অধ্যায়
৫
বস্ত্র,
পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত
পাগলা কুত্তা আর ব্রিটিশ মধ্যাহ্নে রাস্তায় হাঁটে
ভারতীয় মায়ানমা ভর্তি আবহাওয়ায তো ইউরোপীয়দের চরম শত্রু ছিলই এর সঙ্গে খলনায়ক হিসেবে এসে জুটল সূর্যের রশ্মি। ডক্টর জনসন লিখছেন ভারতীয় আবহাওয়ায় দুটি
অবশ্যই পরণীয় পোশাক তিনি নিদান দিচ্ছেন, তার মধ্যে একটি হল
কোমরবন্ধ এবং যেটি মানুষের তলপেটের নানান অন্তরযন্ত্রকে
ক্ষতিকর ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে সদাই সামলে রাখে আর পাগড়িটি
মাথাকে বাঁচায় সরাসরি মাথায় পড়া দুর্দম
সূর্যের রশ্মি থেকে। জনসন কিন্তু ভারতীয়
আবহাওয়ায় থাকা ইওরোপিয়দের পাগড়িকে শিরস্ত্রাণ হিসেবে মেনে নিতে নিদান দেন নি বরং বলেছেন টুপির তলায় একটা ভিজে রুমাল নিয়ে মাথায় বিছিয়ে রাখলে মাথা ঠাণ্ডা থাকবে।
১৮৪০
সাল পর্যন্ত ভারতীয়
প্রখর সূর্য রশ্মি থেকে বাঁচতে ইউরোপীয়রা মাথা বাঁচানোর জন্যে আলাদা ধরনের টুপির ব্যবস্থজা করে নি। ইউরোপীয়রা গ্রীষ্মকালে সরাসরি উন্মুক্ত সূর্যের
তলায় সূর্যরশ্মির প্রবাদ আর ধাক্কাকে
ভয় পেয়েছে কারণ সূর্য থেকে পড়া
সরাসরি আপতিত রশ্মি
অঙ্গবিকৃতি(সন্ন্যাস রোগ) এবং স্ট্রোক হওয়ার জন্য দায়ী। তার ধারণা ছিল ভারতীয় এবং অন্যান্য কালো
চামড়ার মানুষেরা তাদের চামড়া এবং
মাথায় শক্ত হাড়ের পলেস্তেরা থাকাইয় এই
ধরনের নিয়মিত প্রাকৃতিক আক্রমন থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে। অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথম পাতা কোন ইউরোপীয় যদি ভারতীয়
গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় রাস্তায় নামতে বাধ্য হয় তাকে অবশ্যই স্টোভপাইপ টুপি পরতে হত। তাকে যদি রাস্তায় হাঁটতে হত তাহলে ভৃত্যকে সাহেবের
মাথায় ছাতা ধরা জরুরি ছিল।
অসাধারণ
উদ্ভাবক ডক্টর জুলিয়াস জেফারিজ বলেছেন 1824 সাল নাগাদ তিনি যখন হিমালয়
অঞ্চলে বাস করতেন সেখানে সূর্যের রশ্মি ভয়ংকর চড়া ছিল সেই রশ্মি থেকে বাঁচতে
তাকে gothic আকারের টুপি বানিয়ে নিতে হয়েছিল। সেই টুপির উপরে অনেকগুলি স্তরে সাদা রেশম কাপড়ের পিণ্ডর স্তর তৈরি করতেন যাতে হাওয়া-বাতাস সহজেই খেলতে পারে। তিনি এর সঙ্গে আরেকটি টুপির
প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন সেটি হল সোলার টুপি হালকা সুন্দর আকারের। এখানে শোলার টুপি একটা
মজার শপব্দবন্ধ। শোলা অর্থে sholapith আবার ইংরেজিতে সোলার অর্থে সূর্যরশ্মি। অর্থাৎ দুটি অর্থই সূর্য টুপির দিকে নির্দেশ করে যেটি শোলার তৈরি আর সূর্য রশ্মিকে
প্রতিহত করে। সামগ্রিক অর্থে এই শব্দটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৮৫৭
সালের মহা যুদ্ধে দিল্লি
অবরোধ এবং লক্ষ্ণৌ রেসিডেন্সি বাঁচানো প্রক্রিয়াটা চলেছিল কিছুটা গ্রীষ্ম সময়ে এবং সামগ্রিক বর্ষার সময় জুড়ে। গত একশ বছর ধরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী
যেধরণের পরিধেয়র প্রথাবদ্ধতা
ছিল সেটা হুড়মুড় করে এই যুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে
ভেঙ্গে পড়ল। বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এবং ইউরোপীয়
সেনা প্রতিকূল পরিবেশে একসঙ্গে মার্চ করতে বাধ্য হল। এই ডামাডোল অবস্থার প্রতিফলন আমরা মাথা
বাঁচানোর শিরস্ত্রাণের বৈচিত্রে
দেখতে পাই। ইউরোপ থেকে সদ্য আসা সাধারণ সেনারা তাদের বিয়ার চামড়াত তৈরি ভারি পরিবেশ অবান্ধব
শিরস্ত্রাণ পড়তে বাধ্য হলেও মূলত সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারেরা গ্রীষ্মকে
যুঝতে সাধারণ ভারতের গ্রীষ্ম আবহাওয়ার উপযোগী
শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করেছেন।
এই মাথা বসানো শিরস্ত্রাণ গুলির মধ্যে জনপ্রিয়তম ছিল বেতের টুপি যা মোটামুটি রোমিও সেনা অনুকরণে তৈরি হয়েছিল বলে শোনা যায়। এছাড়াও ছিল সোলার টুপি নেপিয়ার টুপি
আর মাথা গলা বাঁচানো জন্যে।
অধিকাংশ ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক যারা অগোছালো বাহিনী নিয়ে শত্রু মোকাবিলা
করতেন তারা নিজেরা এবং গোটা বাহিনীকেই পাগড়ি
পরিয়েছিলেন। লন্ডনে অবসর নিয়ে চলে যাওয়া অসাধারণ উদ্ভাবক ডক্টর জেফারিজ তার নানান ভারতীয় পরিবেশ ইউরোপ
ইউরোপীয়দের বাঁচানোর উদ্ভাবন দেখালেন দ্য
ব্রিটিশ আর্মি ইন ইন্ডিয়াঃ ইটস প্রিজারভেশনস বাই এন এপ্রোপ্রিয়েট ক্লোদিং বইতে এবং
তার ভারতীয় সেনাবাহিনী জন্য উদ্ভাবনের
নমুনা নিয়ে ১৮৬৩ সালে সেনা বাহিনীর রয়্যাল স্যানিটারি কমিশনের আধিকারিকদের সামনে উপস্থাপন
করেছেন।
No comments:
Post a Comment