ক্লদ আলভারেজ
মাল্টিভার্সিটি এন্ড সিটিজেন্স ইন্টারন্যাশনাল, পেনাং, ২০১১
ভিন্নমত জ্ঞানচর্চার চটিমালার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, বিনয় লালের মুখবন্ধ
এই চটিমালা পেনাঙ্গের মাল্টিভার্সিটির নেওয়া বেশ কয়েকটি প্রকাশনার অন্যতম, যেখানে জনগণের বিদ্বতজন, জ্ঞানী এবং আন্দোলনের কর্মীরা দক্ষিণবিশ্ব থেকে প্রথমবার ২০০২ সালে একসঙ্গে পেনাঙ নগরের মত বহু প্রাচীন কালের বহুকৃষ্টির আদানপ্রদানের শহরে জড়ো হয়েছিলেন নিজেদের মপধ্যে ভাবনার আদানপ্রদানের জন্যে। আমাদের সময়ে সব থেকে বেশিবার উচ্চারিত শব্দ বিশ্বায়ন, এবং বিভিন্ন জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম থেকে বৌদ্ধিকস্তরে মুক্ত বাণিজ্যের নামে প্রায় উন্মুক্ত সীমান্তের ওপর এটির প্রভাব, বিপুল পরিমান পণ্যের গতায়াত, জাতীয় অর্থনীতিগুলির মধ্যে সংযোগ এবং বিভিন্ন দেশের বদ্ধ অর্থনীতির দরজা খোলা উদ্যম নিয়ে বিশদ চর্চা চলছে। বলা দরকার, বিশ্বজোড়া ব্যাপক মন্দা, আমেরিকার বাড়িবাজারের ধ্বস(যেটি আদতে বিশ্ব পুঁজির কাঠামোরই ব্যাপক গোলমালের চিহ্ন কি না) অথবা ব্যাপক খরুচে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের জয়যাত্রা কোনটাই গোটা ১৯৯০এর দশক থেকে একবিংশ শতক পর্যন্ত চলা বাজার অর্থনীতির বিপুল অগ্রগতিকে ঠেকাতে পারতে নি। জাপাটিসমোর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে সিয়াটেলে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন সত্ত্বেও সারা বিশ্বে মুক্ত বাণিজ্য এবং মুক্ত বাজারের কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে এবং দীর্ঘকাল ধরে শীতঘুমে ডুবে থাকা চিন আর ভারতের মত এশিয় অর্থনীতির জাগরণ ঘটছে। এটা বলা দরকার প্রাচীন সভ্যতাগুলি বলশালী বাজারের প্রবল ধাক্কায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিচ্ছে।
বিশ্বায়ন নিয়ে বেশ কিছু জনপ্রিয় বুলি তৈরি করেছে, যার মধ্যে জনপ্রিয় ‘সারা বিশ্বই একটি বিশ্বগ্রাম মার্কা’ বস্তাপচা বুলি নিয়ে বিপুল গবেষণায় কোন অন্তর্দৃষ্টি তৈরি হয় নি। কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে নতুনভাবে তৈরি হয়েছে ভয়ঙ্কর ধরণের দাস ব্যবসা, যাদের কাছে সীমান্তের বিধিনিষেধের কোন মূল্য নেই, কিছু মধ্যজীবির হাতে শ্রম লুন্ঠিত হচ্ছে। শুধু এইটুকুর জন্যে বিশ্বায়নের কুফলগুলি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারি। ইওরোপিয় সাম্রাজ্যবাদ যখন তুঙ্গে বা তারও আগে যখন ভারত মহাসাগর জুড়ে সারাবিশ্বে বিপুল বাণিজ্য পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছিল, সে সময়কে কিন্তু বিশ্বায়ন দাগিয়ে দেওয়া যায় নি। আজ আমরা বলতে পারি বিশ্বায়ন আমাদের বৌদ্ধিক চেতনার বড় একটা অংশ দখল করে নিয়েছে, ফলে কষ্ট হলেও এই রাজনীতিকে আমাদের আরও গভীরভাবে বুঝে দেখতে হবে।
আজকের বিশ্বে, বিশ্বায়নের সবথেকে বড় সমর্থকেরা বলে থাকে পণ্যের এবং সেবার হাতবদল ঘটছে বিপুলভাবে, অস্বাভাবিক দ্রুতলয়ে। ইন্টারনেট বিশ্বায়নের অন্যতম সহায়ক এবং বিশ্বায়নের নীতির মূর্ত প্রকাশ। এ সত্ত্বেও কেউ কেউ বলতেই পারে ইন্টারনেট এসে একমুখী তথ্য প্রবাহকে বহুমুখী করতে পেরেছে। আজকে যারা মাত্র যুবক, তাদের কাছে দুদশকের পুরোনো ইন্টারনেট শুধুই যোগাযোগের আর মাধ্যম হয়ে নেই টুইটের মাধ্যমে তারা মুক্তি খোঁজে। আজও বহু মানুষের কাছে বিশ্বায়নের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আইকনগুলি হল কোকাকোলা এবং ম্যাকডোনাল্ডের মত উদ্যম, ম্যাডোনা বা প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের মত তারকা বা রোনাল্ডো, বেকহ্যাম এবং অপবসৃত মাইকেল জর্ডনের মত খেলোয়াড়। আজ আর অভিকর শিল্পের বিশ্বায়নে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একা দাঁড়িয়ে নেই, জাপান তার এনিমেশন, মাঙ্গা, নিন্টেন্ডো গেম এবং বেবি ব্লেড আর বাকুগান নিয়ে মধ্যবিত্ত ঘরে ঝড়ের মত ঢুকে পড়েছে।
No comments:
Post a Comment