কলকাতার আলালেরা যখন কলকাতায় নবজাগরণ
ঘটাতে ব্যাতিব্যস্ত, তখন লুঠেরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারকে ‘সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রাম’ গোড়া থেকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল। স্বাধীণতা সংগ্রামের শুরু হয়েছিল ১৮৫৫এ। চলেছিল ১৮৫৬ পর্যন্ত। বন্দুক-কামান উপেক্ষা করে দেশজ সাঁওতালরা
নেমেছিলেন নিজেদের ভূমি রক্ষার তাগিদে, নিজেদের
দেশের স্বাধীনতার জন্য, লুঠেরা শাসকদের ভারত থেকে উচ্ছেদ
করতে। ১৮৫৫-৫৬
সালের সাঁওতাল বিদ্রোহে
সাঁওতালদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন সাঁওতাল পরগনার পাশেই বাস করা হড় মিতানরাও -
কর্মকার, তেলি, চর্মকার, ডোম
ও মুসলমানরা। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুই অকুতোভয় সাহসী সহোদর সিদো
ও কানু। শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁরা নিজেদের স্বাধীনতার
জন্য। মৃত্যুক্ষণে
বিপ্লবী কানু বলেছিলেন ’আমি
আবার আসব, সারা দেশে স্বাধীণতা সংগ্রামের আগুন
জ্বালিয়ে
তুলব।’ সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রামের ১৫৫ কেটে গিয়েছে, কিন্তু সিদো আর কানুর মরণ হয়নি, যুগে
যুগে, কালে কালে, অত্যাচারীর প্রাণে ভয় জাগিয়ে আজও এই বিশ্বায়নের দিনে কোম্পানির
উত্তরাধিকারী বহুজাতিকগুলির অত্যাচারের মুখে দাঁড়িয়ে যারা প্রাণ দান করেন, তাঁরা
সকলেই সিদো কানুর স্মৃতি বয়ে নিয়ে আরও এক প্রজন্মে নিজেকে বিলিয়ে দেন স্বাধীণতা
সংগ্রামের ঝান্ডা তুলে ধরতে।
ভারতের ইতিহাস
ঘাঁটলে দেখা যাবে, সাঁওতালরা কৃষিকাজে মাহির ছিলেন। সারা ভারতে সাঁওতালদের কৃষি শ্রমিক হিসেবে ডাক পড়ত। সাঁওতাল এমন এক সমাজ যখানে ধর্ষণ, অনাথ নামে কোনও শব্দ স্থান পায় না, সাঁওতালদের সমাজ কাঠামো
প্রায় সাম্যের কাছাকাছি। কেউ জানেননা কেন সাঁওতাল সমাজে
জনসংখ্যার হার নিম্নাভিমুখী। নাচ, গান, ছবি
আঁকায় সাঁওতালদের দক্ষতা যেকোনও ভারতীয়
সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুলনীয়। চক্ষুদানপট
অথবা যমপটের গাম্ভীর্যেকে ধার করতে হয়েছে বর্ণসমাজকে। দেওয়াল চিত্রের বৈটিত্র্যে অসম্ভব এক গরীমাময় ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন এই
সমাজ হাজার হাজার বছর ধরে। ভারতীয় পুতুলনাচের
ইতিহাসে চদরবদর এক্কেবারে নতুন আথচ জটিল এক আঙ্গিক, যা নতুন এক বিশ্বের দ্বার
উন্মুক্ত করে দেয়। সাঁওতাল সমাজ এক বিচিত্র সম্ভাবনাময়
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সামগ্রিকভাবে সমবায়ী ভারতীয় সমাজকে দিয়েছেন যার উত্তরাধিকারে
আজও ভারতীয় সমাজ গর্বিত হতে পারে। (সাঁওতাল পরবগুলি বলতে হবে - এনেক্সে দোব)
শতাব্দর পর
শতাব্দ বাধা-বিঘ্নহীন অথচ নিয়ন্ত্রণময় জীবনযাপন
করছিলেন সাঁওতাস সমাজ। ইংরেজরা বাঙলা সুবার
দেওয়ানি দখল করে বাঙলা বিহারের প্রতিটি প্রান্তের সম্পদ জ্ঞাণ শুষে নিয়ে দেশে পাঠাতে থাকে,
আর লুঠ কর্মের সঙ্গে সঙ্গে ধংস করতে শুরু করে দেশের সমস্ত পরিকাঠামো, যে কাঠামোর
প্রতীমা তৈরি করছিলেন সাঁওতাল সমাজেরমত অজস্র সাধারণ সমাজের নিতান্তই সহজ সাধারণ
মানুষজন, তারাই সেই সম্পদ রক্ষা করে এসছিলেন যুগের পর যুগ, সেই পরিকাঠামো
ভিত্তিকরে বেঁচে এসেছেন তারা। খুনি ইংরেজদের
তৈরি ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পারে এসে দাঁড়িয়ে জঙ্গলমহল লুঠে যখন ব্রিটিশদের নজর
গেল, নির্বিরোধী সাঁওতালরা তখন একাট্টা হয়ে উঠলেন দেশ বাঁচাতে। ব্রিটিশ শাসন আমলে সাঁওতাল পরগনার হাজার হাজার বছরের ভূমি অধিকার ও অর্থনীতির ওপর চরম আঘাত নেমে এল। কোম্পানির ইংরেজ বেনিয়াদের
লুণ্ঠন আর অত্যাচারের ধরণ
তখন কি পর্যায়ে পৌঁছেছিল তার প্রমাণ আমরা পাব তখনকার সংবাদপত্র ‘ক্যালকাটা রিভিউ’র পাতায় চোখ বুলালেই : ‘রেলপথে যেসকল ইংরেজ কর্মচারী কাজ করিতেন
তাঁহারা বিনামূল্যে সাঁওতাল অধিবাসীদের নিকট হইতে বলপূর্বক পাঁঠা, মুরগী প্রভৃতি কাড়িয়া লইতেন এবং সাঁওতালগণ প্রতিবাদ করিলে তাহাদের উপর
অত্যাচার করিতেন। দুইজন সাঁওতাল স্ত্রীলোকের উপর পাশবিক অত্যাচার ও একজন সাঁওতালকে হত্যা করাও
হইয়াছিল’, ‘ক্যালকাটা রিভিউ’ আমাদের আরও জানাচ্ছে : ‘এইভাবে জমিদার, নায়েব, গোমস্তা, পেয়াদা, মহাজন, পুলিশ, আমলা, এমনকি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত_সকলে একত্রে মিলিয়া নিরীহ ও দরিদ্র
সাঁওতালদের উপর নিদারুণ
অত্যাচার চালাইয়া যায়; শতকরা
পঞ্চাশ টাকা হইতে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত সুদ আদায়, বে-আইনী
আদায়, বলপূর্বক জমিদখল, শারীরিক অত্যাচার সমস্তই চলে।’
সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রামের পেছনে শুধু
চরম অর্থনৈতিক
শোষণ- নিপীড়নের ইতিহাসই নেই, রয়েছে নিজের ভূমিতে উচ্ছেদ হয়ে
অথবা ফাউএরমত বেঁচে-মরে থাকার প্রতিবাদই। এই বিদ্রেহের
অন্যতম কারন কিন্তু সাংস্কৃতিক। শোষণ-নিপীড়নে অংশ নিয়েছিলেন
একদিকে আদিবাসী পরগনার বাইর থেকে আসা ব্রিটিশ প্রসাদ ধন্য নতুন ধরণের হিন্দু-মুসলমান জোতদাররা। অন্যদিকে ছিল ইংরেজ দাসব্যবসায়ী নীলকর
ও কোম্পানি প্রশাসন। ক্যালকাটা রিভিউ দোষের বেশির ভাগ
চাপাচ্ছে ইংরেজদের কাঁধে; আবার
ইংরেজদের বক্তব্যও এই স্বাধীণতা সংগ্রামের জন্য দায়ি দেশীয় জমিদার-জোতদারদের শোষণ। ডবি্লউ ডবি্লউ হান্টার তাঁর এনালস অব
রুরাল বেঙ্গলএ বলছেন, অধিকাংশ সাঁওতালেরই সামান্য ঋণ পরিশোধ করার মতো জমি ও ফসল থাকত না। কোনও
সাঁওতাল পরিবাবের কর্তার মৃত্যু হলে মৃতদেহের সৎকারের জন্য সেই সাঁওতালকে হিন্দু জমিদার বা মহাজনের কাছ
থেকে টাকা ঋণ করতে হতো। কিন্তু ঋণের জামিন রাখার মতো জমি বা ফসল না থাকায় সেই সাঁওতাল
ব্যক্তিটিকে লিখে দিতে
বাধ্য করা হতো যে ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত সে ও তার স্ত্রী-পুত্র-পরিবার মহাজনের দাস হয়ে
থাকবে। এর ফলে পরদিনই সাঁওতালটি তার পরিবার নিয়ে মহাজনের দাসত্ব করতে যেত। জীবদ্দশায় তার ঋণ আর শোধ হতো না। কারণ শতকরা ৩৩ টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে
সুদের ঋণ কয়েক বছরের মধ্যে দশ গুণ হয়ে যেত। আর মৃত্যুর সময় সাঁওতাল ব্যক্তিটি তার বংশধরের জন্য রেখে যেত
কেবল পর্বতপ্রমাণ ঋণের বোঝা।
স্বাধীণতা সংগ্রাম শুরু হয়ে গেলে
সাঁওতাল পরগনা নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের মাথা যে কতটা ব্যথা বোধ করছিল তা আমরা ব্রিটিশ সিভিলিয়ানদের বিভিন্ন
চিঠির আদান-প্রদান থেকেই
স্পষ্ট বুঝতে পারব। ঘটনাটি ১৮৫৫ সালের জুলাই মাসে। ডবি্লউ সি টেইলর লিখছেন তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসারের কাছে :
প্রতি : এফ এস মুডজে
তারিখ : ৭ জুলাই, ১৮৫৫
প্রিয় মুডজে,
বর্তমানে আমি যে জায়গায় রয়েছি তার থেকে প্রায় আট মাইল দূরে প্রায় চার বা পাঁচ হাজার সাঁওতাল একটি বড় জমায়েত করেছে এবং আমার মনে হয়, তারা ভালোই অস্ত্র সজ্জিত। তাদের কাছে তীর-ধনুক, তলোয়ার আর দা আরও অনেক অস্ত্রশস্ত্রই ছিল। আর আমার মনে হয়, তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরাপীয়দের আক্রমণ করা এবং তাদের হত্যা করা…। আমার মনে করি, এখন আপনার প্রথম কাজ হবে আমাদের বহরমপুর অফিসকে জানানো এবং সেনা বাহিনীর সাহায্য পঠানোর জন্য তাদের বলা; কারণ আপনি তো জানেন, তাকিয়ে তাকিয়ে নিজেদের মৃত্যু দেখাটা তো মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। আমি আসলে যেটা বলতে চাই তা হলো, এটা কোনও হেলাফেলা ঘটনা নয়, মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আপনার ডবি্লউ সি টেইলর
প্রতি : এফ এস মুডজে
তারিখ : ৭ জুলাই, ১৮৫৫
প্রিয় মুডজে,
বর্তমানে আমি যে জায়গায় রয়েছি তার থেকে প্রায় আট মাইল দূরে প্রায় চার বা পাঁচ হাজার সাঁওতাল একটি বড় জমায়েত করেছে এবং আমার মনে হয়, তারা ভালোই অস্ত্র সজ্জিত। তাদের কাছে তীর-ধনুক, তলোয়ার আর দা আরও অনেক অস্ত্রশস্ত্রই ছিল। আর আমার মনে হয়, তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরাপীয়দের আক্রমণ করা এবং তাদের হত্যা করা…। আমার মনে করি, এখন আপনার প্রথম কাজ হবে আমাদের বহরমপুর অফিসকে জানানো এবং সেনা বাহিনীর সাহায্য পঠানোর জন্য তাদের বলা; কারণ আপনি তো জানেন, তাকিয়ে তাকিয়ে নিজেদের মৃত্যু দেখাটা তো মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। আমি আসলে যেটা বলতে চাই তা হলো, এটা কোনও হেলাফেলা ঘটনা নয়, মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আপনার ডবি্লউ সি টেইলর
টেইলরের চিঠিটি স্বাধীণতা সংগ্রাম শুরুর
আট দিনের মাথায় লেখা। চিঠিটির গুরুত্ব অনুধাবন করা মোটেও কঠিন নয়। সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রাম এবং সাঁওতাল
পরগনাকে ইংরেজরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল, কেননা সাঁওতাল পরগণা ছিল
প্রাকৃতিক সম্পদের আকরস্থল। সাঁওতালদের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অর্থনীতির আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছিল সচেতন ভাবেই।
শিল্পবিপ্লবজাত ব্রিটেনের শিল্প উৎপাদন, ভারতেরমত শিল্প
পরিকাঠামো ভেঙে দেওয়া দেশে বিক্রির জন্য প্রয়োজন ছিল প্রধান দুটি উদ্যমের- এক, ভারতে উৎপাদিত কাঁচামাল তৈরির
বাজারের বিকাশ, দুই উৎপাদিত দ্রব্যের বিক্রির বাজার
তৈরি করা। বাঙলায়
তাদের প্রথম উপনিবেশ গড়ার পর তারা ক্রমেই ভারতের অন্যান্য অঞ্চল দখলে প্রযত্ন হয়। সাঁওতাল পরগনায় ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক অর্থনীতির আরও বৃদ্ধি করার দস্যুতা আর লুঠবৃত্তি
থেকেই তারা সরলমতি সাঁওতালদের অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার
চেষ্টা
করতে থাকে। ইংরেজরা চেয়েছিল এখানে মুদ্রাভিত্তিক
অর্থনীতি চালু করতে আর ভূমিব্যবস্থার ক্ষেত্রে সাঁওতালদের নিজস্ব সংস্কৃতি পরিবর্তন করে তা পুরো ঔপনিবেশিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে। সাঁওতালদের নিজেদের ভূমির অধিকার থেকে
বঞ্চিত
করা ছিল ইংরেজ ও অন্য
বণিকদের অন্যতম লক্ষ্য।
সাঁওতালদের নিজস্ব অর্থনীতি ধ্বংস ও তাদের ওপর শোষণ-নিপীড়নের একটি
বিস্তৃত
চিত্র আমরা পাই ইতিহাসবিদ কে কে দত্তের দ্য
সানতাল ইনসারেকসন গ্রন্থে। সাঁওতাল
স্বাধীণতা সংগ্রাম ভিত্তি করে ১৯৪০সালে প্রকাশিত এটি প্রায়প্রথমতম আকরগ্রন্থ
যেখানে ব্রিটিশদের বা মার্ক্সবাদীদের পথ ধরে সাঁওতালদের শুধুই এক অসভ্য খুনি
গোষ্ঠী বলে চিহ্নিত করা হয়নি। মার্ক্স আ নোট অন ইন্ডিয়ান হিস্ট্রিতে বলছেন
সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রাম ছিল অর্ধসভ্য কিছু সাঁওতালদের স্বাধীণতা সংগ্রাম। রজনী পাম দত্ত ইন্ডিয়া টুডেতে
তাঁর চেতনগুরুর পথ ধরে সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রামকে বলছেন প্রিমিটিভ এন্ড স্পনটেনিয়াস ফর্মস অব আইসোলেটেড এক্টস অব রিভেঞ্জ এন্ড
ভায়োলেন্স। ১৯৮৩তে রঞ্জিত গুহ লিখলেন এলিমেন্টারি আসপেক্টস অব পেজান্ট ইনসারজেন্সি। অথচ তিনিও সেখানে সাঁওতালদের প্রায় অর্ধসভ্যরূপেই ঘোষণা করলেন।
কে কে দত্ত বলছেন, পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে দীর্ঘকাল ধরে বাঙালিরা বাস করত। ক্রমে ময়রা, বেনিয়া ও অন্যান্য শ্রেণীর আরও অনেক
বাঙালি
পরিবার বর্ধমান ও
বীরভূম জেলা থেকে আসে। মহাজনী ব্যবসা এবং বাণিজ্যের অবাধ সুযোগে আকৃষ্ট হয়ে সাহাবাদ, ছাপরা, বেতিয়া, আরা
ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভোজপুরি, ভাটিয়া প্রভূতি পশ্চিমি ব্যবসায়ীরা দলে
দলে দামিন-ই-কো অঞ্চলে জেঁকে
বসে। পাহাড়
অঞ্চলের ‘সদর কেন্দ্র’ বারহাইত ছিল একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। এ স্থানের বহু সংখ্যক অধিবাসীর মধ্যে
পঞ্চাশটি বাঙালি ব্যবসায়ী পরিবারও বাস করত। সাঁওতাল পরগনার বিপুল পরিমাণ ধান, সরিষা ও বিভিন্ন ধরনের তেলবিজ ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হতো। এসব শস্যের পরিবর্তে সাঁওতালদের দেওয়া
হতো সামান্য অর্থ, লবণ, তামাক অথবা কাপড়। এ ছাড়া মহাজনদের শোষণ ছিল আরও ব্যাপক। তারা উচ্চহারে সাঁওতালদের কাছ থেকে সুদ
আদায় করত। এসব ঘটনাই সাঁওতালদের নিয়ে গিয়েছিল অনিবার্য স্বাধীণতা সংগ্রামের দিকে।
সাঁওতাল
স্বাধীণতা সংগ্রাম বিস্তারের
কাল ১৮৫৫ সাল হলেও ১৮৫৪ সাল থেকেই সাঁওতাল পরগনায় স্বাধীণতা সংগ্রামের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। ব্রিটিশ কোম্পানির বিভিন্ন দলিলে এর আভাস পাওয়া যায়। ১৮৫৪ সালের দিকে মহাজনদের বাড়িতে বিছিন্ন
কিছু ‘ডাকাতির’ ঘটনা ঘটে। ব্রিটিশ নথিতে বলা হয়, উত্তেজিত অনেক সাঁওতাল মহাজনদের বাড়িতে ‘ডাকাতি’ করছে এবং এ ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রশাসকদের তৎপরতাও চোখে পড়ে। তবে ব্রিটিশ নথিতে উল্লেখ্য ‘ডাকাতি’ অথবা ডাকাত ঔপনিবেশিকভাবে ব্যবহৃত শব্দগুলিকে নতুনভাবে নতুন
দৃষ্টিতে দেখার সময় এসেছে। ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহাত্মক
কাজকে ব্রিটিশ প্রশাসকরা আখ্যা
দিত ‘ডাকাতি’ বা এ ধরনের কোনও ঋণাত্মক
অভিধায়। আর যারা এসব বিপ্লবাত্মক কাজে অংশ নিত তাদের তারা চিহ্নিত করত ‘ডাকাত’ হিসেবে। ঔপনিবেশিক নথিতে যেখানে ‘ডাকাত’ বলা
হবে, সেখানে বুঝতে হবে বিপ্লবী স্বাধীণতাকামী কৃষক,
আর যেখানে বলা হবে ‘ডাকাতি’ সেখানে বুঝতে হবে বিপ্লবাত্মক
বা বিদ্রোহাত্মক কর্মকাণ্ড। এই তথ্যের উল্টো পাঠ তত্ত্ব প্রয়োগ করলে
বোঝা যায় যে ১৮৫৪ সালের দিকেই
সাঁওতাল পরগনায় ছোটখাটো স্বাধীণতা সংগ্রামের ঘটনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সাঁওতালি স্বাধীণতা
সংগ্রামী দলের কিছু সংবাদ আমরা পাই দিগম্বর চক্রবর্তীর ‘হিস্ট্রি অব দ্য সানতাল হুল অব এইটিন ফিফটি ফাইভ’ বইতে। তিনি জানাচ্ছেন, ১৮৫৪ সালের দিকে মহাজনের উৎপীড়নে অতিষ্ঠ
হয়ে একদল সাঁওতাল ‘প্রতিহিংসা’ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বীরসিং মাঝি নামের এক
সাঁওতাল সর্দারের অধীনে একটি ‘ডাকাতের’ (মানে স্বাধীণতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের দল)
দল গঠন করে। ‘দিকু’ অর্থাৎ
বাঙালি
মহাজন ও পশ্চিম
ভারতীয় মহাজনদের গৃহে ‘ডাকাতি’ করে ‘প্রতিহিংসা’ গ্রহণ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাদের গতিবিধিতে সন্দিগ্ধ হয়ে সব মহাজন
একত্রে
তাদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দীঘি থানার দারোগা মহেশলাল দত্তের কাছে আবেদন জানায়। এরপর তারা পাকুড়ের জমিদারের কাছে অভিযোগ জানায়।
জমিদার নায়েব-মহাজনদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে
বীরসিং মাঝি নামের স্বাধীণতা সংগ্রামী সাঁওতাল নেতাকে কাছারিবাড়িতে আটক করে। এ ঘটনার পর থেকে সাঁওতাল মহলের
সাঁওতালরা ক্ষিপ্ত
হয়ে কিছু মহাজনের বাড়ি আক্রমণ করে। তখন সাঁওতাল মহলের নায়েব ভীত হয়ে কাছারিবাড়ি রক্ষার জন্য অনেক পাঠান
লাঠিয়াল ও পাহাড়িয়া ধনুর্বর নিযুক্ত করে। এর প্রতুত্তর সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রামী সৈনিকরাও খুব
ভালোভাবেই দেয়। বীরসিংহের
নেতৃত্বে সাঁওতাল বাহিনী অত্যাচারী মহাজনদের আক্রমণ করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ দীঘি থানার
দারোগা মহেশ দত্ত পুলিশ নিয়ে সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রামীদের গ্রেপ্তার করতে যান। সাঁওতাল মহলে গোক্কো নামে এক অবস্থাপন্ন সাঁওতাল বাস করত। অনেক আগে থেকেই বাঙালি মহাজনদের লোভ ছিল গোক্কোর সম্পদের ওপর। এ সুযোগে মহাজন ও জোতদাররা দারোগার
সঙ্গে পরামর্শ করে গোক্কো
সাঁওতালকে মিথ্যা চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করায়। ১৮৫৪ সালের শেষের দিকে সাঁওতাল নেতারা গোক্কো, বীর সিংহসহ আরও অনেক সাওতাল নেতা
সাঁওতাল
সর্দারের ওপর
নিপীড়নের প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে বীরভূম, বাঁকুড়া, ছোটনাগপুর ও হাজারিবাগ থেকে প্রায় সাত হাজার সাঁওতাল ‘দামিন’ এলাকায়
সমবেত হন। সাঁওতালদের ক্ষোভ ছিল যে মহাজনরা সাঁওতালদের ওপর অমানুষিক
অত্যাচার-নিপীড়ন চালালেও শাস্তি হয় না; কিন্তু সাঁওতালরা যদি এর প্রতিবাদ করতে যায় বা প্রতিশোধ নিতে যায়
তাহলে তাদের ওপর নেমে
আসে জেল-জুলুম। এসব অন্যায়ে তাদের নিয়ে যায় মহাবিস্ফোরণের দিকে।
এরকম পরিস্থিতিতে সাতকাঠিয়া গ্রামে ঢুকে
মহেশলাল দারোগা বহু সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদের ওপর অমানুষিক
নির্যাতন করেন। কয়েকজন
নেতৃস্থানীয় সাঁওতালকে চাবুক দিয়ে পেটানোও হয়। পুলিশের এ আচরণ সাঁওতাল পল্লীতে ক্ষোভের আগুন দ্বিগুণ
করে তোলে। শুরু হয়ে যায় সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রাম। চারদিকে তখন বাজতে থাকে স্বাধীণতা
সংগ্রামের মাদল। স্বাধীণতা
সংগ্রামের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসেন স্বাধীণতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক দুই নেতা দুই সহোদর সিদো ও কানু। সিদো বড় আর কানু ছোট। সাঁওতাল পরগনার সদর থেকে আধা মাইল দূরে ভগনদিহি গ্রামের এক
দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারে তাঁদের জন্ম। সিদো ও কানুর সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রাম ঘোষণা করা নিয়ে একটি
চমকপ্রদ গল্প চালু আছে। গল্পটি এ রকম :
‘একদিন রাত্রিকালে যখন সিদো ও কানু তাহাদের গৃহে বসিয়া বহু বিষয় চিন্তা করিতেছিলেন,…তখন সিদোর মাথার উপর এক টুকরা কাগজ পড়িল, সেই মুহূর্তেই ঠাকুর সিদো ও কানুর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। ঠাকুর শ্বেতকায় মানুষের মত হইলেও সাঁওতালী পোশাকে সজ্জিত ছিলেন। তাঁহার প্রতি হাতে দশটি করিয়া আঙুল, হাতে ছিল একখানি সাদা রঙের বই এবং তাহাতে তিনি কি যেন লিখিয়া ছিলেন। বইটি এবং তাহার সাথে বিশ টুকরা কাগজ তিনি দুই ভাইকে অর্পণ করেন। তারপর তিনি উপরের দিকে উঠিয়া শূন্যে মিলাইয়া যান। আর এক টুকরা কাগজ সিদোর মাথার উপর পড়িল এবং সাথে সাথে দু’জন মানুষ তাহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। তাহারা দুই ভাইয়ের নিকট ঠাকুরের নির্দেশ ব্যাখ্যা করিয়াই অন্তর্হিত হইলেন। এইভাবে একদিন নয়, সপ্তাহের প্রতিদিনই ঠাকুর আবির্ভূত হইয়াছিলেন। বইয়ের পৃষ্ঠায় ও কাগজের টুকরাগুলিতে কতগুলি কথা লেখা ছিল। পরে শিক্ষিত সাঁওতালগণ তাহার অর্থ উদ্ধার করে। কিন্তু সিদো ও কানুর নিকট কথাগুলির তাৎপর্য কিছুমাত্র অস্পষ্ট ছিল না।’
‘একদিন রাত্রিকালে যখন সিদো ও কানু তাহাদের গৃহে বসিয়া বহু বিষয় চিন্তা করিতেছিলেন,…তখন সিদোর মাথার উপর এক টুকরা কাগজ পড়িল, সেই মুহূর্তেই ঠাকুর সিদো ও কানুর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। ঠাকুর শ্বেতকায় মানুষের মত হইলেও সাঁওতালী পোশাকে সজ্জিত ছিলেন। তাঁহার প্রতি হাতে দশটি করিয়া আঙুল, হাতে ছিল একখানি সাদা রঙের বই এবং তাহাতে তিনি কি যেন লিখিয়া ছিলেন। বইটি এবং তাহার সাথে বিশ টুকরা কাগজ তিনি দুই ভাইকে অর্পণ করেন। তারপর তিনি উপরের দিকে উঠিয়া শূন্যে মিলাইয়া যান। আর এক টুকরা কাগজ সিদোর মাথার উপর পড়িল এবং সাথে সাথে দু’জন মানুষ তাহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। তাহারা দুই ভাইয়ের নিকট ঠাকুরের নির্দেশ ব্যাখ্যা করিয়াই অন্তর্হিত হইলেন। এইভাবে একদিন নয়, সপ্তাহের প্রতিদিনই ঠাকুর আবির্ভূত হইয়াছিলেন। বইয়ের পৃষ্ঠায় ও কাগজের টুকরাগুলিতে কতগুলি কথা লেখা ছিল। পরে শিক্ষিত সাঁওতালগণ তাহার অর্থ উদ্ধার করে। কিন্তু সিদো ও কানুর নিকট কথাগুলির তাৎপর্য কিছুমাত্র অস্পষ্ট ছিল না।’
সাঁওতাল স্বাধীণতা সংগ্রাম নিয়ে এ
গল্পটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সংকীর্ণ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে
ওপরের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে
ইতিহাসের কেবল ভুল পাঠ আর ভুল মূল্যায়নই করা হবে। ভারতীয় সমাজের হাজার বছরের লড়াই করার যে শক্তি মানুষ প্রকৃতি
থেকে পেয়ে আসছে তাই বিবেচনা করার ওপর জোর দিয়েছেন আধুনিককালের ইতিহাসবিদরা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর সিদো ও কানু তাঁদের বাড়ির
কাছের বনে ঠাকুরের
মূর্তি তৈরি করে পূজার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে তাঁরা চারদিকে শালগাছের শাখা পাঠিয়ে ঠাকুরের আর্বিভাব
এবং স্বাধীণতা সংগ্রামের কথা প্রচার করেন। শালগাছের শাখা প্রেরণ হলো সাঁওতালি প্রচারব্যবস্থার একটি
প্রচলিত পদ্ধতি। শালগাছের
শাখা সাঁওতালিদের কাছে এক বিশেষ ইঙ্গিত দেয়। এ ইঙ্গিত হলো সর্বাত্দক লড়াই-বিদ্রোহে নামার ইঙ্গিত। অর্থাৎ সাঁওতাল বিদ্রোহে শালগাছের শাখা একটি ‘সিগনিফায়ার’ হিসেবে কাজ করে; যেমনটা আমরা লক্ষ করব, দুই বছর পরে ১৮৫৭ সালের মহাস্বাধীণতা সংগ্রামের
বেলায়। মহাস্বাধীণতা সংগ্রাম শুরুর আগে গ্রামগুলোতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা চাপাতি বিতরণ করেছিলেন। এই চাপাতি ছিল তখন স্বাধীণতা সংগ্রামের ‘সিগনিফায়ার’ বা স্বাধীণতা সংগ্রাম যে শুরু হবে তার
আলামত।
সাঁওতাল সমাজ
ক্রমশঃ নিজেদের স্বাধীণতা সংগ্রামের জন্য তৈরি করতে থাকে। গ্রামের পর গ্রামের সাঁওতালেরা নতুন করে গড়ে পিটে নিতে থাকে নিজেদের স্বাধীণতা
সংগ্রামের অধ্যায়। বাড়ির সামনে হাল আর ঝাঁটা ঝোলানো
হয়, প্রত্যেকের বাড়ির উঠোন পরিস্কার করে লেপে পুঁছে বাড়ির দেওয়ালে উঠোনে আলপনা
দিয়ে মেয়েরা পায়ে নাচের ঘুঙুর পরেন, পাঁছগ্রামের সাঁওতালদের সঙ্গে আরও পাঁচগ্রামের
সাঁওতালরা মিলে প্রত্যককে নতুন গান, নতুন সুর শেনায়, হালের কাঠটি অবিবাহিত যুবকের
হাতে দিয়ে, হাতে বেঁধে দেওয়া হয় একটি মাঙ্গলিক সুতো। প্রত্যেক সাঁওতাল জালতে বুঝতে পেরেছিলেন তাঁদের সমাজ আর আগের মত ভারতে বাস
করতে পারবেননা, হুল তাদের সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠল। প্রত্যক মাঝি হাড়াম বললেন তাঁরা আর আগেরমত থাকতে পারবেন না, তাঁদের জীবনে
নেমে আসবে দারিদ্র্য, নিষ্পীড়ণ আর পরস্পরের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
সিদো ও কানু দুই সহোদর ‘ঠাকুরের নির্দেশ’ (মানে স্বাধীণতা সংগ্রামের বার্তা)
সাঁওতাল
জনগণকে শোনানোর জন্য
দিন ধার্য করেন। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সিদো-কানুর গ্রাম ভগনদিহিতে ৪০০ গ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে
প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল একটি সভা করেন। এ সভায় বক্তৃতা করেন স্বাধীণতা সংগ্রামের দুই প্রধান নেতা সিদো
ও কানু। বক্তৃতায়
সিদো ও কানু ইংরেজ-জমিদার-পুলিশ এবং মহাজনদের বিভিন্ন শোষণ-নিপীড়নের কাহিনী তুলে ধরেন এবং এই
শোষণ-নিপীড়নের বিরদ্ধে সাঁওতাল জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বক্তৃতায় সিদো ও কানু একটি স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দেন। সভায় উপস্থিত প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল তখন সমস্বরে শপথ নেন শোষক-উৎপীড়কদের
বিতাড়িত করে তাদের জমি দখল ও স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার।
সমাবেশের পর সিদোর নির্দেশে কির্তা, ভাদু
ও সন্নোমাঝি নামে সাঁওতাল নেতা ইংরেজ সরকার, ভাগলপুরের
কমিশনার, কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট, বীরভূমের কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট, দীঘি থানা ও টিকড়ি
থানার দারোগা এবং আরও অনেক জমিদারকে হুঁশিয়ার করে
চিঠি পাঠায়। এই চিঠিগুলো ছিল
চরমপত্রের মতো। ‘চরমপত্র’ পাঠানোর পর সাঁওতাল
নেতৃবৃন্দ চারদিকে ঘোষণা করে দেন যে তাঁরা বাঙালি
ও পশ্চিমী মহাজনদের উচ্ছেদ করতে এবং সাঁওতাল অঞ্চল দখল করে সেখানে স্বাধীন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মজার ব্যাপার যে এ ঘোষণার
সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আরও একটি ঘোষণা দেন, তা হলো, কুমোর, তেলি, কর্মকার, মুমিন
মুসলমান বা তাঁতি, চর্মকার এবং ডোম, তারা হোক বাঙালি বা অন্য গোত্রের, তারা সাঁওতালদের প্রতি
বিশেষ সহানভূতিশীল ও বন্ধুভাবাপন্ন বলে তাদের বিরুদ্ধে
কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এতে বোঝা যায়, স্থানীয় এসব মানুষের সঙ্গে সাঁওতালদের ঘনিষ্ঠতা ছিল কত। আসলে সাঁওতালদের লড়াই ছিল সাঁওতাল
ভিন্ন এসব মিতান-মানুষের লড়াই।
No comments:
Post a Comment