ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির মূল ধারের জোগানদার ছিল জগতশেঠের পরিবার অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকেই
ধারাবাহিকভাবে। ১ সেপ্টেম্বর ১৭২৪ তারিখের দুটো আলাদা এন্ট্রিতে পরিবার থেকে ২৬
লক্ষ টাকা নেওয়ার তথ্য রয়েছে(voe, 2030, ff. 156-57, HB 16 March 1725। জগতশেঠের পরিবার সাধারণত ধার দিত পারিবারিক নামে, কিন্তু
কিছু কিছু সময়ে মাণিকচাঁদ এবং আনন্দচাঁদ বা শুধুই আনন্দচাঁদ নামেও ধার দিয়েছে।
পঞ্চম অধ্যায় দেখুন)। কাটমারাও পিছিয়ে ছিল না। তালিকা অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি ৮ জন কাটমার থেকে
কোম্পানি ২ লক্ষ ৬ হাজার ৭৯৪ টাকা ধার করেছিল(VOe, 2030, ff. 156-57, HB 16 March 1725)।
আবার আমরা যদি
ফিরে আসি ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোর ধারের গপ্পে, দেখব অস্টেন্ড এবং ফরাসীরাও দুহাত
খুলে ধার করেছে স্থানীয় পুঁজির বাজার থেকে। স্থানীয় স্রফ আর সওদাগরেরা অস্টেন্ড
কোম্পানিকে ধার দিত। ১৭৩০ সালে আলেকজান্ডার হিউম লিখছেন অন্যান্যদের মধ্যে জগতশেঠ
ফতেহচাঁদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নয়নসুখ বাবু বিপুল অঙ্কের টাকা কোম্পানিকে ধার দিয়েছেন(হিউমের
মেমোয়ার থেকে)। ফরাসীরাও পণ্য কিনতে স্থানীয় পুঁজির বাজারের ওপর নির্ভর করেছিল। ফতেহচাঁদ
তাদেরও নিরাশ করেন নি, তিনি ফরাসীদের ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সূত্র ছিলেন।
যদিও ডুপ্লে ফতেহচাঁদকে দেশের সব থেকে বড় ইহুদি এবং আমাদের হাড়িকাঠ বলে ব্যঙ্গ
করেছেন এবং গালিও দিয়েছেন, তিনিই কিন্তু তার থেকে এক থেকে তিন লক্ষ টাকা করে প্রায়শই ধার নিতেন। তিনি কাশিমবাজারের
অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী সওদাগর পরিবার কাটমাদের পারিবারিক সদস্যদের থেকেও
নিয়মিত ধার নিতেন(Indrani
Ray, 'Some Aspects of French
Presence in Bengal, 1731-40', CH], vol. l, No. l, July 1976, p. 99-101)। যদিও ইওরোপিয়
কোম্পানিগুলিকে সব থেকে বেশি টাকা ধার দিতেন জগতশেঠ পরিবারই। ১৭১৮ থেকে ১৭৩০এর
মধ্যে ব্রিটিশেরা জগতশেঠ পরিবারের থেকে বছরে গড়ে ২৪ লক্ষ টাকা ধার করেছে(J.H. Little,Jagat
Seth, p.
X (Introduction by N.K. Sinha); see also Kantu Papers, BPC, vol. 8, f. 256,
Annex. to Consult, 29 June 1730. 80 Computed from
VOC, vol. 2874)। ১৭৫৭ সালে শুধু ডাচেরা একাই এই পরিবার থেকে
৪ লক্ষ টাকা ধার করেছিল। চন্দনগরের পতনের সময় তাদের থেকে ফরাসীদের ধারের
পরিমান ছিল ১৫ লক্ষ টাকা(J.
H. Little,Jagat
Seth, p.
xt,
Introduction
by N.K. Sinha)। ১৭৪৭-৪৮ সালে ক্যাপ্টেন ফেনউইকের হিসেবে ফরাসীদের ধার ছিল ১৭ লক্ষ টাকারও
বেশি। ১৮ফেব্রুয়ারি ১৭৫৭য় ওয়াটস ক্লাইভকে যে চিঠি লেখেন তাতে শেঠেদের কাছে
ফরাসীদের ধারের পরিমান উল্লিখিত হয়েছে ১৩ লক্ষ টাকা(Orme Mss., India
VI, f. 1525; Watt's letter to Clive, 18 Feb. 1757, quoted
in S.C. Hill, Bengal
in 1756-57, vol.
II, p. 229.)।
যদিও ব্রিটিশ কোম্পানির
প্রত্যেক কুঠিই স্থানীয় ধার বাজার থেকে পুঁজি ঋণ নিত, কাশিমবাজার ছিল এই কাজের
জন্যে উপযুক্ত জায়গা যেখানে মোটামুটি চাইলেই ধার পাওয়া যেত। কারণ দুটো – প্রাথমিকভাবে
কোম্পানির বিপুল টাকা এখানে লগ্নী করত, দ্বিতীয়ত, কাশিমবাজার তৎকালীন ভারতে অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক এলাকা ছিল, তাই অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে ভারতের বিভিন্ন
প্রান্তের নানান ধরণের ব্যবসায়ী আর স্রফেদের এই এলাকায় উপস্থিতি ছিল – তাই সেখানে
বিপুল পরিমান অর্থের ব্যবস্থা থাকাটাও স্বাভাবিক। কাশিমবাজারের কাউন্সিলকে
নির্দিষ্ট মরশুমের বিনিয়োগের জন্যে বিপুল অঙ্কের টাকা ধার করতে হত। ১৭২৮ সালের
মার্চে ৪ লক্ষ টাকা ধার করে দাদন দেওয়ার জন্যে(BPC, vol. 6, f. 564vo, 12 ·March· 1 728.)।
No comments:
Post a Comment