মারাঠা আক্রমন
রেখার জন্যে আলিবর্দি ইওরোপিয় ব্যবসায়ীদের থেকে আর্থিক সমর্থন চাইলে ব্রিটিশেরা এই
সাহায্য দিতে অস্বীকার করে। কিমকর্তব্য বিষয়ে ব্রিটিশেরা জগতশেঠ ফতেচাঁদের পরামর্শ
চাইলে, তিনি চাতুর্যপূর্ন বক্তব্যে বলেন, At present there is no government;
they fear neither God nor the king but seemed determined
to force money from everybody. I have suffered greatly
by them (BPC,
vol. 17, f. 155, 13July 1744)। এই মন্তব্য থেকে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা বোধহয় যুক্তিযুক্ত হবে না। খুব
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে এই ঘটনায় প্রত্যেকেই বিপুলভাবে নিগৃহীত যে
হচ্ছিলেন, সে তথ্য স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান(P.J. Marshall, Bengal, p. 71,
মার্শাল এই উদাহরণটা টুকেছেন জগতশেঠেদের জীবনীকার জে এইচ লিটলের বই থেকে)। ফতেহচাঁদের
উত্তরকে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাচ্ছে যে তিনি ব্রিটিশদের ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের
উত্তর দিয়েছিলেন এবং প্রকারান্তরে তাদের নবাবের দাবি মেনে নেওয়ার পরামর্শ দ্যান।
ফতেহচাঁদ এই রণকৌশল বহুসময় নিজেকে বাঁচাতে নিয়েছেন। তার এই চরিত্র উন্মোচন হয়
আরেকটি ঘটনায়। মাদ্রাজ রুপির বাটা ফতেহচাঁদের নির্দেশে বাড়লে, ব্রিটিশদের
কাশিমবাজার কুঠির চিঠিতে বলা হয় এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ন দায় ফতেহচাঁদেরই। ব্রিটিশেরা তাঁর
কাছে এ বিষয়ের প্রতিবিধান করতে প্রতিনিধি পাঠায়। তিনি প্রতিনিধি দলকে বলেন, এই সিদ্ধান্তে তার থেকে বেশি
প্রভাবিত আর কেউ হয় নি এবং তিনি নাকি নবাবের দরবারে বহু চেষ্টা করেও এই নির্দেশ প্রত্যাহার
করাতে পারেন নি(BPC,
vol. 12, f. 135vo, 16 April 1737.)। পরে কোন এক মুহূর্তে নবাবের চাহিদা সম্বন্ধে কাশিমবাজার কাউন্সিলকে অবহিত
করেন, all
the people who have hitherto carried
on their business scottfree, should assist him [nawab] in this emergency by
paying their share (Fact.
Records, Kasimbazar, vol. 6, Consult. 7 Aug. 1744)। কোন কোন ক্ষেত্রে
নবাবদের ক্ষেত্রে উতকোচ আদায়ের ব্যাপার ঘটেছে এটাও যেমন সত্য তেমনি ইওরোপিয়দের
বিপুলভাবে দোহন আর অত্যাচার করার যে গপ্পটা ইওরোপিয় লেখকদের মার্ফত ছড়িয়েছে সেটাও
স্রেফ অতিরঞ্জন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ঘটনায় ব্রিটিশেরা নবাবকে সাড়ে তিন লাখ টাকা
দ্যায়।
কিন্তু কোম্পানি
আর নবাবের চিড় ধরা সম্পর্কের মেরামতি আর হয় নি। বসরা আর জেড্ডা থেকে বাংলার দিকে
আসা দুটি আরমেনিয় জাহাজকে ব্রিটিশেরা দখল করে ১৭৪৮ সালে। আরমেনিয়রা এই দখলদারি
নিয়ে নবাবের দরবারে অভিযোগ জানালে নবাব ব্রিটিশ আর ফরাসীদের সতর্ক করে বলেন, তিনি
তাদের আগেও বাংলার দিকে আসা অন্য দেশের জাহাজ দখল করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
কিন্তু তার এই সতর্কতায় ব্রিটিশেরা কান দ্যায় নি। তিনি সঠিক বিচার দ্যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিলেন, do
justice to those who had suffered by such usage(BPC, vol. 22, f.
49vo, 19 Dec. 1748)। তিনি প্রত্যেক ব্রিটিশ কোম্পানির আড়ঙ্গের দাদনি বণিকদের গোমস্তাদের ঘরের সামনে
পাহারা বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এর উত্তরে কলকাতা কাউন্সিল জানাল তারা ফোর্ট
উইলিয়ামের পাশ দিয়ে কোন আর্মেনিয় জাহাজ পেরোতে দেবে না। আরমেনিয় জাহাজের চলাচলের
ওপর ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাশিত ফল ফলল না(Ibid., vol. 22, f.64vo, 31.Dec.1748;
f. 105, 23 Jan. 1749)। ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট বারওয়েলকে লেখা একটি কড়া ভাষার চিঠিতে নবাব
লিখলেন, As
yout were not permitted to be in this country to
commit piracies ... deliver up all the Merchants goods and effects
to them ... otherwise you may be assured of due chastisement in such· a manner
as you least expect. (Ibid.,
vol. 22, f. 96, 9 Jap.1749.)। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত জগত শেঠেদের মধ্যস্থতায় মিটে যায়। ব্রিটিশেরা ১ লক্ষ ২০
হাজার টাকা নবাবকে দ্যায়, নবাব সেখান থেকে ২০ হাজার টাকা ক্ষুব্ধ আরমেনিয়দের শান্ত
করার জন্য দ্যান(Fact.
Records, Kasimbazar, vol. 8, Consults. 9, 26 Sept., 16 Oct. 1749;
BPC, vol. 22, f.200vo, 4 \\fay
1749)। ৫৩
No comments:
Post a Comment