তিনি ছিলেন প্রাজ্ঞতম জনকল্যাণমুখী
শাসক যিনি গ্রামীনদের বিকাশ এবং চাষবাসের কাজে সহায়তা করার জন্যে বিপুল সাহায্য
করেন। আলিবর্দি মারাঠা হ্যাঙ্গাম থেকে বাংলার ক্ষত সারাতে এবং এক নির্দিষ্ট কাল
শান্তি সমৃদ্ধি বজায় রাখতে কি কি করেছিলেন, তার বর্ণনা আমরা পাচ্ছি করম আলির
বর্ণনায়, কিভাবে তার রাজত্বের শেষ কালে রাজধানী শহর মুর্শিদাবাদের বিস্তৃতি ঘটছে
এবং বিকাশলাভ করছে(Muzaffarnama,
quoted in K.K.
Datta, Alivardi, p.140.)। তারপরের নবাব সিরাজদ্দৌল্লা মাত্র ষোল মাসের জন্য নবাবি করার সুযোগ পান এবং
১৭৫৭র বর্ষায় বাংলার সার্বভৌম নিজামতের পতন ঘটে পলাশি যুদ্ধে এবং তারপরেই ব্রিটিশ
আধিপত্যের সূচনা ঘটে বাংলাজুড়ে।
অষ্টাদশ শতকের
প্রথম পাদের বাংলার ইতিহাসের আরেকটা অস্বস্তিকর চিত্র হল আবওয়াব আদায়। আবওয়াব হল
রাজস্বের ওপরে আরও কিছু শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় অথবা রাজস্বের ওপরে আরেকতা কর
আরোপ। রাজস্ব আদায় হত তুমার(তোমার) জমা বা সাধারণ জরিপ অনুযায়ী আর আবওয়াব হল
বরাদ্দ রাজস্বের ওপর নির্দিষ্ট হারে অতিরিক্ত রাজস্ব। মুর্শিদকুলির আমলে ১৭২৮ সাল
পর্যন্ত তুমার জমার পরিমান ছিল ১৪২৪৫৫৬১ টাকা(Minute of John Shore, in Firminger (ed.), Fifth
Report, vol.II, p.7.) সুজাউদ্দিন এর ওপরে ১৯১৪০৯৫ টাকা আবওয়াব আরোপ করেন
মুর্শিদকুলি খানের প্রথা অনুসরণ করে(Ibid.,
vol.II, pp.209-12. মুর্শিদকুলির আবওয়াব ২৫৮৮৫৭ টাকার বেশি বাড়ে নি Sinha, Economic History of Bengal,
vol.lr, p.5)। প্রত্যেক জমিদারের দমিদারির জরিপ অনুযায়ী তাদের ওপর অতিরিক্ত আবওয়াব আরোপ করা
হত এবং এই পরিমান অতিরিক্ত রাজস্ব হিসেবে রায়তদের থেকে আদায় করে নেওয়ার অধিকার
দেওয়া হত জমিদারদের। আলিবর্দি অতিরিক্ত ২২২৫৫৪ টাকা আবওয়াব তোলেন। বাংলার অর্থনীতিতে এই আবওয়াব
জারির ফল কি ফলেছিল সেটা আজ মাপা খুব কঠিন, কিন্তু যারা বলছেন এই আবওয়াব জারির ফলে
বাংলার অর্থনীতি অধঃপাতে যায়, পণ্যের দাম বাড়ে, উৎপাদন কমে, তাদের যুক্তির কোন
সারবত্তা নেই(Brijen K.
Gupta, Sirajuddaulla'h, p.33. এবং দাম বৃদ্ধির প্রশ্নে দশম অধ্যায়
দেখুন)। জন শোর বলছেন এই আবওয়াব জারির প্রভাব হয়ত সমাজে খুব বেশি পড়ে নি it may be that, due to the growth of commerce and,
increased imports of specie, the resources of . the country were at that period
adequate to the measure of exactions' (Minute of John Shore, in _Firminger (ed.), Fifth
Report, vol.II, pp. 11-12.)। এই সময়ের একটা
ক্ষতিপূরণীয় চরিত্র ছিল, যারা রাজস্ব আদায় করত তাদের অধিকার ছিল গরীব চাষীদের
তাকাভি নামক সহজ সুদে চাষের যন্ত্রপাতি কেনার ঋণ দেওয়ার প্রকরণ। সেই প্রথা তার
পরের সব ক’জন নবাব অনুসরণ করেছেন(Abdul.
Karim, Murshid Quli, p.90; Salimullah, Tarikh-i-Bangala, p.45; J.N. Sarkar (ed.), History
of Bengal, vol.II, p.4.12)।
No comments:
Post a Comment