সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
হোয়াইট স্টাডিজ আর অনুমানগুলির সমস্যার সমালোচনা
ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পশ্চিমি দর্শন শাস্ত্র পড়াবার সময় তার জ্ঞানচার্চিক পদ্ধতির অন্যতম অংশ assumptions or presuppositions বিষয়ে বিশদে আলোচনা না করে দর্শন চর্চার পাঠ্যক্রমের চরিত্র কি ভাবে ঠিক করে সেটা আলোচনা করা হয় কি? ভারতীয় আর পশ্চিমি দার্শনিকেরা একে দেখেন দুটি মৌলিক এবং পদ্ধতিগত ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা একটি সমস্যার দুটি ভিন্ন মৌলিকতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এই পদ্ধতিটি ভারতীয় দর্শনের পরম্পরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটি দেখার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে গতির নীতিতে, বা গতিশীল সংস্কারে এবং constant reformulationএ; ভারতীয় দর্শনের ভাগ্যে জোটে স্বাভাবিকভাবে মৌলিক, প্রকৃত, কিন্তু মৃত ভারতীয় পরম্পরার টিকা। এই পশ্চিমী কাঠামোর মধ্যেই এতদিন ভারতে দর্শন শাস্ত্র পড়ানো হয়েছে – এবং দর্শনের যায়গায় আপনি অন্য যে কোন শাস্ত্র সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, নৃতত্ত্ব যে কোন কিছু বসিয়ে নিতে পারেন এবং তাতে স্তবকের মানে পালটে যায় না। এটা ধরে নিতে বলা হয় যে এই পশ্চিমি দর্শন তত্ত্বের কাঠামোটি মৌলিক, চিরন্তন এবং যে কোন প্রশ্নের উর্ধ্বে – পশ্চিমি জ্ঞানচর্চা একমাত্র উন্নত বিকশিত জ্ঞানচর্চা আর সব বিচিত্র, অনুন্নত এবং কালবৈষম্যের (anachronisms) দোষে দুষ্ট।
পশ্চিমি দর্শন যে ধারণাগুলির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তার ভিত্তিতে গেলে আরও বেশি আশ্চর্যের সংবাদ অপেক্ষা করে আছে দেখা যাবে। ইসলামি বা ভারতীয় দর্শন, পশ্চিমের দার্শনিকদের চোখে দর্শন পদবাচ্য নয়, কারণ এই দুটি পরম্পরাই refuse to grant reason pre-eminence or primacy as a tool for achieving absolute truth। পশ্চিমি দর্শন, ইসলামি দর্শনকে দর্শন না বলে বলল ধর্মতত্ত্ব, আর ভারতীয় দর্শনকে ঢুকিয়ে দেওয়া হল সরাসরি ধর্ম আলোচনার চত্ত্বরে(সামগ্রিকভাবে পশ্চিমিরা এইভাবেই অপশ্চিমিদের দেখাতে অভ্যস্ত বরাবরের জন্যে)। ঠিক এর উল্টো দিকে তার নিজের তৈরি ভিত্তিহীন ধারণার নীতির দাঁড়ি পাল্লায়, তাকে যদি ওজন করা যায়, তাহলে হয়ত পশ্চিমি দর্শনকে বলা যেতে পারে মৌলবাদী, ধর্মীয় এবং ধর্মতাত্ত্বভিত্তিক।
আমরা হাভার্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, অক্সফোর্ড ইত্যাদি বেশ কিছু প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের পাঠ্যক্রমের বিচার করে দেখেছি, এদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোটামুটি সারা বিশ্বের দর্শনের জ্ঞানকে তুচ্ছ করে, বাদ দিয়ে শুধু মাত্রই পশ্চিমি দর্শন পড়ানো হয়। পশ্চিমি দার্শনিকেরাই নাকি সত্যিকারের দার্শনিক হিসেবে গণ্য হন এবং দর্শন শাস্ত্র হিসেবে শুধুমাত্র পশ্চিমি দার্শনিকদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে। কিন্তু ভারত সহ অন্যান্য নানান প্রাক্তন উপনিবেশগুলির বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়টাই উল্টো হয়ে যায় – আমরা আমাদের নিজেদের দার্শনিক পরম্পরাকে দমিয়ে রেখে পশ্চিমি দার্শনিক পরম্পরাকেই অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে চলি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা ইওরোপিয় দার্শনিক বিষয়ে সব সময় হালনাগাদ হয়ে থাকেন কিন্তু তার নিজের দেশের মানুষের দর্শন বা অইওরোপিয় দর্শনের বিষয়ে প্রায়শই অজ্ঞ থাকতে ভালবাসেন।
আইআইটি দিল্লির দর্শনের অধ্যাপক অনুরাধা বীরাবলি বলছেন যদিও আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় দর্শন পড়াই, কিন্তু সেটি পড়াই বা দার্শনিক আলাপ আলোচনা করি পশ্চিমি মান ও পরিমিতি অনুযায়ী।
এবারে যদি কেউ বলেন ভারতীয়, আফ্রিকিয়, চিনা, পশ্চিমি দর্শনেরমত ভিন্ন ভিন্ন ধারার দর্শন পরস্পরের সঙ্গে অপ্রমেয় হয়, এবং সক্কলেই আলাদা আলাদা ধারণার ভিত্তিতে বেড়ে ওঠে, এবং তাদের ভিত্তি আলাদা আলাদা পরস্পরের প্রতিযোগী বিশ্বাস এবং প্রতিতী হয় তাহলে কি হতে পারে? এই সম্ভাব্যতা শ্রেণী কক্ষে আনা দরকার এবং গভীর আলোচনা করেয়া দরকার।
বা এমনও হতে পারে পড়ুয়াদের ভাবতে শেখানো হল যে সমস্যা পশ্চিমি দর্শনে উত্তর নেই সে সমস্যা কিভাবে ভারতীয় দর্শন সমাধান করে। নানান ধরণের সম্ভাব্যতা অসম্ভাব্যতা নিয়ে ভাবতে শেখানো দরকার। তাহলে হয়ত যদি পড়ুয়ারা দেখতে পারে, পশ্চিমি বৌদ্ধিক পরম্পরা অন্তর্নিহিতভাবে ত্রুটিপুর্ণ, দিকশূন্য এবং সক্কলকে কানা গলিতে নিয়ে গিয়ে ফেলছে।
হোয়াইট স্টাডিজ আর অনুমানগুলির সমস্যার সমালোচনা
ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পশ্চিমি দর্শন শাস্ত্র পড়াবার সময় তার জ্ঞানচার্চিক পদ্ধতির অন্যতম অংশ assumptions or presuppositions বিষয়ে বিশদে আলোচনা না করে দর্শন চর্চার পাঠ্যক্রমের চরিত্র কি ভাবে ঠিক করে সেটা আলোচনা করা হয় কি? ভারতীয় আর পশ্চিমি দার্শনিকেরা একে দেখেন দুটি মৌলিক এবং পদ্ধতিগত ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা একটি সমস্যার দুটি ভিন্ন মৌলিকতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এই পদ্ধতিটি ভারতীয় দর্শনের পরম্পরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটি দেখার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে গতির নীতিতে, বা গতিশীল সংস্কারে এবং constant reformulationএ; ভারতীয় দর্শনের ভাগ্যে জোটে স্বাভাবিকভাবে মৌলিক, প্রকৃত, কিন্তু মৃত ভারতীয় পরম্পরার টিকা। এই পশ্চিমী কাঠামোর মধ্যেই এতদিন ভারতে দর্শন শাস্ত্র পড়ানো হয়েছে – এবং দর্শনের যায়গায় আপনি অন্য যে কোন শাস্ত্র সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, নৃতত্ত্ব যে কোন কিছু বসিয়ে নিতে পারেন এবং তাতে স্তবকের মানে পালটে যায় না। এটা ধরে নিতে বলা হয় যে এই পশ্চিমি দর্শন তত্ত্বের কাঠামোটি মৌলিক, চিরন্তন এবং যে কোন প্রশ্নের উর্ধ্বে – পশ্চিমি জ্ঞানচর্চা একমাত্র উন্নত বিকশিত জ্ঞানচর্চা আর সব বিচিত্র, অনুন্নত এবং কালবৈষম্যের (anachronisms) দোষে দুষ্ট।
পশ্চিমি দর্শন যে ধারণাগুলির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তার ভিত্তিতে গেলে আরও বেশি আশ্চর্যের সংবাদ অপেক্ষা করে আছে দেখা যাবে। ইসলামি বা ভারতীয় দর্শন, পশ্চিমের দার্শনিকদের চোখে দর্শন পদবাচ্য নয়, কারণ এই দুটি পরম্পরাই refuse to grant reason pre-eminence or primacy as a tool for achieving absolute truth। পশ্চিমি দর্শন, ইসলামি দর্শনকে দর্শন না বলে বলল ধর্মতত্ত্ব, আর ভারতীয় দর্শনকে ঢুকিয়ে দেওয়া হল সরাসরি ধর্ম আলোচনার চত্ত্বরে(সামগ্রিকভাবে পশ্চিমিরা এইভাবেই অপশ্চিমিদের দেখাতে অভ্যস্ত বরাবরের জন্যে)। ঠিক এর উল্টো দিকে তার নিজের তৈরি ভিত্তিহীন ধারণার নীতির দাঁড়ি পাল্লায়, তাকে যদি ওজন করা যায়, তাহলে হয়ত পশ্চিমি দর্শনকে বলা যেতে পারে মৌলবাদী, ধর্মীয় এবং ধর্মতাত্ত্বভিত্তিক।
আমরা হাভার্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, অক্সফোর্ড ইত্যাদি বেশ কিছু প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের পাঠ্যক্রমের বিচার করে দেখেছি, এদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোটামুটি সারা বিশ্বের দর্শনের জ্ঞানকে তুচ্ছ করে, বাদ দিয়ে শুধু মাত্রই পশ্চিমি দর্শন পড়ানো হয়। পশ্চিমি দার্শনিকেরাই নাকি সত্যিকারের দার্শনিক হিসেবে গণ্য হন এবং দর্শন শাস্ত্র হিসেবে শুধুমাত্র পশ্চিমি দার্শনিকদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে। কিন্তু ভারত সহ অন্যান্য নানান প্রাক্তন উপনিবেশগুলির বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়টাই উল্টো হয়ে যায় – আমরা আমাদের নিজেদের দার্শনিক পরম্পরাকে দমিয়ে রেখে পশ্চিমি দার্শনিক পরম্পরাকেই অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে চলি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা ইওরোপিয় দার্শনিক বিষয়ে সব সময় হালনাগাদ হয়ে থাকেন কিন্তু তার নিজের দেশের মানুষের দর্শন বা অইওরোপিয় দর্শনের বিষয়ে প্রায়শই অজ্ঞ থাকতে ভালবাসেন।
আইআইটি দিল্লির দর্শনের অধ্যাপক অনুরাধা বীরাবলি বলছেন যদিও আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় দর্শন পড়াই, কিন্তু সেটি পড়াই বা দার্শনিক আলাপ আলোচনা করি পশ্চিমি মান ও পরিমিতি অনুযায়ী।
এবারে যদি কেউ বলেন ভারতীয়, আফ্রিকিয়, চিনা, পশ্চিমি দর্শনেরমত ভিন্ন ভিন্ন ধারার দর্শন পরস্পরের সঙ্গে অপ্রমেয় হয়, এবং সক্কলেই আলাদা আলাদা ধারণার ভিত্তিতে বেড়ে ওঠে, এবং তাদের ভিত্তি আলাদা আলাদা পরস্পরের প্রতিযোগী বিশ্বাস এবং প্রতিতী হয় তাহলে কি হতে পারে? এই সম্ভাব্যতা শ্রেণী কক্ষে আনা দরকার এবং গভীর আলোচনা করেয়া দরকার।
বা এমনও হতে পারে পড়ুয়াদের ভাবতে শেখানো হল যে সমস্যা পশ্চিমি দর্শনে উত্তর নেই সে সমস্যা কিভাবে ভারতীয় দর্শন সমাধান করে। নানান ধরণের সম্ভাব্যতা অসম্ভাব্যতা নিয়ে ভাবতে শেখানো দরকার। তাহলে হয়ত যদি পড়ুয়ারা দেখতে পারে, পশ্চিমি বৌদ্ধিক পরম্পরা অন্তর্নিহিতভাবে ত্রুটিপুর্ণ, দিকশূন্য এবং সক্কলকে কানা গলিতে নিয়ে গিয়ে ফেলছে।
No comments:
Post a Comment