৫
ব্যবসায়ী, কোম্পানি আর শাসকশ্রেণী
অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে এশিয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির ব্যবসাকর্ম এবং তারই সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সঙ্গঠনের চরিত্র আর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা খুব জরুরি বাংলার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ব্যবসায়ীদের অবস্থান কি ছিল সেটি জানার জন্যে। যে সব এশিয় ব্যবসায়ী বাংলাকে ভিত্তি করে ব্যবসা করতেন তাদের কাজের এক্কেবারে নিজস্ব চরিত্র ছিল। তারা মাঝে মধ্যেই ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির মধ্যস্থতা, দালালি, গোমস্তা ইত্যাদির কাজ করে তাদের প্রয়োজনীয় রপ্তানির পণ্য সরবরাহ, অতিরিক্ত পুঁজি জোগাড় করার কাজ করতেন। একই সময়ে তারা তাদের নিজেদের পুঁজি নিয়ে, ইওরোপিয় কোম্পানিদের ব্যতিরেকেই ব্যবসা করতেন। তারা বহু সময় স্রফ, ব্যাঙ্কার রূপে কাজ করে বাংলার এবং ভারতের নানান প্রান্তে বিভিন্ন ব্যবসার ভিন্ন ভিন্ন এজেন্টের বিল অব এক্সচেঞ্জ, লেটার অব ক্রেডিট ইত্যাদি গ্রহন এবং পাঠাতেন।
আমি এখানে বাংলায় ব্যবসা করা এশিয় ব্যবসায়ী শব্দ ব্যবহার থেকে বোঝাতে চাইছি প্রথমত এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী, তার সঙ্গে আরব, তুর্কি, পারসিক, মুঘল এবং আরমেনিয় বণিক, এবং সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানান জাতির বণিক যারা অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় সক্রিয় ছিল, তাদের কথা। এশিয় বণিকদের বাণিজ্য বিষয়ে গভীর এবং সমালোচনামূলক দৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা কিছু সরলীকরণ আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে হেঁটে গিয়ে আলোচনা করতে পারি যে এশিয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসাটা আদৌ তুচ্ছ ব্যবসা(peddling trade) ছিল কি না, অথবা এশিয় ব্যবসায়ীরা কতদূর রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের নির্ভর করে ব্যবসা করত না কি তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করত অথবা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার ব্যবসা দাদনি ব্যবস্থা থেকে গোমস্তা ব্যবসায়ে রূপান্তরিত হওয়ায় এই ব্যবসায়ীরা ইওরোপিয়দের অধীনস্থ ব্যবসায়ীতে রূপান্তরিত হল কি না সেই সব বিতর্কগুলি।
৫.১ এশিয় ব্যবসায়ী এবং ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি
আমরা প্রায় সক্কলে আজ জানি, এবং যে জ্ঞান আজ ভারতীয় ইতিহাসে একটা সাধারণ জ্ঞানে রূপান্তরিত হয়েছেম সেটা হল, একমাত্র মাদ্রাজ ছাড়া উপমহাদেশের সর্বত্র ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি দাদনি ব্যবস্থাতেই কোম্পানি আর দাদনি বণিকদের মধ্যে চুক্তি করে তাদের ব্যবসার নগদ পুঁজি জোগাড় করত।
No comments:
Post a Comment