সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
হোয়াইট স্টাডিজ আর অনুমানগুলির সমস্যার সমালোচনা
শিক্ষা সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে অর্থনীতি শিক্ষা
অপশ্চিমি বিশ্বের সাধারণ জনগণের জীবনে
পশ্চিমি অর্থনীতি গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই প্রভাবটা কিন্তু যথেষ্ট ক্ষতিকরভাবে
পড়েছে – মানুষের জীবনে তকলিফ অনেক বেড়েছে। আমরা এই ক্ষতির কথা নম্রভাবেই গ্রহণ করি
বা না দেখার ভান করি, কারণ আমাদের বলা হয়েছে এই অত্যাচারময় পথের শেষের দুধ মধুর
স্বর্গ অপেক্ষা করে আছে। ওপর থেকে চুঁইয়ে পড়া শক্তিতে অধিকাংশ মানুষকে সফলভাবে
দারিদ্রে ডুবিয়ে রাখা হচ্ছে, ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, এবং গত পাঁচ দশকে গরীব আরও
গরীব হয়েছে, ধনী আরও আরও ধনী হয়ে লক্ষ কোটিপতি হয়েছে।
সারা বিশ্বের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়
অর্থনীতিকে পাঠ্য হিসেবে রাখতে বদ্ধপরিকর, সে পাঠ্যে মুক্ত অর্থনীতি আর বাজার এবং
প্রতিযোগিতার তত্ত্ব ঠুসে খাওয়ানো হয়। বাজার শব্দটা আর আজ হাট বা বাজার সহ বিভিন্ন
পণ্য বিক্রিত হওয়া সাঙ্গঠনিক বৈচিত্রর এলাকা আর বোঝায় না; অথবা কালিকটের জামোরিন
যখন ভারতে সদ্য পা রাখা ইওরোপিয় বণিকদের উদার হৃদয়ে সেই এলাকায় বাণিজ্য করতে
দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, সেই উন্মুক্ত হৃদয়টাও বোঝায় না। আপাতত বাজার বলতে
পশ্চিমা অর্থনীতির তত্ত্বে বোঝায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে একটি ভৌগোলিক এলাকায়
প্রতিযোগীদের সুযোগ সীমিত করে পণ্য বিক্রি করার তত্ত্ব। ৫০০ বছর আগে পর্তুগিজেরা
কার্তেজ জারি করার পরে এবং ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানে এই নীতিটি বিপুল ভূমিকা পালন করে
এসেছে।
আজ যখন ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরিবেশের অবসান
ঘটেছে কিন্তু মুক্ত অর্থনীতির শিক্ষা পদ্ধতি আজকের শিক্ষকেরা উত্তরাধিকার সূত্রে
অর্জন করেছেন, সেটা আজও বহাল তবিয়তে অটুট থেকে যায়। যদিও এই পাঠ্যক্রম শেখানোর
পিছনে বৈজ্ঞানিকতার বিপুল বৌদ্ধিক যুক্তি নানান কারণে নস্যাৎ হয়ে যায়, যার একটা বড়
উদাহরণ হল ২০০৮ সালের আমেরিকায় মর্টগেজ কাণ্ড, যেখানে আমেরিকা সরকার এবং নানান
অযোগ্য আর ঘৃণ্য এজেন্সি দায়িত্ব নিয়ে, যে মুক্ত অর্থনীতির তত্ত্ব পশ্চিম ফেরি করে
বেড়ায় সারা বিশ্ব, সেই অর্থনীতির তত্ত্বকে তারা পা বেঁধে অতলান্তিকে ফেলে দিয়েছিল।
এতদ সত্ত্বেও বলা যায় বিন্দুমাত্র চোখের
পাতা না ফেলে পশ্চিম মুক্ত অর্থনীতিকে ঐশ্বরিক জ্ঞান হিসেবে আজও প্রচার করে, যার
সঙ্গে যৌক্তিক কোন নীতি বা জ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠতার তত্ত্ব খাপ খায় না। এটা এমন একটা
তত্ত্ব যেটা জোর করে বিজ্ঞানের জোব্বা পরে নিয়েছে। এই হিসেবে এই মুক্ত অর্থনীতির
অধিকাংশ তত্ত্ব আরেক ধরণের অর্থনীতি জনক জন মেয়ার্ড কেইনসের সরাসরি বিরোধী – যিনি
সরাসরি পুঁজিবাদের মৌল নীতির বিরোধিতা করেছিলেন, যে তত্ত্বে বলা হয় পুঁজি আর বাজার
খুব ভাল কাজ করে যদি উভয় থেকে সরকার তার হাত গুটিয়ে নেয়।
আজকে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে এফ এ হায়াকের
মত নব্যরক্ষণশীল তাত্ত্বিককে ১৯৩১ সালে অস্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকনমিক লিবারেলিজম
থেকে আমদানি করে লন্ডনে নিয়ে আসা হয় লর্ড মেয়ার্ড কেইনসএর তত্ত্বকে প্রত্যাঘাত
করতে। তার বই রোড টু সার্ফডম প্রকাশ করে রিডার্স ডাইজেস্ট প্রকাশনী, যাতে দাবি করা
হয় কেইনিসিয় অর্থনীতিতে, বিশেষ করে তাঁর উল্লিখিত পূর্ণ কর্মাবস্থা তৈরি হলে
স্বাভাবিকভাবে একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব ঘটবে। এর বাইরে আমরা আরেকটা তথ্য আজ জেনে
গিয়েছি, হায়েক নব্য রক্ষণশীলদের নিয়ে আগামী দিনের রক্ষণশীল অর্থনীতির তাত্ত্বিক
তৈরি করতে একটি আধা গোপন গোষ্ঠী মঁ পেলেরিয়ান সোসাইটি তৈরি করেন। সোসাইটির শুরু হয়
কার্ল পপার, লায়নেল চার্লস রবিন, মিলটন ফ্রিডম্যান এবং অন্যান্য বিখ্যাত অর্থনীতিবদদের
অংশগ্রহণে, যাদের কাজ অপশ্চিমি বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত
করে পড়ানো হয়। সম্মিলনে ৩৯ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ২৪ জন আমেরিকা আর ইংলন্ডের এবং
বাকিরা ইওরোপিয়। অপশ্চিমি বিশ্ব থেকে একজনও অংশ নেন নি, অথচ এই সম্মিলনের
তাত্ত্বিক প্রভাব সবার আগে তাদের ওপরেই পড়েছিল। এরপর থেকে সোসাইটির সম্মিলন
প্রত্যেক দুবছর অন্তর আয়োজিত হত। ১৯৮০ সালে স্ট্যানফোর্ডের বৈঠপকে অংশগ্রহনকারীর
সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment