অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
গাইকোয়াড এবং রাজা
গাইকোয়াডের কি ইচ্ছে ছিল বা ইচ্ছে ছিল না, সেটা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারতীয় এক রাজার কাছ থেকে যে ধরণের পোষাক আশা করা গিয়েছিল, সেই পোষাক তিনি পরেন নি। তার বিদ্রোহ দৃশ্যত দৃষ্ট হয়েছিল যতদূর সম্ভব সেনা বা প্রশাসনিক সেবায় থাকা কোন সাদা সাহেব, সাম্রাজ্যের রাজার উপস্থিতিতে হাতে একটা বেতের ছড়ি দুলিয়ে রাজার দিকে পিছন করে হেঁটে আসার দৃশ্যে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ বসে আছেন। এর পর থেকে ভারতীয়দের এই আনুষ্ঠানিক চরিত্র বার বার দেখিয়ে তাদের ওপর মানসিক অত্যাচার নামিয়ে আনা হবে।
ভারতীয় রাজাদের আর বিধর্মী জনগনকে সেনাবাহিনী দিয়ে অবাক করিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা সাম্রাজ্যের পক্ষে তো ছিলই। মেট্রোপলিটনে শাসক শ্রেণী তাদের প্রাচীন উতসবে পরা বর্ণাঢ্য পরিধেয় আবিষ্কার করে পরিধান করে নতুন মধ্যবিত্ত এবং বিপ্লবের দিকে পা বাড়িয়ে থাকা নিচের মহল, সক্কলকে অবাক করিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন। উনবিংশ শতাব্দের মধ্যভাগে, লন্ডনে শাসকেরা তাদের রাজনীতিতে নানান ধরণের শহুরে আচার আচরণ খুঁজে বার করার চেষ্টায় ছিলেন। এই নব্য তৈরি হওয়া আচার আচরণে নতুন ধরণের পোষাক, রাজপোষাক এবং অন্যান্য ধরণের চোখ ধাঁধানো পোষাক নতুনভাবে তৈরি হল বা পরম্পরার দোহাই দিয়ে চালু হল। অংশগ্রহণকারী বা দর্শকদের মধ্যে অতীতের কৌম স্মৃতি চাগিয়ে তোলার জন্যে ছোট শহরের মেয়র থেকে লন্ডন শহরের ধনী ব্যবসায়ী এবং রাজপরিবার, আমলারা পর্যন্ত জুড়ে গেলেন। এই ধরণের শহুরে উতসব আচার আচরণের জন্যে নতুন ধরণের পোষাকের আঙ্গিকগুলি নতুন করে ভারতে নিয়ে গিয়ে স্তরীভূত সমাজের রাজাদের সামনে উপস্থিত করা হল। ১৯১১ সালের সাম্রাজ্যের দরবারের সাফল্য সম্বন্ধে ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজের সাংবাদিক লিখলেন – ডেস্পাইট দ্য অফট-রিপিটেড স্টেটমেন্ট দ্যাট দিস এইজ ইজ ভেরি ড্রাব ওয়ান সারটোরিয়ালি সো ফার দ্য ওয়েস্ট ইজ কনসার্নড, দেয়ার আর ভেরিয়াস অকেশনস অন হুইচ ইওরোপ ইজ এবল টু শো দ্য ওরিয়েন্ট দ্যাট ইট ট, ক্যান ডিস্প্লে ইটসেলফ ইন ব্রিলিয়ান্ট প্লুমেজ। সাচ ইন্সট্যান্সেস এজ দ্য করোনেশন অফ কিং জর্জ এন্ড কুইন মেরি এন্ড কিং এডোয়ার্ড সেভেন এন্ড কুইন আলেকজান্ড্রা জাম্প ইন্টু দ্য মিন্ড অব ওয়ান্স; এন্ড টু দিজ মেমোরিজ অব গ্লিটারিং ক্যালাইডোস্কোপিক স্টেট পেজান্ট্রি মাস্ট নাউ বি এডেড দোজ অব দ্য গ্রেট দরবার হেল্ড স রিসেন্টলি ইন দেলহি। দেয়ার ইওরোপিয়ানস ভায়েড উইথ এশিয়াটিকস উইথ এক্সেলেন্ট এফেক্ট।
দৈনন্দিনতার পোষাকে ভারতীয়রা
উনবিংশ শতাব্দে ভারতে ঘুরতে আশা ব্রিটিশ ভ্রমণকারীর অধিকাংশ ভারতবাসীর পোষাক সম্বন্ধে একটাই শব্দ ব্যবহার তৈরি হয়েছিল- প্রায় নগ্নতা। অধিকাংশ ভ্রমণকারীকে ভারতে আসতে গেলে তাকে হয় মাদ্রাজ, না হয় ডায়মন্ড হারবার দিয়ে এসে নদী ধরে কলকাতা আসতে হত। মাদ্রাজে নামতে হত খোলা নৌকোয় মাঝিদের বাওয়া নৌকোয় করে শহরে আসতে হত। ডায়মন্ড হারবারে এলে তাদের হয় বার্জ(বজরা) না হয় ছোট ছোট নৌকো করে কলকাতায় আসতে হত। প্রথম যে ভারতীয় সঙ্গে দেখার সুযোগ হত তিনি হলেন মাঝি। রয়্যাল নেভির এক শল্যচিকিতসক উনবিংশ শতকের শেষের দিকে কলকাতায় আসার পথে প্রথম দাঁড়ি/মাঝি দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন – দ্য হাবিলমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি দাঁড়ি অর ওয়াটারম্যান হু রো’জ অর ডিগস আওয়ার বজরা(বার্জ), আপ দ্য গ্যাঙ্গেজ, কনজিস্টস অন আ স্মল ন্যারো পিস অব ক্লথ(ডোলি), পাসেস বিটুইন দ্য থাইজ, এন্ড ফ্যাসনড বিফোর এন্ড বাহান্ড টু আ অপিস অব স্টাউট প্যাকথ্রেড, দ্যাট এনসার্কলস দ্য ওয়েস্ট। ইন দিস ড্রেস অর আনড্রেস, করস্পন্ডিং প্রেটি নিয়ারলি টু দ্য ফিগলিফ অফ আওয়ার গ্রেট প্রজিনিটর, হি এক্সপোজেস, হিজ স্কিন টু আ একশন অব দ্য ট্রপিক্যাল সান, আ ডিলিউজ অব রেইন অর আ পিয়ার্সিং নর্থওয়েস্টার।
ব্রিটিশ মহিলারাও নতুন ভারতে এসে বাড়ির নিচু শ্রেণীর গৃহভৃত্যদের প্রায় নগ্ন দেখার কৃষ্টিগত ধাক্কা খেতেন সারাক্ষণ মাটির ওপরে বসে সারাক্ষণ ঝাড়ু দিচ্ছেন, পরিষ্কার করছেন বা বাবালোগের সঙ্গে খেলা করছেন দেখে। একই সঙ্গে তারা তাদের শোয়ার ঘরে মহিলাদের গুলিতানির মধ্যেও কাজ করতেন। ভারতে আসা ইওরোপিয়রা খুব তাড়াতাড়ি প্রায় নগ্ন পুরুষ দেখার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হয়ে পড়তেন, এবং কিছু পরে সাদাদের চোখে কালো নগ্নদের জামাকাপড় প্রায় না পরা দেখার দৃশ্য ব্রিটিশ সূক্ষ্ম অনুভূতিতে আর আঘাত করত না। তখন তারা অতি উদ্যমে অঞ্চল, জাত, গোষ্ঠী, বর্ণ, সম্পদ ভেদে পরিধেয়র কি বৈচিত্র সেই গবেষনায় মেতে উঠত।
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
গাইকোয়াড এবং রাজা
গাইকোয়াডের কি ইচ্ছে ছিল বা ইচ্ছে ছিল না, সেটা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারতীয় এক রাজার কাছ থেকে যে ধরণের পোষাক আশা করা গিয়েছিল, সেই পোষাক তিনি পরেন নি। তার বিদ্রোহ দৃশ্যত দৃষ্ট হয়েছিল যতদূর সম্ভব সেনা বা প্রশাসনিক সেবায় থাকা কোন সাদা সাহেব, সাম্রাজ্যের রাজার উপস্থিতিতে হাতে একটা বেতের ছড়ি দুলিয়ে রাজার দিকে পিছন করে হেঁটে আসার দৃশ্যে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ বসে আছেন। এর পর থেকে ভারতীয়দের এই আনুষ্ঠানিক চরিত্র বার বার দেখিয়ে তাদের ওপর মানসিক অত্যাচার নামিয়ে আনা হবে।
ভারতীয় রাজাদের আর বিধর্মী জনগনকে সেনাবাহিনী দিয়ে অবাক করিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা সাম্রাজ্যের পক্ষে তো ছিলই। মেট্রোপলিটনে শাসক শ্রেণী তাদের প্রাচীন উতসবে পরা বর্ণাঢ্য পরিধেয় আবিষ্কার করে পরিধান করে নতুন মধ্যবিত্ত এবং বিপ্লবের দিকে পা বাড়িয়ে থাকা নিচের মহল, সক্কলকে অবাক করিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন। উনবিংশ শতাব্দের মধ্যভাগে, লন্ডনে শাসকেরা তাদের রাজনীতিতে নানান ধরণের শহুরে আচার আচরণ খুঁজে বার করার চেষ্টায় ছিলেন। এই নব্য তৈরি হওয়া আচার আচরণে নতুন ধরণের পোষাক, রাজপোষাক এবং অন্যান্য ধরণের চোখ ধাঁধানো পোষাক নতুনভাবে তৈরি হল বা পরম্পরার দোহাই দিয়ে চালু হল। অংশগ্রহণকারী বা দর্শকদের মধ্যে অতীতের কৌম স্মৃতি চাগিয়ে তোলার জন্যে ছোট শহরের মেয়র থেকে লন্ডন শহরের ধনী ব্যবসায়ী এবং রাজপরিবার, আমলারা পর্যন্ত জুড়ে গেলেন। এই ধরণের শহুরে উতসব আচার আচরণের জন্যে নতুন ধরণের পোষাকের আঙ্গিকগুলি নতুন করে ভারতে নিয়ে গিয়ে স্তরীভূত সমাজের রাজাদের সামনে উপস্থিত করা হল। ১৯১১ সালের সাম্রাজ্যের দরবারের সাফল্য সম্বন্ধে ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজের সাংবাদিক লিখলেন – ডেস্পাইট দ্য অফট-রিপিটেড স্টেটমেন্ট দ্যাট দিস এইজ ইজ ভেরি ড্রাব ওয়ান সারটোরিয়ালি সো ফার দ্য ওয়েস্ট ইজ কনসার্নড, দেয়ার আর ভেরিয়াস অকেশনস অন হুইচ ইওরোপ ইজ এবল টু শো দ্য ওরিয়েন্ট দ্যাট ইট ট, ক্যান ডিস্প্লে ইটসেলফ ইন ব্রিলিয়ান্ট প্লুমেজ। সাচ ইন্সট্যান্সেস এজ দ্য করোনেশন অফ কিং জর্জ এন্ড কুইন মেরি এন্ড কিং এডোয়ার্ড সেভেন এন্ড কুইন আলেকজান্ড্রা জাম্প ইন্টু দ্য মিন্ড অব ওয়ান্স; এন্ড টু দিজ মেমোরিজ অব গ্লিটারিং ক্যালাইডোস্কোপিক স্টেট পেজান্ট্রি মাস্ট নাউ বি এডেড দোজ অব দ্য গ্রেট দরবার হেল্ড স রিসেন্টলি ইন দেলহি। দেয়ার ইওরোপিয়ানস ভায়েড উইথ এশিয়াটিকস উইথ এক্সেলেন্ট এফেক্ট।
দৈনন্দিনতার পোষাকে ভারতীয়রা
উনবিংশ শতাব্দে ভারতে ঘুরতে আশা ব্রিটিশ ভ্রমণকারীর অধিকাংশ ভারতবাসীর পোষাক সম্বন্ধে একটাই শব্দ ব্যবহার তৈরি হয়েছিল- প্রায় নগ্নতা। অধিকাংশ ভ্রমণকারীকে ভারতে আসতে গেলে তাকে হয় মাদ্রাজ, না হয় ডায়মন্ড হারবার দিয়ে এসে নদী ধরে কলকাতা আসতে হত। মাদ্রাজে নামতে হত খোলা নৌকোয় মাঝিদের বাওয়া নৌকোয় করে শহরে আসতে হত। ডায়মন্ড হারবারে এলে তাদের হয় বার্জ(বজরা) না হয় ছোট ছোট নৌকো করে কলকাতায় আসতে হত। প্রথম যে ভারতীয় সঙ্গে দেখার সুযোগ হত তিনি হলেন মাঝি। রয়্যাল নেভির এক শল্যচিকিতসক উনবিংশ শতকের শেষের দিকে কলকাতায় আসার পথে প্রথম দাঁড়ি/মাঝি দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন – দ্য হাবিলমেন্ট অফ দ্য বেঙ্গলি দাঁড়ি অর ওয়াটারম্যান হু রো’জ অর ডিগস আওয়ার বজরা(বার্জ), আপ দ্য গ্যাঙ্গেজ, কনজিস্টস অন আ স্মল ন্যারো পিস অব ক্লথ(ডোলি), পাসেস বিটুইন দ্য থাইজ, এন্ড ফ্যাসনড বিফোর এন্ড বাহান্ড টু আ অপিস অব স্টাউট প্যাকথ্রেড, দ্যাট এনসার্কলস দ্য ওয়েস্ট। ইন দিস ড্রেস অর আনড্রেস, করস্পন্ডিং প্রেটি নিয়ারলি টু দ্য ফিগলিফ অফ আওয়ার গ্রেট প্রজিনিটর, হি এক্সপোজেস, হিজ স্কিন টু আ একশন অব দ্য ট্রপিক্যাল সান, আ ডিলিউজ অব রেইন অর আ পিয়ার্সিং নর্থওয়েস্টার।
ব্রিটিশ মহিলারাও নতুন ভারতে এসে বাড়ির নিচু শ্রেণীর গৃহভৃত্যদের প্রায় নগ্ন দেখার কৃষ্টিগত ধাক্কা খেতেন সারাক্ষণ মাটির ওপরে বসে সারাক্ষণ ঝাড়ু দিচ্ছেন, পরিষ্কার করছেন বা বাবালোগের সঙ্গে খেলা করছেন দেখে। একই সঙ্গে তারা তাদের শোয়ার ঘরে মহিলাদের গুলিতানির মধ্যেও কাজ করতেন। ভারতে আসা ইওরোপিয়রা খুব তাড়াতাড়ি প্রায় নগ্ন পুরুষ দেখার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হয়ে পড়তেন, এবং কিছু পরে সাদাদের চোখে কালো নগ্নদের জামাকাপড় প্রায় না পরা দেখার দৃশ্য ব্রিটিশ সূক্ষ্ম অনুভূতিতে আর আঘাত করত না। তখন তারা অতি উদ্যমে অঞ্চল, জাত, গোষ্ঠী, বর্ণ, সম্পদ ভেদে পরিধেয়র কি বৈচিত্র সেই গবেষনায় মেতে উঠত।
No comments:
Post a Comment