অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
দৈনন্দিনতার
পোষাকে ভারতীয়রা
১৮৩০ সালে উত্তর
ভারতের বিচারক এফ জে শোর অভিযোগ করলেন উচ্চপদাধিকারী দেশিয়রা ইংলিশম্যানদের দপ্তরে
জুতো পরেই ঢুকছে। তিনি একে বলেছিলেন কলকাতার মানুষদের খারাপ স্বভাব। এরা কোন
সভ্যতা জানেনা, বাঙ্গালিরা নিচুশ্রেণীর মানুষ যারা ইওরোপিয়দের উদাসীন আর অশিক্ষিত
ইওরোপিয়দের অজ্ঞানতার সুযোগ নেয়। যে শোর মনে করতেন ইওরোপিয়রা ভারতীয়দের সম্বন্ধে
খুব বেশি কিছুই জানে না, সেই শোর ইওরোপিয়দের বলছেন কোন খানেই যেন তারা কোন
ভারতীয়কে তারা যেন জুতো পরে ঢুকতে না দেন। আর যদি কোন ভারতীয় সেটা করেও ফেলে তাহলে
সাহেবকে বলতে হবে নেশন্স হ্যাভ ডিফারেন্ট কাস্টমস; আওয়ার ইজ টু আনকভার দ্য হেড –
য়োর্স টু আনকভার দ্য ফিট, এজ আ টোকেন অব রেস্পেক্ট। য়ু শুড নট ওয়াক ইন্টু দ্য
সিটিং-রুম অব এনাদার নেটিভ উইথ য়োর শূজ অন; হোয়াই দেন ড য়ু ট্রিট মি উইথ আ ডিজরেস্পেক্ট
হুইচ য়ু উড নট শো টু ওয়ান অব য়োর ঔন কান্ট্রিমেন? আই এম নট প্রেজুডিসড, এন্ড ইট ইজ
কোয়াইট ইমমেটিরিয়াল টু মি হুইচ প্রাক্টিশ য়ু চুজ টু এডপ্ট। য়ু ক্যান আয়দার টেক অফ
য়োর শুজ অর য়োর টার্বান, বাট আই মাস্ট ইন্সিস্ট অন ওয়ান অন দ্য আদার মার্ক অব
সিভিলিটি ইফ য়ু উইশ মি টু রিসিভ য়োর ভিজিট। দিস ইজ আনএন্সারেবল বাই দ্য নেটিভ; এন্ড
দোজ ইংলিশ হু হ্যাভ এক্টেড ইন দিস ম্যানার, হ্যাভ বিন ডিসাইডেডলি মোর রেস্পেক্টেড
বাই পিপল।
১৮৫৪ সালে গভর্নর
জেনারেলের দপ্তর থেকে দেশিয়দের দপ্তর বা প্রায়দপ্তরের কাজে এবং ইওরোপিয়
কর্মচারীদের সামনে ইওরোপিয় মোজা আর জুতো পরার অধিকার দেওয়ায় কলকাতার অধিবাসীরা
ব্যাপকভাবে কর্মক্ষেত্রে বুট আর মোজা পরার অভ্যেস শুরু করে দেয়। কুড়ি বছর পরে এই
নীতি সারাভারতের জন্যে প্রযোজ্য হলে অধিকাংশ ইওরোপিয় প্রথায় শিক্ষিত দেশিয়
ভদ্রলোকেরা ইওরোপিয় অভ্যেসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এই আইনটি আদালতের জন দপ্তরে
প্রযোজ্য ছিল কিন্তু বিচারপতিদের দপ্তরে নিষিদ্ধ ছিল। কারণ তার ঘরটি ব্যক্তিগত,
ফলে সেখানে তার আইনই আইন হিসেবে পরিগণিত হত।
এই সঙ্গে আলোচনা
শুরু হয়ে গেল কোন ধরণের ভারতীয়, কি ধরণের জুতো, কোথায়, কোন অবস্থায় পরতে পারবে সেই
প্রশ্নগুলি নিয়ে। ভারতীয় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা যে কোন সময়ে ইওরোপিয়দের মতই জুতো
পরার অধিকারী ছিল। মন্দিরে বা ভারতীয় শাসকদের দরবারে প্রবেশের সময় জুতো খুলে ঢোকার
নীতি নিয়ে তারা সরব হয়েছে। জুতো পরা নিয়ে ব্রিটিশেরা জুতো পরা বা না পরার যে নীতি
তৈরি করল সেটি হল ইওরোপিয়রা ভারতীয় প্রথা মানতে বাধ্য নয়, কিন্তু ইওরোপিয়রা যেটাকে
সঠীক ভারতীয় প্রথা হিসেবে ঠিক করেছে, সেই প্রথাকে ভারতীয়দের মানতে বাধ্য।
ইওরোপিয়রা ঠিক করবে কখন তার ভারতীয় প্রজাদের জন্য আইন বদল, এবং ভারতীয়দের সেই আইন
অনুসরণ করা জরুরি। বাঙ্গালিরা ইওরোপিয় পদ্ধিতে জুতো পরার অধিকার আদায়ের জয়ে
উৎসাহিত হয়ে দপ্তরে নতুন করে পাগড়ি পরার অধিকার আদায়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা
ভাবতে শুরু করে।
১৮৭০ সালে এক দল
বাঙালি বাংলার ছোটলাটের কাছে একটি আবেদন করে বলে তারা ইওরোপিয় পদ্ধতিতে মাথা ঢাকার
পর মাথা উন্মুক্ত করে দরবার আর আদালতে এবং অন্যান্য দপ্তরে, উতসবে অনুষ্ঠানে যাতে
সম্মান দেখাতে পারে সে বিষয়ে তাদের অধিকার দেওয়া হোক। আবেদনকারীরা বলল পাগড়ি পরা
কিন্তু বাঙ্গালিদের জতীয় পরিধেয় নয়। তারা লিখলেন বহু বাঙালি মনে করে পাগড়ি একটা অযৌক্তিক
শিরস্ত্রাণ, যেহেতু এটা সূর্যের কিরণ থেকে মাথা বাঁচাতে পারে না এবং এটা পরে কাজ
করাও মুশশকিল। ফলে দপ্তরে পাগড়ি পরে কাজ করা মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ফলে মানুষকে
দুধরণের শিরস্ত্রান নিয়ে দপ্তরে যেতে হচ্ছে একটা হাল্কা টুপি যেটা মানুষ পরে,
অন্যটা বাক্সে করে নিয়ে যাওয়া পাগড়ি। যখন কোন ইওরোপিয় কত্তা তাদের সামনে আসে তারা
টুপি খুলে পাগড়ি পরে নিতে বাধ্য হয়।
No comments:
Post a Comment