সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
হোয়াইট স্টাডিজ আর অনুমানগুলির সমস্যার
সমালোচনা
শিক্ষা সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে মনোবিদ্যা পাঠ
একে যত কম বিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করা যায়
ততই ভাল। এটা ভাল খবর আজ এটি নিজেকে এথনোগ্রাফি হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। এবং তার
পূর্ণ ঔজ্জ্বল্যের দিনে নৃতত্ত্ব সাম্রাজ্যবাদের পঞ্চম বাহিনী হিসেবে প্রশাসনের
সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছে। সাম্রাজ্যবাদ রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে তার সম্মান হারালে
এটির উদ্দেশ্য এবং বিধেয় দুটিরই অভিষ্ঠ ঝড়ে উত্তাল সমুদ্রে পড়া ভেলার মত দিগভ্রষ্ট
হয়ে যায়, এবং আফ্রিকা, আলাতোলিয়া ইত্যাদি এলাকায় বিপুল বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এই
বিদ্যাচর্চা, যেখানে নৃতত্ত্বকে খুব খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এর থেকে একটা
জিনিস উঠে আসে, প্রাথমিকভাবে ইওরোপ দুটি সমাজবিজ্ঞান চর্চা শুরু করেছিল, প্রথমটি
সমাজবিদ্যা তার সাম্রাজ্যের নিজের সভ্য সমাজ এবং মানুষ বিশ্লেষণের জন্যে আর
দ্বিতীয়টির নাম হল নৃতত্ত্ব, বাকি মানব সমাজের জন্যে, বিশেষ করে বর্বর, আদিম এবং
জংলীদের সমাজ বিশ্লেষণের জন্যে(শুধু বিশ্লেষণ নয় জ্ঞান চুরির জন্যেও - অনুবাদক)।
যখন এই দুই বিভাগের পার্থক্য মুছে গেল,
বিনয় লাল বলছেন, ১৯৪৯এ প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান বিশ্বকে দুটি সমাজে ভাগ করলেন উন্নত
আর অনুন্নত – পুরোনো মদ নতুন বোতলে পুরে ফেরি করা।
আজও তাত্ত্বিকভাবে এটা প্রমাণিত যে
নৃতত্ত্ব একমুখী রাস্তা যেখানে Europeans
descending on the rest
of
the world with their quaint filters and mirrors and eventually using their experience as little more than
confirmation of their own (superior) way of life। এই ইওরোপকেন্দ্রিক তাত্ত্বিক অবস্থান
বিপুল বিশাল নৃতাত্ত্বিক লেখাপত্রেও উঠে এসেছে যেখানে তারা মহান বর্বর আর প্রাচীন
সমাজ নিয়ে চর্চা করেছে আজ করছে উন্নত অনুন্নত সমাজ নিয়ে বিশদ বিতর্ক। নৃতত্ত্বের
হেঁটমুণ্ড উর্ধ্বপদকে সোজা করে দেখার চেষ্টা খুব বেশি হয় নি, অর্থাৎ অইওরোপিয়দের
চোখে ইওরোপিয়দের দেখার উদ্যম নেওয়া হয় নি, যদি কিছু হয়ে থাকে তা ব্যতিক্রম।
ড্যানিশ সমাজ নিয়ে ভারতীয় এক সমাজতাত্ত্বিক কাজ করেছেন দ্বিতীয়টা একজন আফ্রিকিয়
জার্মান সমাজে বাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ব্যস।
নৃতত্ত্ব যদি তার কালিমালিপ্ত ছবিকে নতুন
করে সাজাতে বসে তাহলে তাকে বিপরীত কিছু করার কথা ভাবতে হবে – সেখানে অইওরোপিয়,
ইওরোপিয় সমাজ নিয়ে তার গবেষণার কথা বলবেন। আমরা পশ্চিমকে দেখি শিল্পোন্নত দেশ
হিসেবে। ফলে অইওরোপিয় সমাজে যে সব সমস্যার কথা ভাবাই যায় না, সেই সব পশ্চিমি সমাজে
এবং পরিবারগুলিতে বহু দুরারোগ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এটা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে চোখ
বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত না নিলে সহজেই বোঝা যায়। জাগতিক প্রাচুর্য সত্ত্বেও সুখে
থাকার সূচকে পশ্চিমের মানুষেরা কেউ সুখে নেই এটা স্পষ্ট। এছাড়াও লুকোনো আর
প্রত্যক্ষ দারিদ্রের ছাপ নিয়ে আর যে মানুষটা উতপাদন ব্যবস্থার অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন,
অবসরপ্রাপ্ত, তার মানবিক সত্ত্বার ওপর বিপুল অত্যাচার নিয়ে সেই সমাজেই কেউই যে
কিছুই ভাবছে না এটা বড়ই দুঃখের।
শিক্ষা সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে ইতিহাস পাঠ
যে কটা শিক্ষণ বিদ্যায় অতীতের
সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে লেখালিখি করে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও কিছু
এগোবার চেষ্টা করা গিয়েছে সেটা ইতিহাস। যদিও দীর্ঘকালীন এই পক্ষপাত, মিথ্যা এবং
ঘটনার তথ্যবিকৃতি নিয়ে বিতর্ক আছে থাকবে এবং কখোনোই সক্কলকে একযোগে একমতে আনা যাবে
না।
যারা ১৯৫০, ১৯৬০ সালে বিদ্যালয় পাঠ্যে
ইতিহাস পড়েছেন, তাঁদের স্মৃতিতে নিশ্চই আছে সেই পাঠ্যপুস্তকগুলিতে স্পষ্ট দাবি করা
হত এশিয়া ইওরোপিয় অভিযাত্রীদ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। অক্সব্রিজ ঐতিহাসিকদের, অর্থাৎ
সেই সব ঐতিহাসিক যারা ইংলন্ডের প্রথিতযশা ঐতিহাসিকদের তাত্ত্বিক নজরদারিতে পড়াশোনা
চালিয়েছেন এবং দেশে ফিরে এসে পূর্ণ উদ্যমে তাদের শেখা তত্ত্বকে উগরে দেওয়ার কাজ
করেছেন। তাদের পশ্চিমবিদ্যতাপূর্ণ লিখিত ইতিহাস সেই পথ থেকে খুব বেশি দূরে যেতে
পারে নি। শুধু হাতে গোনা কয়েকজন কিন্তু এই দাবির মৌলিকত্ব নিয়ে জোর প্রশ্ন তুলেছেন।
ঠিক এই কারণেই ইন্দো-ইওরোপিয় ঐতিহাসিক চৈতন্যের
পথ ধরেই ভাস্কোডাগামার ভারত ‘আবিষ্কার’ ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
সিদ্ধান্তগুলির অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে এই উপনিবেশউত্তর ভারতবর্ষে। অথচ
চিনা খোজা সেনাপতি জেং হো(অথবা হি)র যে বাহিনী নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরোন সেটার
তুলনায় ভাস্কোর এই ভ্রমণকে পুঁচকে মনে হয়(এবং মেলিন্দের উপকূলে পথ হারা ভাস্কোকে
উদ্ধার করে কালিকটে নিয়ে আসেন মালামো কানা নামে এক গুজরাটি মুসলমান নাবিক, সাধারণ
থেকে সাধারণতম রূপলাগি যন্ত্র নির্ভর করে - অনুবাদক)। এছাড়াও আমরা আজ জানি ইওরোপিয়
অভিযাত্রীদের ভারতে আসার আগে ভারত মহাসাগর এলাকায় ভারত-ইওরোপ বাণিজ্য নগণ্য ছিল(আজ
আমরা সুশীল চৌধুরীর অসামান্য গবেষনা সূত্রে জানতে পারছি পলাশীর আগে মোট এশিয় এবং
ইওরোপিয় বাণিজ্যের পরিমানে এশিয় বণিকদের অর্ধেক বাণিজ্য করত ইওরোপিয়রা – এবং তাদের
বিপুল টাকা বাংলা থেকে ধার করতে হত - অনুবাদক)।
No comments:
Post a Comment