৩.২ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
অষ্টাদশ শতকের
প্রথম পাদে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সব থেকে বড় সুযোগটিই হল তারা মুঘল
সম্রাট ফারুকশায়ার থেকে ১৭১৭ সালে বাংলায় মাত্র ৩০০০ টাকার বিনিময়ে কর মুক্ত
ব্যবসা করার জন্যে একটা সাম্রাজ্যিক ফরমান আদায় করে। ব্রিটিশেরা বহুকাল ধরেই
ভারতজুড়ে ব্যবসা করার জন্যে ফরমান জোগাড় করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কলকাতার ফোর্ট
উইলিয়াম থেকে যে Surman embassyর দৌত্য পাঠানো হয় দিল্লিতে, তারা এই ফারমানটি ন্যুনতম মূল্যে জোগাড় করতে সক্ষম
হয়(For Surman embassy, ~ee Home Misc., vols. 69-71; Fact.
Records, Misc., vols. 19, 20. For the provisions of the farman and hasb-ul-hukm, see S. Bhattacharyya, East India Company, pp. 28-29; A.· K,arim, Murshid Quli, pp. 166-68)। এই ফরমানটিকে
বাংলায় ব্রিটিশদের ব্যবসার ম্যাগনাকার্টা বলা হল এবং বলা হল এটা ব্রিটিশদের দৈত্যের
প্রচণ্ড সফলতা(১৩)। স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশপক্ষ একে প্রচণ্ড গুরুত্ব দিচ্ছিল। কিন্তু এই ফরমানটি
নিয়ে বাংলার নবাবি সরকারের সঙ্গে ব্রিটিশদের কোম্পানির মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু
হয়। আমরা এই ফরমানটি নিয়ে বিশদে আলোচনা করি, এবং বুঝতে চেষ্টা করি, তারা কি কি
সুযোগ সুবিধে পেয়েছিল, এবং সেই শর্তগুলির বাস্তবিক মানেটা কি।
অস্বীকার করার
উপায় নেই কাগজেকলমে ব্রিটিশ বাণিজ্যের সামনে খাড়া থাকা নানান দেওয়াল সরানোর উদ্যম ছিল
এই ফরমানের মুল বক্তব্য। কারণ স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হত যে ব্রিটিশদের
বাণিজ্য করার কোন আইনি ফরমান নেই, যে দবিগুলি কোম্পানি করছে সেগুলি ভুয়া।
কোম্পানির পক্ষে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বছরে মাত্র ৩০০০ টাকা দিয়ে মুক্ত
ব্যবসা করার ছাড়পত্র পাওয়া। এর আগে কোন সাম্রাজ্যিক ফরমানে কোম্পানিকে এই ব্যপ্ত
সুযোগ দেওয়া হয় নি। যদিও তারা স্থানীয় সরকারগুলির থেকে ঘুষ আর উপঢৌকন দিয়ে নিশান
আর পরওয়ানা সংগ্রহ করে ব্যবসার কাজ চালাচ্ছিল। ফরমানটি হাতে থাকায় বাংলার মত ধনী
এলাকায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে ওঠে সব থেকে সুবিধেপ্রাপ্ত কর্পোরেট।
কিন্তু ফরমানে কোন কোন পণ্য শুল্ক ছাড় পাবে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র কোন কথা বলা হয়
নি। কিন্তু ফরমানের প্রাসঙ্গিকতা আর উদ্দেশ্য থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে এই
ছাড়পত্রটি দেওয়া হয়েছে কোম্পানির আন্তর্জাতিক আমদানি রপ্তানি ব্যবসার জন্যে।
কিন্তু কোম্পানির অন্তর্দেশিয় ব্যবসা বা কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার
জন্যে এই ছাড় দেওয়া হয় নি। বাস্তব হল, ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সম্রাটের কাছে সরকারিভাবে যে
দৌত্য দল গিয়েছিল, তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলায় আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের
শুল্কছাড়ের সুরক্ষা প্রাপ্তি। ফলে কোম্পানির পক্ষ থেকে যাই বলা হোক, এই ফরমানটির
উদ্দেশ্য ছিল না কোম্পানির দেশিয় বাণিজ্য সম্পাদন এবং সেই কথা উল্লেখ করাও ছিল না
ফরমানে। বাংলার নবাব বারবার এই দিকে কোম্পানির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে
গিয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানির কর্মকর্তারা বার বার বলার চেষ্টা করেছে এই ফরমানটির
উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক ব্যবসারর ছাড়পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশিয় ব্যবসা এবং আমলাদের
ব্যক্তিগত ব্যবসার ছাড়পত্রও।
No comments:
Post a Comment