সমাজবিজ্ঞান এবং বাস্তবতা
এই মনখারাপের ঔপনিবেশিক অবস্থার প্রভাব
পড়ে বিশ্ব বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যতের এবং
মানসিকতার ওপর। তাদের বলা হয়, যে বৌদ্ধিক খাদ্য তাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে তা
বিদেশি, আদতে তারা যে উত্তরাধিকারসূত্রে জ্ঞানচর্চা আহরণ করে, তাতে বিদেশি শব্দটার
গুরুত্ব অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই তারা চলতি সমাজতাত্ত্বিক জ্ঞানচর্চার বৌদ্ধিক
ক্ষমতার ভাষা, লব্জ, বুলি, প্রেণী এবং ধারণা তোতাপাখির মত করে শিখে নিয়ে(যা ফ্যাসানের
মত করে কিছু কিছু বছরের মধ্যেই পালটে পালটে যায়) উগরে দেয় তাদের কাজে, এবং তাদের
যখন সুযোগ আসে শিক্ষা দেওয়ার, তখন তারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের তারা যা শিখেছিল তাই
শেখাবার কাজ করে যায়। এই কাজে যোগ্যতা আর প্রত্যয় প্রয়োজন হয় অধস্তনতায় চলতি
লব্জগুলো প্রশ্নাতীতভাবে স্বীকার করে নেওয়ার আত্মনিবেদনে।
বিন্যাস হিসেবে সারা বিশ্বের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মৌলিক চরিত্র এবং উদ্দেশ্য হারিয়ে নিজেদের কারখানা
বিদ্যালয়ের আকারে পরিণত করেছে যেখানে ছাত্রদের কোন কিছু ভাবা, চিন্তাকরার সুযোগ না
দিয়েই চলতি জ্ঞান প্রশ্নাতীতভাবে প্রবাহিত করা হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইওরোপিয় স্টাডি সেন্টারটিতে বিপুল ব্যায়ে ভর্তি হয়ে ছাত্র
ছাত্রীরা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে ইওরোপের গিয়ে ফ্যাশান হিসেবে ইওরোপের বৌদ্ধিক
চক্রে চলতি ভাবনাগুলি আত্মীকৃত করে ভেবে ফেলবে তারা বিশ্বজোড়া শিক্ষা ব্যবস্থার
মাথায় অবস্থান করছে।
সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
১৮৩৫ সালের টমাস মেকলের এবং ১৮৯২ সালের
আমেরিকার কমটি অব টেনের প্রস্তাবনা
আজও হাতে গোনা কিছু বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ
প্রশ্ন তোলে কেন একজন ইরানিয়ান, একজন ভারতীয়, একজন চিনা ইওরোপ আর আমেরিকয়দের তৈরি
করা সমাজ বিজ্ঞানের পাঠ্য পদ্ধতি মেনে নিয়ে তাদের পাঠ্যক্রম সাজাবে। সত্যিই কি কেউ
বিশ্বাস করে হাজার হাজার বছর ধরে জীবিত থাকা ভারতীয়, ইরানীয় বা চিনা সমাজ তাদের সমাজের
সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া বেঁচে ছিল? আমেরিকিয় সমাজ
তত্ত্ব বা ইওরোপিয় রাষ্ট্র বিজ্ঞান বা নৃতত্ত্ব বা অন্যান্য পঠনপাঠন একমাত্র পঠনযোগ্য
বস্তু তার বাইরে আর কিছুই নাই এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন তুললেই আপনি প্রগতি
বিরোধী, কেন? তাহলে কি আমরা যখন নিজেদের অন্তরে ঢুকে ভাবতে পারতাম না, সেই
ঔপনিবেশিক সময়ের ধারনাগুলি উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করে চলেছি?
এই অবস্থার উদ্ভব হল কেন, সেই দিশায় আমরা
নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করি, আসুন।
প্রথমে ইওরোপ এবং পরে আমেরিকার আর্থিক,
রাজনৈতিক ঔপনিবেশিক হিসেবে কাজ করা দেশগুলির বৌদ্ধিক ইতিহাসের দিকে একটু নজর ফেলা
যাক। প্রাথমিক স্তরে এই দেশগুলির বৌদ্ধিক ভাবনা চিন্তার ওপরে নির্দিষ্ট এবং
শক্তিশালী আক্রমণ শুরু হল, এবং এই আক্রমনের তীব্রতায় অধীনস্থ দেশগুলির জনগন
মোটামুটি স্বীকার করে নিল ঔপনিবেশিক দেশগুলির প্রচারিত তত্ত্ব। অবশ্য তাদের সামনে
কোন অন্য পছন্দ থাকত না।
এরপরে দ্বিতীয় স্তরে উপনিবেশ তাদের আর্জিত
ক্ষমতা ব্যবহার করে সে দেশিয় জ্ঞানচর্চাকে বৈদেশিক জ্ঞানচর্চার দ্বারা
প্রতিস্থাপিত করল।
উদাহরণস্বরূপ ভারতের মত দেশে বৌদ্ধিক
অভিজাতদের মানসিকতায় আঘাতদিয়ে ইওরোপিয় চিন্তায় মানিয়ে নেওয়ার বয়স মোটামুটি
দুশতাব্দ।
এই পরিকল্পিত সাংস্কৃতি আঘতের পরিকল্পনা
ছকা হয়েছিল ১৬২১ সালেই কবি আইনজ্ঞ, আয়ারল্যান্ডের এটর্নি-জেনারেল স্যর জন ডেভিসের বইতে,
যেটির নাম A Discovery of the True Causes why Ireland
was never Subdued and Brought under Obedience of the Crown of England until the Beginning of His
Majesty’s Happy Reign। যদিও তিনি আয়ারল্যান্ডের প্রেক্ষিতে তিনি এই লেখাটি লিখেছেন, এই তত্ত্ব
ঔপনিবেশিক যে কোন দেশের জন্যে নিদান হতেই পারে, The
defects which hindered the perfection of the conquest of Ireland were of two kinds and consisted: first, in
the faint prosecution of the war and next in the looseness of the civil government. For
the husbandman must first break the land
before it be made capable of good seed; and when it is thoroughly broken and manured if he
do not forthwith cast good seed into it, it
will grow wild again and bear nothing but weeds. So a barbarous country must first be broken
by a war before it will be capable of good
government; and when it is fully subdued and conquered, if it be not well planted and governed
after the conquest it will soon return to the
former barbarism।
ঔপনিবেশিকতার এই সার সত্যিটি ঔপনিবেশিক তাত্ত্বিকদের কাছে ধ্রুব সত্যি হিসেবে
প্রয়োগবাদিতায় পর্যবসিত হয়েছে তার পরে যুগগুলিতে।
এবং সম্প্রতি ইরাক এবং আফগানিস্তানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া আক্রমনকারীরা
এই একই শব্দে কথা বলেছে।
No comments:
Post a Comment