১৭৩০এর বাংলার
সরকার সমঝোতার সরকার বলে যে একটা তত্ত্ব আছে সেটা পুরপুরি ঠিক নয় তবে এর থেকে একটা
ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে রাজ্যে সে সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার
প্রক্রিয়ায় জমিদার-মনসবদার-ব্যাঙ্কার গোষ্ঠীর ক্ষমতা বেশ বেড়েছে। তার ফলে
সুজাউদ্দিনকে এই গোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত করে একটি পরামর্শদাতা সভা বানাতে হচ্ছে (Calkins, 'Ruling Group', p. 805.)। বাংলার সঙ্গে
সম্পর্কহীন এবং সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা মনসবদার-জমিদার গোষ্ঠীরও না হয়েও
আলিবর্দি আর হাজি আহমদ, দুজনের উচ্চপদে বৃত হলেন সুজাউদ্দিন ক্ষমতায় বসতে না
বসতেই। আমোদআহ্লাদে ভেসে থাকতে ভালবাসা সুজাউদ্দিন নিজেকে দৈনন্দিনের রাজকর্ম ছেড়ে
সরিয়ে রাখতেই পছন্দ করতেন বলেই তিনি দৈন্দিনের কাজ দেখাশোনা করতে এই পরামমর্শদাতা
গোষ্ঠী গঠন করেছিলেন। এরা সরকারের প্রশাসন নিজের হাতে নিল(Riyaz, p.292-93.)। তবে পার্সি ঐতিহাসিকের মতে সুজাউদ্দিনের শাসনকাল(১৭২৭-১৭৩৯)
মোটামুটি স্থায়িত্ব আর বিকাশের সময়। রিয়াজের লেখক বলছেন, Constantly animated by a scrupulous
regard for justice,
and always inspired by fear of God, he uprooted from his realm the foundations of oppression
and tyranny(Ibid.,
pp. 290-91)। গোলাম হুসেইন খান বলছেন, সুজাউদ্দিনের রাজত্বে বাংলা, came to enjoy so much prosperity, as to
exhibit everywhere an air of plenty
and happiness'(Sier,
vol.I, p.280)। জন শোরও প্রায় ৫০
বছর পরে সুজাউদ্দিনের সময় নিয়ে লিখতে গিয়ে বলছেন, তার সময়তা ছিল moderate, firm anp vigilant, and
seems the only part of
the whole period (from Murshid Quli to Mir Qasim), with an exception of the last
years of Alivardi Khan, in which
the conduct of thG government was in any respect calculated for' the improvement of
the country'(Minute
of Sir John Shore, W.K. Firminger (ed.), Fifth Report, vol.II, p.9)।
সুজাউদ্দিনের
স্থলাভিষিক্ত হলেন সুজাউদ্দিন কিন্তু খুব তাড়াতড়ি আলিবর্দি তাকে গিরিয়ার যুদ্ধে
পরাস্ত করে ষোল বছরের জন্যে(১৭৪০-১৭৫৬) বাংলার নবাব হলেন। তার সময় নিয়ে উচ্ছসিত
ঐতিহাসিক গুলাম হুসেন বললেন, আলিবর্দির সময় বাংলা সব ক্ষেত্রে এতই স্বচ্ছলতার মুখ
দেখেছিল যে তার সাম্রাজ্যে প্রতিটা রায়ত সুখী ছিল এবং তাদের সক্কলের জন্যে তিনি
জনকল্যাণকর নানান প্রকল্প চালু করেছিলেন। তার সময়ে রায়তেরা বিশেষ করে চাষীরা
ব্যাপক নিরাপত্তা বোধ করত(Sier,
quoted in K.K.
Datta, Alivardi, p.140.)। কিন্তু তার শাসনের প্রথম কয়েক বছর বাংলার প্রশাসন ব্যাপক চাপে পড়ে যায় বিশেষ
করে মারাঠাদের আর আফগানদের ঝটিকা বাংলা আক্রমনের(১৭৪২-৫১) জন্যে। ফলে তিনি
প্রজাদের জন্যে জনকল্যাণকর কাজ করার খুব বেশি সময় পান নি। ১৭৫১ সালের মে-জুন মাসে
মারাঠাদের বার্ষিক ১কোটি ২ লক্ষ টাকা চৌথ দেওয়ার প্রতিশ্রুত হয়ে চুক্তি করলেও
বুঝলেন যে দীর্ঘকাল ধরে বাংলার গায়ে যে যুদ্ধের ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেগুলি সারাতে
বেশ কিছু জনকল্যানকর প্রকল্প নেওয়া দরকার। বিচার বুদ্ধি আর প্রজ্ঞান দিয়ে সময়কে
বিশ্লেষণ করে তার প্রজাদের নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির কাজে নিজেকে নিয়োগ করলেন এবং
সেই কাজেই তিনি তার বাকি জীবন উতসর্গ করে দিয়েছিলেন(Calendar of Persian Correspondence, vol. II, pp.191, 197, quoted in K.K. Datta, Alivardi, p.140)। মারাঠাদের হাতে
সম্পূর্ণ বা আংশিক নষ্ট হয়ে যাওয়া শহর আর গ্রামগুলি নতুন করে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা
গ্রহণ করলেন।
No comments:
Post a Comment