অধ্যায়২
গিলক্রিস্ট আর হিন্দুস্তানির সংজ্ঞা
কিন্তু আসল গন্ডগোল শুরু হয় যখন সাহেব গায়েগতরে খাটতে শুরু করেন। হাঁটার জন্যে
বরাদ্দ মাত্র ২১টা বাক্যাংশ হল, উলটো দিকে ঘোড়ায় চড়া বা গাড়ি চড়া বা পালকিতে
যাওয়ার জন্য বরাদ্দ ১৩৪টা। মালিক যা ভুল করবেন তা সব শুধরোনোর দায় চাকরের। ভ্রমণের
সময় যেন সাহেব সব কিছুই বড্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন, বিশেষ করে সুরার পাত্র। কাজমকর্ম
প্রায় ঢিলে ঢালা গোছের, যখন কাজ করার কথা তখন শোয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন গিলক্রিস্ট।
তবে বিনোদনও আছে। চাকরকে স্থানীয় গ্রামে পাঠানো হয়, সেখানে কোন শিকার খেলার
উপকরণ/উপাদান আছে কিনা খোঁজ করতে, কিন্তু সে গিয়ে দেখে সেই গ্রামে বিপুল সংখ্যায়
বাঘের বাস, ফলে সব বিনোদনে ইতি। জমিদারকে নির্দেশ পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে শিকার
খেলার বিনোদোনের জন্য হল্লা পার্টির ব্যবস্থা করুণ।
নির্দেশমূলক ভাষার চরিত্র শুধুই যে ব্যক্তিগত বা বাড়ির ব্যাপারস্যাপার ছিল এমন
নয়, এটা রাষ্ট্রের ভাষাও বটে। ১৮০৮ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ১৬ জন সফল ছাত্রের
পারিতোষিক বিতরণের অনুষ্ঠানে এসে ভারত শাসক মিন্টো ভারতীয়দের সঙ্গে কোন ভাষায় তারা
কথা বলবে তার নির্দেশাবলী দিয়ে যান ...ইয়ু আর আবউট টু এমপ্লয়েড ইন দ্য এডমিনিস্ট্রেশন
অব আ গ্রেট এন্ড এক্সটেন্সিভ কান্ট্রি ইন হুইচ ... দ্য ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ নট
নোন। ইয়ু উইল হ্যাভ টু ডিল উইথ মালিটিচিউডস; হু ক্যান কমিউনিকেট উইথ ইউ, ক্যান
রিসিভ ইয়োর কমান্ডস, অর রেন্ডার এন একাউন্ট অব দেয়ার পারফরমেন্স অব দেম; হুজ
টেস্টিমনিজ ক্যান বি ডেলিভার্ড, হুজ এনগেজমেন্ট ক্যান বি কন্ট্রাক্টেড; হুজ
এফেয়ার্স, অনলি ইন সাম ওয়ান অর এনাদারব দ্য ল্যাঙ্গুয়েজেস টট এট কলেজ অব ফোর্ট উইলিয়াম।
এর সঙ্গে ব্রিটিশারদের (সাম্রাজ্যিক) সম্ভ্রম আর স্বসম্মানও জড়িয়েছিল সেটা
আমরা বুঝতে পারি মিন্টোর বক্তৃতায় অথবা গত ষাট বছর ধরে কোর্ট অব ডিরেক্টর্সের বা
গভর্নর জেনারেলদের চিঠিতে বা কথাবার্তায় বা ভাষা শিক্ষকদের নির্দেশনামাগুলিতে।
তারা বারংবার দোভাষীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র শানানোর এবং তাদের দুর্মতির কথা বলছেন।
তিনি বলছেন শাসক যদি শাসিতের ভাষা সঠিকভাবে না জানে, তাহলে তাকে এমন অবস্থায় পড়তে
হয় যেখানে তার অধস্তন এবং দেশি আধিকারিক কাজের স্থলে বিরক্তি উতপাদন করবে এবং
তাদের ওপর অসীমভাবে নির্ভর করতে হবে। ইয়োরোপীয়রা যদি দেশিয় ভাষা না জানে তাহলে
তাদের দেশিয় ভৃত্যদের কাছে দাসত্ব করতে হয়। নামী আধিকারিকদের সম্মান ধুলিতে গড়াগড়ি
যাবে, সরকারের ক্ষতি হবে এবং আধিকারিক ব্যক্তিগতভাবে লজ্জায় পড়বেন এবং তার ধ্বংস
অনিবার্য হবে।
ব্রিটিশারদের শুধু দেশিয় ভাষা বলার ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি ব্যকরণ জানলেই হবে না,
কিন্তু সে যে ভাষা বলছে সেটি এমনভাবে বলতে হবে যাতে সে নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে
প্রত্যেক সময় তার নিজের ইচ্ছার পরিতুষ্টি ঘটাতে পারে। যারা গিলক্রিস্টের শিক্ষা
পদ্ধতি অনুসরণ করবে, তারা ভারতে তাদের চাকরি জীবনে দেশিয় ভাষা শিখে দ্রুত উন্নতি ঘটাতে
পারবে এবং দৈনিকভাবে দেশের নানা বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনও করতে পারবে। যারা
ধ্রুপদী ভাষা শিখে দেশিয় ভাষা শেখার নিদান দিচ্ছিলেন, তাদের নস্যাৎ করে দিয়ে
গিলক্রিস্ট বললেন, তাদের বৌদ্ধিক ক্ষমতার এবং সাধারণ জ্ঞানের অবনতি ঘটবে ‘ডিমিনিশিং
দোজ ইন্টালেকচুয়াল পাওয়ারস, এন্ড দ্যাট কমন সেন্স হুইচ আর ফ্রিকোয়েন্টলি সাঙ্ক আন্ডার
আ হেভি লোড অব শিয়ার পেডান্ট্রি এন্ড ক্যাসিক্যাল লোর, ভেরি ডিফারেন্ট ইন্ডিড ফ্রম
রিয়্যাল সায়েন্স এন্ড প্রাক্টিক্যাল উইশডম’। গিলক্রিস্টের বাতচিত পড়ে এই সময়ের
পাঠকের মনে হতে পারে তিনি এমন ব্রিটিশার তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যারা ভারতে শুধু
নির্দেশই দেবে, কিভাবে সঠিক যোগ্য নির্দেশ দিতে হয় জানবে এবং কিভাবে দেশিয়দের যোগ্যতা
অনুসারে সঠিক স্তরে রাখতে হয় তা শিখবে; টোবে বাস্তবিক ভাবে, ধ্রুপদী জ্ঞানের
মাধ্যমে নয়।
No comments:
Post a Comment