এনকাউন্টারিং ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য
থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
এই সমীক্ষা কিন্তু যোগ্য
প্রতিনিধিত্বের কথা বলেছে। অবশ্যি মানবতাবাদ এবং স্বাধীনতা রক্ষার ঘোমটায় কিন্তু
সমীক্ষার আসল লক্ষ এবং সেটি পৌঁছনোর জন্য রণনীতি তৈরি হল - দেশ এবং তার সম্পদের ওপর
সম্পূর্ণ কব্জা করা। এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী দলটি ধনী পশ্চিমের
উন্নয়নের ধারনার প্রতিধ্বনি করল, যাকে পশ্চিমি দেশগুলি
স্বাভাবিক উন্নয়ন আর প্রগতির পথ বলে বিচার করে থাকে। আমরা আরও দেখব, প্রগতিকে এই
সব লব্জে চুবিয়ে নিয়ে, বিশ্বকে পশ্চিমি মুখী করে তোলার নানান রণনীতি গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ১৯৪৯ সালে কলম্বিয়ায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রথম অভিযান এই
নতুন কার্যক্রমের প্রথমতম বাস্তব প্রকাশভঙ্গী।
উন্নয়নের প্রতর্কের পূর্বক্ষণ এবং অতীত ইতিহাস
আমরা দেখব কলম্বিয়ায় ১৯৪৯ সালে যে দল গিয়ে উন্নয়নের প্রতর্ক
শুরু করে সেটি আদতে একটি জটিল ঐতিহাসিক সংযোগমাত্র। উন্নয়ন নামক একটি কার্যক্রমের সূচনা ঘটল এই দলটির মাধ্যমে। তার ফলে এক দিকে ইওরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক নতুন
করে বিন্যাস ঘটল, অন্য দিকে এশিয়া আফ্রিকা এবং লাতিক আমেরিকার দেশগুলির মধ্যেও
নতুন সম্পর্কের সূচনা হল। পরের দিকে ইওরো-আমেরিকিয় কৃষ্টিতে ঢেলে
সাজা নতুন ধরণের শাসক শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটল এইসব দেশগুলিতে। কিন্তু সে জ্ঞানচর্চা
বা প্রতর্কের জন্ম ঘটল তার গুণমান নিয়ে আমাদের অবশ্যই আলোচনা করা দরকার; কিন্তু এর
রাজকীয় আবির্ভাবের পূর্বলক্ষনগুলি আমরা বুঝতে পারছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক
পরে পরেই।
আফ্রিকায় উন্নয়নের জোয়ার পৌঁছনোর ধীরগতির বিষটি বুঝতে বেশ কিছু গবেষণা আমাদের সুযোগ করে (Cooper
1991; Page 1991) দিয়ে বলে যে, ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পতনের সঙ্গে উন্নয়নের রাজনীতির
সংযোগ খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান। দুটি যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক শাসন
ব্যবস্থা তুলে নিয়ে উপনিবেশ এবং মেট্রোপলিসের মধ্যে সম্পর্ককে ঢেলে সাজাতে বেশ
কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা হয়। কুপার বলছেন, ১৯৪০ সালের
ব্রিটিশ ডেভেলাপমেন্ট এক্ট – উন্নয়নের ধারনার সর্বপ্রথম বাস্তবিকিকরণের পথে হাঁটা –
এবং ১৯৩০এর দশকে যখন ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে জনমত মোটামুটি উচ্চকিত, সেই সময়
থেকেই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে কি করে উপনিবেশ ছেড়ে গিয়েও
ঘোমটা দিয়ে তাত্ত্বিকভাবে ঔপনিবেশিক লুঠেরা কাজকর্ম চালানো যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সেটলার্স স্টেটগুলির উদাহরণে
পরিষ্কার, যেখানে খাদ্য এবং শ্রমের প্রশ্নে আফ্রিকিয় জনগণের একাংশকে আধুনিকিকরণের
সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। Page (1991) বলছেন, এটা ঘটল মহিলাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সামাজিক আফ্রিকিয় সংস্কারের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার প্রণোদনায়। ১৯৫০এর প্রথম দিকে সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনায় এই ধারণা রূপায়ন হল। আফ্রিকা এবং
আমেরিকার নানান দেশে উপনিবেশ বিরোধী ব্যবস্থা শুরু করতে লিগ অব নেশনস যে
নির্দেশাবলী তৈরি করল তাও খুব গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
পরেই আন্তর্জাতিক সঙ্গঠনগুলি এই ব্যবস্থাপনাকে ব্যবহার করল সাধারণভবে দেশগুলিকে
উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি এবং উন্নয়নের ধারনা বিকাশে (Murphy
and Augelli 1S93)।
সাধারণভাবে বলতে গেলে ১৯২০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত এই সময়টা যে
উপনিবেশবাদী সময় থেকে উন্নয়নমূলক ঔপনিবেশিক সময়ের সূচনা, সেটা আমরা আজও বুঝতে চেষ্টা করিনি। যদিও উত্তর এবং
প্রান্ত-সাহারা আফ্রিকার শ্রমিকদের দুরবস্থা
বা স্বনির্ভর খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষ্টিকে ধ্বংস করে শ্রেণী, লিঙ্গ, জাতি ইত্যাদি
নির্বিশেষে চাষীদের আধুনিক করে তোলা, রোজের শ্রমিকদের অআদিবাসীকরন, লিঙ্গ লড়াই
বাড়িয়ে তোলা, এবং শিক্ষা নিয়েও লড়াই, বা মেট্রোপলিটনের স্বার্থে, যুক্তিতে এবং
সুরে সুর মিলিয়ে সেই অঞ্চলের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং শহর বিকাশে নিযুক্ত
বিশেষজ্ঞরা গলা চড়ানো এবং তাদের সরবরাহ করা তথ্যে উপনিবেশকে সাজানোর চেষ্টা করা বা
যে লড়াই উপনিবেশের মানুষেরা মেট্রেপলিটনের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন, সেই জ্ঞান, প্রতর্ক
আর হাতিয়ারগুলিকে আত্মিকরণ করে নেওয়ার চেষ্টার কাজ আমরা নানান ভাবে দেখেছি(এর জন্য
দেখুন Cooper and Stoler 1989; Stoler 1989; Packard 1989;
Page 1991; Rabinow 1989; Comaroff 1985; Comaroff and Comaroff 1991; Rau 1991)।
তবে আফ্রিকার তুলনায় ল্যাটিন আমেরিকার উন্নয়নের পথ
আলাদা ছিল, কিন্তু উন্নয়নপূর্ব সময় এবং আলোচনাগুলি এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।
উনবিংশ শতকের শুরু থেকেই লাতিন আমেরিকার দেশগুলি স্বাধীন হতে শুরু করে, এবং বহু
স্তরে তারা সে সময় ইওরোপিয় অর্থনীতি আর কৃষ্টির সমপর্যায়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বিংশ শতের
শুরুতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান পর্যায় অনুভূত করতে থাকে এই অঞ্চল। সেই শতকে
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র-লাতিন আমেরিকার সম্পর্ক দ্বিমুখী তরোয়ালের মত হয়ে দাঁড়ায়। সে
সময় লাতিন আমেরিকার দেশ সমূহে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, মনে করছিলেন পরস্পরের মধ্যে
আদান-প্রদান করা সম্ভব, কিন্তু আমেরিকার ক্ষমতাধরেরা মনে করছিল যে তারা লাতিন
আমেরিকার বিষয়ে নাক গলাতে প্রস্তুত। শতাব্দের প্রথম দিকের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপবাদী নীতি এবং
১৯৩০ নাগাদ শান্ত প্রতিবেশী দেশ, এই দুই কূটনৈতিক পর্যায় দেখেছে লাতিন আমেরিকা।
মনে রাখা দরকার হস্তক্ষেপবাদী নীতির তুলনায় শান্ত প্রতিবেশী কূটনীতি অনেক বেশি
প্রভাবশালী।
No comments:
Post a Comment