২.৩ অর্থনৈতিক পরিবেশ
মুর্শিদকুলি খাঁ এবং তার উত্তরাধিকারীদের ইতিহাস আলোচনা
করতে গিয়ে দেখেছি, মুঘল সুবা হিসেবে বাংলা যে স্থায়িত্বের
ভিত্তি অর্জন করেছিল, সেটি থেকে তার উত্তরণ
ঘটে নবাবি আমলে শান্তিপ্যুর্ণ স্থায়ী রাজনৈতিক
পরিবেশে।
এই অর্জনে সে বাংলায় শক্তিশালী
নিজামতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করল। এর ফলে
শিল্পেরর বিকাশ ঘটল এবং ব্যবসা বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় এবং পরিপূর্ণ রাজস্ব
আদায়ে অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটতে থাকে ফলে
বাজারেরও বিকাশ ঘটে। অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে রাজনৈতিকভাবে তুলনামূলক শান্ত
বাংলায় ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধির আকর্ষণে ভারত, এশিয়া এমন কি ইওরোপ থেকেও বণিকেরা
এলাকার টানে আসতে থাকে। ১৭৫৬-৫৭ সালে বাংলায় আসা মুসাফির গ্রাউস লিখছেন, foreign and domestic trade of Bengal are very
considerable; as may appear from
the great number of Persians, Abyssinians, Arabs, Chinese, Gujarats, Malabarians, Turks, Moors,
Jews, Georgians, Armenians and
merchants from "all parts of Asia'who resort there' (Grose, East Indies, vol.II,
p.234.)। এই ধরণের
বর্ণনা আমরা সেই সময়ের নানান লেখালিখিতে পাই(S.C. Hill, Bengal in 1756-57, vol.Ill, p.390;
Orme, Military Transactions,
vol.II p.4)।
সত্য সত্যই
সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদের বাংলার সমৃদ্ধি প্রায় উপকথাসুলভ এবং এলাকার
পণ্যের কিফায়তি দাম বিভিন্ন বৈদেশিক মুসাফিরের লেখাপত্রে হামেশাই পাওয়া যায়।
রিয়াজের লেখক বাংলাকে যেমন বলছেন জিন্নাতুলবিলাদ, স্বর্গের মত প্রদেশ, তেমনি
আওরঙ্গজেব বাংলা সম্বন্ধে বলছেন রাষ্ট্রগুলোর স্বর্গ (Riyaz, p.4. )। কোন মুঘল ফরমান
বা পরওয়ানা লেখা হত না বাংলাকে ভারতের স্বর্গ সম্বোধন না করে –অষ্টাদশ শতকের
পাঁচের দশকে কাশিমবাজারের ফরাসি কুঠির প্রধান কুঠিয়াল জাঁ ল বাংলাকে বলছেন পার
এক্সেলেন্স বা সর্বোতকৃষ্ট(Hill,
Bengalin 1756-57, vol.III, p.160)। ১৬৬০ সালে ফরাসী মুসাফির বার্নিয়ে লিখছেন, the rich exuberance of the country ... has
given rise to a
proverb ... that the Kingdom
of Bengal has a hundred gates open for entrance, but not one for departure'.( Bernier, Travels, p.440.)। বাংলার প্রাকৃতিক
পণ্যের বৈচিত্রের উতকর্ষ যেমন বিপুল ছিল তেমনি প্রচুর পাওয়া যেত। ভারতের অন্যান্য
এলাকার মত বাংলাও ছিল মূলত কৃষি অর্থনীতি। কিন্তু কৃষি অর্থনীতির বৃহত্তর কাঠামোর
মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও সে কৃষি উতপাদনগুলিকে বিপুল দক্ষতায় প্রক্রিয়াকরণ করিয়ে বাজার
ভিত্তিক পণ্যায়ন ঘটিয়ে ফেলেছিল। একই সংগে যে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যে বিভিন্ন এলাকার
সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে।
বাংলার শিল্পের
সম্বন্ধে বার্নিয়ে লিখছেন there
is in Bengale such a quality of cotton and silk that the Kingdom may be called the common
storehouse for these two kinds
of merchandise, not of Hindoustan or of the Empire of the Great Mogul only, but of all the
neighbouring Kingdoms, and even
Europe'(Ibid.,
p.439.)। কারিগরিতেও
বাংলা দক্ষতার শৃঙ্গে উঠে সবার ঈর্ষার কারণ হয়। Pyrard de Laval লিখছেন, The inhabitants, both men and women, are wondrously adroit in all such manufactures such as of cotton,
cloth. And Silks and in needlework such as embroideries which are worked
so skillfully down to the smallest stitches that nothing prettier is to be seen
anywhere (Pyrard
de Laval, Voyages, vol.I, p.329)। এর ফলে উপনিবেশপূর্ব সময়ে the balance of trade was against all nations in favour of
Beil.gal; arid it was the sink ·where gold and silver disappeared withotit'. the least prospect
of return (Dow, Hindostan, vol. I, p.ciii)।
১৭৩০ পর্যন্ত
হুগলি ছিল বাংলার অন্যতম হুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, বাংলার অর্থনীতির রাজধানী। মধ্য
১৭৩০এর পরে কলকাতার উত্থানে হুগলির চাকচিক্য ম্লান হয়ে যেতে শুরু করে। ১৬৩২ সালের
পরে সাম্রাজ্যের বন্দর হিসেবে সাতগাঁয়ের পতনের পরে হুগলির উত্থান হতে থাকে গোটা
সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদ পর্যন্ত(সাতগাঁর পতন এবং হুগলির উত্থান বিষয়ে
জানতে মত S. Chaudhury,
'Rise and Declir'ie' of Hughli', BPP, Jan.-June 1967, pp. 33-67 লিখিত প্রবন্ধ
দেখতে পারেন)।
No comments:
Post a Comment