সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
ইওরোপমুখ্যতা অতিক্রম – নতুন কাঠামো এবং পদ্ধতি বিষয়ক কিছু ভাবনা
ক) সমাজ বিজ্ঞানে বিশ্বাসযোগ্য এবং অর্থপূর্ণ অইওরোপমুখ্যার
কাঠামো তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রাথমিক কর্মপদ্ধতি হল, বৌদ্ধিকভাবে বর্তমানে
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাঠ্যক্রমে চালু ইওরোপমুখ্য জ্ঞানচর্চাগুলির তাত্ত্বিক অবস্থান
থেকে বেরিয়ে আসার কর্মপদ্ধতি নির্ণয় করা। স্বাভাবিকভাবেই এই অইওরোপিয় পাঠ্যক্রম
তৈরির ক্ষেত্রে সব থেকে সোজা পথ হল সমাজতত্ত্ব, মনোবিদ্যা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মত
সাম্রাজ্যবাদী ইওরোপমুখ্যতায় ভরপুর জ্ঞানচর্চাগুলি প্রাথমিকভাবে বাদ দিয়ে খুব
সহজেই যেগুলিতে পরিবর্তন আনা যায় যেমন ইতিহাস, সাহিত্য ইত্যাদিগুলিতে মনোনিবেশ
করা। আমাদের মনে রাখা উচিত পশ্চিমি জাতিবিজ্ঞানকে মূলস্রোতের বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম
হিসেবে গণ্য না করা। আমাদের নিজেদের উচিত কৃষ্টি নৈতিকতা এবং পরিবেশ এবং জীবন
বিষয়ে গবেষণা কর্ম, পদ্ধতি এবং প্রণালীতে কৃষ্টির শেকড় নির্ভরতা এবং কৃষ্টিতে
গ্রহনযোগ্য ধারনাগুলি কি হতে পারে সেগুলি গভীরভাবে আলোচনা। আমরা সমআলোচনার
মাধ্যমেই দেশিয় বৌদ্ধিক পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত হব। আফ্রিকিয়, মাওরি, অস্ট্রেলিয়ার
আদিবাসীরা প্রত্যেকেই ইওরোপমুখ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন, তাদের
কর্মকাণ্ড আমাদের আলোচনা করা দরকার। এ বিষয়ে আমাদের পথ দেখাতে পারেন পাকিস্তানি
উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের বৌদ্ধিক চর্চক ইকবাল আহমেদ এবং তাঁর খালদুনিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ভাবনা। বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারনায় পেরুর PRATEC, the Andean Project for Peasant Technologies (Proyecto
Andino para las Tecnologías Campesinas) অথবা
Universidade de la Tierra in Oaxacaয় মিলবে। এই ধারনাগুলি বয়ে যেতে দেওয়া ঠিক হবে না।
খ) বৈকল্পিক আলোচনা/বিতর্ক শব্দটাই বিভ্রান্তিকর। কারণ এটি
আদতে আমাদের তথাকথিত মূলস্রোতের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে। আমরা যদি
আহরণমূলক, ব্যতিক্রমী না বলে যদি বহুত্ববাদী আলোচনা বা প্রতর্ক শব্দবন্ধটা ব্যবহার
করি তাহলে কিছুটা কাছাকাছি পৌঁছতে পারব হয়ত। এটাকে নৈতিকভাবে দেখা দরকার। এই
পদ্ধতিতে হয়ত আমরা সমাজ বিজ্ঞানের হাজারো ফুল ফোটাতে পারব।
গ) আমাদের অইওরোওপিয় অআমেরিকয় বিশ্ববদ্যালয়ের বা কৃষ্টি
সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বৌদ্ধিক এবং পাঠ্যজগতের মানুষদের, এই ভাবনা চিন্তা বদলের কাজে
অংশগ্রহণ না করিয়ে আমাদের দেশজ বিদ্বানদের নিয়ে কাজ করা দরকার। সিঙ্গাপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগ দারুণ কিছু কাজ করেছে ভারতীয় এবং ফিলিপিন্সের
বিদ্বানদের নিয়ে এসে। Linda Tuhiwai Smith এবং অন্যান্য মাওরি গবেষক এ বিষয়ে অনেক দূর এগিয়েছেন। পশ্চিমি
বিদ্যাচর্চার পরম্পরা থেকে পাঠ নকল না করে, আমাদের নিজেদের বিদ্যাচর্চার পরম্পরায়
মনোনিবেশ করা দরকার।
ঘ) প্রাথমিকভাবে গবেষণা বা প্রবন্ধ লেখায় প্রায়োগিকভাবে
পশ্চিমি ঔপপনিবেশিক লেখকদের উদ্ধৃতি, বইএর নাম ইত্যাদি ব্যবহার না করা দরকার।
শুরুর দিকে এই কাজটা যদি ঠিকভাবে না করা যায় তাহলে পশ্চিমি বিদ্বানদের থেকে উদ্ধৃত
বাক্য ব্যবহারের হার কমিয়ে দিয়ে দেশিয় বিদ্বানদের কাজ নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
ঙ) ছাত্রছাত্রীদের শুধুই উদ্ধৃতিকন্টকিত গবেষণা লেখায় উতসাহিত
না করে কিভাবে উদ্ধৃতি ব্যতীত গবেষণায় মনোনিবেশ করা যায় যে বিষয়ে তাদের ভাবনাচিন্তাকে
প্রবাহিত করাতে হবে। আজকের দিনের বৈদ্ধিক জগত অন্যের কাজ ব্যবহার করা ছাড়া কোন গবেষনাই
শেষ করতে পারে না। পূর্বধারণাছাড়া দর্শনশাস্ত্রীয় কাজ ব্যর্থ হবে(No doubt presuppositionless philosophizing failed)। কিন্তু উদ্ধৃতিকন্টকিত ব্যতীত গবেষণা সে কাজ করে না। মহত্মা
গান্ধী ৯০ খণ্ডের লেখা সংগ্রহে কোথায় উদ্ধৃতি ব্যবহার হয়েছে খুঁজে দেখতে হয়। বিশ্বের
সব থেকে শুদ্ধতম লেখা – সাহিত্যে কোন উদ্ধৃতিকন্টক নেই। সত্যের ঠেকনা দরকার হয় না।
আপনি যদি আপনার জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা ছাড়া কোপ্ন কাজ করতে অক্ষম হন তাহলে আপনি যতই
উদ্ধৃতি ব্যবহার করুণ, সে কাজ ব্যররত্রহ হবেই।
No comments:
Post a Comment