সমাজবিজ্ঞান এবং বাস্তবতা
২০১০ সালের জানুয়ারির শীতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগ(সবি) ইওরোপিয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় একটি নতুনতর ইওরোপিয় স্টাডি সেন্টারের উদ্বোধন করল। এই বিভাগটির কাজ হবে ইওরোপিয় বিদ্বানদের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্নাতকোত্তর এবং এমফিল পাঠয়ক্রমের ইওরোপিয় সমাজতত্ত্বের পাঠ্যসূচী নতুন করে ঢেলে সাজা। দুবছরের প্রকল্পে ইওরোপিয় ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ লক্ষ ইউরো কাঞ্চনমূল্য দান করবে।
বেশ কর্কশভাবে আমরা একটা প্রশ্ন উত্থাপন করতেই পারি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের উদ্যমের কি কোন প্রয়োজন ছিল? কারন শুধু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পোড়া এদেশের এবং বিশ্বের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে অত্যাবশ্যকীয় সমাজতত্ত্ব বিভাগ আছে।
উপনিবেশের একটা স্বাভাবিক অনুসিদ্ধান্ত হল বৌদ্ধিক নির্ভরতা এবং দাসবৃত্তি। আজকে প্রায় প্রতিটি বিভাগ থেকে একে স্বাগত জানানো হচ্ছে কেননা এর সঙ্গে কাঞ্চনমূল্যের ঝনঝনানির সুখদ শব্দ জড়িয়ে আছে। আজকের স্ট্রাকচারাল এজজাস্টমেন্টের যুগে প্রত্যেকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাসকদের ব্যাপক অর্থ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন পাঠন চালানোর সব থেকে ভাল উপায় হল, অন্যের পণ্যের গুণাগুণ প্রচারের দায়িত্ব নেওয়া। ইওরোপেরকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের একটাও স্টাডি সেন্টার নেই যেখানে ভারতীয়রা ইওরোপিয়দের বিপুল বিশাল প্রায় অসমাধানযোগ্য সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে। অইওরোপিয় দেশে সমাজতত্ত্ব বলতে কিছুটা সংখ্যালঘুর মেন্সট্রিমাইজেশন, ইসলামিক সমাজের মধ্যে থাকার সমস্যা বিশ্লেষণ, বৃদ্ধদের সমস্যা, এলিয়েনেশন ইত্যাদি। আমরা সক্কলেই একমুখী রাস্তায় যেন চলছি – প্রত্যেকেই কেন্দ্র থেকে প্রান্তের দিকে যাচ্ছে – কারন সেইভাবেই বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে জ্ঞানের প্রবাহ দক্ষিণের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আজ সক্কলে কোমর বেঁধে দাঁড়িয়েছে – ভিয়েতনামে, ইরাকে, আফগানিস্তানে – কিন্তু জ্ঞানচর্চায় বা পাঠ্যক্রমের সাম্রাজ্যবাদের কোন বিরোধিতা নেই, কারণ তাকে দেখাই যায় না। অন্যভাবে বলতে গেলে পাঠ্যক্রম আর জ্ঞানচর্চায় সাম্রাজ্যবাদ আর উপনিবেশিকতা তার পকড় বাড়িয়েছে এবং তার স্বার্থকে উচ্চকিতভাবে অইওরোপিট-আমেরিকিয় বিশ্বে প্রচার করে চলেছে।
সারা বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পঠন দপ্তর এবং শিক্ষকমণ্ডলী – তারা চনা বা না চান – পশ্চিমের পঠনপাঠনক্রিয়ায় যে ধরণের সমাজবিদ্যাচর্চার উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে, তারাও সেই পথ মন দিয়ে শিখে অনুসরণ করে চলেছেন। Farid Alatas যাকে বলছেন social science powers। তাদের কাজকর্মের উপাত্ত আজও মোটামুটি পশ্চিমি বিদ্বানদের অনুসরণ করা থেকে আহৃত হয়। আজকের দিনে অধিকাংশ অইওরোপিয় বিশ্ববদ্যালয়ে যা পড়ানো হয় তার বড় অংশই শতাব্দ প্রাচীন ইওরোপিয় সামাজতত্ত্বের জ্ঞানের চর্বিতচর্বণ, যা আজ বাতিলের পর্যায়ে পড়েছে।
এশিয়া আফ্রিকার বহু নতুন ছেলেমেয়েরা তাদের সমাজ নির্ভর মননশীল, স্বাধীন কাজ করয়ার চেষ্টা করলেও কাজের/গবেষণার পদ্ধতি কিন্তু সেই ইওরো-আমেরিকিয় চরিত্রের রয়ে গিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি শুধু পশ্চিমিদের ছেড়ে যাওয়া কেদারায় এদেশের ইওরো-আমেরিকিয় বিদ্যাচর্চার অনুগামীদের দখলের লড়াই শুরু করা। তার বেশি কিস্যু নয়। স্বাভাবইকভাবেই স্বাধীন চিন্তার স্ফূরণ দেখা যায় না বলাই যায়, সব ধরণের উদ্যম আদতে বৌদ্ধিক নিস্ফলা ডোবাখানা।
আমরা বহুকাল ধরে যাকে সমাজ বিজ্ঞান বলে মনে করি, সেটা আদতে ইওরোপিয় দৃষ্টিতে, ইওরোপিয় সামাজিক সমস্যাগুলি, ইওরোপিয় বৌদ্ধিক ইতিহাস নির্ভর করে, ইওরোপে বিকশিত গবেষণা পদ্ধতির থেকে কিছুটা বেশি কিছু ভাবনা। এই পদ্ধতিটি অইওরোপিয় সমাজের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের বৌদ্ধিক হাতিয়ার কি হতে পারে? এই জ্ঞানচর্চার সঙ্গে ইওরোপের বাইরে থাকা সামাজিক মানুষের জ্ঞান এবং জীবনধারণের কোন আবেগী এবং পারমার্থিক সম্পর্ক থাকতে পারে কি?
২০১০ সালের জানুয়ারির শীতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগ(সবি) ইওরোপিয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় একটি নতুনতর ইওরোপিয় স্টাডি সেন্টারের উদ্বোধন করল। এই বিভাগটির কাজ হবে ইওরোপিয় বিদ্বানদের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্নাতকোত্তর এবং এমফিল পাঠয়ক্রমের ইওরোপিয় সমাজতত্ত্বের পাঠ্যসূচী নতুন করে ঢেলে সাজা। দুবছরের প্রকল্পে ইওরোপিয় ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ লক্ষ ইউরো কাঞ্চনমূল্য দান করবে।
বেশ কর্কশভাবে আমরা একটা প্রশ্ন উত্থাপন করতেই পারি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের উদ্যমের কি কোন প্রয়োজন ছিল? কারন শুধু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পোড়া এদেশের এবং বিশ্বের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে অত্যাবশ্যকীয় সমাজতত্ত্ব বিভাগ আছে।
উপনিবেশের একটা স্বাভাবিক অনুসিদ্ধান্ত হল বৌদ্ধিক নির্ভরতা এবং দাসবৃত্তি। আজকে প্রায় প্রতিটি বিভাগ থেকে একে স্বাগত জানানো হচ্ছে কেননা এর সঙ্গে কাঞ্চনমূল্যের ঝনঝনানির সুখদ শব্দ জড়িয়ে আছে। আজকের স্ট্রাকচারাল এজজাস্টমেন্টের যুগে প্রত্যেকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাসকদের ব্যাপক অর্থ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন পাঠন চালানোর সব থেকে ভাল উপায় হল, অন্যের পণ্যের গুণাগুণ প্রচারের দায়িত্ব নেওয়া। ইওরোপেরকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের একটাও স্টাডি সেন্টার নেই যেখানে ভারতীয়রা ইওরোপিয়দের বিপুল বিশাল প্রায় অসমাধানযোগ্য সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে। অইওরোপিয় দেশে সমাজতত্ত্ব বলতে কিছুটা সংখ্যালঘুর মেন্সট্রিমাইজেশন, ইসলামিক সমাজের মধ্যে থাকার সমস্যা বিশ্লেষণ, বৃদ্ধদের সমস্যা, এলিয়েনেশন ইত্যাদি। আমরা সক্কলেই একমুখী রাস্তায় যেন চলছি – প্রত্যেকেই কেন্দ্র থেকে প্রান্তের দিকে যাচ্ছে – কারন সেইভাবেই বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে জ্ঞানের প্রবাহ দক্ষিণের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আজ সক্কলে কোমর বেঁধে দাঁড়িয়েছে – ভিয়েতনামে, ইরাকে, আফগানিস্তানে – কিন্তু জ্ঞানচর্চায় বা পাঠ্যক্রমের সাম্রাজ্যবাদের কোন বিরোধিতা নেই, কারণ তাকে দেখাই যায় না। অন্যভাবে বলতে গেলে পাঠ্যক্রম আর জ্ঞানচর্চায় সাম্রাজ্যবাদ আর উপনিবেশিকতা তার পকড় বাড়িয়েছে এবং তার স্বার্থকে উচ্চকিতভাবে অইওরোপিট-আমেরিকিয় বিশ্বে প্রচার করে চলেছে।
সারা বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পঠন দপ্তর এবং শিক্ষকমণ্ডলী – তারা চনা বা না চান – পশ্চিমের পঠনপাঠনক্রিয়ায় যে ধরণের সমাজবিদ্যাচর্চার উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে, তারাও সেই পথ মন দিয়ে শিখে অনুসরণ করে চলেছেন। Farid Alatas যাকে বলছেন social science powers। তাদের কাজকর্মের উপাত্ত আজও মোটামুটি পশ্চিমি বিদ্বানদের অনুসরণ করা থেকে আহৃত হয়। আজকের দিনে অধিকাংশ অইওরোপিয় বিশ্ববদ্যালয়ে যা পড়ানো হয় তার বড় অংশই শতাব্দ প্রাচীন ইওরোপিয় সামাজতত্ত্বের জ্ঞানের চর্বিতচর্বণ, যা আজ বাতিলের পর্যায়ে পড়েছে।
এশিয়া আফ্রিকার বহু নতুন ছেলেমেয়েরা তাদের সমাজ নির্ভর মননশীল, স্বাধীন কাজ করয়ার চেষ্টা করলেও কাজের/গবেষণার পদ্ধতি কিন্তু সেই ইওরো-আমেরিকিয় চরিত্রের রয়ে গিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি শুধু পশ্চিমিদের ছেড়ে যাওয়া কেদারায় এদেশের ইওরো-আমেরিকিয় বিদ্যাচর্চার অনুগামীদের দখলের লড়াই শুরু করা। তার বেশি কিস্যু নয়। স্বাভাবইকভাবেই স্বাধীন চিন্তার স্ফূরণ দেখা যায় না বলাই যায়, সব ধরণের উদ্যম আদতে বৌদ্ধিক নিস্ফলা ডোবাখানা।
আমরা বহুকাল ধরে যাকে সমাজ বিজ্ঞান বলে মনে করি, সেটা আদতে ইওরোপিয় দৃষ্টিতে, ইওরোপিয় সামাজিক সমস্যাগুলি, ইওরোপিয় বৌদ্ধিক ইতিহাস নির্ভর করে, ইওরোপে বিকশিত গবেষণা পদ্ধতির থেকে কিছুটা বেশি কিছু ভাবনা। এই পদ্ধতিটি অইওরোপিয় সমাজের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের বৌদ্ধিক হাতিয়ার কি হতে পারে? এই জ্ঞানচর্চার সঙ্গে ইওরোপের বাইরে থাকা সামাজিক মানুষের জ্ঞান এবং জীবনধারণের কোন আবেগী এবং পারমার্থিক সম্পর্ক থাকতে পারে কি?
No comments:
Post a Comment