Friday, November 9, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৩০

 
আধুনিকপূর্ব দক্ষিণ এশিয় বাণিজ্য সংগঠন ও কোম্পানি
বিগত কয়েক দশকে বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ বাণিজ্য ইতিহাসের গবেষণা সূত্রে এই তথ্যটা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে যে সব ইওরপিয় কোম্পানি দক্ষিণ এশিয়া বাণিজ্য করত, তারা সে সময়ের দক্ষিণ এশিয় বাণিজ্য পরিমণ্ডল ব্যবস্থায় এবং ঐতিহ্যে, তাদের বাণিজ্য উদ্যমকে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়। হাতে গোণা সামান্য কয়েকটা উদাহরণ বাদ দিলে বলা যায় যে যে সব দক্ষিণ এশিয় দেশে তারা ব্যবসা করেছে সেই সব দেশে তারা তাদের ব্যবস্থাপনার দর্শন চাপিয়ে দিতে পারে নি। এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলা দরকার, এই কোম্পানিগুলির কাজকর্মে সেই সময়ে চালু ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন এবং উদ্ভাবনের কাণ্ডও ঘটেছিল, যা সেই সময়ের ব্যবসায়িক পরমণ্ডলে কিছুটা অভিনবই ছিল, কিন্তু এই পরিবর্তনগুলি যতদূরসম্ভব দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের সামগ্রিক ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে নি।

এখানে আমরা ইওরপিয় কোম্পানিগুলির বিশেষ করে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা সুবায় সক্রিয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি ব্রিটিশ এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিনিয়োগের নমুনা উল্লেখ করে আলোচনা করব কিভাবে দক্ষিণ এশিয় বৃহত্তর ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা পরিমন্ডলে এই দুই কোম্পানি বিনিয়োগ এবং পণ্য জোগাড়ের (procurement) মত দ্বৈত গুরুত্বপুর্ণ কাজ সম্পাদন করত। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে, ব্যবসার পরম্পরার ব্যবস্থাপনার মধ্যে দাঁড়িয়ে কোম্পানিগুলি কি ছোট ছোট বিষয়েও খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে? বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল? সেই সমস্যাগুলো তারা কিভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেছে এবং এ বিষয়ে তাদের সাফল্য কতটুকু? এই আলোচনায় আমরা হাতেগোণা উৎস উপাদানের সীমাবদ্ধতা নির্ভর করে প্রশ্নগুলির সম্ভাব্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা উদাহরণগুলি এখানে উল্লেখ করব মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এবং তার সঙ্গে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরও কাজকর্ম নির্ভর করে। তবুও বৃহত্তরভাবে আমরা বলতে পারব এই আলোচনা নির্ভর করে যে সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছব, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময়ে বাণিজ্য করা প্রায় সব কটি ইওরোপিয় কোম্পানির ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য হবে।

.১ বিনিয়োগের ছাঁচ

বাংলায় ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির বিনিয়োগ(এখানে বিনিয়োগ বলতে বার্ষিক পণ্য কেনার আর্থিক পরিমানের কথা বলা হচ্ছে) শুধুই চাহিদা সরবরাহের ধ্রুপদী অর্থনৈতিক সূত্রের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করত না। নির্দিষ্ট কিছু ভারতীয় বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে কোম্পানিগুলি তাদের পণ্য কেনার বিনিয়োগের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য হত। কোম্পানির আমলারা এই দেশের বাজারের কর্মপদ্ধতি(market mechanism) বুঝত না। স্থানীয় ভাষাও তারা অধিকাংশ সময়ে বুঝত না। এই অবস্থায় তারা প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রে স্থানীয় সওদাগর-মধ্যস্থর ওপর নির্ভর করত, যিনি মূলত সেই অঞ্চলে নির্দিষ্ট ব্যবসার মাথা, কোম্পানির খাতায় যাদের দালাল নামে উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানি প্রত্যেক অঞ্চলে এই স্থানীয় দালালের ওপর নির্ভর করে তাদের বিনিয়োগের পরিমান নির্ধারণ করত। এই দালালেরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোম্পানিকে চুক্তি করিয়ে দিত এই ব্যবসায়ী কারা হবে সেটা অধিকাংশ সময়েই দালাল নিজেই ঠিক করত। এই ব্যবসায়ীরা কোম্পানির বিনিয়োজিত অর্থের বিনিময়ে ইওরোপ পানে যাওয়া জাহাজে তাদের চাহিদা মত পন্যের ব্যবস্থাপনা করে দিত।

No comments: