এর আগে আলোচনা করেছিলাম মহীশূরের টিপু সুলতানের গ্রন্থাগার। এখন তাঞ্জোরের সরস্বতী মহল গ্রন্থাগার, লক্ষ্ণৌএর জ্ঞানচর্চা নিয়ে আলোচনা করব।
তাঞ্জোরের সরস্বতী মহল গ্রন্থাগার বহু পরিশ্রমে তৈরি করেছিলেন তাঞ্জোরের মহারাজারা। অষ্টাদশ শতকে এই গ্রন্থাগারটি পরিপুষ্ট করেন মারাঠা শাসক রাজা দ্বিতীয় সেরফোজি। সেরফোজি ইংরেজি, জার্মান এবং ফরাসি ভাষা হাতের তালুর মত করে জানতেন। গ্রিক ল্যাটিনও জানতেন। রাজা বিপুল পরিমান বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি এবং বই কেনেন - বিশেষ করে রসায়নবিদ্যা, বিদ্যুৎ, অঙ্ক, চিকিতসাবিদ্যা, পশুচিকিতসা ইত্যাদিতে তাঁর উৎসাহ প্রবল ছিল। বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে তিনি ব্যক্তিদের সহায়তাও করতেন। মাদ্রাজের পাল্লিকোণ্ডন মাইস্ত্রি ছিলেন বাগানবিদ। তাঁকে নিযুক্ত করা হয় ফুল আর ফলের বাগান তৈরি করতে। এই বিদ্যে ছাড়াও কলমকরা, সার ইত্যাদি বিদ্যা প্রকাশেও তাকে উৎসাহিত করা হত - তিনি বইও লিখেছিলেন। রাজা ইংরেজি ভাষায় লিখিত শারীরবিদ্যার পুস্তক মারাঠি এবং তামিল ভাষায় অনুবাদ করান।
এই গ্রন্থাগারে ছিল একটি এয়ার পাম্প, একটি ইলেক্ট্রিফাইং যন্ত্র, হাতির দাঁতের কঙ্কাল বা মহাজাগতিক মানচিত্রের নানান নমুনা।তিনি বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্র, শল্যচিকিতসার হাতিয়ার এবং একটি ছাপাখানা কেনেন। রাজার সঙ্গে বৈঠক করে এক ইওরোপিয় ভ্রমণকারী লিখলেন, রাজা, quotes Fourcroy, Lavoisier, Linnaeus, and Buffon fluently। এই গ্রন্থাগার তৈরির মাধ্যমে তিনি created a configuration of institutions to facilitate the production and dissemination of new knowledge। এই গ্রন্থাগার স্থানীয় মানুষ এবং ইওরোপিয়দের নিত্য গন্তব্যস্থল ছিল।
উত্তরে ছিল অযোধ্যা বা অবধের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে গ্রন্থাগার। অষ্টাদস শতকে ৩ লক্ষ বই ছিল এখানে। ৭০০টি ভই মুঘল রাজ্য একে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল। এর খুব বেশি বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায় না।
বেশ কিছু হঠাৎ রাজা হওয়া আফগানদের পৃষ্ঠপোষকতায় উত্তরভারত জুড়ে প্রচুর গ্রন্থাগার গজিয়ে ওঠে যার মধ্যে ছিল ভূগোল, ভ্রমণ, কবিতা, চিকিৎসাবিদ্যা, শিকারবদ্যা, পণ্য ফেরি বিদ্যা, এবং প্রাকৃতিক ইতিহাস, কৃষি, পশু চিকিৎসা, কিমিয়া বিদ্যার মত নানান বিষয়ে বিশ্বকোষ।
লক্ষ্ণৌএর গ্রন্থাগার বিভিন্ন জ্ঞানীর আশ্রয়স্থল ছিল কারণ এটি উত্তরভারতে ইসলামিক যুক্তিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিগণিত হত। তেমনি এর সঙ্গে গড়ে উঠেছিল ফিরংগি মহল নামে একটি বিদ্যালয়, যেখানে মুঘল আমলের নানান প্রযুক্তি বিদ্যার পাঠদান করা হত। এই বিদ্যালয়ে ফরাসীদের উপস্থিতি বিপুলভাবে ছিল। এই বিদ্যালয়ে ছিলেন ফরাসী জ্ঞানী ক্লদ মার্টিন। তিনি অস্ত্র তৈরি থেকে মহাকাশচর্চা থেকে বিদ্যুৎ থেকে, শল্যচিকিৎসা থেকে নীলচাষ পর্যন্ত হাজারো বিষয়ে পাঠদানে উৎসাহী ছিলেন।
এই বিষয়ে উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে সেখানকার শাসক খালিদুদ্দিন খানএর লেখা পড়া যেতে পারে।১৮২০ সালে তিনি ব্রিটেনে তৈরি একটি দূরবীন আনানোর জন্য নির্দেশ দেন, যাতে তিঞ্জি লক্ষ্ণৌতে একটি মহাকাশ নিরীক্ষণ কেন্দ্র(অবজারভেটরি) তৈরি করতে পারেন। তাঁর উৎসাহ ছিল দর্শন, রসায়ন এবং যন্ত্রবিদ্যায়। যন্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করে তিনি নিজে একটি প্রপেলর উদ্ভাবন করেন।
ব্রিটিশদের ভারত জয় এই সব প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকলাপে দাঁড়ি টেনে দিল।
No comments:
Post a Comment