অধ্যায়
৫
বস্ত্র,
পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
পাগলা কুত্তা আর ব্রিটিশ মধ্যাহ্নে রাস্তায় হাঁটে
তিনি সেনা শিরস্ত্রাণ কে নতুন করে
ডিজাইন করেন ইন্টারনাল সাসপেনশন সিস্টেম ব্যবহার করে এবং
সেটা এমনভাবে করলেন যাতে
প্রত্যেকটি সেনার আলাদা আলাদা মাথায় আলাদ আলাদাভাবে এটি সঠিকভাবে বসে।
টুপি এবং মাথার মধ্যে একটি ছোট
শূন্যস্থান থাকত যেখানে হাওয়া চলাচল করতে পারত। এই পরিকল্পনাটা তিনি করেছিলেন যাতে
একইসঙ্গে শিরস্ত্রাণ এরমধ্যে বদ্ধ হওয়া বেরিয়ে টাটকা হওয়ার ঢুকতে পারে এবং মাথা
ঠান্ডা রাখতে পারে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বাতাসের
বাষ্পকে সংগ্রহ করে মাথার পেছনে এবং গলার
কাছে একটি কাপড়ের আবরণ তৈরি
করলেন। শিরস্ত্রাণ ছাড়াও তিনি ভারতীয়
আবহাওয়ায় কাজ করা সেনাবাহিনীর জন্য পোশাক তৈরি করলেন। তিনি সেনাবাহিনীর পোশাক পরিকল্পনাকে সমালোচনা করে বললেন বর্তমানের বাহিনীর সেনারা যেভাবে ভারী আঁটোসাঁটো
জ্যাকেট এবং ট্রাউজার পরে তা তাপ পরিবাহীর যোগ্য নয়। তাপ দেহের মধ্যেই আটকে থাকে পরিবেশে পরিবাহিত হয় না। কেউ কেউ বলেন হালকা খুব কম পরিধেয় সেনাবাহিনীর জন্য উপযুক্ত এবং এরফলে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। তিনি বললেন ফ্লানেলের
অন্তর্বাস ছড়া হালকা সুতির কাপড় শিরদাঁড়া দেহবল্লরী কে সূর্যের তাপ থেকে
দেওয়ালের এবং মাটির তাপের প্রতিফলন থেকে বাঁচাতে পারবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগামী সেনাবাহিনীর পশ্চাৎদেশ বহু সময় ধরে
গ্রীষ্মমন্ডলীয় সূর্যের তাপে উন্মুক্ত থাকে এবং তার নিরাপত্তাবিধান কর্তাব্যক্তিদের জরুরি কর্ম। এর জন্য
প্রয়োজন কয়েকটি স্তরে সেনার দেহের
পোষাকের সামনে-পেছনে কয়েকটি কাপড়স্তর
তৈরি করে পরিধেয় তৈরি প্রস্তাব দেন যা সূর্যের আলোক এবং তাপকে ঢুকতে বাধা
দেবে এবং দেহের তাপ দেহের মধ্যে আটকে রাখবে।
আমি যতদূর জানি ডাক্তার জেফারিজ যে সেনাবাহিনীর জন্য যে বিশদে টুপি এবং
শিরস্ত্রাণের ব্যবস্থা করলেন সেই
উদ্ভাবনীকে কিন্তু কেউই বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু শোলা টুপির ধারণাটিকে নিয়ে, শস্তার ক্যানভাসের কাপড়কে সেই আকার দিয়ে এবং পরে একটু মোটা কর্ক ব্যবহার করে ইউরোপিয়দের জন্য জনপ্রিয় শিরস্ত্রাণ তৈরি করা হয়েছে। মাথা এবং মাথার পেছনের অঞ্চলটুকু বাঁচাবার জন্য জেফারিজ এবং অন্যান্যরা যে পরিকল্পনা করেছিলেন সেটি নকল করে শোলার টুপিকে একটু বাড়িয়ে ঘাড় পর্যন্ত নামিয়ে আনা হয়। এছাড়াও
টুপির ঘাড়ের কাছে নিচের নিচের অঞ্চলে একটা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হতো যাতে ঘাড়
এবং গলা দুটোই নিরাপদে থাকে।
বহু ডাক্তার মনে করতেন শিরদাঁড়া
এবং দেহবল্লরীকে খাড়া করে রাখতে সাধারণ কাপড়ের আবরণ যথেষ্ট নয। ফলে নানান ধরনের কাপড় আবরণী এবং প্যাড পরিকল্পিত হয়েছে। ড মুর বিস্তৃতভাবে বলেছেন শিরদাঁড়া
নিরাপদ না রাখলে সমস্যা কি হতে পারে এবং তার নিদান ও দিয়েছেন তিনি -
হোয়াট ইজ
রিকোয়ার্ড ইজ আ পার্মানেন্ট এন্ড ইম্মুভেবল প্রোটেকশন ফর দ্য স্পাইন; আ প্রোটকশন
হুইচ মেবি পুট অন এন্ড অফ উইথ দ্য ক্লোদিং। এন্ড দিস ইজ টু বি অবটেইনড বাই প্লেসিং
আ প্যাড এবাউট সেভেন ইঞ্চেস লং এন্ড থ্রি ওয়াড ফ্রম দ্য কলার অব দ্য কোট টু এবাউট
দ্য লোয়ার এঙ্গল অব দ্য ব্লেড-বোন। দিস প্যাড শুড বি কন্সট্রাকটেড অব কর্ক শেভিংস,
আ মেটিরিয়াল অব হুইচ, হোয়াইল একটিং এজ আ নন-কন্ডাক্টর অব হিট, ইজ লাইট, এন্ড
সাফিসিয়েন্টলি সফট নট টু অকেশন ইনকভিনিয়েন্স ইভন ইফ লেয়িং আপন। দ্য শেভিংস শুড বি
স্টিচড, সো দ্যাট দ্য পোজিসন অব দ্য প্যাড ক্যাননট অল্টার। দ্য থিকনেস অব দ্য
প্যাড শুড বি এবাউট থ্রি ইঞ্চেস।
1870 সাল নাগাদ ভারতে থাকা
সাহেবেরা সোলার টুপি, পাগড়ী, স্পিয়ানাল প্যাড, কলেরা বেল্ট এবং ফ্লানেল কোমরবন্ধকে একসঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে এক ধরনের
নব্য পরিধেয় তৈরি করে নিলেন। এই পোষাকে
সব থেকে ওপরে থাকা টুপিটি মূলত
শাসকজাতের চিহ্ন প্রতিভূ। ব্রিটিশ শাসন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরুষ মহিলা এমনকি শিশুরাও
নিজেদের মতন করে নানান ধরনের নানা রূপের
শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করতেন। সেনা
পুলিশ অসামরিক আমলা এবং রাজনৈতিক আধিকারিকরা তাদের নিজেদের জন্যও আলাদা আলাদা ভাবে
প্রত্যেকের সাধারণ শত্রু সূর্যালোক থেকে বাঁচতে শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করতেন। পাহাড়ি অঞ্চলে এবং ঠাণ্ডার সময়
টুপি প্রতিস্থাপি হত ফেল্ট তরাই হ্যাট দিয়ে। এটি মূলত গুর্খাদের আবিষ্কার। এই তরাই হ্যাটটি সারা সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকায় দ্রুত ছড়িয়ে যায। এই
ফ্যাশানটি জীবিত থাকে ১৯৬০ সাল
পর্যন্ত। ডবল তরাই টুপি তার অনপনেয় পরিচিতি লাল সিল্কের লাইনিং দিয়ে জনপ্রিয় ছিল এই সেদিন পর্যন্ত।
ডাক্তারি গবেষণা তাত্ত্বিকভাবে
ভারতে থাকা ইউরোপীয়দের মাথায় ইউরোপীয় মাথায় সরাসরি পড়া সূর্যরশ্মির
প্রভাব নিয়ে প্রচুর কাজ করে। তবে ঊনবিংশ শতকের শেষে সানস্ট্রোক শব্দটি প্রতিস্থাপিত হল
হিটস্ট্রোক দ্বারা। চিকিৎসকেরা বললেন মাথার ওপরের
অংশে সরাসরি এসে আঘাত লাগা সূর্যরশ্মি এক্কেবারেই
সানস্ট্রোকের এর জন্য দায়ী নয়।
বিশ্বযুদ্ধগুলোতে সাউথ প্যাসিফিক চীন বার্মা এবং ভারতে ভূমিতে যুদ্ধ করা সাদা
চামড়ার আমেরিকা অস্ট্রেলীয় এবং ব্রিটিশ সেনাদের অভিজ্ঞতা একটা একটা বিশ্বাসকে
মিথ্যে প্রমাণ করল গ্রীষ্মকালে সরাসরি তীব্র সূর্যালোকের নিচে যুদ্ধ করার সেনা
সোলার টুপি এবং বিশেষ ধরনের পরিধেয় ছাড়া বাঁচতে পারেনা। এটা প্রমাণিত হলো মাথায় বিন্দুমাত্র কোন শিরস্ত্রাণহীন সেনা খুব কম পোশাক পরিধান করেও
গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোতে দুপুরের রোদে তীব্র যুদ্ধ করতে পারে যদি তারা যথেষ্ট জল
পান করে এবং মাঝেমধ্যে ছায়াতে বিশ্রাম নেয়। আজ ভারতে সোলার টুপি প্রায়
অদৃশ্য। এখন তার শস্তা নকল ব্রিটিশদের শেষ আমলাতান্ত্রিক প্রতিভূ রেল কোম্পানির
স্টেশন মাস্টারদের এবং হুইশল
বাজানো বাসের কন্ডাকটারদের টুপি
হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
No comments:
Post a Comment