এই সময় উপনিবেশ বাংলায় টিকাকরণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হল। ১৭৬৭ সালে কলকাতা ব্ল্যাকহোল খ্যাত জন জেফানিয়ে হলওয়েল বাংলার টিকাকরণ পদ্ধতির বিশদ বর্ণনা, পেশাদারিত্ব নিয়ে ৪০ পাতার একটি পুস্তিকা লন্ডন থেকে প্রকাশ করে রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানকে দেন। হলওয়েল নিজে প্রশিক্ষিত শল্যচিকিৎসক এবং ১৭৩২ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত বাংলায় কোম্পানির চাকরি করেছেন এবং এক সময় তিনি কোম্পানির অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসকও নির্বাচিত হন। হলওয়েল যে সময় বইটি লেখেন তিনি জানতেন, সে সময় লন্ডনের ডাক্তারেরা টিকাকরণের ব্যাপারে পদ্ধতি হাতড়ে বেড়াচ্ছে। তিনি শুরু করেছেন শুলজের বাংলায় টিকারণ বিষয়ে পরোক্ষ উক্তিটি দিয়ে। তিনি বললেন এটি যেহেতু বিদেশি ভাষায় লিখিত, সেহেতু it may not much benefit my country। এই তথ্যটা উল্লেখ করলাম হলওয়েলের বই লেখার সময় শুলজ ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছেন, এবং হলওয়েল তাঁর ইংরেজি সংস্করণের সেই বই থেকেই উদাহরণ পেশ করছেন। হলওয়েল হয়ত বলতে পারতেন যে শুলজের দেওয়া বাংলা বিষয়ক তথ্য যথেষ্ট নয়। এছাড়াও তিনি চাইসকেও উপেক্ষা করেছেন। সে সময়ের সব থেকে বিশদ তথ্য কিন্তু দিতে পেরেছিলেন চাইস, যদিও ফরাসীতে।
হলওয়েল বাংলার টিকাকরণকে বিস্তৃত অনুষঙ্গে উপস্থিত করতে গিয়ে এর আগে উল্লিখিত বেকারের মন্তব্যটির কিছু শব্দ উল্টেপাল্টে দিয়ে(paraphrased) তাতে তাঁর নাম না উল্লেখ করে learned and judicious ornament of the College of Physicians হিসেবে বললেন। তিনি বললেন বসন্তের ফোঁড়াকে একটি সূঁচ দিয়ে ফুটো করে, তার থেকে পুঁজ বার করা ডাক্তার টিসট উল্লিখিত কাঁচি দিয়ে কাটার থেকে অনেক ভাল উপায়। তিনি বললেন the incorporation of ‘the cool regimen and free admission of air’ into ‘regular and universal practice’, pointing out that ‘the contrary’ had ‘proved the bane of millions’ in England। তাঁর দাবি প্রত্যেক সাত বছরে গুটি বসন্ত মহামারীর আকার ধারণ করে। এর মাঝখানে এই রোগটি হলেও ততটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে না। সেই সময়ে যদি বসন্তের তরলটি সংগ্রহ করে রাখা হয় তাহলে মানুষের মৃত্যুকে অনেকটা রোধ করা যায়।
বাংলার বসন্তের টিকা করণের পদ্ধতি ইওরোপিয় টিকাকরণকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিল কি না এটা এখন বলা মুশকিল। কিন্তু বাংলার টিকা করণ বিষয়ে জানতে হলে আজ হলওয়েলকেই পড়তে হবে। এটা পরিষ্কার টিকাকরণের সঙ্গে বেশ কিছু সংশ্লিষ্ট আচার আচরণ জড়িয়ে রেখে দেন টিকাকার। এটা আজ পরিষ্কার নয় যে এই আচার কি সেই টিকাকরণ পদ্ধতিকে সফল করার জন্যে করা হয় না টিকাকরণের পরের সময়ে নানান বিধিনিষেধ টিকাকারী ব্যক্তিকে মান্য করার জন্যে করানো হয়। এই কাজে বহু বাধা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকে বলেই হয়ত এই আচার আচরণের মাধ্যমে টিকাকারেরা এবং টিকাকৃত ব্যক্তির বাড়ির মানুষেরা আশা করে টিকা কাজ সফল হোক এই আচারগুলি পালন করার মাধ্যমে।
No comments:
Post a Comment