ভারতীয় জ্ঞাণচর্চা নিয়ে ভুল, অনৃত নানান তথ্যপ্রচারে প্রভাবিত হয়েছিলেন
তত্কালীন বুদ্ধিবিভাষার মানুষজন। স্বাধীণতা
পুরবর্তী ঐতিহাসিকেরাও। হিল অথবা ডাফের এই কান্ড পুরোপুরি প্রশ্রয়
সমর্থন পেয়েছে ভারতীয় বামপন্থার। ভারতীয় দেশজ
জ্ঞাণচর্চার বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যগুলিকে বিশ্লেষণ করতে গিযে বামপন্থীরা
এগুলির তকমা দিচ্ছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীর। ইওরোপিয় তত্ব
সমান বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী সমান প্রগতিশীলতা, আজকের স্বতঃসিদ্ধ এবং সাধারণজ্ঞাণীয়
এই সমীকরণটি ততদিনে কলকাতার মাটিতে শেকড় গজাতে শুরু করেছে। বাঙালি পন্ডিত-ঘরের জ্ঞাণী-পন্ডিত, টোলে পড়া, হটু আর হটি বিদ্যালঙ্কারের
বংশধর, অন্যপথে জীবনধারণকরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শিক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি
মোয়াটকে ভারতের বেদান্ত ও সাংখ্য দর্শণ সম্বন্ধে লিখলেন, for
certin reasons which it is needless to state here, we are obliged to continue
the teaching of the Vedanta and Sankhya in the Sanscrit College. That the Vedanta and Sankhya are false systems of
Philisophy is no more a matter of diapute(বিনয় ঘোষঃ বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ)। ভারতীয় সংস্কৃতি-দর্শণ সম্বন্ধে অরুচিকর, বিভ্রান্তিমূলক,
তথ্যবিকৃতির ঘনঘটাতে বিদ্যাসাগরও প্রভাবিত হয়েছিলেন। উদ্দেশ্যপূর্ণ কী না কিছু পরে আলোচনা করা যবে। এই চিঠিটি প্রেক্ষিতের ১২৫ বছর পর বিনয় ঘোষ বলছেন(বিদ্যাসাগর ও
ততকালীন বঙ্গসমাজ), বেদান্ত ও সাংখ্য
যে ভ্রান্তদর্শণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই, এরকম মন্তব্য করারমত সত্সাহস বিদ্যাসাগরের
যুগে তো দূরের কথা, তার জন্মের দেড়শ বছর পরে আজকের দিনেও কজন ভারতীয় শাস্ত্রজ্ঞ
পন্ডিতের অথবা আধুনিক সুশিক্ষিত বিদ্বানদের আছে বলা যায় না।
সাংখ্য আর বেদান্ত বিষয়ে কিছুটা বাগবিস্তৃতি করা যাক। কাশ্মীরী পন্ডিত এবং কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক সুভাষ কাক বহুদিন ধরেই ভারতীয় সংস্কৃতির বিকৃতিকর্ম বিরুদ্ধে লড়ে চলেছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই তাঁরমত অনেকটা হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গেও মেলে,
বিশেষ করে ইসলাম বিষয়ে। সুভাষ কাক
মশাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সএর উদ্গাতা(যে তত্বকে স্বয়ং
আইনস্টাইন বেঁচে থাকতে তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানতে চাননি) অস্ট্রিয় তাত্বিক
আরউইন শ্রডিংগারের প্রতি তাঁর অন্তরের শ্রদ্ধা জানান ইন্টারনেটে প্রকাশিত A
Lover of Indian Wisdom প্রবন্ধে, (http://www.infinityfoundation.com/mandala/s_es/s_es_kak-s_wisdom_frameset.htm)। শ্রডিঙ্গারের জন্মের প্রায় তিন দশক
পূর্বে টুলো পণ্ডিত পরিবাবের সন্তান বিদ্যাসাগরের দাবি, এই তত্বটি প্রমাণিত। বিদ্যাসাগর যে কথাটি উহ্য রেখেছেন, সেটি হল, ভারতবিদ্বেষী পশ্চিম সভ্যতা
এই দর্শণগুলিকে মিথ্যে প্রমাণ করে ছেড়েছে। প্রবন্ধটিতে সুভাষ বলছেন বিদ্যাসাগরের থেকে মাত্র ৫০ বছর পর জন্ম নিয়ে
বৈজ্ঞাণিক দার্শণিক শ্রডিংগার বিদ্যাসাগর বর্ণিত ভুল প্রমাণিত বেদান্ত আর
সাংখ্য দর্শণের মূল সূত্রে কতদূর পর্যন্ত জারিত ছিলেন।
শ্রডিঙ্গারের
জীবনে বেদান্ত দর্শণের প্রভাব নিয়ে সুভাষ কাক কী বলছেন শোনা যাক ...I have in mind the
Austrian physicist Erwin Schrodinger, who was arguably one of the two greatest
scientists of the 20th century. If Albert Einstein is celebrated for his
creation of the theory of relativity, Erwin Schrodinger is equally famous for his
creation of quantum mechanics, the deepest theory at the basis of outer
reality. Quantum mechanics went so far beyond the already radical framework of
relativity that Einstein refused to accept it to his last day.
It is a fact that the
great European scientists have searched for truth by first abandoning the
narrow theologies of the religion into which they were born. But for
Schrodinger Indic ideas provided the very foundation for his uncompromising
search for meaning.
It is not generally known
that before he created quantum mechanics he expressed his intention to give
form to central ideas of Vedanta which, therefore, has had a role in the birth
of quantum mechanics. In 1925, [before] his revolutionary theory was complete,
Erwin Schrodinger wrote: This life of yours which you are living is not
merely a piece of this entire existence, but in a certain sense the
``whole''; only this whole is not so constituted that it can be surveyed in one
single glance. This, as we know, is what the Brahmins express in that sacred,
mystic formula which is yet really so simple and so clear: [tat tvam asi], this
is you. Or, again, in such words as ``I am in the east and the
west, I am above and below, [I am this entire world.]''.
Schrodinger's
influential [What is Life?] (1944) also used Vedic ideas. The book became
instantly famous although it was criticized by some for its emphasis on Indian
ideas. Francis Crick, the co-discoverer of the DNA code, credited this book for
key insights that led him to his revolutionary discovery.
According to his
biographer Walter Moore, there is a clear continuity between Schrodinger's
understanding of Vedanta and his research: The unity and continuity
of Vedanta are reflected in the unity and continuity of wave mechanics. In 1925,
the world view of physics was a model of a great machine composed of separable
interacting material particles. During the next few years, Schrodinger and
Heisenberg and their followers created a universe based on superimposed
inseparable waves of probability amplitudes. This new view would be entirely consistent
with the Vedantic concept of All in One.
Schrodinger was born on
August 12, 1887, so we celebrate the 113th anniversary of his birth. He became
a Vedantist, a Hindu, as a result of his studies in his search for truth.
Schrodinger kept a copy of the Hindu scriptures at his bedside. He read books on
Vedas, yoga, and Sankhya philosophy and he reworked them into his own words,
and ultimately came to believe them. The Upanishads and the Bhagavadgita were
his favourite scriptures.
According to his
biographer Moore, "His system - or that of the Upanishads---is delightful
and consistent: the self and the world are one and they are all. He rejected
traditional western religious beliefs (Jewish, Christian, and Islamic) not on
the basis of any reasoned argument, nor even with an expression of emotional
antipathy, for he loved to use religious expressions and metaphors, but simply
by saying that they are naive.''
Schrodinger was a
professor at several universities in Europe .
He was awarded the Nobel Prize in 1933. During the Hitler era he was dismissed
from his position for his opposition to the Nazi ideas and he fled to England . For
some years he was in Ireland ,
but after the conclusion of the World War II he returned to Vienna where he died in 1961.
Quantum mechanics goes
beyond ordinary logic. According to it reality is a superposition of all
possibilities which restates Vedic ideas. It is quantum mechanics which
explains the mysteries of chemical reactions and of life. In recent years, it
has been suggested that the secrets of consciousness have a quantum basis.
এই স্তবকের
পাদপুরণ করতে সেই প্রবন্ধর প্রথম দুই স্তবক উল্লেখ করা যাক, যদিও এই আলোচনার মূল
বক্তব্যের সঙ্গে স্তবকটির মূলভাবের সরাসরি সাজুজ্য নেই। আশাকরি পাঠক ঠিক বুঝে নেবেন কোন প্রসঙ্গে এই দুই স্তবক উল্লিথিত হল, ...Although the recent
success of Indians in the knowledge industries has changed perceptions quite a
bit, it is common to consider Indians to be other-worldly folks, stuck in
outmoded ways. Likewise, it is often said that Indian traditions offer nothing
of value to our times. Indian thought is considered overly mystical, and
disciplines such as yoga considered just a means of keeping the body fit.
It
is because of these views, internalized by educated Indians over several
generations, that Indian universities offer literally nothing on Indian science
and knowledge. Just to give an example, consider IIT Delhi, my own old school.
It has 14 professors in the department of humanities and social sciences. Of
these professors, seven are experts in English, two in philosophy, one in
economics, one in sociology, and two in psychology. There is no expert in
Indian languages, art, design, history, or Indian science. There is no
Sanskrit, or Tamil, or Hindi. The colonized minds of modern Indians reject
things Indian much more stridently than was done by the English.
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
বাঙালিরা ইওরোপিয়দের দাসত্ব প্রকল্প মোটামুটি মেনে
নেওয়ায়, ভারতে আন্ততঃ স্থির হয়েই গিয়েছিল জ্ঞাণ-বিজ্ঞাণ অর্থে ইওরোপিয়
জ্ঞাণ-বিজ্ঞাণ আর প্রযুক্তি অর্থে ইওরোপিয় প্রযুক্তিই বিশ্ব প্রযুক্তির ধারকবাহক। সব দেশের জ্ঞাণ-বিজ্ঞাণ-প্রযুক্তি চর্চার ইতিহাস পাদটিকামাত্র। স্বাধীণতার ষাট বছর পরে ঘটনাক্রম পাল্টায়নি। ইংরেজদের দাসত্ব প্রকল্প অনুসরণে ভারতীয় ধর্ম আর দর্শণ চর্চা যে ভ্রান্ততম
চর্চা, প্রত্যেককে আশ্রয় নিতে হবে ইওরোপিয় জ্ঞাণচর্চার পদপ্রান্তে, সে বিযয়টি নিয়ে
পাদ্রি আর ইওরোপিয় দার্শনিকেরা প্রচার চালাচ্ছিলেন। এই কাজে তাদের সাহায্য করেছেন আলাল আর তাদের ভারতীয় গুরুঠাকুরেরা। বিদ্যাসাগরও শুধু ভারতীয় দর্শণের ভ্রান্ততায় বিশ্বাসী ছিলেন তাই নয়,
ইওরোপিয় জ্ঞাণ-বিজ্ঞাণ-প্রযুক্তির প্রভুত্বতত্বেও প্রভাবিত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া
যাবে মোয়াটকে লেখা সেই চিঠিরই আর এক স্তবক থেকে - ...it
appears to me to hopeless task to conciliate the learned of India to the acceptance of the advancing science
of Europe .
They are a body of men whose long standing prejudices are unshakable(বিনয় ঘোষ, বিদ্যাসাগর ও বাঙালি
সমাজ). বিদ্যাসাগর যাকে প্রগতিশীল ইওরোপিয় বিজ্ঞাণ বলছেন, আদতে তা প্রযুক্তিই। সে যুগে ভারতের বিদ্যালয়ে কোন প্রযুক্তি পড়ানো হত এবং অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়েইবা কী পড়ানো হত, তার বন্ধদ্বার খুলে দিয়েছেন, দ্য বিউটিউিল
ট্রি পুস্তকে ধরমপালজী।
শুধু অখ্যাত শিক্ষক রামচন্দ্র মিত্রই নন, কোম্পানি আমলে অতিপ্রখ্যাত
অতিপ্রাজ্ঞ বিদ্যাসাগরও নিজের সময়ের স্বজাতির জ্ঞাণচর্চারপ্রতি তাচ্ছিল্যের ধরণা
পোষণ করতেন। ছাত্র ভূদেববাবু তাঁর শিক্ষককে
প্রামান এনেদিলেও রামচন্দ্রমশাই কিন্তু পন্ডিতদের অজ্ঞতা বিষয়ে সাধারণীকরণ করতে
ছাড়েন নি। বিদ্যাসাগরও সেই পথে এগিয়েছেন। দেশের ব্রাহ্মণদের প্রতি এই অনৃত প্রচারকান্ডের ফলে ভারতের জ্ঞাণ চুরি করে
গড়ে ওঠা ইংলন্ডে বিশ্বধংসের প্রযুক্তি বিকাশ যতবেশি, যত দ্রুত এগিয়েছে, ভারতের
জ্ঞাণবিজ্ঞাণচর্চা আর প্রযুক্তি বিকাশের ধারা ততদ্রুত পিছিয়েছে। জ্ঞাণ বিজ্ঞাণচর্চা রক্ষার মূল দায় ছিল ব্রাহ্ণণদের হাতে। ইওরোপ উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে শয়ে শয়ে বছর ধরে তাঁদের সম্বন্ধে কুত্সা ছড়িয়েছে। ইংরেজ আমলে তা সমর্থন করেছেন ভারতীয়রা। ফলে ব্রাহ্মণেরা জ্ঞাণচর্চার উদ্যম হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই তাঁদের বাপদাদাদের বৃত্তি ছেড়ে, ইংরেজি শিখে, অন্য বৃত্তি নিতে
আগ্রহী হয়েছেন। শেষ হয়ে গিয়েছে বাঙালির জ্ঞাণচর্চার
ধারা। আর যাঁরা জেদেরবশে এই কাজে রয়ে গিয়েছিল, অনেকটা
পুঞ্জীভূত অভিমানে, অধীতবিদ্যা রক্ষা করতে, অনেকটা কমঠ বৃত্তি বেছে নিয়েছিলেন। কেউকেউ আবার মাথা মুড়িয়ে পশ্চিমি জ্ঞাণের প্রভুত্ব মেনে নিলেন। অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত ঢুকে গিয়েছেন নিজেদের খোলসে। দেশে যা কিছু বিকাশ হয়েছিল, সেই কাজগুলিকে সে সময়ের ইওরোপপ্রণতঃ কালাপাহাড়ি
কাজকর্ম থেকে রক্ষা করতেই ব্যস্ত ছিলেন তারা। চর্চার আর সময় কোথায়।
সাম্রাজ্যে নজরদারি
গ্রামীণ বাঙলার ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীণতা সংগ্রামে বেসামাল প্রশাসন। তাদের অন্ততঃ কলকাতার আতুপুতু রিফর্মিস্ট সংগ্রাম নিয়ে খুব বেশি মাথা
ঘামানের প্রয়োজন ছিল না। মাঠের বাইরে থেকে তারা দেখছে,
কলকাতার বিদ্রেহীরা এবং বুদ্ধিমন্ত প্রখ্যাতরা সামাজিক মুষলপর্বে বড়ই ব্যস্ত। বার্ডেরমত প্রশাসকেরা হয়ত চেষ্টা করছিলেন গ্রামীণ বাঙলার স্বাধীণতা
সংগ্রামের আঁচ যেন কলকাতার শখের স্বাধীণতা সংগ্রামীদের দলের ওপর এসে না পড়ে। এবং সে কাজে তাঁরা আপাতঃ সফলও হন।
এমতাবস্থায় ইংরেজ প্রশাসকেরা কলকাতার রিফর্মমিস্ট যুবকদের
সংগ্রামকে আরও বেশি ইন্ধন দেওয়ার চেষ্টা করল যাতে এই বালখিল্যদের নজর কলকাতার সীমান্তের
বাইরে খুব বেশি হলে মফস্বল শহরের বাইরে না যেতে পারে। শুধু যুবাদেরই নয়, বাঙালির সবধরণের দলাদলি, যাকে পরে বিদ্রোহ নামে আখ্যা
দেওয়া হয়েছে, সে ধরণের সবকটি কান্ডকে মদত দিতে সরকার পক্ষ খুব আগ্রহী হয়ে ওঠে। গ্রামীণ ভারতীয় স্বাধীণতা সংগ্রাম দমনে বিশেষজ্ঞ, রায়ান আর বার্ড ইয়ং
বেঙ্গলদের হাতে হাত মেলালেন। সাম্রাজ্যের তিনটি
কাজ সাধন হল। প্রথমটি শহুরে দলাদলি
নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত বিভাজনকর্মের হাতে খড়ি। দ্বিতীয়টি, শহরের মাথাদের নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি-প্রকরণ অর্জণ। আগামীদিনের ভারতীয় মধ্যবিত্ত পোষিত রাজনীতির দলাদলিকে ইংরেজরাজ সরাসরি
ধোঁয়া দেবে। সময় বুঝে আন্দেলন আন্দোলন খেলার তেজ বাড়ানো
কমানোর প্রশিক্ষণ হল প্রশাসনের। ছোঁড়া বনাম বুড়োদের
মধ্যে বিদ্রোহনাম্নী দলাদলি পরিচালনা করতে গিয়ে। ইয়ং বেঙ্গলদের রিফর্ম বিদ্রোহ, কোম্পানি প্রশাসনের মদতে ফুলে ফেঁপে উঠে
নবজাগরণ নামক চমত্কার এক পরিবেশনযোগ্য পদে রূপান্তরিত হল। তৃতীয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বিদ্রোহ দমনেই সেনা বাহিনীকে নিয়োগকরারমত স্বাভাবিক কাজই নয়, সব
থেকে বড় কথা, সেনা বাহিনীকে নিয়োগ করতে হল খাজনা আদায় করতে। এটিই ইংরেজদের সবথেকে বড় মাথাব্যথার বিষয়। খাজনা কমেগেলে সভ্য ইংরেজরা খাবে কী আর শিল্পবিপ্লবের রসদ আসবে
কোথা থেকে।
খাজনা আদায়ে প্রয়োজন হল আরও বেশি অত্যাচারের পদ্ধতি বের
করা। প্রয়োগে কোটি হিদেনদের প্রাণ যায় যাক,
ইংলন্ডের শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রার্থিত সম্পদ যেন ঠিকঠাক লন্ডনে পৌঁছয়। ইংরেজদের প্রথম উদ্যম ছিল, সেনাবাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী যাতে বেশি না
ছড়ায় তার ব্যবস্থা করা। তত্কালীন ব্রিটিশ উপনিবেশের দ্বিতীয়
গুরুত্বপূর্ণ শহর কলকাতায়, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা শহুরে মানুষেরা সেই অত্যাচার আর
সমাজ ভাঙার বিরুদ্ধে গ্রামীণদের প্রার্থিত প্রতিক্রিয়ায় গ্রামীণদের সঙ্গে ইংরেজদের
উথালপাথাল লড়াইক্ষেত্রটি নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা না ঘামায়। তাঁরা শহুরে বাঙালিদের জন্য নানান রকম ছাড়দিতে রাজি হয়ে যায়। তারা জানত কার দৌড় কতদূর।
ইংরেজি পদ্ধতিতে পড়াশেনার দাবি থেকে সমাজ আর ধর্ম
সংস্কার, বাঙলার আলালদের সংস্কারের দাবি আদতে পরেক্ষে, কলকাতার রিফর্মিস্টদের
মাথায় ঢুকিয়েছে ইংরেজ প্রশাসন আর বুদ্ধিজীবিরা। কলকাতার উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষগুলোর রাষ্ট্রের প্রযোজনায় হঠাতই সম্পদশালী
হওয়া আর সামাজিক উচ্চাশাকে সুযোগ্যভাবে ব্যবহার করে ইংরেজরা বিশ্ব ইতিহাসের চাকা
ঘোরাবার ব্যবস্থা শেষ করে এনেছে প্রায়। ম্যাঞ্চেস্টারে
তখন স্পিনিং জেনি প্রবল বেগে ছুটছে। ভারত(বলা ভাল
বাঙলা) থেকে সম্পদ আর জ্ঞাণের ভর্তুকি না এলে সে দৌড় হঠাতই বন্ধ হয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা প্রবল। এমতাবস্থায় শহুরে উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষগুলোয়
যদি বিবেক জেগে ওঠে, তাহলেই বিশ্ব ইতিহাস পাল্টাবার পাঁচঅঙ্কের নাটক, অবধারিতভাবেই
দ্বিতীয় অংকেই প্রায়পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
প্রশাসনে স্বাধীণতা সংগ্রাম দমনে বিশেষজ্ঞ, ক্লাইভ
হেস্টিংসের আর কর্নওয়ালিসের উত্তরাধিকার বহন করে চলা, কোম্পানির ক্রাইসিস
ম্যানেজারেরা ঝাঁপিয়ে পড়ল কলকাতার ধর্ম-সমাজ-সমাজবিদ্রোহীদের মানসিক অবস্থা
নিয়ন্ত্রণে। প্রশাসনের অভিজ্ঞতায়, বিশেষ করে
আমেরিকার স্বাধীণতা সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় তাদের জানতে বাকি ছিলনা মানুষের বিবেক
বড্ড ছোঁয়াচে বস্তু। কোম্পানির প্রশাসকদের উদ্দেশ্য হল,
কলকাতার শহুরে ভাগ্যবানদের নানান বিদ্রোহের বাহানায় গ্রামীণ স্বাধীণতা সংগ্রামের
ছোঁয়াচের বাইরে রাখা। সাম্রাজ্যের ভাবনাটিকে উচ্চমধ্যবিত্ত বাঙালিরা
যেদিন নিজেদের ভাবনা বলে দাবি করবেন, সেদিন থেকেই উপনিবেশ নিরাপদ। ইংরেজ বুঝল এই উদ্দেশ্যে আলালদের জন্য সরকারি চাকরির বন্দোবস্ত বড় হাতিয়ার
হয়ে উঠতে পারে। ইংরেজি বিদ্যালয়ও গড়ে উঠছে। ১৮৩৫এর আগে সরকার এই বিদ্যালয়গুলো মদত দিতে এগিয়ে আসেনি। তবুও কলকাতার ইংরেজি শিক্ষিতরাই সাম্রাজ্য রক্ষার প্রধাণ বাজী। সেই অংকে রায়ান আর বার্ডএর কলকাতা-বিপ্লব রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ।
১৮৩২এর আগস্টেই হিন্দু কালেজের ছাত্র মহেশ ঘোষের খ্রিস্ট
ধর্মে দীক্ষায় কৃষ্ণমোহন দ্য এনকয়ারাএ
লিখলেন, The education of the college made him abjure Hinduism
as a means of superstition; and the weekly lectures of Mr. D. excited in him a desire
to enquire into the claims of Chirstianity…
We hope ere long to be able to witnwss more nd more such happy reasults
in this country। এই Mr. D. পাদ্রি ডাফমশাই। যার একটি বক্তৃতায় আলালেরা স্বধর্ম ত্যাগ করতে এক পায়ে খাড়া। কয়েক মাস পর, নভেম্বরেই কৃষ্ণমোহন নিজেই দীক্ষা নিলেন। ডিসেম্বরেই আরএক কালেজি গোপীনাথ নন্দীও মায়ের চোখেরজল পায়ে মাড়িয়ে
ধর্মান্তরিত হলেন।
ডিরোজিওপন্থীদের মধ্যে ব্রাহ্মণ কৃষ্ণমোহন নেতৃস্থানীয়। সেসময়ের কলকাতায় কৃষ্ণমোহনের নাম ইংরেজপন্থীদেরই মুখে মুখে। পাতি ফিরিঙ্গি কেষ্ট বন্দ্যো ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে কলকাতার আলালিয়
রিফর্ম আন্দোলনকে একটি ইওরোপিয় চামড়া পরিয়ে নতুন এক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেষ্ট বন্দ্যো নিজে, কৃষ্ণমোহন, দক্ষিণারঞ্জন এমনকী রসিককৃষ্ণ, নিজের
পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। সমকালীন
ঐতিহাসিক তথ্য পালক পরিবার থেকে কৃষ্ণমোহনেরা বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন। এ তথ্যও পরিস্কার যে সময় তাঁরা গ্রামীণ বাঙলা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে
চেয়েছিলেন। তাঁদের তথাকথিত রিফর্মের বিপ্লব
আবদ্ধ ছিল কলকাতা তথা বাঙলার একটু নামি শহরগুলোর নিরাপদ বেড়ার মধ্যে। এই চাওয়া উদ্দেশ্যপূর্ণ কীনা তা বলা আজ সম্ভবনয়। কিন্তু আলালেরা সাম্রাজ্যের
সমস্ত শর্ত পূরণ করছিলেন।
মেকলের মিনিট আর নির্বিকার মধ্যবিত্ত
১৮৩৫এর বেন্টিঙ্ক-মেকলে-রামমোহন-দ্বারকানাথ-বিদ্যাসাগরের মিলিজুলি নীতিতে, শহরে
মধ্যবিত্তদের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা প্রচলনের সরকারি ছাপ্পা পড়ল। চার্লস ব্যাবিংটন মেকলে মিনিটে অশ্লীলতম ভাষায় বললেন, Nor
is this all. In India , English is the language
spoken by ruling class. It is spoken by the
higher class of natives at the seates of Government.
It is likely to become language of commerce throughout the states of the East…
Whether we look at the intrinsic value of our literature, or at the particular
situation of this c ountry, we shall see the stongest reason to think that, of
all foreign tongues, the English tongue is that which would be the most useful
to our native subjects. বেন্টিঙ্ক মন্তব্য করলেন, I give my entire
concurrence to the sentiments expressed in this Minutes। পরবর্তী ৭ মার্চ ১৮৩৫এর প্রস্তাবে
বেন্টিঙ্ক আবারও বললেন His lordship in Council is of openion that the
object of the british Government ought to be the promotion of European
literature and science among the natives
of India, and that all the funds appropriated for the purpose of
education would be best employed on English education alone। মেকলে যে ইংরেজি
শিক্ষিত higher class of natives at the seates of Government সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন তাঁরা হলেন রায়ান আর বার্ডেরমত উচ্চপদস্থ
সিভিলিয়ানদের নিরাপদ আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা কলকাতার হিন্দু কালেজের ছাত্ররা। তিনি শিক্ষানীতিতে বললেন, We must at present do our best
to form a class who may be interpreters between us and the millions whom we
govern – a class of persons Indian in blood and colour, but English in tastes,
in opinions, in morals and in intellect।
এর আগেও বাঙলায় ইংরেজি প্রথায় পাঠগ্রহণ করেছে উত্সাহী
মধ্যবিত্ত। বিনয় ঘোষের হিসেব, ১৮৩৫ পর্যন্ত গড়ে
বছরে ২৫০ করে পড়ুয়া ধরলেও হিন্দু কালেজের ভিত্তি থেকে শুরু করে ড্রামন্ড, ডাফ আর
অন্যান্য ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয়ের তৈরি হওয়ার আঠার বছর সময় ধরলে ৪০০০ থেকে ৫০০০
ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি সাম্রাজ্যকে সেবা করার জন্য তৈরি হয়ে উঠছিল। ১৮৩৫এর ২ ফেব্রুয়ারির মিনিটে মেকলে ওরিয়েন্টালিস্টদের যুক্তি খন্ডন করে
উত্তর দিয়েছেন – the whole question seems
to me to be – which language is the best worth knowing? উত্তরে
প্রাতীচ্যবাদীদের (এবং পরের দিকে ইংরেজিবাদী বামপন্থীদের) যারপরনাইখুশিকরে তিনিই উত্তর
দিয়েছেন- সেটি অবশ্যই ইংরেজি ভাষা। তাঁর ধারণা
ইংরেজি ভাষায় যে জ্ঞাণ সম্পদ আছে, পৃথিবার অন্য কোনও ভাষার সম্পদের থেকে অনেক বেশি। ইংরেজি, রাজার ভাষা, রোজগারের ভাষা। মেকলের রাষ্ট্রিয়
উদ্যমের তিন দশক আগেই বাঙালি মধ্যবিত্ত সে তত্ব কী করে যেন বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছে
ইংরেজি শিখতে।
বাঙালি গ্রামীণ একলক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো
ধংস করে কী ধরণের শিক্ষা অর্জন করছে! সংবাদ প্রভাকর (৭ ভাদ্র, ১২৫৭) বলছে, এতদ্দেশস্থ মনুষ্যগণের স্বদেশীয় বিদ্যানুশীলনে
অনাদর, অমনোযোগ, অনুরাগ ও অশ্রদ্ধা সম্পূর্ণরূপে জন্মিয়াছে, যেহেতু বঙ্গভাষাতে
প্রচুর অর্থোপার্জ্জন হয় না কিন্তু ইংলন্ডীয় ভাযাতে সুশিক্ষিত হইলেই ইনায়াসে
ধণার্জ্জন করিবার ক্ষমতা হইতে পারে, তজ্জন্য এতদ্দেশীয় মনুষ্যেরা স্ব স্ব
তনয়বৃন্দকে শৈশবকালাধি অর্থলোভে লুব্ধ হইয়া অত্যান্তিক যত্নপূর্বক ইংরাজী
পাঠশালাতে বিদ্যাভাষার্থে প্রেরণ করেন, ইংলন্ডীয় বিদ্যাতে সুপন্ডিত হইলে এইক্ষণে
যাবতীয় রাজকীয় কর্ম্ম করিতে ক্ষমতাপন্ন হওয়া যায়, ও উচ্চপদ প্রাপ্তদ্বারা
সর্ব্বসাধারণের সমীপে অত্যন্ত মর্য্যাদা এ সম্মান এ প্রশংসালাভ করা যায়...
ঐতিহাসিক টমাস এরিক স্টোকসএ এই
শিক্ষানীতিকে উদারপন্থী বলছেন Substantially it represents the liberal attitude to India
which survived intact to the end of Britihs Rule। ঐতিহাসিকেরা যাকে লিবারেল
এটিচিউড
বলছেন, সেই এটিচিউডে স্বাধীণতার পরও মেকলের এই নীতি আরও জেরদারভাবে এগিয়ে নিয়ে
যাবেন স্বাধীণ ভারতের নেতৃত্ব।
স্টোকসএর এই সমবেদনা ভারতের বামপন্থীদেরও প্রভাবিত করেছে। বিনয় ঘোষ বলছেন, ...মেকলে ছিলেন উদারপন্থীদের
সুযোগ্য প্রতিনিধি, বেন্থাম-মিলের প্রকৃত শিষ্য, the most eloquent expression of this English
liberalism is to be found in Macaulay। কেমন
তিনি উদারপন্থী তা একটু দেখে নেওয়া যাক To that class we may leave it to refine the vernacular
dialects of the country, to enrich those dialects with terms of science
borrowed from western nomenclature, and to render them by degrees fit vehicles
for conveying knowledge to the great mass of the population। অন্যান্য ইওরোপিয় ভাই বেরাদারদেরমতই বিন্দুমাত্র সংস্কৃত অথবা
কোনও ভারতীয় ভাষা না জেনে মিনিটের দশম স্তবকেই তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিকে দেগে দেবেন
অন্তঃসারশূণ্যতার অভিযোগে, ... I have no knowledge of either Sanscrit or Arabic. But I have done what I could to form a correct estimate of their value. I have read translations of the most celebrated Arabic and Sanscrit
works. I have conversed, both here and at home, with men
distinguished by their proficiency in the Eastern tongues. I am quite ready to take the oriental learning at the valuation of the
orientalists themselves. I have never found one
among them who could deny that a single shelf of a good European library was
worth the whole native literature of
No comments:
Post a Comment