কোম্পানি বাংলায় ঘাঁটিগেড়ে বসার অনেক আগে, পর্তুগিজদের সময় থেকেই বাংলা তথা এই উপমহাদেশের জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্পকলা নথিবদ্ধ হয়ে ইওরোপে যাওয়া শুরু হয়েছে(মনে রাখুন তারা সমুদ্র তীরবর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা ভারত আবিষ্কার করতে গিয়ে আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবিষ্কার করে, অথচ ওদের সমুদ্রে যাওয়ার হাজার কয়েক বছর আগে বাংলার নাবিক সমুদ্রে নেমে যেখানে যাওয়ার সেখানেই গিয়েছে)। ইওরপিয় জ্ঞানবিজ্ঞানে যেসব ফুটোফাটা ছিল সেগুলো ক্রমশঃ মেরামত হয়েছে। কিন্তু ভারত উপনিবেশের শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা পায় নি বৈজ্ঞানিক সমাজ। শাসকদের ভাবনা ছিল নথিকরণ যেভাবে হচ্ছে, হোক না, লুঠের সম্পদ আপাতত বড় শিল্পের বিনিয়োজিত হোক।
১৮৪০ এবং ৫০এর দশকে এসে তখন শাসক কোম্পানি সেনানায়ক(যেমন ম্যাকেঞ্জি), শল্যচিকিতসক(যেমন বুকানন)কে কোন রকম উতসাহভাতা ছাড়া বা বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসার জন্য দেরি না করেই তাদের বিশেষজ্ঞতা কোম্পানি প্রশাসনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে নির্দেশ দিচ্ছে।তবে কোম্পানির শাসনের শেষের দিকে উপনিবেশের দেখাদেখি বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত হচ্ছেন এবং নতুন সংগঠন গড়ে উঠছে একে একে।
১৮৫১এর পাঁচ বছর পর সালে উপমহাদেশে যখন রেল চালানোর পরিকল্পনা পাকা, ভারত যখন শুধুই সাম্রাজ্যের পণ্য খাতক এবং সেই পণ্য আমদানি আর সম্পদ রপ্তানির দেশ রূপে অধমর্ণ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, আয়ারল্যান্ডের ভূতত্ত্ব সমীক্ষা সংগঠনের প্রাক্তন প্রধান টমাস ওল্ডহ্যাম জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রথম প্রধান হচ্ছেন। তার দপ্তর চালানোর জন্যে দেওয়া হচ্ছে একজন করে করণিক আর চাপরাসি। রণনৈতিকভাবে দেশের রাজস্ব সমীক্ষা, টপোগ্রাফি সমীক্ষা এবং শেষে মানচিত্র তৈরির জন্যে কোম্পানি গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক্যাল সার্ভে করে যা লাগে সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজে।
গুরুত্বপূর্ণ যে লুঠেরা গবেষণা বা সমীক্ষা সঙ্গঠনগুলির মধ্যে ভারতে প্রথম ভূতত্ত্বের দপ্তর তৈরি হওয়ার লুঠেরা ভূমিকা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় নি।
কোম্পানি তার উদ্বৃত্ত নিজেদের দেশে পাঠাতে এতই মগ্ন ছিল যে সে স্বদেশের অনুকরণে কোন একটি বিজ্ঞান সংগঠনো তৈরি করে উঠতে পারে নি। কিন্তু কোম্পানির সেনা, স্বাস্থ্য বা প্রশসন বিভাগের আমলারা নিজ উদ্যোগেই নানান নথিকরণ কাজ করেছে। ১৮২৬-২৭ সালে বুন্দেলখণ্ড অভিযানের পথে বাংলা সেনার ক্যাপটেন ফ্রাঙ্কলিন ভূতত্ত্ব বিষয়ে নথিকরণের কাজ করেন। বরোদা থেকে উদয়পুর যাওয়ার পথে এসিস্ট্যান্ট সার্জন হার্ডি ভূতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন।
সাহারানপুরের কোম্পানির সার্জেন এবং বোটানিক গার্ডেনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিউ ফ্যালকনার এবং বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্সের লেফটান্যান্ট প্রোবি কলটি যৌথভাবে যমুনা খাল খনন করে স্থানীয় রাজার সাহায্যে শিবালিক জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন।এই দুজনকে ব্রিটেনের জিওলজিক্যাল সোসাইটি উলাস্টন মেডেল দিয়ে সম্মানিত করে।
No comments:
Post a Comment