সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
১৮৩৫ সালের টমাস মেকলের এবং ১৮৯২ সালের
আমেরিকার কমটি অব টেনের প্রস্তাবনা
আমাদের সমাজে কেন, কোন পদ্ধতিতে জ্ঞান
অর্জিত হবে, তার গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয় নি। একমাত্র কিছু দূরদর্শী বুঝেছিলেন এই
ভাবনা শূন্যতার ফল কি হতে পারে। সাধারণত মানুষ শান্তি চান। এমন কি মহাত্মা গান্ধীও
তার দেশের মানুশজপকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে হিন্দ
স্বারাজে লিখেছিলেন, deportation for life to the [penal colony
of the] Andamans is not enough expiation for the sin of encouraging European civilisation। বিনয় লাল লিখছেন, পশ্চিমি সমাজ বিজ্ঞান পাঠ
– নৃতত্ত্ব, ভুগোল এবং অর্থনীতি অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা বিশ্বের
মানুষের জাগতিক ভোগান্তিও সমানতালে বেড়েছে। এ তথ্যটা আজ আর আশ্চর্যের বলে মনে হয়
না।
আমরা পছন্দ করি বা নাই করি, আমাদের মানতেই
হবে, সমাজ বিজ্ঞানের কর্মকর্তারা তাদের দেশের তৈরি করা জ্ঞান বিদেশ থেকে পোঁটলাবন্দী
হয়ে সম্পূর্ণভাবে অখণ্ডরূপে আমাদের কাছে পাঠান। আমাদের বিদ্বানেদের কাজ হল স্রেফ
সেই পোঁটলার সুতো খুলে পোঁটলার মধ্যে থাকা জ্ঞানগুলি বের করে কাজে লাগানো – এর একচুল
বেশি তাদের কাজ নেই, ভূমিকাও নেই। তাই বিদ্যাচর্চায় উপনিবেশ বিরোধী চর্চার প্রধান চিহ্ন
হল এই সর্বগ্রাসী জ্ঞানের সব কিছু ঘাড় নামিয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেওয়ার
ঔপনিবেশিক দাসবৃত্তি।
বিশ্ব জ্ঞান ব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদ আজও
তার ভূমিকা পালন করে চলেছে। ওয়ার্ড চার্চিল যাকে বলছেন হোয়াট স্টাডিজ - The system of Eurosupremacist domination depends for its continued maintenance and expansion, even
its survival, upon the reproduction of its own intellectual paradigm — its approved
way of thinking, seeing, understanding, and being — to the ultimate exclusion of all others।
আজও এই ক্ষমতা ধরে রাখার একটা বড় শিকলি হল
পাঠ্যপুস্তকের বিশ্বজনীন ব্যবসা, সমাজবিজ্ঞানের বইপত্রের প্রামানীকরণ, কিছু
বিদ্যালয়কে বেছে নিয়ে উতকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে তুলেধরার উদ্যোগ, বৌদ্ধিক পরম্পরার বিদ্রোহী
মতামতকে গুরুত্ব/ঠাঁই না দেওয়া, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এই বিদ্রোহী ভাবনাগুলি চতুরতার
সাথে সাম্রাজ্যের উদ্দেশ্যপূরণে ব্যবহার করা, বৌদ্ধিক পত্রিকা এবং প্রকাশনাগুলি
পিয়ার গ্রুপ সিস্টেমে যাচাই করানোর পদ্ধতির মাধ্যমে ধারনাকে নিয়ন্ত্রণ করা
ইত্যাদির উদ্যম।
ঠিক এই জন্যে টলস্টয়, মহাত্মাগান্ধী,
মাওজেদং, অরবিন্দ তাদের রাজনৈতিক কাজগুলির মধ্যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে
গড়ে তোলার উদ্যম নিয়েছিলেন। গান্ধী শুরু করেছিলেন নঈ তালিম, যেখানে পড়ুয়ারা নিজেরা
পাঠ্যবইএর বাইরে গিয়ে শিখবে এবং দক্ষতা অর্জন করবে।
যে সব মানুষ, সমাজ বৃহত্তরভাবে মেকলের
ধারনায় তৈরি শিক্ষণ পদ্ধতির বাইরে থেকে গিয়েছেন, ব্যক্তি/সমাজগুলি কৃষ্টিগতভাবে তাদের
পরম্পরা বজায় রেখে মনুষ্যত্বের জয়গান করেছেন।
No comments:
Post a Comment