অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
পাগলা কুত্তা আর
ব্রিটিশ মধ্যাহ্নে রাস্তায় হাঁটে
পোষাকের সঙ্গে
সামাজিক স্তর, ক্ষমতা এবং সম্মান জড়িত থাকার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশেরা জানাতে ভোলেনি
কি করে তাদের কাপড় চোপড় গরম আর রোগ থেকে বাঁচায়। অধিকাংশ ব্রিটিশারদের ভারতীয় জীবন
শুরু হত জাহাজে। অষ্টাদশ শতকেই ভারতে আসার সময় বেশ কমেছে। প্রথমে উত্তমাশা অন্তরীপ
হয়ে মাদ্রাজ হয়ে বাংলায় আসার সময় লাগত মোটামুটি সাত থেকে আট মাস। ১৮৪০এর দশক থেকে
ইংলন্ড থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার বন্দর। জাহাজ পাল্টে সুয়েজ। সেখান থেকে জাহাজ পাল্টে
বম্বের জাহাজ ধরে ভারত এবং কলকাতায় আসতে লাগত ১০০-১২০ দিন। ১৮৬৭তে বাষ্পীয় পোত
চালুর পর এই সময়টা এক মাস থেকে ছয় সপ্তাহ লাগত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়
মোটামুটি তিন হপ্তা।
একজন যাত্রীকে
যাত্রার চরিত্র, যাত্রার তাতপর্য, যাত্রার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা, এবং
যাত্রাকালীন সময়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া ইত্যাদির সঙ্গে জুঝতে হয়। দূর যাত্রার
স্বাচ্ছন্দ্য হয়ত ক্রমে বাড়ল কিন্তু যাত্রার মানে একই থেকে গেল। ব্রিটেন থেকে উপনিবেশের
দিকে যাত্রা করার অর্থ একটি জীবনের সঙ্গে যুক্ত বন্ধু, পরিবার, খেলাধুলা, বাগান, ঠাণ্ডা
স্যাঁতস্যাঁতে ইংলন্ড ছেড়ে আরেকটি নতুন জীবনের দিকে যাত্রা। জাহাজে গ্রিফিন(যুবা
ব্রিটিশ) বা স্পিন(বিধবা বা অবিবাহিত ব্রিটিশ মহিলা) পুরোনোদের সঙ্গে মিলে পাক্কা
সাহেবি কায়দা কসরত শিখতেন।
জাহাজে ভাসা
যাত্রীকে প্রথম যে প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হত, সে যে উদ্দেশ্যেই ভারতে যাক না কেন,
যাত্রার জন্যে এবং ভারতের জীবনের জন্যে যে যথেষ্ট রসদ নিয়েছে কি না। উনবিংশ শতের
শেষের দিকেও শুধু জাহাজে বিপুল সময় কাটাবার জন্যে যথেষ্ট কাপড় নেওয়ার পরামর্শ পেত,
কারণ জাহাজে কাপড় কাচার কোন ব্যবস্থা ছিল না। ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসনের ভাষায় অন্তত
চার ডজন গ্রীষ্মে পরার উপযুক্ত সূক্ষ্ম সুতির কিন্তু মজবুত, ক্যালিকো শার্ট নেওয়ার
কারণ ভারতে লিনেনের চল নেই বললেই চলে কারণ গ্রীষ্মের প্যাচপ্যাচে গরমে সেটা গায়ে
বসে যায়। এছাড়াও আরও এক ডজন কুঁচি দেওয়া শার্টও নিতে হত। একই পরিমানে নিতম্ব
পর্যন্ত পৌঁছন জামার তলায় পরা অন্তর্বাসেরও কথা তিনি বলেছেন যা রাতে শুতে ব্যহৃত হবে।
পুরুষদের জন্যে
চার জোড়া প্যান্টালুন দুটো শক্তপোক্ত আর দুটো হাল্কা এবং একই সঙ্গে যতখুশি পরিমান
জামা। তার প্রয়োজন সুতির বোনা অন্তর্বাস, ছয় জোড়া নানান আকার এবং বস্তুর মোজা, তিনটে
ভেলভেট মোজা, চার ডজন লিনেন গলায় ঝোলানো রুমাল, একই সঙ্খ্যায় শস্তার অন্তর্বাস এবং
দু’ডজন আইরিশ লিনেন ওয়েস্টকোট। জাহাজে যাত্রীর থাকতে হবে অতলান্তিকের ঠাণ্ডার
এলাকা পার হওয়ার সময়ে গরম গ্রেটকোট, এবং সঙ্গে আরও দুটো তিনিটে আঙ্গিকের কোট/জ্যাকেট
এবং অনেক পরিমান বুট আর অন্যান্য জুতো। কোম্পানির সেনায় যোগ দিতে যাওয়া যুবাটি
জানত না কোন বাহিনীতে সে কাজ পাবে। তারপক্ষে ব্রিটিশ সেনা পোষাক নিয়ে যাওয়া মুশকিল
কারণ তার আঙ্গিক আলাদা হতে পারে। ফলে সে ভারতে গিয়ে পোষাক বানাত।
মহিলাদের
আবশ্যিকভাবে কি কি নিতে হয়, তা নিয়ে ক্যাপটেন উইলিয়ামসন রা কাড়েন নি। বরং তিনি
রসিয়ে রসিয়ে বলেছেন এশিয় বিছানা সঙ্গী বা চেরে আমি পাওয়ার খরচ এবং উপকারের বিশদ
বর্ণনা। মাসে চল্লিশ টাকা বা বছরে চল্লিশ পাউন্ড খরচ করলে শুধু যে শয্যাসঙ্গী
পাওয়া যায় তা নয় সে তার গৃহস্থালীও দেখাশোনা করে দেবে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন
পুরুষমানুষ ঘেঁসা দশজনের মধ্যে নয় জন মহিলাই মুসলমান, হেঁদুরা অতটা খোলামেলা হয়
না। অন্য সম্ভাবনা হল পর্তুগিজ মহিলা। এরা মুসলমান মহিলাদের তুলনায় অনেকবেশি
ঘরোয়া। তবে উইলিয়ামসন মনে করছেন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের অতীত সম্বন্ধে খুব
গর্বিত এবং প্রতিশোধপরায়ণ। তিনি বইতে ভারতীয় মহিলাদের পছন্দের দশ পাতা জোড়া গয়নার
বর্ণনা দিয়েছেন।
উইলিয়ামসনের ইস্ট
ইন্ডিয়া ভাদে মেকুমের প্রথম সংস্করণ প্রকাশের পনের বছর পর ব্যকরণ, শব্দপুস্তক,
হিন্দুস্থানী বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক লেখা ভাষাবিদ জি বি গিলক্রিস্ট একখানি পুস্তক রচনা
করেন। ভারতে অন্তত কুড়ি বছর থাকার পরে লন্ডনে ফিরে ১৮০৩ সালে লন্ডনে একটি ভাষা বিদ্যালয়
খোলেন। সময় পাল্টেছে, যুবারা আর গিলক্রিস্টের থেকে শয্যাসঙ্গী ভাড়া করার খবর জানতে
চায় না, কিন্তু তিনি লিখেছেন ভারতে মহিলাদের চালানোর গোপন কথার এবং তার সঙ্গে
জাহাজে মহিলাদের সঙ্গে যাওয়ার পষাকের তালিকা
৭২ শার্ট
৩৬ নাইট গাউন
৩৬ নাইট ক্যাপ
৩ ফ্লানেল পেটিকোট
১২ বডিস ছাড়া শরীরের
মধ্যাঞ্চলের পেটিকোট
১২ স্লিপ্স
৩৬ সুতির মোজা
২৪ সিলকের মোজা
২ কালো সিল্কের
মোজা
১৮ সাদা ড্রেস
৬ রঙ্গিন ড্রেস
৬ ইভিনিং ড্রেস
৬০ পকেট রুমাল
৪ ড্রেসিং গাউন
সিল্কের পেলিসি(বোরখা?)
৩ বনেট
১২ মরিং ক্যাপ
২৪ লং গ্লোভস
২৪ শর্ট গ্লোভ
৪ কর্সেট
৬ পিলো কেস
৩৬ টা টাওয়েল
আইডিং হ্যাবিত
No comments:
Post a Comment