মুর্শিদকুলি
খানের রাজত্বে, ব্রিটিশেরা যাতে নবাবি টাঁকশালটি ব্যবহার করতে না পারে, সেই বিষয়ে
নবাব এবং জগতশেঠ সফলভাবে ব্রিটিশ উদ্যমের বিরোধিতা করে গিয়েছে নিরন্তর। অষ্টাদশ
শতকের প্রথমপাদে জগতশেঠের পরিবারের বাংলার মুর্শিদাবাদের টাঁকশালটার একচেটিয়া
দখলদারি ছিল। তবে টাঁকশাল নিয়ে নবাবি প্রশাসনে যতটানা মাথা ব্যথা ছিল, নবাবের কাছে
থেকেও বেশি চিন্তার ছিল দস্তকের অসদুদ্দেশ্যে ব্যবহার। ফোর্ট উইলিয়ামের নথিপত্রেও
এই ব্রিটিশ দুর্নীতি তথ্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ১৭২৬ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ লন্ডনের
সদর দপ্তর এবং মুর্শিদাবাদের সরকারি দরবারে অভিযোগের স্বীকৃতি জানিয়ে লিখল great abuse made of our Dustucks which abuse we apprehend
may at one time or other be of singular prejudice to our
Honble Masters affairs and the Trade of Bengal in general। এই স্বীকৃতিতে এটাও লেখা হল যে, দস্তক অপব্যবহার একটি
ক্ষতিকারক বিপদে(pernicious evil) পরিণত হয়েছে এবং we are senceble [sensible] great abuses have been made by disposing
of part of the goods brought out of the country by virtue
of our Dustucks(BPC, vol.6, f.215vo, 23
May 1726; Home Misc., vol.68, ff.70-71, 23 May 1726)।
একইভাবে
কোম্পানির আমলাদের রাজপথের ব্যবসাও দস্তক স্বীকৃত ছিল না। এই রমরমা ব্যবসাটা রোখা নিয়েও বাংলা প্রশাসনের মাথা ব্যথা
ছিল। কাশিমবাজার কাউন্সিল কলকাতাকে ১৭২৭সালের ২০ মার্চের তারিখে একটা চিঠিতে লিখল the Nabob has been very
incensed against u·s, on account of complaints made about our
dealing in rice and grain। এই সঙ্গে উল্লিখিত হল নবাবের উদ্ধৃতি, আগামী দিনে এই অপব্যবহারে যদি কোম্পানি
রাশ না টানে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে এই সমস্যার নিদান খুঁজবেন। মনে রাখা দরকার,
কলকাতায় কোম্পানির আমলাদের গোমস্তারা মুর্শিদাবাদ থেকে সে বছর যে ২০ হাজার মন চাল
পাঠিয়েছে, সে তথ্য মোটামুটি মুর্শিদাবাদের প্রত্যেকেই জানত(BPC, voL 6, J. 399vo, 20 March 1727)। স্বাভাবিকভাবে
নবাব বরাবরের মত যে ব্যবস্থাটা নিলেন সেটি হল তাদের বকাবকি করে কিছু কুঠির
আড়ং(উৎপাদন কেন্দ্র)এর ব্যবসা বন্ধ করে দিলেন। নবাবের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এর
পালটা চাল হিসেবে হুগলি নদীতে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে ব্রিটিশেরা প্রতিবাদ
জানাল। হুগলি নদীতে বাধা সৃষ্টি করার অর্থ হল মুসলমান এবং আরমেনিয় ব্যবসায় ধাক্কা
লাগা। ১৭২৩ এবং ১৭২৭, এই দুই বছরেই মুর(মুসলমান)দের এবং আরমেনিয়দের জাহাজের
নাখুদা(প্রধান চালক)রা এই ব্যাপারটি ব্রিটিশদের সঙ্গে আপসে মিটিয়ে নিতে নবাবের ওপর
চাপ সৃষ্টি করে(Ibid.,
vol. 5, f.
388, 28
Nov. 1723; f.
393vo,
12 Dec. 1723; vol. 6, f. 389vo, 27 Feb.
1-72)।
পরের নবাব
সুজাউদ্দিনের সঙ্গেও ব্রিটিশদের প্রথম যে বিষয়ে তিক্ততা সৃষ্টি হল সেটা হল লবনের
রাজপথীয় ব্যবসা। এই তিক্ততা থেকে আমরা বাংলায় ব্রিটিশদের ব্যবসা করার অধিকারের সীমাটা স্পষ্ট
বুঝতে পারি; যদিও সিংহাসনে বসার আগে ব্রিটিশেরা সুজাউদ্দিনকে তাদের বন্ধুস্থানীয়ই
ভাবত(DB,
vol. 104, f.427, para. 32, 21' Feb. 1729)। ১৭২৭এর সেপ্টেম্বরে কাশিমবাজার কাউন্সিল লিখল দরবারে অভিযোগ
করা হয়েছে কলকাতা থেকে পাটনায় যে নৌকোর বহর পাঠানো হয়েছিল সোরা আনার জন্যে তাতে
নুন বহন করে আনা হচ্ছে এবং the farmers of that Bunch
of Revenues reckon themselves considerable sufferers। নবাবের বাহিনী সেই নৌকোর বহর আটক করে এবং নৌকো থেকে(নথিতে
দেখা যায় ১ লক্ষ মন) নুন ভাগলপুরে নামিয়ে নেওয়া হয়(BPC, vol. 6, f. 500, 18 Sept. 1727.
The quantity of salt was reported to have been 100,000
maunds, BPC, vol. 6, f. 562, 4 March 1728)।
No comments:
Post a Comment