অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
মহিলাদের পরিচ্ছেদ
এবং ইওরোপিয় ধারণায় শালীনতা
ঔপনিবেশিক সময়ে পুরুষ
এবং মহিলাদের কাপড় পরা বর্ণনায় বার বার উঠে আসা দুটি চিত্র আমরা উল্লেখ করতে পারি
একটা নগ্ন ফকির অন্যটা শাড়ি পরা মহিলা তাদের গ্রামের ইঁদারা থেকে মাথায় জল বয়ে
নিরাপদে, কমনীয়ভাবে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। উনবিংশ শতকের ব্রিটিশ পুরুষদের বর্ণিত
লন্ডন এবং ভারতজোড়া স্বাভাবিক চেহারার ব্রিটিশ মহিলাদের ছবি এঁকেছেন, তারাই আবার
গ্রাম ভারতের পথে ঘাটে মাঠে শৃঙ্খলাবদ্ধ মহিলাদেরও মুগ্ধ ছবি এঁকেছেন।
মেজর রয়্যাল শিয়ারার,
১৮২০ সাল থেকে মাদ্রাজে কোম্পানির চাকুরে, লিখছেন সাধারণ শ্রেণীর দেশিয় মহিলারা জলের
হাঁড়ি মাথায় নিয়ে সোজা নান্দনিকভাবে হেঁটে তাদের বাড়ির দিকে ফিরে যান। তাদের
পরিধেয় সাধারণ বস্ত্রের মধ্যে একখণ্ড শাড়ির চওড়া অংশ দুফেরতা করে কটিদেশে জড়ানো, তার
একাংশ উপরের দেহবল্লরী ঢেকে উঠে গিয়েছে মাথায় ঘোমটা আকারে পড়েছে অথবা সুন্দরভাবে
বাঁ কাঁধে ন্যস্ত করা হয়েছে... চকচকে কৃষ্ণকান্ত কেশরাশিকে মাথার পিছনে খোঁপার
আকারে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এনসাইক্লোপিডিয়া
ইন্ডিকার লেখক, এডোয়ার্ড বেলফোর ভারতীয় মহিলাদের কাপড়চোপড়পরা তাদের চলনভঙ্গী,
তাদের ঠাটবাট ইত্যাদি বিষয়ে আরও প্রগলভ এবং মুগ্ধতার কলমপাত করেছেন। ইন্ডিকায় তিনি
ভিক্টোরিয় পাঠকদের জন্যে উৎসব মুখর বম্বের ব্যস্ত রাস্তার একটা ছবি এঁকেছেন – দ্য লার্জ
এন্ড আলমোস্ট বোভাইন বানিয়ান এন্ড ভাট্টিয়া ওমেন রোল হেভিলি এলং, ইচ প্লাম্প ফুট
এঙ্কল লোডেড উইথ সেভারেল পাউন্ডস ওয়েট অব সিলভার। দ্য স্লেন্ডার, গোল্ড টিনটেড
পুরভু উইথ দেয়ার হেয়ার টাইটলি টুইস্টেড, এন্ড আ করোনা অব মোগরা ফ্লাওয়ারস, হ্যাভ আ
শ্রিঙ্কিং গ্রেস এন্ড ডেলিকেসি হুইচ ইজ ভেরি এট্রাক্টিভ। দ্য মারোয়াড়ি ফ্যামিলিজ,
উইথ স্কার্টস ফুল অব প্লেটস ... এন্ড শাড়ি ড্রাগড ওভার দ্য ব্রো ... আর ভেরি
কিউরিয়াস ফিগার, শেলডম প্রিটি। সুরাটি গার্লস, উইথ দেয়ার ড্রাপারি সো টাইটলি
কিলটেড এজ টু শো গ্রেট সুইপস অব রাউন্ড, ব্রাউন লিম্বস, স্মুথ এন্ড শেপলি। সুরাটি
মহিলারা রান্না ঘরের আর আস্তাবলে ঘুরে বেড়ানো ভেনাস এবং তাদের কাঁখে শিশুদের দেখা
যায়। আর ছিল ছোট্টখাট্ট মালইন মেয়েরা তাদের সুতির কাপড়ে ঢাকা ত্বক উজ্জ্বল এবং অতি
সাদা যারা খুব তাড়াতাড়ি নিতম্ব ঘুরিয়ে গুলিতি ছুঁড়তে পারে।
মহিলাদের পরিধেয়
নিয়ে ব্রিটিশ আর ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে সর্বসাধারণের সামনে উপস্থিত হওয়া আর শালীনতা
পরস্পর বিরোধী। উত্তর ভারতের উচ্চ শ্রেণীর হিন্দু এবং মুসলমান মহিলাদের তাদের
বাড়ির বাইরে খুব বেশি দেখতে পাওতা যেত না। তারা বাড়ির জেনানানা মহলেই বেশি সময়
কাটাতেন। তারা পুরুষদের সংসর্গ সাধারণত এড়িয়ে চলতেন এবং পুরুষ আর মহিলাদের চলাফেরা
আর কাজকর্মেরে মধ্যেও বিপুল ফারাক করা হত। তাদের সাধারণত মুখ আর মাথা ঢাকা এবং
হাল্কাভাবে দেহের অন্যান্য অংশ ঢাকার এবং তার সঙ্গে দেহকাণ্ড দেখতে পাওয়া না
পাওয়ার ওপরে মহলাদের চরিত্র সম্ভ্রান্ত কিনা তা নির্নয় করা হত। বাড়িতে মহিলাদের
জন্যে বরাদ্দ অংশে কোন পুরুষ প্রবেশ করত হয় ভৃত্যদের চিতকারে বা পুরুষদেরর গলা
খাঁকারিতে, মহিলারা ত্বরিতগতিতে তাদের আঁচল বা অন্যকোন কাপড় বা ওড়না দিয়ে মুখ আর
মাথা ঢেকে ফেলতেন, যদিনা সেই পুরুষটি ছোট ভাই গোছের না হয়। উচ্চশ্রেণীর মহিলাদের
যদি বাইরে যেতে হত, তারা কাপড়ে ঢাকা বদ্ধ পালকিতে যেতেন। তাদের যদি কোন কারণে পায়ে
হেঁটে জনপরিসরে যেতে হত, তারা তাহলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাপড়ে ঢেকে নিতেন, আর
তারা যদি শাড়ি পরতেন তাহলে তারা এমনভাবে মুখমণ্ডল ঢেকে নিতেন যে তাদের মুখ যাতে না
চেনা যায়। উত্তরে নিচুশ্রেণীর আর নিচু জাতের মহিলারা রাস্তায় বেরোতেন, মাঠে কাজ
করতেন, পুরুষদের কাজে সাহায্য করতেন এবং এখানে সেখানে কোন বাধা ছাড়াই গতায়াত করতেন।
দক্ষিণে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া মহিলাদের জনসমক্ষে চলাচলের এবং আবির্ভূত
হওয়ার ওপরে সামাজিক বাধা কম ছিল।
ভারতে ব্রিটিশ
মহিলারা ব্রিটিশদের বসবাসের এলাকা ছাড়া খুব বেশি বাইরে বেরোতেন না। যদি তাদের
বাইরেই বেরোতে হত তাহলে তারা হয় ঘোড়ায় চড়ে বা ঘোড়া গাড়িতে বা বাহিত হতেন। তবে তারা
তাদের চেহারা বা ত্বক, পুরুষদের চোখে মর্যাদা রক্ষায় বা ভারতীয় সূর্য রশ্মির কবল থেকে
বাঁচাবার ব্যবস্থা করতেন না। বাড়িতে তারা গৃহস্বামী এবং ভারতীয় ভৃত্যদের সঙ্গে
সমানতালে কাজ করতেন। যদিও তারা তাদের মাথা বনেট, টুপি, ক্যাপ ইত্যাদি দ্বারা
আচ্ছাদিত করতেন, এবং উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং বিংশ শতকের প্রথমার্ধে তারা
তাঁদের মাথা সূর্য আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত করতেন, তারা কিন্তু তাদের কোনভাবেই মুখ ঢাকার
চেষ্টা করতেন না। তাদের ত্বক, ঠোঁট, মুখমণ্ডল, এবং ত্বকের রঙ অসাধারণ কাব্যময়তায়
ব্রিটিশ পুরুষেরা ছবিতে বা কাব্যে উপস্থাপন করেছেন অথবা মহিলারা পছন্দ বা নিন্দা
করেছেন।
No comments:
Post a Comment