অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
মহিলাদের পরিচ্ছেদ এবং ইওরোপিয় ধারণায় শালীনতা
ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের উনবিংশ শতকের ঐতিহাসিক পি শুনগুমি মেনন তার জন্মভূমিকে গর্বভরে বর্ণনা করতে গিয়ে কিছু অতিশোয়াক্তি উল্লেখ করেছেন, ভারতের বোধহয় একমাত্র রাজ্য যেটা তার জাত, ধর্ম, প্রথা এবং আচার আচরণের মৌলিকত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। তিনি কিছু পুরোনো উক্তি খুঁজে উল্লেখ করে বলছেন ত্রিভাঙ্কুর শুদ্ধ হিন্দু সরকার আর সমাজের শেষ নিদর্শন, যা ইসলামি আগ্রাসনে বিন্দুমাত্র নষ্ট হয় নি।
খ্রিষ্ট সাধুরা যে নাদারদের ধর্ম পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিল, তারা মূলত তাল রস সংগ্রহকারী, যে তাল রসে গুড় হয় এবং সেই গুড় থেকে নেশার দ্রব্য তাড়ি তৈরি হয়। কিছু নাদার গোষ্ঠী আবার গাড়োয়ানের কাজ করতেন এবং তারা অর্ধ-পরিযায়ী; আর কিছু কৃষি শ্রমিক যারা নায়ার জমিদারদের ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। তারা মূলত ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে মাদ্রাজের তিন্নাভেল্লি জেলায় আর কিছু ত্রিভাঙ্কুর জেলায় বাসীন্দা। এরা জাত ব্যবস্থায় শূদ্র নায়ারদেরও তলায়, যারা সেনাবাহিনীতে কাজ করেন এবং জমিও আছে এবং অচ্ছুত দাস জাতি, যারা উচ্চবর্ণের জন্য শ্রম দিতে বাধ্য হয়। উচ্চতম জাতি নাম্বুদ্রি ব্রাহ্মণেরা পুরোহিত, জমিদার এবং রাজ্যস্তরের আমলা।
বিভিন্ন জাতের মধ্যে কে কাকে কিভাবে সম্মান দেবে এবং কে কাকে এড়িয়ে যাবে তার নির্দিষ্ট প্রথা রাজ্যে আছে। কেন জাতি কোন জাতি থেকে কত দূরে থাকবে তারও নির্দেশিকা আছে। নাম্বুদ্রি ব্রাহ্মণদের থেকে ৩৫ পা দূরে নাদারদের থাকতে হবে। যাদের বাড়ি একতলা তারা দুধ দুইতে পারবে না। নাদার মেয়েরা কাঁখে করে কলসি নিয়ে যেতে পারবে না এবং তারা তাদের দেহের ওপরের অংশ খোলা রাখতে হবে। নায়ার মেয়েরা তাদের কাঁধে হাল্কা ওড়না রাখতে পারে, যা তাদের স্তনের ওপরে ঢাকা হিসেবে ব্যবহার হয়। তাদের ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য উঁচু জাতের মানুষকে সম্মান জানাতে উন্মুক্ত বক্ষ হতে হয়। নায়ারদের জাতের নিচে থাকা সব জাতির মানুষ একটি মাত্র মোটা কাপড় পরবে যা তার কোমোরের ওপর ঊঠবে না আর হাঁটুর তলায় নামবে না।
সিরিয় খ্রিষ্ট আর মোপালা মহিলারা একটা প্যান্টের মত কাপড় পরতে পারে ওপরে একটা আঁটসাঁটো জ্যাকেট কুপ্পায়াম পরে। সিরিয় খ্রিষ্টরা রাজ্যের কিছুটা হলেও সুবিধা প্রাপ্ত জাতি। অনেকতা নায়্রদের মত, যোদ্ধা এবং জমিদার। মোপালারা সেনা সরবরাহ করে এবং ব্যবসায়ীও।
নাদারদের ধর্ম পরিবর্তন ঘটে কোম্পানি শাসিত তিন্নেভেলি জেলায়। এখানে নাদার খ্রিষ্ট সাধুদের উদ্যোগে মেয়েরা দীর্ঘ ঘাঘরার মত পরিধেয় পরতে শুরু করে। ত্রিভাঙ্কুরে যত নাদার খ্রিষ্ট ধর্মে পরিবর্তন ঘটতে লাগল অধিকাংশ নাদার পরইবারের মহিলারা মহিলা নায়ারদের মত বক্ষাবরণ পরতে শুরু করল। ১৮১৩ সালে ত্রিভাঙ্কুরের দেওয়ান(প্রধানমন্ত্রী) এবং কোম্পানি রেসিডেন্ট কর্নেল জন মনরো একটা বির্দেশিকা জারি করে বলেন যে সব মহিলা খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হবেন তারা নায়ারদের মত কক্ষাবরণীর সঙ্গে অন্যান্য দেশের খ্রিষ্ট মহিলাদের মত বক্ষাবরণী পরার অধিকার পাবেন। এই নির্দেশে রাজার পরামর্শ সভা পিদাকাকারের সদস্যরা বলল যে এই নির্দেশিকা জারি হলে জাতের মধ্যে পার্থক্য কমে যাবে এবং রাজ্য সামাজিকভাবে দূষিত হয়ে পড়বে। মুনরো তার নির্দেশিকা পরিবর্তন করে বললেন নাদার মহিলারা নায়ার মহিলাদের মত বক্ষাবরণী রাখতে পারবে না কিন্তু সিরিয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মত উত্তরাঙ্গে জ্যাকেট পরতে পারবেন।
পরের দশ বছর ধরে খ্রিষ্ট সাধুরা ব্যাপক হারে ধর্মান্তরকরণের কাজ করতে থাকেন সঙ্গে শিক্ষা আইনি আর অর্থনৈতিক প্রকল্পও চালু করতে থাকে যাতে তাদের নিচু জাতের অনুগামীরা নিরাপত্তা পান। তাদের অন্যতম কাজ ছিল নাদার মেয়েদের জন্যে একটা বিদ্যালয় খোলা যেখানে তারা ইওরোপিয় পদ্ধতিতে লেস তৈরি করা শিখবে। এই উদ্বৃত্ত আয় থেকে তারা তাদের জমিদারদের থেকে মুক্তি কিনত। নাদারেরা তাড়ি ব্যবসাতেও প্রচুর লাভ করতে থাকে যেহেতু সারা ভারতে কোম্পানিই মদের একচেটিইয়া ব্যবসা করত। দোকানদারদের দোকান দিয়ে তাদের মাধ্যমে তাড়ি বেচে সেই আদায়ে প্রচুর লাভ হত।
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
মহিলাদের পরিচ্ছেদ এবং ইওরোপিয় ধারণায় শালীনতা
ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের উনবিংশ শতকের ঐতিহাসিক পি শুনগুমি মেনন তার জন্মভূমিকে গর্বভরে বর্ণনা করতে গিয়ে কিছু অতিশোয়াক্তি উল্লেখ করেছেন, ভারতের বোধহয় একমাত্র রাজ্য যেটা তার জাত, ধর্ম, প্রথা এবং আচার আচরণের মৌলিকত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। তিনি কিছু পুরোনো উক্তি খুঁজে উল্লেখ করে বলছেন ত্রিভাঙ্কুর শুদ্ধ হিন্দু সরকার আর সমাজের শেষ নিদর্শন, যা ইসলামি আগ্রাসনে বিন্দুমাত্র নষ্ট হয় নি।
খ্রিষ্ট সাধুরা যে নাদারদের ধর্ম পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিল, তারা মূলত তাল রস সংগ্রহকারী, যে তাল রসে গুড় হয় এবং সেই গুড় থেকে নেশার দ্রব্য তাড়ি তৈরি হয়। কিছু নাদার গোষ্ঠী আবার গাড়োয়ানের কাজ করতেন এবং তারা অর্ধ-পরিযায়ী; আর কিছু কৃষি শ্রমিক যারা নায়ার জমিদারদের ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। তারা মূলত ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে মাদ্রাজের তিন্নাভেল্লি জেলায় আর কিছু ত্রিভাঙ্কুর জেলায় বাসীন্দা। এরা জাত ব্যবস্থায় শূদ্র নায়ারদেরও তলায়, যারা সেনাবাহিনীতে কাজ করেন এবং জমিও আছে এবং অচ্ছুত দাস জাতি, যারা উচ্চবর্ণের জন্য শ্রম দিতে বাধ্য হয়। উচ্চতম জাতি নাম্বুদ্রি ব্রাহ্মণেরা পুরোহিত, জমিদার এবং রাজ্যস্তরের আমলা।
বিভিন্ন জাতের মধ্যে কে কাকে কিভাবে সম্মান দেবে এবং কে কাকে এড়িয়ে যাবে তার নির্দিষ্ট প্রথা রাজ্যে আছে। কেন জাতি কোন জাতি থেকে কত দূরে থাকবে তারও নির্দেশিকা আছে। নাম্বুদ্রি ব্রাহ্মণদের থেকে ৩৫ পা দূরে নাদারদের থাকতে হবে। যাদের বাড়ি একতলা তারা দুধ দুইতে পারবে না। নাদার মেয়েরা কাঁখে করে কলসি নিয়ে যেতে পারবে না এবং তারা তাদের দেহের ওপরের অংশ খোলা রাখতে হবে। নায়ার মেয়েরা তাদের কাঁধে হাল্কা ওড়না রাখতে পারে, যা তাদের স্তনের ওপরে ঢাকা হিসেবে ব্যবহার হয়। তাদের ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য উঁচু জাতের মানুষকে সম্মান জানাতে উন্মুক্ত বক্ষ হতে হয়। নায়ারদের জাতের নিচে থাকা সব জাতির মানুষ একটি মাত্র মোটা কাপড় পরবে যা তার কোমোরের ওপর ঊঠবে না আর হাঁটুর তলায় নামবে না।
সিরিয় খ্রিষ্ট আর মোপালা মহিলারা একটা প্যান্টের মত কাপড় পরতে পারে ওপরে একটা আঁটসাঁটো জ্যাকেট কুপ্পায়াম পরে। সিরিয় খ্রিষ্টরা রাজ্যের কিছুটা হলেও সুবিধা প্রাপ্ত জাতি। অনেকতা নায়্রদের মত, যোদ্ধা এবং জমিদার। মোপালারা সেনা সরবরাহ করে এবং ব্যবসায়ীও।
নাদারদের ধর্ম পরিবর্তন ঘটে কোম্পানি শাসিত তিন্নেভেলি জেলায়। এখানে নাদার খ্রিষ্ট সাধুদের উদ্যোগে মেয়েরা দীর্ঘ ঘাঘরার মত পরিধেয় পরতে শুরু করে। ত্রিভাঙ্কুরে যত নাদার খ্রিষ্ট ধর্মে পরিবর্তন ঘটতে লাগল অধিকাংশ নাদার পরইবারের মহিলারা মহিলা নায়ারদের মত বক্ষাবরণ পরতে শুরু করল। ১৮১৩ সালে ত্রিভাঙ্কুরের দেওয়ান(প্রধানমন্ত্রী) এবং কোম্পানি রেসিডেন্ট কর্নেল জন মনরো একটা বির্দেশিকা জারি করে বলেন যে সব মহিলা খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হবেন তারা নায়ারদের মত কক্ষাবরণীর সঙ্গে অন্যান্য দেশের খ্রিষ্ট মহিলাদের মত বক্ষাবরণী পরার অধিকার পাবেন। এই নির্দেশে রাজার পরামর্শ সভা পিদাকাকারের সদস্যরা বলল যে এই নির্দেশিকা জারি হলে জাতের মধ্যে পার্থক্য কমে যাবে এবং রাজ্য সামাজিকভাবে দূষিত হয়ে পড়বে। মুনরো তার নির্দেশিকা পরিবর্তন করে বললেন নাদার মহিলারা নায়ার মহিলাদের মত বক্ষাবরণী রাখতে পারবে না কিন্তু সিরিয় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মত উত্তরাঙ্গে জ্যাকেট পরতে পারবেন।
পরের দশ বছর ধরে খ্রিষ্ট সাধুরা ব্যাপক হারে ধর্মান্তরকরণের কাজ করতে থাকেন সঙ্গে শিক্ষা আইনি আর অর্থনৈতিক প্রকল্পও চালু করতে থাকে যাতে তাদের নিচু জাতের অনুগামীরা নিরাপত্তা পান। তাদের অন্যতম কাজ ছিল নাদার মেয়েদের জন্যে একটা বিদ্যালয় খোলা যেখানে তারা ইওরোপিয় পদ্ধতিতে লেস তৈরি করা শিখবে। এই উদ্বৃত্ত আয় থেকে তারা তাদের জমিদারদের থেকে মুক্তি কিনত। নাদারেরা তাড়ি ব্যবসাতেও প্রচুর লাভ করতে থাকে যেহেতু সারা ভারতে কোম্পানিই মদের একচেটিইয়া ব্যবসা করত। দোকানদারদের দোকান দিয়ে তাদের মাধ্যমে তাড়ি বেচে সেই আদায়ে প্রচুর লাভ হত।
No comments:
Post a Comment