সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
হোয়াইট স্টাডিজ আর অনুমানগুলির সমস্যার
সমালোচনা
শিক্ষা সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে অর্থনীতি
শিক্ষা
উদাহরণস্বরূপ নয়া দিল্লির কথাই ধরা যাক।
১৯৪৭এর স্বাধীনতা(আমরা বলি পাঞ্জাব আর বাংলা ভাগ)র পরে আন্তর্জাতিক স্তরের নামডাকওয়ালা
খুব বেশি অর্থনীতিবিদ ছিলেন না। George Rosen বলছেন কিভাবে উন্নয়নের রণনীতি
তৈরি করতে ফোর্ড ফাউন্ডেশন এবং রকফেলার ফাউন্ডেশন তাত্ত্বিক সহযোগী হিসেবে রাতদিন
কাজ করে গিয়েছে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের ভারতের প্রতিনিধি Douglas Ensminger বলছেন তার নিজের দেশের ক্যাবিনেট
মন্ত্রীদের থেকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর দপ্তরে যাওয়া আসা ছিল খুব ভাল রকম।
এই বিশেষজ্ঞরা মুক্তবুদ্ধি তত্ত্বমত, তত্ত্ব বিলিয়েছেন এবং সেগুলোকে আপ্তবাক্য ধরে
আমাদের নেতারা দেশ গড়ার কাজ করে গ্যাছেন। অথচ আজও কেউ প্রশ্ন তুললেন না, নব্য ভারতের
সমস্যাগুলো নিয়ে এই বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা তো দূরস্থান, বিন্দুমাত্র জ্ঞান
ছিল কি না। ভারতের পরিকল্পনা কমিশন আর্থনৈতিক উন্নতি করতে কি ধরণের উদ্যম নিতে হয়,
এই প্রস্তাব চেয়ে কলিন ক্লার্ককে ডেকে আনলেন। স্বাভাবিকভাবে তারা নিজেদের মহাদেশ
আর দেশে যে নিদান দিচ্ছেন, ভারতে কেন তার বিপ্রতীপ নিদান দেবেন? ফলে নব্যমুক্ত
অর্থনীতির রমরমা তত্ত্ব ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের গেলাতে তার বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়
নি।
উন্নয়নের তত্ত্বায়নে ভারতকে জুড়তে একটা বড়
সমস্যা দেখা দিল পশ্চিমি তাত্ত্বিকদের নজরে(সেটা হল শিল্পায়নের কাঁচামাল আর
বাজারের জন্যে প্রয়োজন ছিল একটা উপনিবেশ। গোটা ইওরোপ আমেরিকা এইভাবেই অপশ্চিমি
দেশের ঘাড় ভেঙ্গে শিল্পায়িত হয়েছে)। কিন্তু ভারতের এবং অন্যান্য মুক্ত প্রাক্তন
উপনিবেশগুলোর তো কোন উপনিবেশ নেই। সেই মুহূর্তে হয়ত প্রয়োজন ছিল স্থির মস্তিষ্কে
বিবেকী বাস্তবাদী চিন্তাভাবনার। অজ্ঞ, অশিক্ষিত, পরিবেশ সম্পর্কে অসচেতন, অতীতে
বিপুল ভুল করার কাজে বার বার ঘা খাওয়া সত্ত্বেও সাদা চামড়ার মানুষদের অপরিশীলিত
তত্ত্বায়নে অপশ্চিমি অভিজাত শিক্ষিত এবং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষদের অসম্ভব
চোখ বন্ধ নির্ভরতা। এই সুযোগ কিন্তু কোন ভারতীয়র বা দক্ষিণের কোন তাত্ত্বিক বা
বৌদ্ধিক মানুষের ছিল না, আজও নেই। তাদের যে কোন ছোট্ট ভুল বিদেশিদের করা মস্ত ব্লাণ্ডারের
থেকেও বাড়িয়ে দেখা হয়। They indicated
instead, in some mysterious way, civilizational incompetence।
পরের দিকে পশ্চিমি বহু ত্রাতা তাত্ত্বিক
ভুলের কথা স্বীকার করেছিলেন। তারা বলেছেন বেশ কিছু গুরুতর ভুল করার কথা, এবং সেই
ভুল থেকে তারা শিখছেন কিভাবে ভাল কাজ করা যায়। ততদিনে এই সাঙ্ঘাতিক বিভ্রমগুলি
অবশ্য দক্ষিণের দেশগুলির কোটি কোটি মানুষের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। এই ভুলকরা
মানুষেরা অভ্রান্তচিত্তে অপশ্চিমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও পড়িয়েছেন।
উন্নয়ণের কি কি রণনীতি? প্রচলিত উন্নয়ণের
অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বগুলি এবারে দেখা যাক – হ্যারড-ডোমার মডেল বলছে সঞ্চয় এবং
বিনিয়োগ উন্নয়নের অন্যতম নিদান অন্যদিকে মরিস ডব এইভাবেই বলছেন পুঁজি সঞ্চয়ই উন্নয়নের
প্রাথমিক শর্ত। আর্থার লিউইস মডেলও একইভাবে প্রশ্ন তুলে বলছেন যে সমাজে ৫ শতাংশ
জমা করার প্রবণতা নেই, তার কিকরে ১২ থেকে ১৫শতাংশ জমার প্রবণতা তৈরি হবে এই সাধারণ
তত্ত্ব তার মাথায় ঢুকছে না? ক্লার্ক ফিশার তার হাইপোথিসিসে বললেন শ্রমিক যদি
প্রাথমিক থেকে মধ্যস্তর এবং শেষ পর্যন্ত উচ্চতম তৃতীয় স্তরে পৌঁছতে পারে তাহলে
বোঝা যাবে উন্নয়ণ হচ্ছে।
এরপরে এল বিদেশি সাহায্যের তত্ত্ব। তাদের
মতে বিদেশি সাহায্যেই একমাত্র বিভিন্ন বিষচক্রে যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ইত্যাদিতে
ডুবে থাকা দক্ষিণের দেশগুলি উন্নয়নের পথে পৌঁছতে পারে। কোন তত্ত্বকেই কাঠামোগত
কারণ হিসেবে উপস্থাপন করা হল না। ধরে নেওয়া হল গ্রোথ, সরলরৈখিক এবং স্বতস্ফূর্ত।
পরে কয়েক দশক পরে হঠাত যখন ঘুম থেকে উঠে পরিকল্পকেরা দেখলেন এই তত্ত্বায়নগুলি এতই
মামুলি যে কোন সমস্যার কাছাকাছিই পৌঁছন যাচ্ছে না, তখন তারা বললেন উন্নয়নের জন্যে নৈতিকতায়
সংখ্যাতত্ত্বে পরিবর্তন আনা, সঙ্গঠনে পরিবর্তন আনা মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন আনা জরুরি
– এইগুলি সামাজিকভাবে ধাক্কা দিয়ে(সোসাকল ইঞ্জিনিয়ারিং) পরিবর্তন আনা সম্ভব। তবে
আমাদের ভাগ্য ভাল যে তারা সমগ্র প্রাচীন জনসংখ্যাকে নব্য জনসংখ্যা দ্বারা
প্রতিস্থাপিত করতে চান নি(কিছুটা তারা করেছিলেন পশুদের ক্ষেত্রে – তাদের কিছু
তাত্ত্বিক এদেশে জার্সি গরু, ইয়র্কশায়ার শুয়োর এবং লেগহর্ণ মুরগি দিয়ে গোটা ভারতীয়
গৃহপালিত পশুকে বদলাতে চেয়েছিল)।
No comments:
Post a Comment