মুর্শিদকুলি এতই কৌশলী ছিলেন যে তিনি
আন্দাজ করে নিয়েছিলেন দিল্লির দরবারের অন্তর্বর্তী বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে কেন্দ্রিয়
কর্তৃত্বের পকড় শিথিল হয়ে পড়েছে, সেই সুযোগে তিনি দিল্লিতে নিয়মিত রাজস্ব পাঠিয়ে
কার্যত বাংলায় স্বশাসনের পরিবেশ তৈরি করে ফেলতে পারবেন। শাসন শিথিল অর্থের জন্যে উদ্বিগ্ন দিল্লির সম্রাটকে নিয়মিত
রাজস্ব পাঠিয়ে, ভেঙ্গেপড়া কিন্তু তবুও মুঘল দিল্লির দরবারে বাংলায় শাসন করার যেমন
অধিকার বজায় রাখতেন তেমনি বাংলাতেও জমিদার, আমলা এবং সওদাগর ব্যবসায়ীদেরও আনুগত্য
অর্জন করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে নিয়েছিলে। তিনি তার পছন্দের বড় আমলাদের তাঁর মত
করে পদ পাইয়ে দিয়েছিলেন, একই সঙ্গে, তার প্রতি বিক্ষুব্ধ মনসবদারদেরও সঠিক
পুনর্বাসন দিয়েছিলেন বাংলার প্রশাসনে (Salimullah;Tarikh-i-Bangala,
pp.42-43.)। বড় জমিদারেরা তার
প্রতি অনুগত ছিল কারণ তিনি তাদের বাড়বাড়ন্তকে সহায়তা করেছিলেন এবং যে পদ্ধতিতে
তাদের জমিদারির বৃদ্ধি হওয়া উচিত সেই প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছিলেন।
ব্যাঙ্কিং এবং আর্থিক সেবাদান গোষ্ঠীগুলোও নাজিমের দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল,
যার রাজস্ব নীতি তাদের ব্যাপক লাভের কারণ হয়েছিল।
মুর্শিদকুলি খাঁ
যে শুধু রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার করেছিলেন তাই নয়, সাধারণ প্রশাসনকেও ঢেলে
সাজিয়েছিলেন তার মত করে। তিনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তার কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছেন
সালিমুল্লাহ। বাংলার
নবাব রাজপথে ডাকাতি রোধ করেছিলেন। ধরাপড়া ডাকাত আর চোরদের কড়া শাস্তি দেওয়া হত।
শান্তি রক্ষার জন্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় থাকা বসিয়েছিলেন(Ibid., p. l 08)। সালিমুল্লাহ
বিশদে বলছেন মুর্শিদকুলি কিভাবে সাধারণ পণ্যের বাজারদর ঠিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছিলেন
যাতে গরীবদের নিত্যদিনের পণ্য কিনতে সমস্যা না হয়। তিনি মন্বন্তর রুখতে সাধারণ
দানা শস্যের একচেটিয়া কারবার বন্ধ করেছিলেন(Ibid.,
p. 112)। কিন্তু
মুর্শিদকুলি খাঁএর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল, তিনি বাংলাকে এমন সময় শান্তি আর
স্থায়িত্বের পরিবেশ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যখন দিল্লি এবং সাম্রাজ্যের বিভিন্ন
প্রান্ত বিশৃঙ্খলা আর বিভ্রান্তির মধ্যে কাটাচ্ছে। মুর্শিদিকুলির কাছাকাছি সময়ে
লেখা ইতিহাস, রিয়াজএর লেখক লিখছেন The
Khan, [Murshid Quli]
having introduced order in the financial condition of the Mahals of Bengal, devoted his
attention to the improvement
of other administrative and internal affairs. His administration was so vigorous and
successful that there was no foreign
incursion nor internal disturbance, and consequently the military expenditure.was nearly
abolished.(
Riyaz, p.257)। সংক্ষেপে
মুর্শিদকুলি বাংলায় একটা স্থায়ী এবং শক্তিশালী সরকারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে
দিয়েগিয়েছিলেন।
সুজাউদ্দিন খান
মুর্শিদকুলির স্থলাভিষিক্ত হলেন বাংলারে নাজিম হিসেবে। তিনি প্রশাসনিক বিদ্যায়
যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করলেও শ্বশুরের মত তার সময়কে অসাধারণভাবে বোঝার ক্ষমতা এবং নবাবি
ব্যক্তিত্বের অভাব ছিল তার। তিনি দিল্লির দরবারে নিয়মিত ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব পাঠিয়ে বাংলায় তাঁর
শ্বশুরের পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলা নির্ভয়ে শাসন করেছেন(ঐ p.289, বলছে
মুর্শিদকুলি দিল্লিতে নিয়মিত ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা রাজস্ব হিসেবে পাঠাতেন কিন্তু
সালিমুল্লা তার বইএর ৬৩-৬৪ পাতায় বলছেন এই পরিমাণটা ছিল ১ কোটি ৩০ লক্ষ)। শাসন ক্ষমতায়
বসেই তিনি সে সময়ের বাংলার রাজনীতি এবং অর্থনীতির তিনি প্রধান অনুঘটক আহি আহমেদ,
দেওয়ান আলম চাঁদ এবং ব্যাঙ্কার জগতশেঠকে তার পরামর্শদাতা সভায় নিয়োগ করলেন। তিনি
সে সময় তার মত করে বাংলায় প্রশাসনের লাগাম নিজের হাতে রেখেছিলেন(Riyaz, 291-92; Saluimullah, Tarikh-i-Bangala,
p.133; Sier, vol.I, pp.279,
281; J.N. Sarkar (ed.), History of Bengal, vol.II, pp. 423,425.)।
No comments:
Post a Comment