অধ্যায়২
ভারতীয় ভাষা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ গড়নের পথে
ফারসিঃ ভারতীয় রাজনীতির ভাষা
ব্যকরণের ভিত তৈরি করতে গিয়ে জোনস প্রাথমিকভাবে পার্সি কবিতা নিয়ে উতসাহিত হয়ে
পড়েন, এর সঙ্গে তিনি দশম থেকে পঞ্চদশ শতকের সিরাজ সাহিত্যিক বোলির বিস্তৃত বর্ণনা
ভিত্তি করে তার ব্যকরণিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গ্রামারে, জোনস তার সময়ে
ব্যবহৃত ধ্বনিতত্ত্ব, বাক্যসংস্থান এবং ভাষার বাক্য গড়নের রূপতত্ত্ব বিশ্লেষণ
করেন।
জোনস তার পাঠকদের কিভাবে ফারসি পড়িতে হয় সে দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে নিয়ে বলেন
একজন নেটিভ পার্সি ছাড়া ফারসি ভাষা শিক্ষা অচল। পাঠক ফারসির অক্ষরগুলি প্রথমে সহজভাবে
পড়তে শিখবে একজন নেটিভের মুখের কারিকুরির সঠিক উচ্চারণ নির্ভর করে। জোনস মেমিন্সকির
বইটি পড়তে নির্দেশ দিয়েও বলেন, পাঠক যেন পাঠ গ্রহণের সময় নেটিভ পার্সির সঙ্গে কথা
বলার সুযোগ না হারায়, এবং তার থেকে ভাষার নানান লব্জ এবং সাধারণ কথাবার্তার শুরুটা
শিখে নেয়।
জোনন্স বললেন ছ মাস পরে পাঠক আস্তে আস্তে ছোট কবিতা বা ইতিহাসের ছোটছোট পাঠ
শুরু করেন। পাঠক তার মুন্সির থেকে প্রাথমিকভাবে অনুবাদ করে হয় গুলিস্তাঁ বা
ক্যাশাফির গল্পগুলি বলাটা এবং ভাঙ্গাহাতে লেখার তরিকা শিখে নেয়। এবং পাঠককে জোনস
আশ্বস্ত করছেন, যদি পাঠক তার নির্দেশ মত চলে তাহলে সে এক বছরের মধ্যেই যে কোন
ভারতীয় রাজার থেকে প্রাপ্ত চিঠি অনুবাদ করে পড়তে পারবে এবং উত্তরও দিতে পারবে,
তারই সঙ্গে সে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অবলীলাক্রমে মধুরভাবে ও ভাষায় আলাপচারিতাও
করতেও পারবে। সঙ্গে সঙ্গে তার হুঁশিয়ারি, তাকে যদি ভাল বিশ্বস্ত অনুবাদক হতে হয়,
তাহলে ফারসির সঙ্গে আরবিটাও শিখে নিতে হবে – তার যুক্তি আরবি আর ফারসি একে অপরের
সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যারা আগামী দিনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকুরে
হতে চায়, তারা ভারতের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, যাকে ভুলভাবে মুরেদের ভাষা বলা
হয় তাও বলতে পারবে। কেননা জোনসের মতে মুর ভাষায় বিপুল পরিমানে ফারসি শব্দ আছে, যে
ভাষা থেকে তিনি পিলপাইএর কথামালা থেকে কোন কষ্ট না করে পড়েছেন এবং অনুবাদও করেছেন।
উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে কোম্পানির কাজে ঢোকা কোন নবীন করণিকের কাছে ফারসি
ভাষা জানা, একটা বিপুল সম্মানের ব্যাপার ছিল। ১৭৬৫ সালে অক্সফোর্ডে ফারসি বিভাগ
খোলার অসফল চেষ্টার পরে ওয়ারেন হেস্টিংস জানিয়েছিলেন ফোর্ট উইলিয়ামে যে নতুন তৈরি কলেজ
হচ্ছে তাতে আরবি আর ফার্সিকে অবশ্যই রাখতে হবে ...টু দ্য পার্সিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এজ
বিইং দ্য মিডিয়াম অব অল পলিটক্যাল ইন্টারকোর্স দ্য ফার্স্ট প্লেস অট টু বি ইন দ্য স্টাডিজ
অব দ্য পিউপলস; এন্ড এজ মাচ অব দ্য আরবিক এজ ইস নেসেসারি টু সিউ দ্য র্যাডিক্যাল
ওয়ার্ড ডিরাইভস ফ্রম ইটস ইনফ্লেকশন্স, টু কমপ্লিট দেয়ার নলেজ অব দ্য পারসিয়ান,
হুইচ ইন ইটস মডার্ন ডায়ালেক্ট কনজিস্টস ইন আ গ্রেট মেজার অব দ্য আরবিক... দ্য
পার্সিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ অট টু বি স্টাডিড টু পারফেকশন, এন্ড ইজ রিকুইজিট টু অল দ্য
সিভিল সারভ্যান্টস অব দ্য কোম্পানি, আজ ইট মে আলসো প্রুভ অব ইকোয়াল ইউজ টু দ্য
মিলিটারি অফিসার্স অব অল দ্য প্রেসিডেন্সিজ।
কলেজের প্রথম পনের বছর ফারসি বিভাগটি সব থেকে সম্মানিত এবং সরকারের
পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল। যে সব ছাত্র ফারসিতে ভাল করত তাদের সব থেকে ভাল, স্বচ্ছল
এবং লাভজনক পদে শুরুর চাকরি মিলত যেমন কলকাতার সেক্রেটারিয়েট। এছাড়াও যেহেতু ফারসি
আর আরবি ভারতের ধ্রুপদী ভাষা ছিল সেহেতু যে সব অভিজাতর ইওরোপিয় ধ্রুপদী, ল্যাটিন
এবং গ্রিক ভাষায় খুব ভাল দখল ছিল না, এই দুই ভাষা শিক্ষা তাদের উচ্চপদে ওঠার অন্যতম
ছাড়পত্র ছিল।
No comments:
Post a Comment