পণ্য জোগাড় করার জন্যে ইওরোপিয়
কোম্পানিকে এই বণিকদের অগ্রিম বা দাদন দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করতে হত। দাদনি বণিকেরা
সেই অগ্রিম তাঁতি, কারিগর এবং অন্যান্য প্রাথমিক উতপাদককে অগ্রিম দিতেন বিভিন্ন
উৎপাদন কেন্দ্র বা আড়ঙে ছড়িয়ে থাকা তাদের গোমস্তা মার্ফত, যাতে কোম্পানি সঠিক সময়ে
নির্দিষ্ট গুণমানের পণ্য সঠিক কেন্দ্রে পেতে পারে। তবে জাহাজ ছাড়ার আশেপাশের
মরশুমে কোম্পানি নগদ অর্থের বিনিময়ে বাজার থেকেও পণ্য কিনত, কিন্তু তার জন্যে
তাদের অনেক বেশি অর্থ্য ব্যয় করতে হত। ফলে রপ্তানির জন্যে তারা পণ্যের দাম ন্যুনতম
রাখতে যতবেশি সম্ভব বিনিয়োগ দাদনি বণিক মার্ফর কারিগরদের কাছে পৌঁছে দিত।
দালালি ব্যবস্থাপনা
বাংলায় ব্যবসা
করার জন্যে কোম্পানির বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে দালাল নিযুক্ত করা একটা
অত্যাবশ্যকীয় কাজ ছিল। ভারতে কাজ করা ইওরোপিয়দের ব্যবসার সঙ্গে জুড়ে থাকা দালালদের
উল্লেখ সপ্তদশ শতকের শেষের দিকের সময়ে আমরা আখছার পেয়ে থাকি ফ্রেয়ার বা অভিংক্টনের
মত বিভিন্ন মুসাফিরের লেখায়(S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organ~zation in
Bengal, p.
144; John Fryer,.A New Account, p. 217; J. Ovington, Voyage to Surat, p. 401)। কলকাতা, কাশিমবাজার এবং ঢাকা কুঠিতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি দালালদের মার্ফত দাদনি বণিকদের সঙ্গে অগ্রিম দেওয়ার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হত। দালালেরা
কোম্পানির পক্ষে কাজ করে দাম ঠিক করত এবং পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করত এবং তারা
নিজস্ব উদ্যমে কুঠিতে পণ্য বয়ে এনে সেই পণ্যগুলোর বাছাই করে দিত সঠিক গুণমানের
নিরিখে। শুধু
বাংলা সুবাই নয়, সুরাটেও দালালদের অসামান্য আধিপত্য ছিল, তবে কলকাতায় সুরাটের মত
দাদলদের কাঞ্চনমুদ্রার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হতে হত না(শোনা যায় বিঠলদাস পারেখকে
সুরাটে কোম্পানির দালাল হতে ১ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছিল। আরেকজন দালাল রুস্তমজী
মাকেনজীকে কোম্পানিকে উপঢৌকন হিসেবে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। সূত্র OC, 7222, para
48, vol. 58, 14 Sept. 1700. ihe Bengal factors
reported in
,I 703 tp.at 'it
·was never the custom here in Bengal for
brokers to buy their places', OC, 8110, v9l. 65, 25 Jan. 1703)। এই তথ্যটাও খুব
গুরুত্বপূর্ন, এই দালালদের যদিও ইওরোপিয় কোম্পানিরা তাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির কাজে
লাগাত, কিন্তু দালালেরা নিজেদের ব্যবসা, সম্পদ আর আত্মীয় এবং গোমস্তা বাহিনীর
নির্ভর করে সামাজিক সম্মানের সঙ্গে নিজেদের স্বাধীন ব্যবসা চালাত। বহুসময় কোম্পানির
খাতা থেকে প্রতীয়মান হয় যে দালালদের কাজ থেকে বরখাস্ত করলেও তারা আর্থিকভাবে
ভেঙ্গে পড়ত না।
কলকাতার দালালেরা
কলকাতা আর কাশিমবাজারে যে দুটি বড়
গুরুত্বপূর্ন পরিবার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে বিপুল পরিমান দালাল দল
সরবরাহ করেছিল তারা হল শেঠ এবং কাটমা পরিবার। কলকাতার বিনিয়োগ যেহেতু মূলত নির্ভর
করত বাঙালি তাঁতিদের তৈরি সুতি আর রেশম বস্ত্রের খরিদদারির ওপর, তাই এই ব্যবসায়
পকড়ওয়ালা শেঠেরাই ছিল ব্রিটিশদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। শেঠেরা নিজেরাও
তাঁতি ছিলেন। বাংলায় ব্রিটিশেরা আসার অনেক আগে থেকেই তাঁত আর রেশম কাপড় উৎপাদন এবং
ব্যবসায় শেঠ এবং বসাকেরা যৌথভাবে বাণিজ্যে সম্পদে এবং সামাজিক গুরুত্বে প্রজন্মের
পর প্রজন্মে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বণিক-উতপাদক ছিলেন এবং তারা ইওরোপিয়দের সঙ্গে ব্যবসা
করে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment