Friday, June 28, 2013

আলালের ঘরের বালখিল্যরা৪ - আত্মীয় গোকুল ঘোষালের অত্যাচারের ইতিহাস

...পাঠক! ১৭৫৭ খ্রীঃ অব্দের পর ... যে সকল নিষ্ঠুর নরপিশাচ ইংরাজ বণিকদিগের রেসমের কুঠিতে এবং লবণের গোলায় কার্য করিত, আজ তাহার পৌত্র-প্রপৌত্রগণ মধ্যে অনেকেই বঙ্গের অভিজাত(aristocracy) বলিয়া পরিগণিত এই অভিজাতদিগকে একবার স্মরণ করাইয়া দিতেছি যে, বঙ্গের শিল্পী, বঙ্গের কৃষক, বঙ্গের বাণিজ্যব্যবসায়ী এবং সর্বপ্রকার শ্রমোপজীবীদিগের শেণিত ইহাদের শরীর পরিপোষণ করিতেছে, সেই সকল নিরাপরাধী লোকের বিনাশের উপর ইহাদের অভিজাততীয় গৌরবের ভিত্তি সংস্থাপিত হইয়াছে(চণ্ডীচরণ সেন, নন্দকুমার ও শতবত্সর পূর্বের বঙ্গ সমাজ)
সভ্যদের সাম্রাজ্য ঘনিষ্ঠতা নামগুলো থেকে পরিস্কার আজ অন্ততঃ ততটা বিখ্যাত নন এমন এক মানুষের কাজকর্ম নিয়ে একটু আঁতিপাঁতি নেওয়া যাক সভ্য রাজা কালীশঙ্কর ঘোযালের পূর্বপুরুষ গোকুল ঘোষাল গোকুল ঘোষাল সন্দ্বীপে অবৈধ, বেনামির জমিদার বাঙলায় সন্দ্বীপের লুঠেরা নামে প্রখ্যাত রাজকুমার চক্রবর্তীমশাই সন্দ্বীপের ইতিহাসএ লিখছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসকগণের সহিত গোকুল ঘোষালের নামও সন্দ্বীপের কৃষক ও সাধারণ মানুষ চিরদিন ঘৃণার সহিত স্মরণ করিবে গোকুল ঘোষাল ইংরেজ বণিক শাসনেরই সৃষ্টি ইংরেজ বণিকগণ যেমন মাত্র কয়েক বত্সর বঙ্গদেশ লুন্ঠন করিয়াই ইংলন্ডকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী দেশে পরিণত করিয়াছিল, তেমনি গোকুল ঘোষালও কয়েক বত্সরের বেনামিতে জমিদারি, একপুরুষের আহ্দাদারী ও লবনের ইজারা দ্বারা সন্দ্বীপ হইতে ঐশ্বর্য লুন্ঠন করিয়াছিলেন যে, তাহা দ্বারা ভূমন্ডলে কৈলাসধাম স্বরূপ খিদিরপুরের ভূকৈলাসের রাজপ্রাসাদে ঘোষাল রাজবংশ সুপ্রতিষ্ঠিত হয় আর স্বর্ণদ্বীপ ছারখার হইয়া যায় তুর্কি সম্রাট আলাউদ্দিন খিলিজির সভাকবি আমীর খসরুর ভাষায় সামান্য পরিবর্তন করিয়া বলাযায়, খিদিরপুরের ভূকৈলাস রাজবাড়ীর প্রত্যকখানি ইষ্টক সন্দ্বীপের দরিদ্র কৃষকগণের জমাটবাঁধা অশ্রু ও শোণিত ব্যাতীত অন্যকিছু নয়
ভাগ্যখারাপ ভূকৈলাসের জমিদারবাড়ির আত্মীয় সভার ইতিহাস আলোচনায় কালীশঙ্কর বা তাঁর উত্তরসূরীরা চিহ্নিত, দাগি হয়ে থাকবেন তাঁর অবৈধ জমিদারির অবাধ কুকীর্তির রাজকুমারবাবু কলমে চোখের জল ভরে লিখে গিয়েছেন অনাগত ভবিষ্যতের জন্য বাঙলার নামী বিদ্বতসমাজের অংশ হয়ে, ঘোষালেরা নিজেদের অত্যাচার, কুকীর্তি ঢাকার ঢাক, পেটোয়া লেখকদের দিয়ে পেটাতে পারেন নি লেখালেও বেঁচে থাকতে কিংবদন্তী তৈরি করতে পারেন নি গোকুল ঘোষাল কিংবা তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীরা

প্রখ্যাত গোকুল ঘোষালেরা
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলায় জমিদারি নিলাম হ্রাস হয় নাই বরং বাড়িয়া গিয়াছিল ১৭৯৬ খ্রীষ্টাব্দে দুই ক্রোর সাতাশি লক্ষ টাকার খাজনা বাকীর জন্য জমিদারি নিলাম করা হয় তখনকার বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার এক দশমাংশ খাজনার জমিদারি বাকী খাজনার দরুন নিলাম হইয়াছিল পুরাতন জমিদারগণের জমি জায়গা সম্পত্তি প্রায়ই গিয়াছিল ...জমিদারগণের বাকী খাজনা গভর্মেন্ট নিলাম করিয়া আদায় করিতে পারিত কিন্তু জমিদারেরা তাহাদের পাওনা প্রজার নিকট হইতে সেরূপ কেন সহজ উপায়ে আদায় করিতে পারিত না উহাতেই সর্বনাশ হইয়াছিল উহাতেই সাতপুরুষের জমিদার পথের ভিখারী হইয়াছিল আর কোম্পানির উমদোররা জমিদার হইয়াছিল অতি অল্পমূল্যে তখন জমিদারী বিক্রয় হইত বর্ধমান আদালতে বাকী খাজনার ত্রিশ হাজার মামলা হইয়াছিল প্রজারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে উপকৃত হয় নাই তাহারা বাকী খাজনার মামলায় ও নতুন জমিদারে্র অত্যাচারে জমি জাগা ত্যাগ করিয়া পালাইয়াছিল বা সর্বস্বান্ত হইয়াছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিণাম শুভ হয় নাই (রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক, কলিকাতার কথা, দ্বিতীয় খন্ড, ৮৫ পাতা)।
সাম্রাজ্যের অন্যান্য বৈধ গোকুল ঘোষালেরা তখন কলকাতায় কী করছেন! ব্রিটিশ বিশ্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী কলকাতায়, ক্ষমতার অলিন্দে, আরও আরও নিলামে ওঠা জমিদারি কিনতে, লুঠের সম্পদ, ঘুষের অর্থ পুঁটুলিতে বেঁধে ঘোরাফেরা করছেন অত্যাচারী জমিদার, নীলকর, আফিম আর পাইকারি লবন ব্যবসায়ীদের সমিতি এই আত্মীয় সভা কলকাতার মনোজগত নির্মাণে যথেষ্ট সময়, বুদ্ধি আর সম্পদ ব্যয় করে ইংরেজরাজের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করছেন বাগানবাড়িতে নির্মোক নৃত্য, পান-ভোজনের ফোয়ারা, আর কোম্পানির বড়কর্তাদের নানান নজরানা দিয়ে আরও লুঠের অংশিদার হতে চাইছেন বাঙলাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্বাবলম্বী, উত্পাদক-ব্যবসায়ী সাধারণ রায়তদের ওপর অত্যাচারে, ইংরেজদের ফরমানে অধিকতম পরিমানে খাজনা উদ্ধার করে, ইংরেজদের সিন্দুক ভরিয়েছেন জমিদারির লুঠের অর্থ, কলকাতায় মুড়ি মুড়কিরমত ছড়িয়ে, নানান সভাসমিতির পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বাহবা পাচ্ছেন প্রতাপশালী ইওরোপিয়দের সঙ্গে ওঠাবসা করে কলকাতায় সম্মান কুড়োচ্ছেন
দ্বারকানাথের ঠাকুর পরিবার শুধু দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জমিদারিগুলির একপঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন তাই নয়, বৌবাজারের বেশ্যাখানা থেকেও অর্থ রোজগার করছেন সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ক্যালকাটাঃ মিথস এন্ড হিস্ট্রিতে সরকারি নথি উল্লেখ করে বলছেন, ১৮০৬ এর কলকাতার আদমসুমারীর হিসেব বলছে, বৌবাজার স্ট্রিটের ২৩৫, ২৩৬ এই দুই নম্বরের বাড়ির ৪৩টি ঘরে দ্বারকানাথ ঠাকুরের পরিবার বেশ্যাখানা চালাতেন এই বেশ্যাখানা থেকে মাসে ১৪০টাকা ভাড়াও আদায় করতেন ঠাকুর পরিবারের সাহিত্যসৃষ্টি যেমন প্রখর বাস্তব, তেমনি বংশপরম্পরার প্রজাপীড়নও ঐতিহাসিক সত্য সে তথ্য প্রকাশ আজও বাঙলায় সামাজিক অপরাধ যদি কোন ঐতিহাসিক বাধ্যও হন, তাকে কলমে চিনি ঢেলে বলতে হয়, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরপরিবার ইংরেজদের সঙ্গে মিলে, বাঙলার ব্যবসা, উত্পাদন পরিকাঠামো তৈরির কাজ করছিলেন
গোকুল ঘোষালের প্রজাপীড়নের উত্তরাধিকার দ্বারকানাথের ওপর অর্ষায় জমিদারি পরিচালন পদ্ধতিতে দ্বারকানাথ ইওরোপিয় ধাঁচ আমদানি করেছিলেন ভারতে কর্পোরেট পরিচালন পদ্ধতির প্রথমদিককার দার্শনিক তিনি অনুসরণ করতেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালন পদ্ধতি লাভের জন্য যতদূর যাওয়া যায়, সে পথটুকু যে কোনও মূল্যে হাঁটতে প্রস্তুত তাঁর প্রাথমিক উদ্দেশ্য বিনিয়োগকারী, অংশিদারদের প্রতি সরাসরি দায়বদ্ধতা লাভ, লাভ, আরও বেশি লাভ প্রধাণতম লক্ষ্য ইংরেজ ম্যানেজারকে মাইনের সঙ্গে দশ শতাংশ কমিশন দিয়ে আরও বেশি রাজস্ব তুলতেন ইংরেজদের অত্যধিক পরিমানে রাজস্বের খাঁই মিটিয়ে, অংশিদারদের ঠিক পরিমানে সময়মত বিনিয়োগ ফেরত দিয়ে, ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করার বিপুল পরিমান বিনিয়োগের অর্থ জেগাড় করে, মেকলেরমত ইংরেজ বড়বাবুতথাবন্ধুদের ঘুষদিতে বেলগাছিয়ায় পাঁচলাখি প্রাসাদে উত্কৃষ্টতম ইওরোপিয় মদ্য আর ততোধিক খরচে লক্ষৌএর বাইজি নাচিয়ে, লন্ডনে উচ্চতরসমাজে অকাতরে দামিতম কাশ্মীরী শাল বিলিয়ে প্রিন্স উপাধি অর্জন করেছেন সুভো ঠাকুর, ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস লেখার কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পূর্বজদের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে গিয়ে তার বহু চেষ্টার সেই পথ ভাঙ্গা উদ্যম লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়

প্রগতিশীল আত্মীয় সভার হিরন্ময়ী নিরবতা
...তখন লোকের(সাধারণ - লেখক) অন্তর্দৃষ্টি ছিল সেকালের চোর ডাকাতদেরও যেন স্বদেশ স্বজাতি বলিয়া প্রাণের ভিতর মমতা ছিল সেকালের কথক ও কবিওয়ালা, তর্জাদি দ্বারা দেশের দুর্ণীতির উপর লক্ষ্য করিয়া যে কটাক্ষপাত করিত উহাতে লোকের হুঁশ হইত ত্রুটি দোষ দেখাইয়া দিলে লোকে ক্রুদ্ধ না হইয়া আনন্দিত হইত গরীব কবিওয়ালাদের আত্মমর্যাদা ছিল তখন হিন্দুর কোন সামাজিক কর্মে তাহারা আসিয়া সকলকে উত্সবের সঙ্গে সঙ্গে কি এক সহানুভূতি ও জাতীয়তার সৃষ্টি করিত যাহা এখন সংবাদপত্র বা সংস্কারকগণ আইন করিয়া করিতে পারেন না ...হরুঠাকুরের পাঁচালীর গুরু ছিল তাঁতী রঘুনাথ দাস তাহাকে তিনি যথেষ্ট মান্য করিতেন(হারুঠাকুর ইংরেজপক্ষীয় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের উপহার দেওয়া দামি শাল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন - লেখক) সেকালের কলিকাতার জমিদার বড়লোকেদের আকার, ইঙ্গিত, ধাঁচ ও ধরণ সেকালের কবির গানে পাওয়া যায় যথাঃ- আমি ময়রা ভোলা, ভিঁয়াই খোলা, বাগবাজারে রই নই কবি কালিদাস তবে খোসামুদের মাথা খাই।। বাবু তো, লালা বাবু কোলকেতাতে বাড়ী বেগুণ পোড়ায় নুন দেয় না, সে বেটাতো হাঁড়ী।। পিঁপড়ে টিপে গুড় খায়, মুকতের মধু আলি মাপ কর গো রায়বাবু, দুটো সত্য কথা বলি।। মোষের ন্যায় মুন্সীবাবু মসীর ন্যায় কালে পান খেয়ে ঠোঁট রাঙায় চেহারা খানা ভালো।। পূর্ব জন্মের পুণ্য ফলে পান খেতে পাই লক্ষীছানা বাসী মড়া যার পানের কড়ি নাই।। ...হারুঠাকুর সিমলায় থাকিত ও ভোলী ময়রা তাঁহার চেলা শালখের রাম বসু যেমন বিরহের গানের রাজা, হারুঠাকুর তেমন সখী সম্বাদে ছিল কলিকাতার কথা, রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক, দ্বিতীয় খন্ড, ৯৮ পাতা
প্রগতিশীল আত্মীয় সভার ভিত্তিপ্রস্তরটি স্থাপিত হচ্ছে, রায়তদের লুঠের অর্থে বাঙালিরা কী খাবে, কীভাবে শোবে, কোন দেবতা পুজো করবে ইত্যাদি বাঙলার ধর্ম-সমাজ সংস্কারের পরস্পরের পিঠচুলকোনো চুলচেরা বিচারে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রখ্যাত সদস্যরা মুক্তবুদ্ধির প্রচারকেরা স্বাধীণতা সংগ্রাম দমন, পালন, কোনও কিছু নিয়েই বিন্দুমাত্র উত্সাহ দেখাননি বরং আন্দোলন বিষয়ে নীরব থেকেছেন যা কিছু ইওরোপিয়- মদ্যপন্থা থেকে মধ্যপন্থা, চরণপন্থা থেকে চারণপন্থা, সবকিছুতেই তত্কালীন ইংরেজ উপনিবেশের আত্মার-আত্মীয়দের প্রকাশ্যেভক্তি দেশিয় দেবদেবীর প্রতি ভক্তির তুলনায় অনেক বেশি সমাজশৃঙ্গপথগামী কলকাতায় যে শব্দটি সবথেকেবেশি উচ্চারিত, সেটি হল, রিফর্ম
ইংরেজ আর উচ্চমধ্যবিত্ত বাঙালির ব্রিটিশ চরণ প্রণতি বুঝতে গ্রামীণ বাঙলার জনসাধারণ, বিপ্লবী ইওরোপিয় তত্ব বুঝতে যায়নি, কার্ল মার্ক্সের তত্বেরও দ্বারস্থ হয় নি যারা সরাসরি লড়াই করতে পারেন নি, তাঁরা সেই অপার্থিব সংগ্রাম প্রচার করেছেন নিজেদের নাচ, গানসহ নানান সাংস্কৃতিক প্রকাশভঙ্গীতে অসম্ভব অন্তর্দৃষ্টি ছিল ভারতের সাধারণ মানুষের তাঁরা স্বজাতির অনুকরণপ্রিয়তাকে ব্যঙ্গ করতে পারতেন অসাধারণ দক্ষতায় রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক ইংরেজ কলকাতার অজানা গ্রাম কলকাতার সাধারণের অন্তর্দৃষ্টির কথা তুলেছেন।
আত্মীয় সভা নামটিও অসম্ভব যুগপযোগী, আলঙ্কারিক, সাংকেতিকও সদস্যদের অধিকাংশই ব্রিটিশদের তৈরি নব্যজমিদার, যাঁরা গ্রামীণ বাঙলা লুঠে, ধংসকারবারে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের সহায়ক কলকাতায়, রাজধানীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বাসকরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নাবজাগরণের দামালেরা সাম্রাজ্যের বন্ধুত্বকে ধণার্জনের আর সামাজিক সিঁড়ির উপায়রূপে গ্রহণ করেছিলেন বাঙলার ঐতিহ্যশালী জমিদার, বণিকদের এঁরাই দমন করে, ব্রিটিশ বণিকদের লুঠেরা বাণিজ্যের পথ সুগম করেন কোম্পানি সরকার নব্যজমিদারদের লুঠের খুদকুঁড়ো বখরা দিয়ে, বাঙলার শিল্প পরিকাঠামোকে ভেঙে দুমড়ে, ইংলন্ডে শিল্প পরিকাঠামো তৈরি করল
শিয়ালদায় বাঙলার সবথেকে বড় নীল, আফিম আর নুনের গোলা নুলুয়া গোলার মালিক দ্বারকানাথ চলতিনাম অহিফেন ঠাকুর বাঙলায় তখন জাঁকিয়ে বসেছে দেশি আফিমচাষী আর নীলকরেরা ধান জমিতে লেঠেলদের লাগিয়ে চলছে জবরদস্তির নীলচাষ বাঙলার অধিকাংশ নব্য-জমিদারির সঙ্গে তখনই নীলকর শব্দবন্ধটি জুড়ে বসতে শুরু করেছে লাভও হচ্ছে দুহাতে নীলকরদের পৌষমাস, চাষীদের সর্বনাশ দাদন নেওয়া চাষী রায়তদের লাল রক্ত, আর পরিশ্রমে বাঙলা জুড়ে চাষ হচ্ছে ম্যানচেস্টারের কাপড়ের কলের জন্য টনটন নীল রং
পলাশীর পাঁচ বছর পরই বাঙলার গ্রামীণেরা ব্রিটিশ লুঠ, অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন ১৭৬৩ থেকে শুরু হল সন্ন্যাসী-ফকির স্বাধীণতা সংগ্রাম ভারতে প্রথম স্বাধীণতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার ৫২ বছর পর আত্মীয় সভা কলকাতায় তৈরি হচ্ছে সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মেদিনীপুরে ভোগরাইতে নায়েক স্বাধীণতা সংগ্রামের আগুণ দাউদাউ করে জ্বলছে নায়েক সংগ্রাম ছাড়িয়ে পড়ছে মেদিনীপুর জেলা জুড়ে অবরুদ্ধ মেদিনীপুর শহর জমিদার, ধনী আর ইংরেজ শাসকেরা আশ্রয় নিয়েছে মেদিনীপুর শহরে বাবুবিবিরা বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন বিদ্রোহ দমনের জোর তোড়জোড় চলছে দক্ষিণবঙ্গের ইংরেজ সেনাছাউনিগুলিতে যোগেশচন্দ্র বসু মেদিনীপুরের ইতিহাসএ লিখছেন, স্বাধীণতা সংগ্রামের নায়ক অচল সিংহকে গুলিকরে ইংরেজ সেনা হাজারো নায়েক স্বাধীণতা সংগ্রামীকে গনগনির মাঠে সারদিয়ে ফাঁসি দেওয়ার পরও সংগ্রাম থামেনি ১৮১৬ পর্যন্ত সংগ্রামী নায়েকেরা ইংরেজ শাসন উচ্ছেদ করার জন্য বুক চিতিয়ে লড়াই করেন কামান দেগে, চিরাচরিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রণোদিত লোভ দেখিয়ে নায়েক স্বাধীণতা সংগ্রাম দমন হল বিশ্বাসঘাতকতা করে অচল সিংকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন এক ইংরেজ পোষিত নব্য-জমিদার তনয়

No comments: