এই উচ্ছ্বাসটির মূল স্তম্ভ সুপ্রকাশ রায়ের ব্যতিক্রমী
পুস্তকটি। এ ছাড়াও আমরা তথ্যের জন্য নির্ভর
করেছি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইতিহাস বই, ইংরেজ রাজপুরুষদের লিখিত বই কয়েকটি, যার উল্লেখ
এই উচ্ছ্বাসেরই পত্রে পত্রে রয়েছে। এসব ঘটনাবলী
বিশ্লষণের দায় আমাদেরই।
আরও একটি কথা। আমরা মনেকরি বাঙলা তথা ভারতের স্বাধীণতা সংগ্রামের ইতিহাস শুরু হয়েছিল
১৭৬৩র ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে। এই আন্দোলনগুলোকে শুধুই বিদ্রোহ আখ্যা দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত ভেবে দেখা
দরকার। সিপাহি বিদ্রোহের প্রায় একশ বছর
পূর্বেই একযোগে বাঙলা তথা ভারতের গ্রামীণেরা অন্ত্র তুলে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসনের
শেষ দেখতে চেয়ে। সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম
স্বাধীণতা সংগ্রাম বলার উদ্দেশ্য, প্রথমতঃ বাঙলা তথা ভারত যে ব্রিটিশ শাসন
নতমস্তকে মেনে নিয়েছিল সেই তথ্য সুপ্রতিষ্ঠিত করা, দ্বিতীয়তঃ সিপাহি বিদ্রোহ
পূর্ব, ব্রিটিশ বিরোধী সমস্ত আন্দোলনের তীব্রতাকে ন্যুন করা, ঔপনিবেশিক বন্ধুদের
বাঙলার জ্ঞাণ, সম্পদ ইত্যাদি লুঠকর্মকে সরাসরি বৈধতা দেওয়া।
এই উচ্ছ্বাসে আমরা প্রণাম জানাই প্রত্যেক স্বাধীণতাকামী
লড়াইএর অংশ নেওয়া মানুষদের যাঁরা ব্রিটিশ আর সাম্রাজ্যের বন্ধুদের লুঠের
প্রাবল্যে নিজেদের সমাজ, জ্ঞাণ আর সম্পদ বাঁচাতে মাঠেময়দানে নেমে লড়াই করেছেন
ইংরেজদের বিরুদ্ধে।
কলকাতাভিত্তিক মধ্যবিত্তরা ব্রিটিশ শাসনকে বৈধতা দিয়েছেন
প্রথম থেকেই। দাদনি বণিক,
চাকুরিজীবি, ব্যাবসায়ি আর দালালচক্রের সাহায্যে সাম্রাজ্যের সম্পদ লুঠ, জ্ঞাণচুরি
আর পরিকাঠামো ধংস আজও পরোক্ষে বৈধতা পেয়ে চলেছে। কলকাতা শহর বাঙলা তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের
স্বাধীণতাকামীদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করলেও, আজও গ্রামীণদের কাছে,
গ্রামীণ অভিকর শিল্পীদের স্মৃতিতে স্বাধীণতা সংগ্রামীদের নাম উজ্জ্বল, অজর, অমর। সেই দর্শণএর সাথী হয়েই আমরা এই ব্যাতিক্রমী মানুষদের
শুধুই বিদ্রোহী নয়, স্বাধীণতা সংগ্রামী অভিধায় অভিহিত করলাম। আমরা জানি এই প্রচেষ্টায় যথেষ্ট কুচ্ছার মুখোমুখি হতে
হবে। আমরা প্রস্তুত।
ফকির-সন্ন্যাসীদের স্বাধীণতা সংগ্রাম
ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ বাঙলার স্বাধীণতা সংগ্রামের সূত্রপাত ফকির-সন্ন্যাসী
স্বাধীণতা সংগ্রামের মধ্যেদিয়ে। ১৭৬৩ থেকে এই
স্বাধীণতা সংগ্রাম শুরু হয়ে চলে ১৮০০ শতক পর্যন্ত। মহম্মদ হুসেন ফর্মির দবিস্তান আর সিয়ার পশম মুক্ষরিন, যামিনীমোহন
মুখেপাধ্যায়ের সন্ন্যাসী এন্ড ফকির রেইডার্স অব বেঙ্গল এর পাতায় পাতায় এই সময়ের এক
বড় দলিল লেখা রয়েছে। ভারতজুড়ে বরাবরই সন্ন্যাসীদের অবাধ
গতি এবং সারা ভারতেরই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমাজ স্বাধীণতা সংগ্রামী ফকির
সন্ন্যাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রণাম জানিয়ে এসেছে। বিশেষ গোষ্ঠী হয়ত বিশেষ কেনো ধর্ম সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীকে স্রদ্ধা করেন
কিন্তু সাধারণতঃ অন্য কোনও সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী বাঁফকিরের প্রতি বিন্দুমাত্র
অশ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন না। কেননা এই ফকির
সন্ন্যাসীরাই সমাজের সমস্ত বন্ধন তুচ্ছ করে, গৃহধর্ম, রাজসভা, প্রচলিত ধর্মসভার
প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সংসার ত্যাগ করে হক কথা বলার অধিকারী হতেন এবং এঁরা বহু
সময়ে নানান জ্ঞাণের প্রচার প্রসারে স্বতঃষ্ফূর্ত ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। ব্রিটিশ তথা ইওরোপিয় সেকুলারিজমএর ধাক্কায় সমাজের অন্যতম অভিভাবকেরা আজ
অন্ততঃ ইংরেজি শিক্ষিত শহুরে সমাজের কাছে ব্রাত্য রয়েছেন।
ভারতের সংস্কৃতিতে বরাবরেরমতই উদাসীন ফকির সন্ন্যাসীর
ভূমিকা বিশেষ প্রধাণ। এদের এক অংশ ভারতের বহু অংশের গৃহী
বা ধনীদের কাছ থেকে জমি দান হিসেবে অর্জন করে চাষবাসে মন দেন। এদের প্রায় আধা-ভ্রাম্যমান ফকির বলাচলে। এঁরা জীবনের বহু সময়ে দল বেঁধে ভারততীর্থে মন দিলেও বিপরীতে এরা এই দানে
পাওয়া জমি চাষ করতে প্রায় গৃহস্থধর্মেরমত। বৌদ্ধ
ভিক্ষুদের চিবরেরমতই প্রত্যেক ফকির ও সন্ন্যাসীগেষ্ঠীর নিজস্ব পোষার পরিধানের রীতি
ছিল, সকলেই প্রাথমিকভাবে যথাবিহিত গোষ্ঠী রীতি মান্য করেই সেই পেষাক পরিধাণরীতি
অবশ্যই মান্য করতেন। ভারতের কোনও শাসকগোষ্ঠীই এই
সন্ন্যাসী-ফকিরদের ওপর কোনও ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার চেষ্টা করেন নি, বরং সমাজ
তাদের সম্মান দেখিয়ে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
অথচ লুঠের লড়াইতে উন্মাদ ওয়ারেন হেস্টিংসের নেতৃত্বে
ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তি প্রথমে বাঙলা পরে ভারতীয় সমাজের প্রত্যেকটিস্তরের ওপর যে
লুঠের অত্যাচার নামিয়ে আনে তা বিশ্বের ইতিহাসে অভূতপূর্ব বললেও কম বলা হয়। বাঙলায় অরাজক দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকেই লুঠের লাঠির আঘাতে
বাঙলার নানান স্তরের উত্পাদকেরা ছিন্নভিন্ন হতে থাকেন। নুন উত্পাদন থেকে জমি, সব ক্ষেত্রেই গভর্নর জেনারেল হেস্টিংসএর স্নেহধন্য
কোম্পানির আমলা ব্যবসায়ীরা বাঙলা জুড়ে প্রায় বিনা বিনিয়োগেই লুঠের অর্থে ব্যবসা
করা শুরু করে। কোম্পানি যে আদতে বাঙলায় লুঠের আয়োজন
করছে, এই তথ্য বাঙলার গ্রামীণদের কাছে প্রথম থেকে ছিলই। শহুরে বাঙালি সমাজ ব্রিটিশ চাকচিক্যে ভুলে ব্রিটিশ বন্দনায় মুখর হলেও আদত
গ্রামীণরা কিন্তু শত্রু চিনতে বিন্দুমাত্রই ভুল করেন নি। ব্রিটিশদের সঙ্গে মিলে জমিদারি, দেওয়ানি আর মানুষ মারা আর শিল্প ধংসকারী
ব্যবসার লাভের পুঁটুলি সংগ্রহ করে কেউ হয়েছেন নবজাগরণের অগ্রদূত কেউবা আবার অভিধা
পেয়েছেন সমাজ-সংস্কারকের। শহুরে মানসিকতার বিপরীতে হেঁটে গ্রামীণেরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের লুঠকর্মর
প্রতিবাদে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে নির্দ্বিধায়। বাঙলার মানুষ বিদেশিদের সরাসরি চিনতে পারলেও ব্রিটিশ মুগ্ধ নতুন এই শহুরে
ভারতীয় সম্প্রদায় বিদ্রোহী জনগনকে দমন করতে ব্রিটিশদের যথাসাধ্য সহায়তা প্রাদান
করেছে।
হেস্টিংস এই সন্ন্যাসীদের হিন্দুস্তানের যাযাবর রূপে
বর্ণনা করেন। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্য
নিউ ডন অব ইন্ডিয়া পুস্তকে হেস্টিংসএর কথার প্রতিধ্বনী করে সন্ন্যাসীদের স্বাধীণতা
সংগ্রামকে সমাজের কলঙ্ক রূপে বর্ণনা করেন। অথচ এই
সংগ্রাম ভারতের সন্ন্যাসীবেশী গৃহীদের জীবন সংগ্রামের ইতিহাস। দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় বাঙলা সুবা জুড়ে যে মাত্স্যন্যায় চলছিল, সেই লুঠকে
আড়াল করতে ওয়ারেন হেস্টিংস এই ফকির সন্ন্যাসীদের ন্যাহ্য বিদ্রোহকে পেশাদারি
উপদ্রব পহসেবে বর্ণনা করেন। বাঙলার প্রত্যক অঞ্চলেই ফকির সন্ন্যাসীরা
বিদ্রোহী হিসেবে সংগঠিত হতে শুরু করে। স্বাধীণতা
সংগ্রামী বাহিনী যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে যায় সেই অঞ্চলের সমগ্র গ্রামীণ অধিবাসীরা
স্বাধীণতা সংগ্রামী বাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বাধীণতা সংগ্রামের গুণমান আর সেনা সংখ্যা
বৃদ্ধি করেছিল। যামিনীমোহন অথবা ব্রজেন্দ্রনাথ ছিলেন
আদতে আগামীদিনের রেঁনেসার সঠিক পূর্বপুরুষ যাঁরা স্বদেশের মানুষের স্বাধীণতা
সংগ্রামীসত্বার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সরাসরি ব্রিটিশপন্থী সমাজ গড়ার দিকে শহুরে
ভারতকে কয়েক কদম এগিয়ে দেবেন। যদিও তত্কালীন
লেখকেরা ব্রিটিশ সরকারের আমলাদের প্রতিবেদনের প্রতিধ্বনী করে জানিয়েদিয়েছিলেন
স্বাধীণতা সংগ্রামীরা গ্রামে গঞ্জে সাধারণের ঘরদোর আর সমাজে লুঠতরাজ নামিয়ে আনছে।
সাম্রাজ্যবাদী নানান ইতিহাসকার আজও মনেকরেন যে এই
স্বাধীণতা সংগ্রামীরা তত্কালীন সমাজের শত্রু- সমাজের সম্পদ নষ্ট আর সরাসরি সরকার
বিরোধিতার জন্য এদের কঠোরহাতে দমন করা হয়। অথচ জি টি
গ্যারাট, এডওয়ার্ড টমসন আর উইলিয়ম হান্টার এদের বিরুদ্ধে সরকারি দমনপীড়নের
বিরোধিতা করে এদের সংগ্রামীরূপে অভিহিত করে গিয়েছেন। এরা কেউ পেশাদার খুনেও নয়, যাযাবরও নয় বা দস্যুডাকাতও নয়। হাজার হাজার বছর ধরে তিল তিল করে জ্ঞাণ-বুদ্ধি-পরিশ্রমে গ্রামীণরা যে সমাজ
তৈরি করেছিলেন, সেই সমাজ ভাঙতে দেখে গ্রামীণরা নিজেদের অসন্তোষ আর ধরে রাখতে
পারেননি। সেই সমাজ ভাঙার কারিগর ব্রিটিশদের
বিরুদ্ধে বাঙলার শিল্পী-কৃষক-মজুরদের লড়াইকে ব্রিটিশপন্থী ঐতিহাসিকেরা জোরকরে
লুঠতরাজ আখ্যা দিয়েছিলেন। অথচ তথ্য ঘাঁটলে দেখতে পাব মূল ঘটনা
আদতে ব্রিটিশ লুঠতরাজ। এঁদের সঙ্গে যোগদেন মুঘল আমলে ভেঙে দেওয়া
বিশাল সেনা বাহিনীর এক বড় অংশ। এরা, চাষীরা,
ফকির-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে মিলে স্বাধীণতা সংগ্রামকে ইন্ধন জুগিয়েছেন। ১৭৫৭র পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাঙলায় রাজস্ব আদায় করতে যে পদ্ধতি অনুসরণ
করেছিল তাতে জনগণের মধ্যে ক্রমশঃ অসন্তোষ ধূমায়িত হতে থাকে। জমিতে অত্যধিক হারে কর আরওপ করায় জমিথেকে উত্ছন্ন হয়ে পড়ছিল কৃষকেরা।
এর সঙ্গে দেশিয় কারিগরদের উত্পন্ন জিনিষপত্র নামনাত্র
মূল্যে অথবা লুঠকরে কেড়ে নিয়ে বিদেশের বাজারি বিক্রিকরে অত্যধিক মুনাফা করছিল
ব্রিটিশ বণিকেরা। ব্যবসার নামে সেনাবাহিনী সঙ্গে নিয়ে
বণিকদের এই দিনেদুপুরে রাহাজানি শ্রমিকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিচ্ছিল। পুরেনো স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজে অভূতপূর্ব ধ্বংসকর্মের ঝড় আর আঘাত নেমে আসায়
বংশানুক্রমিক কারিগরেরা যারা আবার একইদেহে শিল্পীও বটে, এই আঘাতে নিজেদের অসহায়
বোধ করতে থাকে। এদের বেঁচে থাকার কোনো উপায় আর
রইলনা। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৩ এই সাতবছরে ঢাকার
জগতবিখ্যাত মসলিন করিগরেরা এক-তৃতীয়াংশ ঢাকাছাড়া হয়ে পড়লেন। ইংরেজ আর তার বন্ধুদের অত্যাচারে বাঙলা বিহারের একেরপরএক জগতখ্যাত শিল্পের
শিল্পীরা নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে বিবাগী হয়ে যেতে আরম্ভ করলেন।
খেতে না পেয়ে অধিকাংশ জনগণ ছোটখাট চুরিচামারি করতে আরম্ভ
করল। ইংরেজদের কুঠিগুলির সঙ্গে আক্রান্ত হতে শুরুকরল
জমিদারদেক কাছারিও। আগামী দিনের স্বাধীণতা সংগ্রামের যা
উপসর্গস্বরূপ, সেই উপসর্গ নিদানে মন না দিয়ে, সমাজপতিরা চাইলেন সহজ সমাধান। সমাজপতিদের সঙ্গে যোগদিলেন বিদেশি বণিকেরা যারা কোম্পানির ফরমানবলে প্রায়
বিনা বাধায় বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করছেন আর দেশে বাঙলার নানান দ্রব্য রপ্তানি করে
বিপুল পরিমান লাভ করছেন। এই বিদেশি বণিকদের একটা বড় অংশ
কিন্তু আবার হেস্টিংসএর স্নেহধন্য। তাদের
নিরাপত্তার জন্য ব্রিটিশ সরকার সবকরম বন্দোবস্ত করতেন। বণিকেরাতো বটেই জমিদাররাও দ্বারস্থ হলেন চক্রান্ত করে দেশের শাসনক্ষমতা
দখল করা ইংরেজদের দরবারে।
যে ইংরেজ বাঙলার ধনসম্পদ লুঠছে, সেই ইংরেজ শক্তির সঙ্গে
ইতোমধ্যে বাঙলার শহুরে মানুষেরা মিলেমিশে জমিদারি চালিয়ে দেশের লুণ্ঠনকাজকে আরও ত্বরান্বিত
করতে সাহায্য করছেন, এ সত্য চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন দেশের কোটি কোটি খেটেখাওয়া
মানুষ। ফলে যে ব্যক্তি খাজনার দায়ে তার
বাপদাদার খেত থেকে উত্খাত হয়েছেন তিনি বা সেই দল সবার আগে ইংরেজদের এবং জমিদারদের
কুঠিগুলির ওপর আক্রমণ শানায়। দেশের
ইংরেজবন্ধু ধনীরাই এই বিদ্রোহে শঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং ইংরেজদের সহায়তায় ইংরেজ আর তার
সহায়ক শক্তির বিরুদ্ধে গ্রামীণ ভারতের এই সংগ্রাম দমনে একজোট হয়। ভারতীয় সনাতন আইন অনুযায়ী নরহত্যা ছাড়া প্রাণদণ্ড দেওয়া চলত না। কিন্তু হাজার হাজার বছরের এই আইন লঙ্ঘন করে হেস্টিংস ঠিক করলেন যাদেরই এই
বিদ্রোহে শামিল হতে দেখা যাবে, তাদেরই নরহত্যার অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে
এবং প্রথমে গ্রামেই ফাঁসি দিয়ে প্রাণদণ্ড, আর পরিবারের সদস্যদের বিনা অপরাধে
গ্রেফতার করে দাস হিসেবে চালান করা হবে আর গ্রামের ওপর পাইকারি হারে জরিমানা ধার্য
করা হবে। দেশের রাজার বন্ধুরাও এই স্বাধীণতা
সংগ্রামের কারণ না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন অসন্তোষ দমন করতে।
১৭৬৩ সালে ঢাকায় ইংরেজ কুঠির উপর আক্রমন ও লুন্ঠনের মাধ্যমে
এ স্বাধীণতা সংগ্রামের সূচনা হয়। এর আগে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও পাবনা
অঞ্চলে বস্ত্রশিল্প ব্যাপক ঔৎকর্ষ লাভ করেছিল, কিন্তু ইংরেজরা
বলপূর্বক নামমাত্র মূল্যে সে সকল বস্ত্র কিনে নেয়ার জন্য তাদের
সাথে চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করতো এবং চুক্তি অনুযায়ী বস্ত্র প্রদানে
ব্যর্থ হলে নির্মম নির্যাতন করতো। এ চুক্তি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ছিল
নিজের বৃদ্ধাঙুলি কেটে ফেলা, যার ফলে আর বস্ত্র বয়ন সম্ভব না হয়। আঙুল কেটে ফেলেও অত্যাচারেও রেহাই মিলত না, বাধ্য হয়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ তাঁতী
বনে জংগলে পালিয়ে যায়।
এ সকল তাঁতী এবং সন্যাসী ও ফকিরেরা সংঘবদ্ধ হয়ে
অত্যাচারের প্রতীকচিহ্ন ঢাকা কুঠি আক্রমন ও লুন্ঠন করে। দ্বিতীয় আক্রমন হয়
১৭৬৩তেই রাজশাহীর বোয়ালিয়া ইংরেজ কুঠিতে, তৃতীয়টিও ১৭৬৪তে এখানেই। ১৭৬৬তে কুচবিহারের
সিংহাসন নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হলে সেই সুযোগে ইংরেজরা সেখানে তাদের থাবা
বিস্তারের উদ্যোগ নেয়, কিন্তু স্বাধীণতা সংগ্রামীরা সিংহাসনের প্রকৃত
উত্তরাধীকারের পক্ষ নিয়ে ইংরেজ বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে দেয়। জলপাইগুড়ির ইংরেজ
কুঠি আক্রমন ও অধিকার করে নিয়ে সেখানে তাদের দুর্গ স্থাপন করে। ১৭৬৯ সালে নেপাল
সীমান্তে একটি ইংরেজদের একটি বড় দলকে আক্রমন ও পর্যুদস্ত করে দেয়। চারিদিকে নানা
স্থানে আক্রান্ত ও পরাস্ত হয়ে ইংরেজরা নানা উপায় খুঁজতে থাকে। কিন্তু কৃষকেরা
স্বাধীণতা সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ইংরেজ নিয়োজিত জমিদারদের খাজনা না দিয়ে
তা স্বাধীণতা সংগ্রামীদের দিতে থাকে। ইতোমধ্যে কুখ্যাত
ছিয়াত্তরের বাঙলা ১১৭৬ সন) মন্বন্তরের শিকার হয়ে দলে দলে চাষী বিদ্রোহে যোগদান
করতে থাকে। ১৭৭০ সালে পুর্ণিয়া, ময়মনসিংহ ও রংপুরে
আক্রমন ও
লুট হয়। ১৭৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ঢাকা
জেলার বিভিন্ন স্থানে ইংরেজ কুঠি ও জমিদার কাচারী একের পর এক লুন্ঠিত
হতে থাকে। বগুড়ায় স্বাধীণতা সংগ্রামীরা ইংরেজদের তাড়িয়ে
দিয়ে মাটির দেয়াল ঘেরা একটি দুর্গ নির্মান করে।
ধূমায়িত ধিকি ধিকি বিক্ষোভ আগুণে পরিণত হল। স্থানীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দাউদাউ করে জ্বলে উঠল ব্রিটিশ
রাজশক্তির বিরুদ্ধে। মজনুশা, মুশা শা, চেরাগ আলি, ভবানী
পাঠক, দেবী চৌধুরাণী, কৃপানাথ, নুরুল মহম্মদ, পীতাম্বর, অনুপনারায়ণ, শ্রীনিবাস
প্রভৃতি গ্রাম সমাজের নেতারা ইংরেজদের বাঙলা লুঠের আর ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের
পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কাজকর্মহীন বাঙলার লাখো লাখো কৃষক, করিগরদের নিয়ে ব্যাপক
বিদ্রেহের আয়েজন করে। ঠিক সেই সময় শহর বাঙলা বিভন্ন পেশার
মানুষজন আর জমিদারি সামলানো বাঙলার নানান মধ্যসত্বভোগী ইংরেজদের সঙ্গে মিলে
ইংরেজদের লুন্ঠিত রাজস্বে ভাগ বসিয়ে সেই ভাগের খুদ কুঁড়ো পেয়ে নিজদেদের মধ্যে
লড়াই করলেন আর আগামীদিনের রাজধানী, কলকাতায় বসবাসের উদযোগ আরম্ভ করলেন। সেই লুন্ঠণ কার্যে যদি কেউ বিপজ্জনকভাবে ব্যঘাত ঘটিয়ে থাকেন তারা হলেন
গ্রামীণ স্বাধীণতা সংগ্রামীরা, ইংরেজ আর ইংরেজদের ধামাধরা লেখকেরা যাঁদের ডাকাত, লুঠেরা
অথবা খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে যাবেন।
কলকাতার কুঠির পরেই আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী ছিল ঢাকার
কুঠি। ঢাকার রমনার কালিবাড়ির স্বামীজি বন্দেমাতরম ধ্বনীতে
সন্নাসীদের একত্র করে ঢাকার কুঠি আক্রমণ করেন। প্রায় এক বছর এই কুঠি দখল করার পরই ক্যপ্টেন গ্রান্টের নেতৃত্বে ঢাকার
কুঠি উদ্ধার করে ইংরেজরা। ১৭৬৩ আক ১৭৬৪তে রামপুর বোয়ালিয়া কুঠি
আক্রমণ করে সন্নাসীরা। তারা লুঠ করে চলে যায়। অন্যদিকে ১৯৬৬তে কোচবিহার রাজের উত্তরাধিকারী নিয়ে পারিবারিক গণ্ডগোলে
ইংরেজরা এক শরিক রুদ্রনারায়ণের পক্ষ নিল। অন্যপক্ষ
রামানন্দ গোঁসাইএর নেতৃত্বে ইংরেজদের আক্রমণ করে। পরপর কয়েক বছর ধরে চেরাগেপ্তা আক্রমণ চলে। ১৭৬৭তে পাটনায়ও স্বাধীণতা সংগ্রামী বাহিনী গঠিত হয়। স্বাধীণতা সংগ্রামীরা পাটনার রাজস্ব বন্ধ করে দেয়। সরণের যুদ্ধে সন্নাসীরা হুসিপুর দুর্গ দখল করলেও শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে
বাধ্য হয়। উত্তরবঙ্গ তখন স্বাধীণতা সংগ্রামীদের
প্রধান ঘাঁটি। ১৭৬৬তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
আসন্ন দেখে জলপাইগুড়িতে সন্নাসীরা একটি দুর্গ তৈরি করে, যার ধংসাবশেষ আজও দেখা
যায়। স্বাধীণতা সংগ্রামী সৈন্যরা ইংরেজদের সঙ্গে কয়েক বছর
গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে উত্তর সীমান্ত মোরাঙএ ১৭৬৯এ ইংরেজ সেনাবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে
পড়ে সেনা প্রধাণ কিথকে হত্যা করেন আর ইংরেজ সেনা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
এর আগে সুপারভাইজার পদ দেখাগিয়েছে জমিদারি ব্যবস্থাপনার
কাজে তৈরি হয়েছিল। স্বাধীণতা সংগ্রামীরা বহু জেলায়
রাজস্ব আদায় বন্ধ করে দেয়। স্বাধীণতা
সংগ্রাম দমন করে নির্যাতন করে রায়তদের থেকে রাজস্ব আদায় করতেই এই পদের সৃষ্টি হয়। মধ্যসত্বভোগী আর জমিদারেরা ইংরেজদের প্রতি ধামাধরা হয়ে থাকলেও প্রতিদিন
নতুন নতুন অঞ্চলে এই স্বাধীণতা সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে। অবাধ লুণ্ঠন আর দখলদারির বিরুদ্ধে বাঙলার জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। এর মধ্যে এসে পড়ল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। মম্বন্তরের বছরে দেবী সিংহ, সিতাব খাঁ আর রেজা খাঁর খাজনা আদায়ের উত্সাহে
কম পড়ে নি। গ্রামের পর গ্রামের প্রজা সেই সরকারি
অত্যাচারে গ্রামছাড়া হয়ে স্বাধীণতা সংগ্রামীদের দল বাড়াতে লাগল। সমগ্র বাঙলা স্বাধীণতা সংগ্রামের সূতিকাগৃহে পরিণত হল। ১৭৭০-৭১এ পূর্ণিয়া জেলায় উত্তরবঙ্গের পথ অবলম্বন করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে
খণ্ডযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে থাকে। ১৭৭১এ ঢাকার
কুঠি আর জমিদারিতে পরপর আক্রমণ করতে শুরু করে। ইংরেজদের ফরমান অগ্রাহ্য করে তারা জমিদারদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে
থাকে। ইতোমধ্যে দিনাজপুর, বগুড়া আর জলপাইগুড়িতে সন্নাসীরা
দুর্গ বানিয়ে ফেলে। ১৭৭১এ তারা উত্তরবঙ্গে একত্রিত হয়ে
ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে সব জমিদার রয়েছেন তাদের একত্রিত করার উদ্যম নেন। নাটোরের জমিদার রাণী ভবানীকে একটি চিঠিও লেখেন মজনু শাহ। ৭২ থেকে নাটোর রাজ থেকে সন্নাসীরা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ইংরেজপন্থী জমিদার বড়লোকেদের ওপর আক্রমণ ঘটতে থাকে। অথচ সাধারণ মানুষ ক্রমশঃ ফকিরদের পক্ষ নিতে থাকেন। ইংরেজপন্থী যামিনীমোহন ঘোষ তার Sanyasi & Fakir
Raiders of Bengal পুস্তকে মানুষদের ফকিরদের সঙ্গ দেওয়ার স্বীকারোক্তিকে
সন্নাসীদের ভয় ও ভক্তি বশতঃ জনসাধারণের মিথ্যা উক্তি বলে বর্ণনা করছেন। সমসাময়িক নানান লেখাপত্রে স্বাধীণতা সংগ্রামীদের স্থানীয় কামারদের তৈরি
আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার উল্লেখ রয়েছে।
স্বাধীণতা সংগ্রামীদের প্রতিবাদে জনগণ বাঙলা বিহারের
অনেকস্থানে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। রাজসাহী জেলায় স্বাধীণতা সংগ্রামীরা খাজনা বন্ধের ডাক দেওয়ায় ৮৯৬৯ টাকা
খাজনা কম ওঠে। যেখানেই স্বাধীণতা সংগ্রামীরা
গিয়েছে, সেখানেই সাধারণ মানুষ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অথচ সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যম আর ব্রিটিশমুখী
ঐতিবাসিকেরা বারবার সন্ন্যাসীদের লুঠেরা, উত্পীড়করূপে বর্ণনা করে আসছেন। রংপুরের সুপারভাইজার পার্লিং জানাচ্ছেন প্রজারা সরকারের পাশে না দাঁড়িয়ে
স্বাধীণতা সংগ্রামীদের সাহায্য করছে। কৃষকেরা নানান
স্থানে ইংরেজদের সেনা বাহিনী হারিয়ে তাদে অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নেন। উত্তরবঙ্গে পরপর নানান যুদ্ধে হেরে ইংরেজদের মনোবল প্রায় ধুলিতে মিশেযায়। হেস্টিংস শেষমেষ স্বাধীণতা সংগ্রামীদের পরাজিত করতে ব্রিটেন থেকে সেনা
আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭৭৩এর জানুয়ারি থেকে আবার যুদ্ধ
শুরু হল। দিনাজপুরের যুদ্ধে স্বাধীণতা
সংগ্রামীরা দুটি দুর্গ হারায়। উত্তরবঙ্গের
বিপর্যয়ের খবর পেলে বগুড়ার সন্নাসীরা নতুন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে
ইংরেজ বাহিনীকে কর দিয়ে শান্তি কিনতে হয়। স্থানীয়
জমিদারদের সহায়তায়, জাফরশাহী পরগণার নায়েবকে গ্রেফতার করার পর সমগ্র ময়মনসিংহ
জুড়ে জমিদারির পর জমিদারি আর কুঠি পর কুঠি লুঠ করতে শুরু করে। জমিদারেরা স্বাধীণতা সংগ্রামীদের সঙ্গে নানানভাবে আপোষ করে চলেন। ১৭৭৩এর ১৭ মার্চ তিন হাজার স্বাধীণতা সংগ্রামী মধুপুরের গভীর জঙ্গলে ইংরেজ সেনাকে ধংস করে। এই যুদ্ধে মাত্র ১২জন ইংরেজ সেনা বাঁচে। এই যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীণতা সংগ্রামীরা যশোর হয়ে কলকাতার দিকে এগোতে
শুরু করলেও ইংরেজ বাহিনীর আক্রমণে ধংস হয়ে যায়।
ক্রমশঃ ইংরেজরা ভারতীয় পঞ্চমবাহিনীর সহায়তায় কৃষকদের
গোপন খবর পেতে নানান চর নিয়োগ করা হয়। বাঙলা জুড়ে
নানান রকম পীড়নের মাধ্যমে স্বাধীণতা সংগ্রাম দমনের পরিকল্পনা হল। ক্রমশঃ ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে মজনুর যুদ্ধ শুরু হয়। ইংরেজরা ক্রমশঃ তাদের অভ্যস্ত কাজে লেগে পড়েন। বিপক্ষের মধ্যে লড়াই বাধানোর কাজে তারা সক্ষম হয়। সন্নাসী আর ফকিরদের মধ্যে ১৭৭৭এ প্রচণ্ড আত্মকলহ তৈরি করা হল। ক্রমশঃ মদনু শাহ বছরের পর বচর ধরে ইংরেজ সেনাদের সম্মুখ সমর এড়িয়ে ঝটিকা
আক্রমণ করে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে শুরু করলেন। কোম্পানির
বিপুল লড়াই সত্বেও মজনুকে ধরা গেল না। ১৭৮৬তে
বগুড়ার মঞ্জুরায় পাঁচশ স্বাধীণতা সংগ্রামী নিয়ে কালেশ্বরে মজনুর সঙ্গে ইংরেজ
সেনার লড়াই শুরু হল। মজনু গুরুতর আহত হলেন। ১৭৮৬র ডিসেম্বরে স্বাধীণতা সংগ্রামী মজনুর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর ভাই মুশা শাহ স্বাধীণতা সংগ্রাম জারি রাখেন। রানী ভবানীর বরকন্দাজের সঙ্গে মুশার লড়াই হয়। বরকন্দাজরা হেরে যান। বরাবরেরমত
ইংরেজরা জনসাধারণকে স্বাধীণতা সংগ্রামীদের সাহায্যকরলে চরম শাস্তিদেওয়ার কথা ঘোষণা
করলেও স্বাধীণতা সংগ্রামীরা কিন্তু জনগণের সাহায্য পেতে থাকেন।
১৭৮৭থেকে সরকারি নথিপত্রে স্বাধীণতা সংগ্রামের অন্যতম
নায়ক ভবানী পাঠকের রণধ্বণি শেনা যেতে থাকে। ভবানী পাঠক আর
তাঁর সহযোগী দেবী চৌধুরানীর আক্রমনে ইংরেজ আর তার সহযোগীরা ক্রমশঃ পিছু হঠতে থাকে। ভবানী পাঠকের মৃত্যুর পরও দেবী চৌধুরানী উংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি
রাখেন। মজনুশাহর দুই অনুগামী ফেরাগুল শাহ আর
চেরাগালি শাহ ইংরেজাশ্রিত জমিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বজায় রাখেন। নিজেদের মধ্যে লড়াইতে ফেরাগুলের দ্বন্দ্বে মজনুর ভাই মুশার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে স্বাধীণতা সংগ্রামের আগুণ ধিকিধিকি করে জ্বললেও শেষ পর্যন্ত
ক্রমশঃ পিছু হঠতে থাকে স্বাধীণতা সংগ্রামীরা। ওয়ারেন হেস্টিংসের পর লন্ডনের মেয়র লর্ড কর্নওয়ালিসের সময় বাঙলার জমিদারি
প্রথার খোলনলচে বদলানো হয়। শুরু হয়
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আমল। ১৭৯৩র পর
দারোগা নামক এক পদ সৃষ্টিকরে তার নেতৃত্বে গ্রামে স্বাধীণতা সংগ্রাম দমনের আয়োজন
শুরু হয়।
No comments:
Post a Comment