সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
হোয়াইট স্টাডিজ আর অনুমানগুলির সমস্যার
সমালোচনা
শিক্ষা সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে অর্থনীতি
শিক্ষা
তাত্ত্বিক সোসাইটির বিপুল প্রভাবশালী
সসদ্য নিয়েও সে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে নি। ১৯৮৮য় থাচারের নাতে নাইট উপাধি
পাওয়া পোল্ট্রি মালিক এন্থনি ফিশার সোসাইটির কর্মকাণ্ডে বিপুল পরিবর্তন আনেন।
সোসাইটিতে ফিসারের অর্থনৈতিক বিনিয়োগে অব ইকনমিক এফেয়ার্স তৈরি হয়। এটি মুক্ত অর্থনীতির
সমর্থকদের তাত্ত্বিক রূপরেখা তৈরি করে দিত। এর কাজ হল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং
প্রভাবশালী সঙ্গঠনে মুক্তবানিজ্যের পক্ষে আলোচনার তাত্ত্বিক পরিবেশ তৈরি করা। এই
সংগঠন অস্ট্রেলিয়ার কলিন ক্লার্ক, ফ্রেডরিশ হায়াক, মিলটন ফ্রিডম্যান, লায়োনেল
চার্লস রবিনস এবং জর্জ পাইশকে দিয়ে বই লিখিয়ে প্রকাশ করতে থাকে।
১৯৭৪ সালে ইন্সটিটিউট অব ইকনমিক
এফেয়ার্সএর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ এবং ১৯৮০তে সোসাল
এফেয়ার্স ইউনিট। ইউনিটের কাজ হল সমাজতত্ত্ব নিয়ে ইন্সটিটিউট অব ইকনমিক এফেয়ার্স যে
কাজ করেছিল অর্থনীতি নিয়ে, সমাজতত্ত্বে সেই ধরণের কাজে মদত দেওয়া। এছাড়াও আরও বেশ
কিছু ইন্সটিটিউট তৈরি হল, তাদের মধ্যে অন্যতম এডাম স্মিথ ইন্সটিটিউট ফর হেরিটেজ
ফাউন্ডেশন। এনথনি ফিসার কানাডার ফিশার ইন্সটিটিউটএর প্রথম প্রেসিডেন্ট হলেন। ১৯৭৭
সালে নিউ ইয়র্কে সেন্টার ফর ইকনমিক পলিসি স্টাডজ তৈরি করেন। এই ইন্সটিটিউটগুলির মধ্যে
যাতে বোঝাপড়া ঠিক হয়, তার জন্যে তিনি আরেকটা ইন্সটিটিউট তৈরি করালেন, এটলাস ইকনমিক
রিসার্চ ফাউণ্ডেশন – যাকে কেন্দ্র করে সব
সংগঠনের রাজনৈতিক তত্ত্ব আবর্তিত হবে। এরা ১৯৯১ সালের হিসেবে ৭৮টি সংগঠনকে সাহায্য
করে এবং ৫১টা দেশের ৯১টা ইন্সটিটিউটের সঙ্গে তাদের তাত্ত্বিক সম্পর্ক ছিল। বার্লিন
দেওয়াল ঘটনার পর বিভিন্ন পুঁজিবাদী দেশের আর্থনীতিতে তাত্ত্বিক সাহায্য করা ছাড়াও
বহু সদস্য পূর্ব ইওরোপ এবং রাশিয়ায় যান সে সব দেশের সংগঠন আর বিদ্যাকেন্দ্রগুলিতে প্রভাব
ফেলতে।
মঁ পেলেরিন সোসাইটি এবং বিশ্ব জোড়া মুক্ত
বাণিজ্য তত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ফিশারের অর্থনৈতিক হিটম্যানেরা বিভিন্ন সংগঠনকে
আর্থিক তাত্ত্বিক দক্ষিণা দিতে থাকে। বিশেষ করে পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলিতে। তাদের
সদস্যরা সরকারগুলির নীতি পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হয়। অন্যান্য জ্ঞানচর্চার
ক্ষেত্রে যেমন অপশ্চিমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সতত মুখিয়ে থাকে পশ্চিমি পথ প্রদর্শন আর
পরামর্শের জন্যে, অর্থনীতি শিক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটল না। সোসাইটি এবং তার
তাঁবেদারদের নিরীক্ষণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হল মুক্ত অর্থনীতি ভিত্তিক
অর্থনীতি শিক্ষার পাঠ্যক্রম।
মনে রাখা দরকার উন্নয়ণের অর্থনীতি নামক
জ্ঞানচর্চার সোনার পাথরবাটিটির ধারণা এবং বিকাশের কাজ করেছে পশ্চিম এবং সে সেটি
দক্ষিণকে হাতবদল করেছে। এর ধারণাগুলি পশ্চিমি অর্থনীতির ধারণাগুলির মতই প্রায়ই
একইরকম। শুধু পার্থক্য হল এই অর্থনীতি ভিত্তি করে তারা দক্ষিণের দেশগুলির অভদ্র,
অনৈতিক, দায়িত্বজ্ঞানহীন অর্থনীতির সমালোচনা করে। অধিকাংশ তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতবিদ
কিন্তু প্রথম বিশ্বেই জাত অর্থনীতিবিদ – লর্ড বুয়ায়, কলিন ক্লার্ক, এলবার্ট ও হার্শম্যান,
আর্থার লুইস, গুরনার মিরড্যাল, পল প্রেবিশ, পল রোজেন্সটাইন-র্যঁদা, ওয়াল্ট রস্টো,
হ্যানস সিঙ্গার এবং জাঁ টিনবার্জেন। এরা সক্কলে মিলে দক্ষিণের দেশগুলির অর্থনীতি
আর উন্নয়নের ওপর সরাসরি ধাক্কা দিলেন।
দক্ষিণের দেশগুলির নানান সমস্যা বিষয়ে এই
নব্যধ্রুপদী অর্থনীতিবিদ, কখোনো কখোনো কেইনিসিয় অর্থনীতিবিদদের যোগ কোথায়? সাধারণ
চোখে খুবই কম। কলোনিগুলো স্বাধীনতা পাওয়ায়, সেগুলো নব্য জাতিরাষ্ট্র পরিণত হল।
পশ্চিমি অর্থনীতিবিদদের কাছে নতুন ভাবে কাজের বন্যা বইয়ে দিল – বিশেষ করে
সরকারগুলোর পরামর্শদাতা হিসেবে। পশ্চিমি সভ্যতার জাগতিক ঐশ্বর্যে চোখ ধাঁধিয়ে
যাওয়া, পশ্চিমের উন্নয়ন এবং জ্ঞানচর্চায় মানসিকভাবে নিজেদের দাস করে রাখা শাসক
অভিজাতরা গলবস্ত্র হয়ে তাদের সাহায্য চাইলেন।
No comments:
Post a Comment