ইওরোপিয়দের থেকে
ধার
ব্রিটিশ কোম্পানি
স্থানীয় ইওরোপিয়দের থেকে ধার করত, এদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন কোম্পানির আমলা,
ব্যক্তিগত ইওরোপিয় ব্যবসায়ী, এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন। কম সময়ের এই ধারগুলো
নির্দিষ্ট মরশুমে কিছুটা কোম্পানির অপ্রতুল বিনিয়োগের সমস্যা মেটাতে সাহায্য করত।
অষ্টাদশ শতকের প্রথম দশকগুলিতে, কোর্ট অব ডায়রেক্টর্সের নামে কাটা লন্ডনে
বিনিময়যোগ্য বিল অব এক্সচেঞ্জএর বিনিময়ে কোম্পানির আমলারা কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ
করত। উদাহরণস্বরূপ কলকাতা কুঠির হিসাব পরীক্ষক আব্রাহাম এডামস ১৭১৬ সালে লন্ডনে
চলে যাওয়ার আগে কোর্ট অব ডিরেক্টর্সদের নামে কলকাতায় ২৭৭২৮ টাকার বিল অব এক্সচেঞ্জ
হস্তগত করে(BPC,
vol. 3, f. 117)। এমন কি ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এই পদ্ধতিতে লন্ডনে টাকা পাঠায়।
এই পদ্ধতিতে বিল কেটে বাংলার প্রেসিডেন্ট রবার্ট হেজেস ৪০০৪৫ টাকা লন্ডনে পাঠায়
১৭১৭ সালে (Ibid., vo·l . 4, f. I vo)। ঐ বছরেই রপ্তানি পণ্য গুদামের কর্মচারী হেনরি
ফ্রাঙ্কল্যান্ড কলকাতার কোম্পানির তহবিলে ৮৮০০০ টাকা বিনিয়োগ করে যার বিনিময়ে সে
লন্ডনে কোর্ট অব ডিরেক্টর্সের নামে কাটা বিল অব এক্সচ্চেঞ্জের মাধ্যমে পাবে ১১০০০
পাউন্ড(Ibid., vol. 4, f. 3) পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পায়। বাস্তবিক,
আমরা যে সময়জুড়ে আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রেখেছি সেই সময়ে কোম্পানি বাংলায় ইওরোপিয়দের
থেকে নিয়মিত টাকা ধার করে গিয়েছে, যদিও মোট ধার বছরে কত করত এই খাতে তা আজ আর বের
করা মুশকিল। তবে কয়েক বছরের ধারের পরিমান পাওয়া যায়। জুন ১৭৪৬ থেকে মে ১৭৪৭ এই এক
বছরে কোম্পানি ইওরপিয়দের থেকে ধার করেছিল ৪৭৫৬৪০ টাকা। পরের বছরে অর্থাৎ জুন ১৭৪৭
থেকে মে ১৭৪৮ সময়ে কোম্পানি ধার করেছিল ৫১০৯৬৭ টাকা(Computed from relevant volumes of BPC)।
সামগ্রিকভাবে
আমরা বলতে পারি, প্রচুরে সমস্যার মধ্যে দিয়ে হেঁটেও ইওরোপিয় কোম্পানিগুলো বাংলায়
পণ্য কেনার জন্যে বিনিয়োগের অর্থ জোগাড় করতে পেরেছিল। এই সময়ে বাড়তে থাকা ইওরোপিয়
বাণিজ্যের হার থেকে এ কথা বলতে পারি। কোম্পানিগুলির মুল সমস্যা ছিল হাতে নগদের
অপ্রতুলতা। তাকে সামাল দিয়েছিল স্থানীয় পুঁজির বাজার থেকে ধার করে, যে বাজারটা ছিল
দারুণ সংগঠিত এবং অসম্ভব দক্ষ। তাদের মুল সম্পদ সংগ্রহের সূত্র ছিল স্থানীয় পুঁজির
বাজার। তারা স্থানীয় ব্যক্তি ইওরোপিয় অর্থাত তাদের আমলা অকোম্পানি ব্যক্তি
ব্যবসায়ীদের থেকেও ধার করত। এছাড়াও তারা আন্তঃএশিয় ব্যবসা এবং জাহাজে পণ্য
পরিবহনের মাধ্যমেও পাতে পুঁজির ঘাটতি মেটাত। স্থানীয় পুঁজির বাজার থেকে টাকা ধার
করার সমস্যা ছিল যে এটি ছিল খুব কম সময়ের জন্যে – কিছু মাস মাত্র এবং এই বাজারের
সুদের হার ছিল খুব বেশি। কোম্পানিগুলি স্থানীয় পারম্পরিক ধারের বাজারের ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে
নি। তবে সুদের হার কমাতে পেরেছিল, তবে জগতশেঠদের বদান্যতায়, তাদের ব্যবস্থাপনার
প্রভাবে নয় – বরং আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে। তারা যে দামি ধাতু বাংলায় নিয়ে আসত সেটি
বাংলায় মুদ্রায় রূপান্তরিত করা খুব কঠিন ছিল কারণ, বাংলায় তারা টাঁকশাল নিয়ন্ত্রণ
করত না। তারা সেই দামি ধাতুগুলি খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারত না বা দাদনি বণিক বা
অন্যান্য স্রফেরা সেগুলি নিত না। তারা জগতশেঠএর – সে সময়ের বাংলার নবাবের
পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থনীতির অন্যতম পরিচালক - হাতের পুতুল ছিল।
ফলে আমরা দেখলাম,
কোম্পানিগুলির আর্থিক শক্তি এমন কিছুই ছিল না যা দিয়ে তারা বাংলার পরম্পরার
ব্যবসায়িক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার এক্কেবারে ছোট ছোট চলকগুলিকেও নিজেদের অনুকূলে
নিয়ে আসতে পারে। এই ব্যবস্থায় যে কয়েকটি নতুন ভাবনা প্রবেশ করতে পেরেছিল সেগুলি ছিল
মধ্যস্থ/দালাল বা chief merchant। যদিও পরম্পরার ব্যবসায়িক
ব্যবস্থাপনায় দালাল বা মধ্যস্থ এক্কেবারেই নতুন ধারনা ছিল না, কিন্তু তারা
দালালদের যেভাবে কাজে লাগিয়েছিল, পরম্পরার ব্যবসা ক্ষেত্রে সেটি নতুন ছিল। দেশিয়
ব্যবস্থাপনায় যাকে দালাল বলত, ইওরোপিয় কোম্পানিরা সেই পেশাকে নতুনভাবে কাজে লাগাল।
আরেকটি নতুন ধারণা হল ব্যবসা এবং কোম্পানি ব্যবস্থাপনা। দেশে এই প্রথম কোম্পানি,
সোরা ব্যবসায়ীদের জয়েন্ট স্টক কোম্পানি তৈরি করিয়ে দ্যায়(নবম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
আরেকটি নতুন বিষয় হল চুক্তির সময় পণ্যের দাম নির্ধারণ – এটাও আগে হত না। It is also interesting to note that a study of the European, investments giv.es us an insight, however inad'equate, into the working of the
complex structure of traditional commercial organization, credit machinery and
capital market, and the mercantile class in the pre-colonial
period.
No comments:
Post a Comment