ইওরোপিয়
কোম্পানিগুলির বাংলার(সুশীলবাবু লিখেছেন ভারতীয়/ইন্ডিয়ান) দালালেরা তাদের
বিনিয়োগের সুরক্ষা আর ব্যবসা নিশ্চিত করতে এবং বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির বিকাশের
কাজে অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে বিপুল ভূমিকা পালন করেছেন, এই তথ্যে আজ আর কোন
দ্বিমত থাকতে পারে না। তিনিই দেশিয় ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির
কেন্দ্রিভূত বিনিয়োগ সংগঠনের যোগসূত্র ছিলেন। অস্টেন্ডড কোম্পানির প্রধান হিউম
১৭৩০ সালে লিখলেন The Efiglish and Dutch, who'are' the greatest Traders in this Country, do their business wholly by their Brokers who are their principal merchants. Notwithstanding they have numbers of Rich men
Established in their bounds, who need no, Security but they find their business
the best regulated by having their Merchants act in Concert, by means of their
·Broker, everyone taking upon him according to his force, they know one another
better than they can be known by Europeans(Hume's 'Memorie', Stadsarchief Antwerp, General lndische Compagnie, 5769)।
হিউম বলছেন,
দাদনি বণিকেরা দালালির সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজেদের নামে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং কোম্পানি
ইচ্ছে অনুযায়ী সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, এমন কি সে দালালের ইচ্ছের বাইরে
গিয়েও বণিকদের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এই ব্যবস্থার সুবিধে সম্বন্ধে হিউম
আরও বলছেন, By which you secure yourselves from having a Cabal being
formed among yQur Merchants, to prejudice you in the price of your goods (Ibid)।
দালালের আরও একটা বড়
ভূমিকা থাকে ইওরোপিয় কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসূত্র তৈরি করিয়ে
দেওয়ার। এই দুইয়ের মধ্যে কখোনো ঝামেলার পরিবেশ তৈরি হলে দালাল বা মধ্যস্থ সেই
বিতর্ক মেটাবার কাজ করেন। দালাল পদটা এতই গুরুত্বপূর্ন ছিল যে শাসকেরাও দালাল
পদটিতে ব্যবসায়ী নিয়োগে মাথা গলাত। কোম্পানিগুলি চেষ্টা করত স্থানীয় প্রশাসনের
দরবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দহরম মহরম আছে এমন কোন ব্যক্তিকে দালাল নিযুক্ত করতে। একটা
উদাহরণে এই বিষয়টা খোলসা করতে পারি, ঢাকায় কোম্পানির দালাল সাবরা মারা গেলে
কাউন্সিল লিখছে, great solicitations have been made to us by the Dellols and Persons of the Greatest Importance' তার ভাইপো
মানিকচাঁদকে দালাল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ঢাকা কাউন্সিল ২৭ জানুয়ারি ১৭৩৮ সালে
ঢাকা কুঠির দালাল হিসেবে মাণিকচাঁদকে নিযুক্ত not being able to
find 04t a more proper person having great
Interest at the Durbar, worth some money and much esteem'd in the place করে(৬৬)।
দালাল এবং তাদে
সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক নিয়ে ওপরে যে বিপুল তথ্য আমরা বিচার করলাম, তাতে বাংলার
অর্থনীতির ব্যবসায়িক ক্ষেত্র বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীতে আলোকপাত
করতে পারি। প্রাথমিকভাবে এঁরা মধ্যস্থ দালাল যারা কোম্পানির বিনিয়োগের বিনিময়ে
পণ্য জোগাড় করে দেন এই তথ্য পরিষ্কার করা যায়। যদিও তারা কোম্পানির কর্মচারী এবং অধস্তনও বটে কিন্তু তারা দাসানুদাস ছিলেন
না। কোম্পানির ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র দালাল ছিলেন না, এটা তাদের বৈচিত্র্যময়
জীবনের একটি চঘোট্ট অধ্যায় মাত্র, বরং তারা স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন, সামাজিক
সম্মান ছিল এবং তারা কোম্পানির সাহায্য ছাড়াও নিজেরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে
পারতেন। আমরা বারারসী শেঠ, বিষ্ণুদাস শেঠ শ্যামসুন্দর শেঠেদের জীবনী আলোচনায় এই
তথ্য স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। কোম্পানির দালাল হিসেবে বানারসীর পদচ্যুতি তার নিজের
স্বাধীন ব্যবসাকে ধ্বংস করতে পারল না, তিনি নিজের ব্যবসা চালিয়ে গেলেন কোম্পানির
সহায়তা ছাড়াও। বরং তারা তাকে আবার কোম্পানির পুরোনও পদে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। পরে
দালালি ব্যবস্থা উঠে গেলে কোম্পানিকে তাকে ‘substantial
merchant’ হিসেবে তার দলের মাথা হিসেবে জামিন রাখে। শ্যামসুন্দরকেও ব্রিটিশ কোম্পানি
বলত man of fortune and credit', এমনকি সে দেয়ালালি
ছেড়ে দেওয়ার পরেও। এবং অন্য একটি দলের জামিন হিসেবে তাকে বন্দক রাখে। দালালদের
সঙ্গে ক্ষমতার বোঝাপড়া ছিল এবং কলকাতায় বিষ্ণুদাস এবং ঢাকার মাণিকচাঁদের উদাহরণে
আগেও বলেছি শাসকেরা কোম্পানির দালাল মনোনয়নে মাথা গলাতেন। কলকাতার কোম্পানির দালাল
বেনারসী শেঠ, চন্দননগরের ফরাসি কোম্পানির দালাল ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, চুঁচুড়ার ডাচ
কোম্পানির দালাল হরিকৃষ্ণ রায় ছিলেন অষ্টাদস শতকের প্রথমের দিকে সামাজিক এবং ঐহিক
সম্পদে ব্যাপক ধনী মানুষ।৭৯
No comments:
Post a Comment