সমাজ বিজ্ঞান পাঠ্যের বিবর্তন
১৮৩৫ সালের টমাস মেকলের এবং ১৮৯২ সালের
আমেরিকার কমটি অব টেনের প্রস্তাবনা
আজ
ভাবলে অবাক লাগে প্রত্যেক ইওরোপ দ্বারা অবদমিত বা ঔপনিবেশিক দেশে সমাজের
প্রত্যেকটি শিক্ষিত স্তর মাথা নামিয়ে মেনে নিল যে তাদের সভ্যতা ইওরোপের থেকে নিম্নস্তরের
এবং অপাঙ্কতেয়। তারা মাথা নামিয়ে নিজেদের দেশের যা পরম্পরা বা সভ্যতার ঐশ্বর্য, সেগুলির
উপহারের ডালি সাজিয়ে ইওরোপিয়দের লুঠ করতে দিতে বসে গেল, এবং মেনে নিল তারা গোটা
দেশের বিকাশ সম্বন্ধীয় ভাবনা চিন্তা তাদের নয়। দেশের পরম্পরা বিশ্লেষণ সব কিছুর
দায় তুলে দিল বিদেশ থেকে আসা বিদেশিদের হাতে।
এস এন
নাগরাজন তার নিজস্ব ভঙ্গীমায় বলছেন, আমাদের বিষয়ে পশ্চিমি সভ্যতা কি ভাবনা ভাবল।
1.
Your crafts are useless
2.
Your crops and plants are useless
3.
Your food is useless
4.
Your cropping and agricultural practices are useless
5.
Yours houses are useless
6.
Your education is useless
7.
Your religion and ethics are absolutely useless
8.
Your culture is useless
9.
Your soil is useless
10.
Your medical system is useless
11.
Your forests are useless
12.
Your irrigation system is useless
13.
Your administration is useless
14.
You are finally a useless fellow
বৌদ্ধিকভাবে
মানহানিকর এবং আত্মিকভাবে বিধ্বংসী এই গল্পগুলি দেশের পর দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হল,
তুর্কি, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং ভারত, দক্ষিণ আমেরিকায়, মাওরিদের জমি নিউজিল্যান্ডে...।
এই সমাজগুলি রাতারাতি ইওরোপের শিকারে পরিণত হল এবং পরাজিত সভ্যতা হিসেবে এই
দেশগুলিকে দেগে দেওয়া হল। সার্বিকভাবে গোটা শিক্ষিত সমাজ ইনফিরিওরিটি কপ্লেক্সে
ভুগতে লাগল এবং তাদের মন, প্রাণ আর দেহ সব কিছুই ইয়োরোপের পদপ্রান্তে সঁপে দিল।
মানবিকতা মুখে ঘোমটা দিল। মনেও কালো ঢাকনা পড়ল। সততায় দাগ লাগল।
হেরো সভ্যতাগুলোর
ওপরে এই অত্যাচারের ব্যাপকতা শেষমেশ একটা রেয়ার যুক্তিতে সীমাবদ্ধ থেকে গেল, যে
দুরুহতা সাম্রাজ্যের শক্তিগুলোকে জুঝতে হয়েছে – গোটা মনুষ্য সমাজকে শিক্ষার আওতায়
নিয়ে আসার দুর্মর ইচ্ছে ব্যর্থ হল। যেটা মেকলে চেয়েছিলেন। অন্যভাষায় বলতে গেলে
আমরা অধিকাংশ ভারতীয় আমাদের আইডেন্টিটি নিয়ে ইওরোপিয় প্রভাব থেকে বেঁচে গিয়েছি তার
একটা বড় কারণ হল আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন না, আমরা আজও
মাতৃভাষাতেই কথা বলি পরস্পরের সঙ্গে, এবং আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশ মানুষ পশ্চিমি
সভ্যতার থেকে একটা শংসাপত্র বাগাবার দুর্মর পশ্চিমি জ্ঞানচর্চার উদ্যমের পিছনে না
ছুটে নিজে কিছু বানাবার সুযোগ খুঁজে নিয়েছেন। তারা বিচ্ছিন্ন, দূরবর্তী এবং সাম্রাজ্যের
বাইরেই থেকে গিয়েছে। তারা আলাদা থাকতে পেরেছেন কারণ তারা নিজেদের খাবার নিজেরা উতপাদন
করেন এবং নিজেদের রোজগার যতই কম হোক নিজেরাই উতপাদন করে নেন।
সারা
ঔপনিবেশিক বিশ্বজুড়ে পরিণাম একই ঘটল প্রত্যেক দেশে একই স্পেসে দুটি আলাদা সমাজ তৈরি
হল। মেক্সিকান নৃতত্ত্ববিদ Guillermo Bonfil
Batalla, Mexico Profundo বইতে একটা অলীক মেক্সিকোর কথা বলছেন যারা একটা পশ্চিম প্রভাবিত
সমাজকে গোটা মেক্সিকোর গ্রাম সমাজের ওপর চাপিয়ে দিল বিদ্বতজনেরা। তিনি একে অলীক বা
ইমাজিনারি বলছেন কারণ এটি কল্পিত নয়, আদতে প্রত্যেক মেক্সিকান রোজ যে কৃষ্টিগত
বাস্তবতা বহন করে নিয়ে চলে, ইওরোপিয় ভাবনাচিন্তায় জারিত মানুষ সেই বাস্তবতাকে
উচ্ছেদ করতে চায়।
বাটালা
বলছেন de-Indianized গাঁইয়া মেস্টিজো কৌমের জীবন এবং বিপুল সংখ্যক উচ্ছেদ হওয়া এই কৌমের যে মানুষ শহরে
বাস করেন। তাদেরকেই তিনি Mexico profundo বলছেন।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন মেজোয়ামেরিকিয় সভ্যতার শেকড়ের সঙ্গে। আর জুড়ে আছে
খাদ্য উতপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে। এই সমাজে কর্মকে দেখা হয় প্রকৃতির সঙ্গে সহমিলনের
মত করে। মানুষের আচারের ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য এবং কৌমের কাজ করা প্রত্যেক
ব্যক্তির আবশ্যিক দায়িত্ব। সময় চক্রবত ঘোরে, বিশ্বের অন্য চক্রগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে
মিশিয়ে মানুষ তার নিজের চক্র সম্পূর্ণ করে। আমরা বলতেই পারি Mexico
profundoতে ইওরোপ সংক্রান্ত ধারণা বা চিন্তা কোনও অস্তিত্বই ছিল না। বাটালার ধারনাটা
সত্যিই বৈপ্লবিক কিন্তু প্রায় ইওরোপপূর্ব সমাজ প্রায় এইরকম করেই দিন কাটাত। আমাদের
দেশকে আমরা বলতে পারি অন্য ভারত – ভারতের থেকেও বৃহৎ - এবং গভীর চিন্তায়, নিজেদের
নিয়েই ভাবিত, ইওরোপের কোন অস্তত্বই তার কাছে ছিল না।
No comments:
Post a Comment