গরীব কাহারে কয়১০
উন্নয়নের বিশ্ব রাজনীতি তত্ত্ব
এনকাউন্টারিং
ডেভেলাপমেন্টঃ দ্য মেকিং এন্ড আন্মেকিং অব দ্য থার্ড ওয়ার্লডঃ আর্তুরো এসকোবারএর
বই থেকে
দ্বিতীয় অধ্যায়
দারিদ্র বিষয়ে উদ্যম সমাজ(social)কে নতুন খাসমহল দখল করাতে সাহায্য করল। পুঁজির বাল্যকালে
শিল্প বিপ্লব, বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি যৌথভাবে যতটা না আঘাত ফেলেছে, তার থেকে বেশি
প্রভাব ফেলেছে আধুনিকতা - গাঁইয়াদের বড় পুঁজির উৎপাদনের ভোক্তা এবং তাদের পশ্চিমি
জ্ঞান আর ব্যবস্থাপনার গ্রাহক তৈরি করে। এই কর্মদ্যোম আসলে, ‘“a techno-discursive instrument that made
possible the conquest of pauperism and the
invention of a politics of poverty” (Procacci 1991, 157).।’ জিওভানা প্রোক্রাসি বলছেন, কাঙ্গালপনার সঙ্গে ভাল হোক
মন্দ হোক, গতায়াত, ভবঘুরেমি, আত্মনির্ভরতা, পরিশ্রম, বিমূঢতা, অজ্ঞতা এবং সামাজিক
দায়িত্বগুলি পালন করার অস্বীকৃতির মত বিষয়গুলি জুড়ে, শুধুই ‘চাহিদা’র দর্শনে পরিণত
হয়েছে। একইভাবে দারিদ্রের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, নৈতিকতা,
চাকরির ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করে সামাজিক যোগাযোগ, সঞ্চয়, বাচ্চাকে বড় করার মত
অভ্যেসগুলিকে কেড়ে নিতে শুরু করে। বহু গবেষক বলছেন, এই হস্তক্ষেপগুলি ‘সামাজিক’
নামে তথাকথিত গরীবদের গায়ে বর্মের মত সেঁটে বসে(Donzelot 1979, 1988, 1991; Burchell, Gordon, and Miller
1991)।
জ্ঞান এবং হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সামাজিকতা নামক ব্যাপারটি
উনবিংশ শতকে জায়মান হয়ে উঠতে শুরু করে, এবং বিংশ শতাব্দে জনকল্যানমূলক রাষ্ট্রের
আবির্ভাবে সেটি পাকাপোক্ত হয়ে সামাজিক কর্মের নানান কীর্তিকলাপের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ
হয়। শুধু দারিদ্র নয়, শহরগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, চাকরিবাকরি, খারাপ
জীবন যাপনও সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা হতে শুরু হল, যার জন্য এই জনসংখ্যার বিশদ
তথ্য এবং জ্ঞান আহরণ করে বহুধা সামাজিক পরিকল্পনার সূচনা ঘটল(Escobar 1992a)। ‘সমাজের সরকার’এর কটাই দায়িত্ব হল, এই অর্থনীতিটিকে
বাস্তবে গৃহীত করাবার কাজ করেগিয়েছে সুচারুভাবে। গরীব নামে একটি আলাদা শ্রেণী তৈরি
হল(Williams 1973)। এতদসত্ত্বেও এই ঘটনাক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, একটি নতুন
জ্ঞানভাণ্ডারের হাতিয়ার আর ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করা, যা জীবনকে দেখতে এবং উপভোগ
শেখায় আধুনিক এবং তথাকথিত ‘বৈজ্ঞানিক’ পরিবেশে। আধুনিকতার ইতিহাস যে শুধু
একদেশদর্শী জ্ঞানচর্চা আর অর্থনীতির বিষয় নয়, আরও খোলাখুলিভাবে বললে এটা নব্য সামাজিকতার(social)এর ইতিহাস১।
এতক্ষণ আমরা যে অবস্থা বুঝলাম, তার মানে দাঁড়াচ্ছে উন্নয়নের
ইতিহাস অর্থ হল, অন্য অঞ্চলে নব্যসামাজিকতা (social)র ইতিহাস নির্ভরতা তৈরি করা। রহনিমা যে দারিদ্রের
প্রত্নতত্ত্বের কথা বলছিলেন এটা তার দ্বিতীয় পথবিচ্যুতি – দারিদ্রের বিশ্বায়নে। ১৯৪৫এর
পরে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে দারিদ্র ঘোষণা করে দেওয়া হল। বাজার নির্ভর সমাজে
গরীবদের সংজ্ঞায়িত বলা হল ধনীদের সম্পদ আর আর্থিক স্বচ্ছলতার বিপরীতে যারা অবস্থান
করেন। একইভাবে দরিদ্র দেশগুলিকে বলা হল, যে দেশগুলি আর্থিক স্তরে সুবিধেপ্রাপ্ত,
উন্নত এবং ধনী, আর তাদের মত সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে না। এই উন্নয়ন মাপার গজকাঠি হল
বাৎসরিক মাথা পিছু আয় মাপার তরিকা। দারিদ্রের ধারণাটি বিশ্বজনীনভাবে ফেরি করা হল
যা ‘১৯৪০র দশকে শুরু হওয়া তুলনামূলক সংখ্যাতত্ত্বের হাতসাফাইয়ের কারসাজি’মাত্র(Sachs 1990)। এই ক্ষমতার কারসাজিতেই
১৯৪৮ সালে, বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেবে যে সব দেশের মানুষের রোজগার বছরে ১০০ পাউন্ডের
নীচে তাদেরই গরীব বলে দাগিয়ে দেওয়া হল, অর্থাৎ বিশ্বের দুইতৃতীয়াংশ মানুষ গরীবিরেখার
নীচে চলে গেল। আর যদি সমস্যাটা দাঁড় করানো যায় রোজগারের অভাব, তার নিদান দেওয়া হল
অর্থনৈতিক উন্নতি।
এইভাবে দারিদ্র হয়ে উঠল ক্ষমতার ধারণা এবং নব্য সমস্যাবাদের
হাতিয়ার। যে কোন সমস্যাবাদের(Foucault 1986) মতই, সমস্যা হিসেবে দারিদ্র নতুন প্রতর্ক এবং
চর্চা-অনুশীলনের নতুন যুগের আরম্ভ করল। ফলে তৃতীয় বিশ্বের একমাত্র চিহ্ন হল তার
দারিদ্র এবং তার নিদান হল অর্থনৈতিক উন্নতি এবং উন্নয়নের চাহিদা হল স্বতঃসিদ্ধ,
প্রয়োজনীয় এবং বিশ্বজনীন সত্য। এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব ঐতিহাসিক ঘটনাটির
ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়িত করতে কি কি পথ পেরোতে হয়েছে। এটি স্থির করে দিল
তৃতীয়বিশ্বের একমাত্র চাহিদাই হল উন্নয়নশীলতা এবং এর মত প্রগতিশীল ব্যবস্থা প্রায়
নেইই বলা চলে, এবং রাষ্ট্রগুলির একমাত্র কেন্দ্রিয় দায় হল দারিদ্র দূরীকরণ, এবং সে
কার্যক্রম কিছু নির্দিষ্ট পথ, কার্যক্রম বেয়ে চালিত হবে। এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা
করব তিনটি বিশ্ব বিষয়ে, এবং বিশেষ করে তৃতীয়টির উন্নয়ন ধারনাটি কি তা নিয়ে। এই
তিনিটি বিশ্বের যে গল্প শুরু করে দেওয়া হয়েছিল চারের দশকে, যেতে যেতে দেখা গেল
দ্বিতীয় বিশ্বটি বাস্তবিক এবং রাজনৈতিক ধারনার বিশ্ব থেকেই লোপ পেয়ে গিয়েছে কেন that works by the negotiation of boundaries achieved through ordering differences(Haraway 1989a, 10) – কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের ধারনাটি তখনও পর্যন্ত অটুট
এবং আরও বলশালী হয়ে চলেছে। তৃতীয় বিশ্ব এমন একটা ক্ষমতার তৈরি করা ধারণা যেখানে
কৃষ্টি, লিঙ্গ, জাতি, এবং শ্রেণী গভীরভাবে এবং পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়েমড়িয়ে বেড়ে
উঠেছে। ক্ষমতা, রাজনৈতিক এবং আর্থিক মাণদণ্ডে যে তিনটি বিশ্বের এবং উন্নয়নের ধারনা
তৈরি করল, যা নতুন জ্ঞানচর্চার অঙ্গ হিসেবে বিকশিত হয়েছে বিগত তিন দশক, সেই
জ্ঞানচর্চাকে ক্রমান্বয়ে প্রশ্ন এবং স্থানচ্যুত করতে চেষ্টা করছে তৃতীয় বিশ্বের
মানুষ জন।
No comments:
Post a Comment