওয়ার আগে উত্তরভারত জুড়ে একটাই ভাষা ছিল
তার নাম ব্রিজ ভাষা, একটি শুদ্ধ বোলি... ভারতীয় স্বপ্নজগতের ভাষা। তিনি বললেন এই
ভাষাকে মুসলমানেরা নাম দিয়েছিল হিন্দৌভি, হিন্দুদের ভাষা। ভারতীয় ভাষার ইতিহাস
রচনা করে গলক্রিস্ট হিন্দৌভির সঙ্গে ফরাসীদের আক্রমনের আগে স্যাকসন ভাষার রূপের
তুলনা করলেন। স্যাক্সনের মতই হিন্দৌভি আরবি আর ফারসির তোড়ে ভেসে যায়। বারবার
মুসলিম আক্রমনের পর হিন্দৌভি রূপান্তরিত হল নতুন ভাষা হিন্দুস্থানিতে। মুসলমানেরা
এর নাম দল ওর্দুয়ি যা তাদের সেনাবাহিনীর ভাষা আর রেখতু হল তাদের কাব্য কবিতার ভাষা
আর হিন্দি হয়ে উঠল হিন্দুদের দৈনন্দিনের ভাষা।
এই ভাষার একতা সামগ্রিক নাম দিলেন গিলক্রিস্ট, হিন্দুস্থানী, যা হিন্দুস্থানের
ভৌগোলিক সূত্র। অষ্টাদশ শতকে দক্ষিণ এশিয় উপমহাদেশ, বলা ভাল বিন্ধ্যর ওপরে গোটা ভারতবর্ষকে
বোঝাবে। হিন্দুস্থানী শব্দটা ব্যবহার করে গিলক্রিস্ট সে সময়ের হিন্দু আর মুসলমান
উভয়ের কথ্যভাষাকেই বোঝাতে চেয়েছেন, তবে তিনি হিন্দুদের ভাষাকে হিন্দৌভি নয় হিন্দিই
বলার পক্ষপাতী ছিলেন।
গিলক্রিস্টের তত্ত্বে মৃত, পূন্য, হিন্দুদের রহস্যময় ভাষা সংস্কৃতর এই ভাষা ক্ষেত্রে
কোনও ভূমিকা ছিল না। তার তত্ত্বে হিন্দৌভি থেকে সংস্কৃতের উতপত্তি এবং মুসলমানদের
ভারতে আসার আগে এটিই জনগনের ভাষা ছিল। উত্তর ভারতের অন্যান্য যে সব ভাষা তিনি
লক্ষ্য করেন, সেগুক্লি হল বাংলা, রাজপুতি,
পূর্বি (ভোজপুরী)। তিনি মনে করতেন এই ভাষাগুলি হিন্দুস্থানীর থেকে লেখ্য এবং
কথিতভাবে যথেষ্ট ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। ভারতের অন্যান্য ভাষা সম্বন্ধে বললেন
দক্ষিণী, দক্ষিণ ভারতে মুসলমানদের ভাষা, ওডিয়া, মারোয়াড়ি, গুজরাটি, তিলুঙ্গী(তেলুগু)
আর কাশ্মীরী। তার বক্তব্য এগুলির হিন্দৌভি – ব্রিজ ভাষা বা ব্রিজ ভাখা থেকে জন্ম। তারমতে
ভারতে ভাষাগুলি বহুল প্রজাতির প্রায় অন্তহীন তাদের সংখ্যা এবং প্রতিটির স্থানীয়
নাম রয়েছে। দক্ষিণি আর পাঞ্জাবীকে তিনি হিন্দুস্থানীর উপভাষা(ভ্যারাইটি) আর
বাঙ্গাল ভাষাকে হিন্দৌভির সরাসরি উপভাষা ভাবতেন।
তাত্ত্বিকভাবে তিনি মনে করতেন ভারতে তিনটে বৃহৎ দেশিয় ভাষা আছে, যার মধ্যে
দুটি বলা হয় মৌখিকভাবে – হিন্দুস্থানী আর হিন্দৌভি এবং তৃতীয়টা সংস্কৃত – যা
সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে মৃতভাষা, অতীতে হিন্দুরা বিজ্ঞান চর্চা এবং ধর্মীয় কাজ এর
মাধ্যমে করতেন। বিভিন্ন রাজ্যে এই দুই চালু ভাষা নানান ধরণের উপভাষা তৈরি করেছে।
No comments:
Post a Comment