অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
দৈনন্দিনতার
পোষাকে ভারতীয়রা
মধ্য অষ্টাদশ
শতকে শহুরে ভারতীয়রা বিশেষ করে কলকাতা বা বম্বের মধ্যবিত্তরা ইওরোপিয় পরিধেয় পরা
শুরু করল। বম্বেতে পার্সিরা এই চল শুরু করে। পার্সিরা প্রথমে গুজরাটে বসবাস করতে
শুরু করে। কিন্তু অষ্টাদশ শতকে তারা বম্বের খুব গুরুত্বপুর্ণ সমাজ – ছুতোর, স্থপতি
এবং নৌকো তৈরির কাজে লেগে যায়। উনবিংশ শতকের শুরুতে তারা সফল ব্যাঙ্কার, সওদাগর
এবং ইওরোপিয় আঙ্গিকের ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। যদিও তারা নিজেদের পরম্পরার টুপি আর জুতো
পরা বাদ দেয় নি, কিন্তু ব্রিটিশদের মত করে ঝোলা ফ্রক কোটের ব্যবহার তারা করতে শুরু
করে।
১৮৮০ সাল নাগাদ
ধনী পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়রা প্রকাশ্যে ইওরোপিয় পোষাক পরা শুরু করে।
কিন্তু যারা পশ্চিমের ধাঁচে গোটা দেহ আচ্ছাদন করত তারা কিন্তু শিরস্ত্রাণে পশ্চিমকে
অনুসরণ করল না। বহু ভারতীয় ইওরোপিয় কাপড়ের সঙ্গে পাগড়ি পরত। বিশেষ করে ঠাণ্ডা
অঞ্চলগুলোতে। তবে শোলার টুপি ছাড়া আসতে আসতে নানান ধরণের টুপি পরার অভ্যেস হয়ে গেল
ভারতীয়দের।
অষ্টাদশ শতকে এসে
ইওরোপিয়রা মোটামুটি বুঝে গিয়েছিল ভারতীয়রা কোথায় জুতো পরে আর কোথায় পরে না। ১৮০৪এর
ভারতে ঘুরে ঘুরে গাছগাছালির প্রজাতি সংগ্রহ করা লর্ড ভ্যালেন্সিয়া পেশোয়ার সঙ্গে
দেখা করেন। মারাঠা অঞ্চলে বহু দিনের ব্রিটিশ রেসিডেন্ট কর্ণেল ক্লোজ এবং তার
বাহিনী নিয়ে তিনি পেশোয়ার প্রাসাদ প্রাঙ্গনে পালকিতে করে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে
তিনি হেঁটেই দরবারের দিকে যান। তিনি সাদা কাপড়ে মোড়া মেঝেতে পা দেওয়ার আগেই তিনি
জুতো খুলে ঢোকেন। ভ্যালেন্সিয়া পেশোয়ার দেওয়ানের সঙ্গে কথা বলছিলেন, কিছু সময় পরে
পেশোয়া ঢুকে তার সিংহাসন বা আদতে গদির সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভ্যালেন্সিয়াকে
পেশোয়ার কাছে নিয়ে গেলেন দেওয়ান এবং রেসিডেন্ট। পেশোয়া তাকে হাল্কা করে আলিঙ্গন
করলেন। পেশোয়া তার গদিতে বসার পরে ভ্যালেন্সিয়াকে মাটিতেই পা মুড়ে বসতে হল কারণ সেখানে
আর কোন চেয়ার ছিল না – পেশোয়া বললেন আমাদের কোন চেয়ার নেই, কুশন নেই এবং বসার সময়
আমরা পায়ের পাতা দেখানোকে অসম্মান বলে মনে করি। দোভাষী শুধু দেওয়ানের সঙ্গেই কথা
বলছিল। তার মার্ফত কথাবার্তা শেষ হলে দোভাষী পেশোয়ার সঙ্গে কথা বলা শুরু করে। সে
পেশোয়া আর ভ্যালেন্সিয়াকে দরবারের পাশের একটা ছোট ঘরে নিয়ে নিয়ে যায়। তারা সেখানে
একটা মেঝেয় পাতা তুর্কি কম্বলে বসে সাধারণভাবে আরও একঘণ্টা কথা বলে আবার দরবারে
ফিরে এসে অতিথিদের ফেরার ব্যবস্থা করে দেন। ভ্যালেন্সিয়া লিখছেন ঐভাবে বসে আমি খুব
ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, আমি খুব কষ্ট করে উঠে দাঁড়াই এবং কিছু সময় আমায় দেওয়ালে ভর দিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
বিভিন্ন আঁকা ছবিতে
ধনী ইওরোপিয় আর ভারতীয়দের তাদের ভারতীয় কর্মচারী আর চাকরদের সঙ্গে দপ্তরে কাজ করতে
দেখা যায়। দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে বানিয়ানরা যারা সাধারণত টাকার
ব্যাপারস্যাপার দেখতেন। এরা ব্রিটিশদের দপ্তর আর ব্যবসা উভয়ই দেখতেন। তারা ধারের ব্যবস্থা
করতেন, তাদের হিসেব রাখতেন, যে কোন মিটিংএ আলাপ আলোচনা চালাতেন। মুন্সী নামে আরেক
ধরণের কর্মচারী ছিল। মুন্সিরা উচ্চশিক্ষিত
মুসলমান। এঁরা ইওরোপিয়দের প্রথম প্রবাস জীবনে হিন্দি বা পার্সি শেখাতেন, এবং পরের
দিকে তার চিঠিপত্র ইত্যাদি খসড়া করে দেওয়া রাখার মত ব্যক্তিগত সহকারীর কাজ করতেন।
মুন্সির মতই আরেক ধরণের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন যাদের পদের নাম স্ক্রাইব(বাংলায়
কেরাণী)। অষ্টাদশ শতকের নানান ছবিতে মুন্সি আর বানিয়ানরা পায়ে জুতো পরে থাকলেও
বেয়ারা আর হুঁকোবরদারেরা খালি পায়ে। আমার ধারণা এটা উচ্চ শ্রেণীর কর্মচারীদের সম্মান
দেখানোর পদ্ধতি। ক্যাপ্টেন টমাস উইলিয়ামসন ১৭৮০ থেকে ১৭৯০ পর্যন্ত ভারতে
কাটিয়েছেন। তার ইস্ট ইন্ডিয়া ভাদে মেকুম(১৮১০) ইওরোপিয়দের প্রথম ভারতের বিশদ
সামাজিক প্রথা সম্বন্ধীয় নির্দেশিকায় লিখলেন – আ বানিয়ান ইনভ্যারিয়েবলি রাইডস ইন
হিজ প্যালানকুইন এটেন্ডস বাই সেভারেল আন্ডারলিংস... হি টু আ সার্টেন ডিগ্রি রুলস
দ্য অফিস, এন্টারিং ইট জেনারেলি উইথ লিটল সেরিমনি, মেকিং আ স্লাইট ওবিসেন্স, এন্ড
নেভার ডাইভেস্টিং হিমসেলফ অব হিজ স্লিপার্স; আ প্রিভিলেজ হুইচ, ইন দ্য আইজ অব দ্য
নেটিভস, এট অয়ান্স প্লেসেস হিম অন আ ফুটিং অব ইকুয়ালিটি উইথ হিজ এমপ্লয়ার।
No comments:
Post a Comment