এই সমস্যাটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলায় এক্কেবারে পেড়ে ফেলছিল। ১৭২১
সালের শেষের দিকে ৮ আগস্ট মরিয়া হয়ে কোম্পানি তাদের সিদ্ধান্তের খাতায় লিখল, We as yet having
no news of any ship from England Our Merchants are very clamorous for the
Dadney to be advanced them on the goods contracted for this year, and insist upon giving them Bills of Debt for that and,the
Balance qf their last year's account(ibid., vol. 4, f. 432, 8 Aug. 1721)।
স্থানীয় ধারের বাজার
বিনিয়োগের সমস্যা সমাধানে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির স্থানীয় ধারের বাজারে গিয়ে
হাত পাতা ছাড়া অন্য কোন কিছু করাই সম্ভব ছিল না। কোম্পানিগুলির ভাগ্যভাল তৎকালীন
বাংলার ধারের বাজারটি ভীষণভাবেই সংগঠিত এবং দায়িত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রিত
ছিল। ধার এবং মুদ্রাব্যবস্থাপনার আর্থিক মেশিনারিটির বিপুল বিকাশ ঘটেছিল অষ্টাদশ
শতকের প্রথম পাদে। বিশেষ করে স্রফদের মত বিশেষ ধরণের নির্দিষ্ট একটি আর্থিক
ব্যবস্থাপনার কাজে চরমতম দক্ষ, বিপুল পরিমান ব্যবসায়ীর উপস্থিতি একটা বিষয়ের দিকে
অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলে যে, সেই সময়ে সওদাগরি পুঁজি এবং বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার
বিপুল বিকাশ ঘটেছিল বাংলায়। ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোর কার্যকরী
মূলধনের অর্থাৎ মাল কেনার টাকার অভাবের সমস্যার সমাধান করতে চাইল স্থানীয় ধারের
বাজার থেকে বিপুল পরিমানে অর্থ ধার করার মাধ্যমে। নির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন কুঠি কত
টাকা কোথা থেকে কোন বছরে ধার করেছিল, সে বিষয়ে কোন ধারাবাহিক লিখিত তথ্য না
থাকলেও, কোম্পানির খাতা এবং এদিক ওদিকের সূত্র ধরে আমরা বিভিন্ন কুঠি বিভিন্ন সময়ে
কত টাকা ধার করত তার একটা ছাড়াছাড়া মোদ্দা হিসেব আমরা পেয়ে থাকি।
অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে কলকাতা আর কাশিমবাজার কুঠিতে ব্যবসায়ীদের কাছে
নির্দিষ্ট তারিখে ধারের পরিমান ছিল যথাক্রমে ৭ লক্ষ এবং ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা(S. Chaudhuri, Trade and
Commercial Organization, p. 114। কলকাতা এবং কাশিমবাজারে অষ্টাদশ
শতকের প্রথম দুদশকের কোম্পানির ধার এবং ঋণের পরিমান জানতে এই মন্তব্যের সঙ্গে জুড়ে
থাকা Trade
and Commercial Organization বইটি পড়ুন Ibid., ·pp.
114-116)। ১৭২০/২১ সালে বাংলায় সুদ ছাড়া কোম্পানির মোট ধার ছিল ২৪ লক্ষ টাকা এবং
১৭৪৭/৪৮ সালে ৫৫ লক্ষ টাকা(DB,
vol. 101 7 · 1 , 1
f. 3 2, para. 32, 21
Dec. 722; C &
B.
Abstr., vol. 5, f. ·117, para. 261, io Jan. 1748)। ডাচ কোম্পানিও স্থানীয় ধার বাজার
থেকে টাকা ঋণ নিত। ১৭২৪ সালে কাশিমবাজার ব্যবসায়ীদের কাছে ডাচেদের সুদসহ ধার ছিল
১৫ লক্ষ টাকা(VOC,
2Q30, ff. 156-158, 16 March 1725; all fraction.s are rounded off
to the nearest figures)।
কিছুটা প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই আমি কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম করব
যাদের কাছে ডাচ কোম্পানি ধার করত। হতাশার কথা হল ইওরোপিয় হিসেব রাখার খাতাগুলো
থেকে যে ব্যবসায়ীদের তালিকা আমরা পাচ্ছি, সেই তালিকাটি সে সময়ের ব্যবসায়ীদের
সামাজিক অবস্থান এবং তারা কোন অঞ্চলের, সেটা বুঝতে সাহায্য করতে পারত, সেই তালিকায়
অধিকাংশ ব্যবসায়ীর প্রথম নামটা উল্লিখিত হয়েছে তাদের দ্বিতীয় নামটা বলা নেই। তবুও
এই তালিকা আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের দিকে দৃষ্টি দিতে হাতছানি দিয়ে ডাকে।
যদিও যে নামগুলি উল্লিখত হয়েছে সেগুলি হল রামনাথ, যদু, কুঞ্জ, কার্তিক, এক্কেবারে
বাঙালি নাম পরাণ, কিন্তু কাটমাদের নামগুলি সম্পূর্ণভাবে বলা হয়েছে(কেন, এই
প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, কাটমারা সে সময়ের সেই এলাকায় গুরুত্বপুর্ণতম ব্যবসায়ী আর
সওদার, যারা ধারে টাকা দেওয়া এবং রেশম এবং রেশমের তৈরি জামাকাপড় ব্যবসায় হাত
পাকিয়েছিল)। এই তালিকায় যে নামগুলি আছে
সেগুলি হল লাহোরিমল, অনুপচাঁদ, টেকচাঁদ, ভৃগুরাম ইত্যাদি যারা হয়ত ভারতের অন্যান্য
এলাকা থেকে বাংলায় এসেছিল (পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল থেকে)। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ন
বিষয় হল, আমরা কাপুর নামে পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীদের উপাধি পাচ্ছি(ডাচেদের খাতায়
কাপুরজী(Caporeij) আর ব্রিটিশদের খাতায়
কোপরি(Coppree) নামে উল্লিখিত) যাদেরকে
আমরা প্রথমবার খাতায় উল্লিখিত অবস্থায় দেখি।
No comments:
Post a Comment