চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশজুড়ে নেমে আসে হঠাত গজিয়ে ওঠা জমিদার আর
নানান মধ্যসত্বভোগীর সংখ্যা।
১)জমিদার - জমিদার শ্রেণী মধ্যসত্বভোগীদের ত্রিভূজের
চূড়ায়। এদের সঙ্গেই কেম্পানি সরকার রাজস্ব
গ্রহন করে। এরা সবথেকে প্রতাপশালী মধ্যসত্বভোগী। অথচ জমির এপর সার্বভৌম অধিকার ছিল কিন্ত সরকারের। ইরেজ শাসকই জমিদারদের নির্দিষ্ট রাজস্ব ঠিক করেদিত, নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব
দিতে না পারলে জমিদারি নিলাম করে দেওয়া হত। সর্বোচ্চ দরে
যে কোনও কেউ কিনে নিতে পারতেন। এই দালালির কাজ করেই বহু মানুষ ধনী হয়েছেন।
২)তালুকদার – জমিদারের নিচে
তালুকদারেরা। এরা চার প্রকার – ক) খারিজা, খ) বাজেয়াপ্তি – এরা নিজের
নামে আলাদা আলাদা কালেক্টরিতে খাজনা দিতে পারতেন, গ)সামিলাত ঘ) পত্তনি বা পাট্টাই-
জমিদার নিজের নিজের এলাকাকে ভাগ করে ছোটছোট এলাকায় বেঁটে পাট্টার সাহায্যে বিলি
করত তার নাম পত্তনি। জমিদার উট্ঠেদ হলে পত্তনিদারও উচ্ছেদ
হতেন। সামিলাতে কিন্তু তা হত না।
৩) জোদ্দার, গাঁতিদার, হাওলাদার প্রভৃতি তালুকদারের পরে
অবস্থান। জোতদারের অধীনে যারা জমা নিত তাদের
বলাহত কারফা বা কোলজানা প্রজা। যারা জোতদার
গাঁতিদার খামার জমি চাষ করে মোট মজুরি বাবদ সাদারণতঃ মোট উতপন্নের অর্ধেক পেত
তাদের বর্গ-জোতদার বা আধিয়ার বলত।
৪) এবার মৌরসী মোকরররী – মৌরসী অর্থ পুরুষানুক্রমিক আর মোকরররীর অর্থ খাজনার এক প্রকার হার। সুতরাং তালুকদারিরমত এটিও বংশ পরম্পরায় ভোগদখল। এরা পত্তনিদারেরমত মেয়াদি বা হস্তান্তরে অযোগ্য শর্তে জমি বিলি করতে পারত।
৫) ইজারাদারেরা তালপকদার বা জমিদারদের কাছ থেকে বড় এক
এলাকা নির্দষ্চ কালের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে পূর্ববর্তী মালিকদের স্বত্ব-সামিত্ব বা
ভোগদখল বা হস্তান্তর করতে পারত। দায়সূদী বা
পাচানী ইজারাদার মালিকদের কিছু টাকা অগ্রিম বা ঋণ দিয়ে যে সুদে ঐ টাকা সুদে আসলে
শোধ নাহত, সে পর্যন্ত ইজারার উপস্বত্ব ভোগ করত।
৬) লাখেরাজ – নিষ্কর
সম্পত্তির মালিক। এছাড়াও ছিল দেবোত্তর, ব্রহ্মোত্তর,
ভোগোত্তর, মহাত্রাণ, চেরাগী, পীরোত্তর নানান ধর্মী। কাজে এ ধরণের সম্পত্তি দেওয়া হত।
৭) ওয়াকফ বা ট্রাস্টএর হাতে জনহিতর কাজ করার জন্য
৮) চাকরান বা পাইকান
১৭৯৮-৯৯সালে
বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জুড়ে এক বিরাট অঞ্চলে ব্যাপক স্বাধীণতা সংগ্রাম দেখা দেয়,
ইতিহাসে যেটি চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রাম নামে মুখ ঢেকে বসে আছে। অন্যান্য স্বাধীণতা সংগ্রামেরমত এটির প্রচার কম, কেননা চোয়াড় শব্দটি
মধ্যবিত্ত বাঙালির জগতে গালিরূপেই ব্যবহার হয়ে এসেছে। সেই অবহেলিত, অভিধানে বর্ণিত দুর্বৃত্ত,
অসভ্য, নীচ জাতি, অবজ্ঞাত মানুষগুলি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙলার সাধারণ
মানুষের স্বাধীণতা সংগ্রামের আকাঙ্খার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বিপ্লবের
বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম। এই স্বাধীণতা
সংগ্রামকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পথানুগামী ঐতিহাসিকেরা তাঁদের লেখা ইতিহাসে স্থান
দেননি। বাঙালি মধ্যবিত্তের শহুরে ঔপনিবেশিক
ভাষার মারপ্যাঁচের খামখেয়ালিপনায়, অসভ্যতার দাগে দাগি এই সনাতন জনসমাজ, লুঠেরা
বণিক-শাসকদের বিরুদ্ধে যে পরাক্রামে লড়াই করেছিল, সেই প্রচেষ্টা সমকালীন ইতিহাসে
স্থান না হলেও স্থানীয় লব্জে আর কিছু সমকালীন নথিপত্রে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এই স্বাধীণতা সংগ্রামের অমর কাহিনী আজও নানান ঐতিহাসিক লড়াইএর
আত্মনিবেদনে নিবেদিত মানুষের প্রেরণা।
মধ্যবিত্ত
বাঙালির সাধের ও প্রাণের চলন্তিকা অভিধানে চোয়াড় শব্দটির অর্থটি পাই- বাঙলা ভাষায় চোয়াড় শব্দটি হইল নীচ দুর্বৃত্ত
মানুষ এবং এই শব্দটি দ্বারা বাঁকুড়া ও মানভূমের ভূমিজ আদিম অধিবাসীদিগকেই বুঝায়। কিন্তু প্যান্ট শার্ট পরিহিত, শহুরে বাঙালি মধ্যবিত্তের
ব্রিটিশ লাঞ্ছিত এনলাইটমেন্টের উত্তরাধিকার বহন করে চলা পরমজ্ঞাণী অভিধান লেখক মশাই,
যাঁদের অসভ্য, নীচ অথবা দুর্বৃত্ত লব্জে চিহ্নিত করছেন, তিনি যে চোয়াড়দের
স্বাধীণতা সংগ্রামের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে অভিহিত নন এমন ভাবাই মুর্খতা আশা করা
যায়না, যখন নানান সহজলভ্য ব্রিটিশ নথিতে তাঁদের বীরত্বের কাহিনী সহজেই মেলে। তাহলে আদত পরিকল্পনা কী! বলাভাল মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের প্রবাদপ্রতীম
অভিধানকার যাঁদের ভাবনার পথ ধরে এই জনগোষ্ঠীদের তিনটি বাছা বাছা বিশেষণে দেগে
দিচ্ছেন, তাঁরা এই আদতে এই অঞ্চলের আদিবাসিন্দা এবং তাঁদের অবিস্মরণীয় এবং
পরাক্রান্ত অনমনীয় স্বাধীণতা সংগ্রামী প্রতিমায় ক্ষুব্ধ, ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ-নব্যজমিদারদের
মদতপুষ্ট ইতেহাসকারাই এদের গালি দিয়েছেন চোয়াড় নামে। বাঙালির জীবনের রাসায়নিকমশাই কিন্তু অনুসরণ করেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের
অভিধাকে।
বর্তমান
ইতিহাসকারেরা বলেন চোয়াড় নির্দিষ্ট কোনও
আদিবাসী সমাজ নয়, আদতে জঙ্গলমহলের এক ঝাঁক আদিবাসী সমাজকে মধ্যবিত্ত শাসক
ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ ঘৃণাভারে চোয়াড় নামে সম্বোধন করত। জঙ্গলমহলের স্বাধীনতাপ্রিয় সাঁওতাল, ভূমিজ, কুর্মি প্রভতি জাতির মানুষেরা ঔপনিবেশিক
আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীণতা সংগ্রাম করেছিল। তাই তাদের ‘চোয়াড়’ অর্থাৎ
অর্ধসভ্য, গোঁয়ার আখ্যা দিয়েছিল বিদেশি শাসকরা। হাজার হাজার বছর ধরে এই স্বাধীণ
সম্প্রদায়ের অর্জিত অধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে মোগল সাম্রাজ্যও এদের ওপর নির্যাতনের
খাঁড়া নামিয়ে আনেনি।
এই অঞ্চলের
নানান আদিবাসী অরণ্যাচারী সমাজ অরণ্যসম্পদের ওপর নির্ভর করে তাদের নিজস্ব
জীবনজীবিকা নির্বাহ করত। কয়ের হাজার বছর ধরে নিজেদের সমাজে
ভারতের সনাতন সমাজের গণতন্ত্রের নানান অধিকার সুক্ষিত করতে তাঁরা নিরন্তর সচেষ্ট
ছিলেন। ততকালীন শহুরে মানুষেরা তাদের অসভ্য,
নীচ ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করলেও বা পরের দিকের অনেক সহানুভূতিশীল ইতিবাসকারেরাও
এদের আদিম বলে অভিহিত করলেও আদতে আজকে প্রমাণিত এই সমাজগুলির জীবনযাত্রা কোনো
অর্থেই আদিম সরল নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকার আন্তরির সদিচ্ছা নিয়ে বহু
দিনের পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে গণতন্ত্রক মাণ্যকরার, সামাজিক সাম্যের কাছাকাছি
যাওয়ার প্রবণতা ফুটে উঠেছে।
লুঠেরা ইংরেজ
বণিকদের, এবং তাদের সাম্রাজ্যের সহচর বন্ধু, অত্যাচারের সরাসরি সঙ্গী লুঠেরা
মধ্যবিত্ত বাঙালির যখন থেকেই জঙ্গলমহলে সম্পদের ওপর বিষ নজর পড়েছে, তখন থেকেই
নরমে গরমে গণতন্ত্রপ্রিয়, চরম আত্মসম্মানবোধের অধিকারী আদিবাসীদের সঙ্গে ছোটখাট
গন্ডগোল চলছিল। এই অঞ্চলের অদিবাসীরা নিজেদেরমত করে
বিনাখাজনায় স্বাধীণভাবে চাষবাস করে পূজ্য প্রণম্য প্রকৃতির ক্ষতি না করে নিজেদের
সমাজের বিকাশে নীরবে কাজ করে চলেছিলেন। ইংরেজ আমলেক
আগে কী কেন্দ্রিয় শাসক কী স্থানীয় শাসক কেউ তাঁদের এই প্রবণতায় হস্তক্ষেপ করতে চায়
নি। কিন্তু ইংরেজ শাসক আর তাদের নব্য লুঠেরা বন্ধুরা, যারা
এতদিন সনাতন সমাজের কঠোর নজরদারিরমধ্যে বসবাস করতে বাধ্য থাকত, ইংরেজ শাসকদের
পদপ্রান্তে আনত তারাই সনাতন সমাজে নামিয়ে আনল অত্যাচারের ঘুর্ণাবাত। চিরাচরিত রাজস্ববিহীন এই জমিগুলি ইংরেজরা বলপূর্বক কেড়ে নিয়ে উচ্চ খাজনায়
নব্যজমিদারদের অধিকারে দিয়ে দিতে থাকে। এই সমাজগুলির
প্রতিবাদ ক্রমশঃ ধ্বনিত হতে থাকে।
আত্মসম্মানবোধে ভারপুর এই সমাজগুলির প্রতিবাদ অত্যাচারের নিচে দাবিয়ে দিতে দিতে এই
সব জমিতে প্রজা পত্তন ঘটতে থাকে। আর হাজার
হাজার বছরের দখলি জমি চোখের সামনে বেহাত হয়ে যাওয়ায় ধংসের মুখে পড়ে সমগ্র সমাজ আর
এতদিনের বিকশিত সংস্কৃতি। যার অনিবার্য পরিণতি বাঁকুড়া
মেদিনীপুর জেলার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল স্বাধীণতা সংগ্রামের ছাইচাপা আগুণ জ্বলতে থাকে
ধিকি ধিকি।
মেদিনীপুরেরে
সেটলমেন্ট অফিসার, জে সি প্রাইস, তার নোটস
অন দ্য হিস্টোরি আব মেদিনীপুরএ বলছেন পাইক স্বাধীণতা সংগ্রাম নিয়েও আলোচনা
করছেন। চোয়াড় সমাজগুলোর পাশাপাশি আর এক
সমাজও এই বিদ্রোহে নিজেদের অত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত হয়, সেই সমাজটির নাম পাইক সমাজ। মোগল আমলে পাইকদের কাজ ছিল সমাজে আরক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করা। এই কাজে তারা মোগলদের কাছ থেকে বিনা খাজনার জমি চাষের জন্য পেতেন। সেই জমিও ইংরেজ গায়ের জোরে দখল নিতে শুরু করে। মোগল সাম্রাজ্যের অবসানে এ ধরণের নানান প্রফেসনলসদে জীবনে অস্থিরতা নেমে
আসে। এদের জীবিকার নিশ্চয়তা না দিয়েই ইংরেজরা এসব
গোষ্ঠীগুলিকে বাড়ন্ত ঘোষণা করেদিল। এদের বহু
বছরের কর্মের অপর আঘাত শুধুই এল না, এদের বদনে একশ্রেণীর আরক্ষাবাহিনীকে এদের কাজ
করতে দিয়ে তাদের ব্যয় তোলার অজুহাতে এদের বংশপরম্পরায় অধিকৃত নানান সুযোগ সুবিধে
কেড়ে নিতে শুরু করে। পশুশক্তির সাহায্যে পাইকদের জমি থেকে
উচ্ছেদ করে সেই জমি কয়েকজন বশংবদ জমিদারদের অধীনে রাজস্বের জন্য দিয়ে দেয়। প্রাইস বলছেন এধরণের পঁচিশ হাজার পাইক পিতৃপুরুষের জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে
জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। জমিহারা
বাস্তু হারা পঁচিশ হাজার পাইক, অসন্তোষের আগুনে ঝিকি ঝিকি জ্বলা চোয়াড়দের সঙ্গে
যোগদিয়ে চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামের পরিবেশে ধোঁয়া দিয়ে একত্রে বিদ্রেহের অবস্থা
ঘনিয়ে তুলল।
এ সময় ইংরেজদের
দাবিমত বিপুল পরিমান করের বোঝা বহু সনাতন জমিদার পরিবার মেনে নিতে পারে নি। চিরাচরিতভাবে নবাবদের সঙ্গে যে ধরণের রাজস্ব প্রদানের শর্ত পূরণ করে
এসেছেন এ ধরণের জমিদারেরা, সেই ধরণের শর্তের বাইরে না যেতে চাইলে কর্নওয়ালিশের
নতুন ভূমিসত্ব আইন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুযায়ী এদের জমিদারি উচ্চমূল্যে নিলামে
ওঠে এবং রাতারাতি এগুলি দখল হয়ে যেতে থাকে। এই অঞ্চলের
জমিদারেরা পাইক-চোয়াড়দের অসন্তোষের পারদ অরও বাড়িয়ে দিয়ে তাদের বিদ্রোহে যোগ
দেয়। এই জমিদারদের মধ্যে দুর্জন সিংহ অন্যতম, যিনি তার
কাজকর্মে স্বাধীণতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা অর্জন করে ওঠেন।
সেসময়
মেদিনীপুরের কালেক্টরও মিনহফ মন্তব্য করেন যে, ইংরেজ শাসনের অপরিমিত সম্পদ-লুন্ঠন
ক্ষুধা এই স্বাধীণতা সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গকে দাবানলে রূপান্তরিত করে দিত পেরেছিল। তিনি সরাসরি বিচারক-ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট গ্রেগরিকে অভিশুক্ত করেন। সে সময় লুঠেরা শাসকদের ঔদ্ধত্য দেখে বিতশ্রদ্ধ তিনি রেভিনিউ বোর্ডকে একটি
চিঠি পাঠান। এই চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন
কেন এ অঞ্চলে পাইক চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রাম আজ প্রকাশ্যে এসে পড়ার যোগাড় হয়েছে। অন্যদিকে প্রাইস বলছেন রাণী শিরোমণীর বিশাল রাজত্বে ব্যাপক হারে পাইকদের
জায়গির জমি দখলের ফলে পাইকদের মনে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে বিক্ষুব্ধ পাইকেদের এক অংশ সরকারের ওপর আনুগত্য হারিয়ে ফেলে চোয়াড়দের
সঙ্গে সরাসরি হাত মেলায়। এরা যখন দেখল ভ্রাতৃপ্রতীম চোয়াড়দের
জীবনে ইংরেজদের দখলদারি নেমে এসেছে, তখন এদের বুঝতে দেরি হয় নি যে আগামীদিন এদের
জীবনে দুর্বিসহ হয়ে উঠতে চলেছে।
প্রাইস তার চোয়াড় রেবেলিয়নএ লিখছেন, ১৭৯৮-১৭৯৯, মেদিনীপুরের ইতিহাসকে ভয়ঙ্কর
চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। কত রোমহর্ষক ঘটনা, চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামকে বিভত্স করে তুলেছিল। সরকার তাদের দীর্ঘকালের ভোগদখল করা জমি কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে চোয়াড়
সর্দারেরা আর পাইকেরা ভয়ানক মূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছিল। জঙ্গলমহলের প্রত্যকটি আদিবাসী এই অত্যাচারকে নিজেদের বিরুদ্ধে অত্যাচার
হিসেবে ধরে নিয়িছেল। ম্যাজিস্ট্রেটের দরজা পর্যন্ত তারা
হত্যা আর ধংসের আঘাত হেনেছে। মেদিনীপুরের সাধারণ পুলিশ আর সৈন্যদল
এই স্বাধীণতা সংগ্রাম দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় জেলায় সেনাবাহিনী পাঠানো হয়। শাসককুলের দীর্ঘসময়ের অস্থিরতা, নানান পাশবিক হত্যাকান্ডের পর পরের বছর
জেলায় আংশিক শান্তি ফিরে আসে। এঅ স্বাধীণতা সংগ্রাম ১৭৯৮তে হঠাতই
শুরু হয় নি। বহু আগে থেকেই এর লক্ষ্মণ দেখা
যাচ্ছিল। প্রশাসনের বোঝা উচিত ছিল।
মেদিনীপুরের
গেজেটের লেখক ওম্যালিও একই সুরে চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামের বর্ণনা করেছেন। ওম্যালিসহ অনেকেরই অভিযোগ, স্বাধীণতা সংগ্রামীরা নিরীহ প্রজাদের ওপরেও
অত্যাচার করেছে। এর একটা বাস্তব কারণ রয়েছে। ইংরেজরা চোয়াড় আর পাইকদের জমি দখল করে প্রজা পত্তন করেছিন এ কথা আগেই বলা
গিয়েছে। সেই পত্তনি প্রজাদের ওপরেও যে
স্বাধীণতা সংগ্রামীরা প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করবে একথা বুঝতে খুব বড় বিশেষজ্ঞ
হওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে সে সময়কার শাসকেরা স্বীকীর করেছেন
স্বাধীণতা সংগ্রামীরা প্রথমে প্রজাদের ওপরে আক্রমণ করে নি। বিদ্রেহীরা তাদের প্রথমে তাদের শুধু চাষ করতে দেয় নি। তাদের রণনীতি ছিল, কেড়ে নেওয়া জমি থেকে যেন শাসকেরা এক টাকাও রোজগার করতে
না পারে। যারা স্বাধীণতা সংগ্রামীদের সঙ্গ
দেয়নি স্বাধীণতা সংগ্রামীরা সেই প্রজাদের ইংরেজদের সহযোগী হিসেবে দেখেছিলমাত্র।
ধিকিধিকি
জ্বলতে থাকা স্বাধীণতা সংগ্রাম ক্রমশঃ জ্বলতে শুরু করে মেদিনীপুরের রায়পুর পরগণা
অঞ্চল থেকে। পরগণার জমিদার দুর্জন সিংহ ইংরেজদের
দাবিমত রাজস্ব দিতে অপারগ হওয়ায় জমিদার দুর্জনের জমিদারি কেড়ে নিয়ে অন্য একজন
ক্রেতার কাছে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রয় করে দেয়। দুর্জন প্রতিশেধের জন্য চোয়াড়-পাইকদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। চোয়াড় পাইকরা রায়পুরে প্রবেশ করে নতুন জমিদারকে তাড়িয়ে জমিদারি দখল করে। তহশিলদারকে খাদ্যদ্রব্য দাবি করলে তহশিলদার পালিয়ে যায়। ১৭৯৯এর মার্চের শীতে রায়পুরের বেশকিছু গ্রাম দখল করে। নতুন প্রজাদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়, অনেকে আহত হয়, প্রজারা পালিয়ে যেতে
থাকায় তাদের ছেড়ে যাওয়া জমি দখল করে স্বাধীণতা সংগ্রামীরা। আমলা-কর্মচারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে এসে মেদিনীপুরে আশ্রয় নেয়। রায়পুরে সৈন্য উপস্থিত হলে যুদ্ধশুরু হয় এবং স্বাধীণতা সংগ্রামীরা রায়পুর
ছেড়ে পালায়।
মে মাসে
রায়পুরের নায়েবের কাছারি লুঠ করে জ্বালিয়ে দেয়। গুনারি থাকার কাছারিতে সৈন্য দলের ছাউনি আক্রমণ করলে সারারাত যুদ্ধ হয়। স্বাধীণতা সংগ্রামীরা পালিয়ে যায়। আবার দেড়মাস
পর আবার স্বাধীণতা সংগ্রামীরা পরগণায় সৈন্যদলকে তাড়িয়ে পরগণা দখল করে। প্রধান বাজার কাছারি দখল করে পুড়িয়ে দেয়, স্বাধীণতা সংগ্রামীরা মাটির
দুর্গ তৈরি করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। এবার রামগড়
পরগণা দখল হয় জুনে। পরগণার এক বড় অংশ জনশূণ্য হয়ে পড়ে। চন্দ্রকোণা আক্রমণ করেন গোবর্ধন দিকপতির নেতৃত্বে চোয়াড় পাইকরা। কলকাতা থেকে আসা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে হেরে স্বাধীণতা সংগ্রামীরা
পালায়। নয়াবসান আর বড়জিতে আক্রমণ করে
ধনীদের বাড়ি থেকে সম্পদ আর খাদ্য লুঠ করে। এরপর
কাশীজেড়া, বাসুদেবপুর, তুর্কাচর, জনেশ্বর, বলরামপুর, জুবাজল, রামগড়, শালবনী প্রভৃতি
পরগণার ওপর আক্রমণ আর লুঠ চালাতে থাকে স্বাধীণতা সংগ্রামীরা। নিরাপত্তার অভাবে, রাতে মেদিনীপুর শহর পাহারাদেওয়ার জন্য একটি বাহিনী
সবসময়ে জন্য রাখা হতে থাকে। চ্যাপা
বাহাদুপুরেরে অত্যাচারী ইজারাদার কৃষ্ণ ভুঁইয়া চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামীদের হাতে
প্রাণ হারান। গ্রামের পর গ্রামের মানুষ পরগণা
ছেড়া পালাতে থাকে, ইংরেজরা সেনা মোতায়েনের অভয় দিয়েও তাদের পলায়ন রোখা যায় নি।
১৭৯৯ বছরের
শুরুতে প্রাইস বলছেন, মেদিনীপুর পরগণাটি
জনমানবহীন হয়ে পড়ে। একদিকে নারা,ণগড়, অন্যদিকে
মেদিনীপুর শহরের চৌদ্দ মাইল দূরের হুদ্দাঘোষপুর থানায ভরঙ্কর তান্ডব চালায়। শালবনীর তহশিলদারের কাছারি, দপ্তর, সৈন্য ছাউনি সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। কর্মচারীদের হত্যা হচ্ছে দেখে প্রজারা পালাতে শুরু করে। কয়েকদিনের মধ্যে শালবনী শ্মশানে পরিণত হল। মেদিনীপুরের
অদূরে আনন্দপুরের থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয়। বিদ্রেহীরা
নানান কাছারির জমির নানান নথিপত্র পুড়িয়ে বহ্নুত্সব করতে থাকে।
স্বাধীণতা
সংগ্রামীদের হুমকিতে রাজস্ব আদায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ট্যাপা-বাহাদুরপুরে রাজস্ব আদায়ের কর্মচারী পাওয়া যাচ্ছিলনা। কালেক্টর লিখলেন, যদি সেনাবাহিনী পাঠানো না হয়, তাহলে পরের বছর কোনও কৃষিকাজ করা সম্ভব হবে না। মেদিনীপুর শহরের চারদিকে চোয়াড়-পাইকদের তীব্র আক্রমণ চলতেই থাকে। শহরে সেনাদল থাকায় শহরে তাদের আক্রমণ না হলেও জেলার নানান পরগণায় এই
আক্রমণ ক্রমাগত চলে। ৭ আর ৯ মার্চ রেভিনিউ বোর্ডকে
চিঠিলিখে কালেক্টর জানান সকলেই মেদিনীপু
শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে, মফঃস্বলের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গুজব ছড়াতে শুরু করে চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামীরা ১৯ মার্চ মেদিনীপুর শহর
আক্রমণ করে শহর পুড়িয়ে দেবে। শহরের আশ্রয়
নেওয়া বাসিন্দারা আতঙ্কি দিশাহারা হয়ে পড়ে। মেদিনীপুরের
সেনা প্রধানের কাছে কালেক্টর একটি চিঠি পাঠান, আমি জেলার অবস্থা বর্ণনা করার ভাযা খুঁজে পাচ্ছিনা। শোচনীয় অবস্থা মেদিনীপুর পরগণার। স্বাধীণতা
সংগ্রামীরা অবাধে লুঠ করছে। আমার পক্ষে দেখা সম্ভব হচ্ছেনা। ১৪মার্ট রাতে দুটি গ্রাম লুঠ হয়েছে। ১৫মার্ট
শিরোমণি নামে বড় গ্রামও লুঠ হয়। দুই গ্রামেই প্রচুর শষ্য ছিল, তাতে
যে আগুণ লাগিয়ে দেয় সেই আগুন পরেরদিন পর্যন্ত জ্বলছিল। প্রচুর সরকারি দলিল নষ্ট হয়েছে। শতপতি অঞ্চল
পুণর্দখল সম্ভব হয়নি। এই অঞ্চলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাহাদুরপুর পরগণা এখনও জনশূন্য। কেউই সেখানে
যেতে সাহস পাচ্ছনা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও একই অবস্থা
বিরাজ করছে। সমগ্র মেদিনীপুর পরগণার বাইরের
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সয়ে শয়ে মানুষ শহরে আসছেন আশ্রয় নিতে
আর শহরের লোক শহরের হাইরে পালাচ্ছেন আতঙ্কিত হয়ে। সংবাদটি সত্য
বলে মনে হচ্ছে আর কিছুদিন পরে (মেদিনীপুর)শহর আক্রমণ করে ধংস করে ফোলবে। সমগ্র জেলায় রাজস্ব আদায় সম্পূর্ণ বন্ধ আছে, সমস্ত জেলায় আরাজক অবস্থা
চলছে, লাঙলের একটিও আঁচড় পড়ে নি। এই পরগণার ২৬টি গ্রামে বহু সরকারি
সম্পত্তি লুঠ হয়েছে। ।।। আমার সুনাম আর
মানসিক বল নষ্ট হতে বসেছে। আমার অবস্থা এতই শোচনীয় যে চোয়াড়দের
এই অসহনীয় দৌরাত্ম্য আমাকে নীরবে বসে দর্শকেরমত চুপ করে দেখতে বচ্ছে। ।।।এখন বেলা বারেটা, এখানথেকে দুই
ক্রেশদূরে একটি গ্রামে লুঠ করে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের অধিবাসীদের রক্ষার জন্য একটি সেনাদল পাঠানোর তোড় জোড় চলছে – এটাই জেলার প্রকৃত অবস্থা।
যে গ্রামটির
কথা লিখছেন কালেক্টর সেই মেদিনীপুর শহরেরে থেকেও বড় গ্রামটি গোবর্ধন দিকপতির
নেতৃত্বে দুহাজার চোয়াড় লুঠ করে পুড়িয়ে দেয়। উল্লিখিত সেনা বাধা দিতে এলে নিহত হয়। স্বাধীণতা সংগ্রাম দমন করতে না পেরে অস্থির হয়ে এই বিফলতার কারণ খুঁজতে
গিয়ে কোম্পানির কর্মচারীদের সন্দেহ জমিদার দিকে পড়ে। চোয়াড় রেবেলিয়ন বইতে প্রাইস বলছেন, স্বাধীণতা
সংগ্রামীরা জানত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত লৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে পেরে ওঠার
আশা নেই। সুতরাং তারা এমন আবস্থা তৈরি করল,
জমিদার অথবা অবস্থাপন্ন পরিবারে অথবা সরকারি কর্মচারীদের কাছথেকে সেনা বাহিনী
খাওয়ার সংগ্রহ করতে না পারে। তাহলেই খাদ্যের অভাবেই সরকরি
বাহিনীকে পালাতে হবে। ফলে তারা সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে
দেয় যাতে সেনী বাহিনীকে কেউ খাবার দিয়ে সাহায্য না করে। স্বাধীণতা সংগ্রামীরা একে রাণী শিরোমণির নির্দেশ রূপে প্রচার করে। ফলে বহু সেনা বাহিনীকে খাদ্যের অভাবে শহরে ফিরে আসতে হয়েছে।
প্রাইস
চোয়াড়দের শৃঙ্খলবোধের কথাও শ্রদ্ধায় উল্লেখ করেছেন। আনন্দপুর গ্রাম আক্রমণকালে সর্দার মোহনলালের অপরিসীম নীতিবোধ আর নিজেদের
সেনার ওপর প্রভাব দুটিরই উদাহরণ দিয়েছেন প্রাইস। এমতঅবস্থায় প্রচুর অত্যাচারিত প্রজাও এই বিদ্রেহে স্বইচ্ছায় যোগদানও করে
সে সংবাদও কালেক্টরের লেখা থেকে পাওয়া যায়। বোর্ অব
রেভিনিউকে লেখা চিঠিতে তিনি বলছেন, সমগ্র
মেদিনীপুর জেলাটি জনমানবহীন আর ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।।। সংক্ষেপে বলাযায়, জঙ্গল অঞ্চলের সব জমিদারও চোয়াড়দের সঙ্গে মিলেছে। শাসকদের
সন্দেহ হয় জমিদারদের সরাসরি সাহায্য না পেলে চোয়াড়রা এতটা প্রাবল্যে আক্রমণ করতে
পারত না। রানি শিরোমণি সেই স্বাধীণতা সংগ্রামের
গোপন পরামর্শদাত্রী ছিলেন, তারা সন্দেহবশে রানী শিরোমণিসহ অনেক জমিদারকে অন্তরীণ
করে রাখে। কিন্তু কর্ণগড় অধিকার করার সঙ্গে
সঙ্গে সব সৈন্যও দুর্গত্যাগ করে পালাতে থাকে। মেদিনীপুরে আরও সৈন্য আসতে শুরু করে, ফলে মেদিনীপুরের ওপর আক্রমণের আশংকা
অনেকটা দূর হয়। কালেক্টর কিছুটা স্বস্তি পেয়ে
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে থাকে। তার
প্রতিশ্রুতি যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের অভিযোগ বিচার করে দেখা হবে।
১৭৯৯এর জুনে
চোয়াড়-পাইকদের সঙ্গে পাশের রাজ্য মারাঠা অধিকৃত ওড়িশার পাইকরা এসে যোগ দেয়। এরপর রায়গড়, বীরভূম, শতপতি, শালবনী পরগণায় নতুন করে খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়। বিদ্রেহ দমন করা যাচ্ছেনা দেখে রেভিনিউ বোর্ড ভুল বুঝতে পেরে চোয়াড়দের
বিষয়ে জমিদারদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু আক্রমণ আর লুঠ নিরবিচ্ছন্নভাবে
চলতেই থাকে। সেপ্টোম্বরে শিরোমণি গ্রামে সরকার
পক্ষের আটজনকে খুন করে চোয়াড় স্বাধীণতা সংগ্রামীরা। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মানবাজার লুঠ হয়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বীরভূমের নানান অঞ্চলের ধনীদের বাড়ি লাল সিংএর
নেতৃত্ব লুঠ হয়। গ্রামের পর গ্রামে সরকারের
অনুপস্থিতির বহর বাড়তে থাকায় ১৮০০র জানুয়ারিতে পুরাবিত্রা আর আনন্দিনী দুটি
তালুকের চাষীরা খাজনা বন্ধকরে স্বাধীণতা সংগ্রামীদের সঙ্গে যোগ দেয়। ১৮০০র পর প্রাইসের লেখায় স্বাধীণতা সংগ্রামীদের কোনও সংবাদ পাওয়া যায় না, কিন্তু ওম্যালির রচনায়
আমরা পাচ্ছি যে এি স্বাধীণতা সংগ্রামের আগুন কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে দ্বলতে থাকে।
আশংকার ব্যাপার
হল ইংরেজদের আলোচনার প্রস্তাব। রেভিউনিউ
বোর্ডে ঠিক হয় পাইক আর চোয়াড় এবং জমিদারদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে হবে। সুপারিশ হল পাইকদের খাজনাহীন জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জঙ্গলমহলে সমস্ত শান্তিরক্ষার দায় থাকবে জমিদারদের ওপর। পাইকদের নানান সুযোগসুবিধে দিতে হবে। রাজস্ব বাকি পড়লে জঙ্গলমহলে জমিদারি নীলামে উঠবেনা। মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিলেন পাইকদের, করদারদের থানার কাজে
নিযুক্ত করা হবে। হাড়ি, বাগহি প্রভৃতি যে সব অনুন্নত
সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ আছে তাদের তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং নিজের সম্প্রদায়ের
সর্দারদের অধীনে রাখতে হবে। এ ছাড়াও
আলাদা পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হবে।
প্রাইস বলছেন, অনুচরদের
ওপর চোয়াড় সর্দারদের প্রভাব অসাধারণ। একজন সর্দারের অধীনে
দুই থেকে চারশ চোয়াড় থাকেন। তারা বাসকরে জঙ্গলের গভীরতম অঞ্চলে। এর নাম কেল্লা। ।।এরা কোনও দিনই জমিদার বা ভূস্বামীদের সেবা করেনি,
সর্দারের নির্দেশ এদের কাছে চরমতম নির্দেশ। সেনাবাহিনী দিয়ে জয় করতে না পেরে কৌশলে এদের অনেক ক্ষোভ
প্রশমিত করে এদের স্বাধীণতা সংগ্রাম দমন করা হয়। তবে এই স্বাধীণতা
সংগ্রামের ফলে মেদিনীপুর বা বাঁকুড়ার সীমান্ত নতুন করে সাজানো হল। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর আর মানভূম এঞ্চল নায়ে তৈরি হল
জঙ্গলমহল জেলা। এই জঙ্গলহমলই
বাঁকুড়া জেলা। ক্রমশঃ ইংরেজদের
সুকৌশলী শাসনে সর্দাররা নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং বাঙলার অন্যতম প্রধাণ বিদ্রেহ
ক্রমশঃ নির্বাপিত হল।
No comments:
Post a Comment