Sunday, January 28, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা- হেরিটেজপ্রিয় ইংরেজ, কিন্তু কেনো - রফিক আখন্দ

(আমাদের ব্রিটিশ হেরিটেজ-প্রিয়তা বিষয়ক লেখার উত্তরে শেকড়ের বন্ধু Rafiq Akhand লিখছেন হৃদয় খোঁড়া বেদনার ভাষ্য। প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলার ঐতিহ্যন আলোচনাটি মুঘল আমল থেকে পিছিয়ে সুলতানি আমলে নিয়ে যাওয়া হোক। অবশ্যই সাধু প্রস্তাব। যে সময় বাংলা বাঙ্গালা নাম পেল, সেই আমলের কৃতি এবং কৃতি ধ্বংস নিয়ে আমাদের সক্কলে ঔৎসুক্য আছে। আপনার কলম চিরজীবি হোক। মঙ্গলময় আপনার হৃদয়ে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছবার আকণ্ঠ আকুতি ভরে দিন।
নীচে দাদার লেখাটি পড়ুন।)


উপরের পোস্টে নিয়ে এলেন আবারো অভিনব আরেক অন্ধকারের বস্ত্র হরণ| উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সেই বালকবয়সে যে জিজ্ঞাসা, বেদনা কিছুটা তাড়িত করতো, এই মাঝ বয়সে ফের উস্কে দিলেন বহু মাত্রায় | হ্যাঁ, এই নবাগ্নিতে শূচি হতে চাই অজ্ঞানতার পাপ থেকে | মিথ্যাবাদী, কপট, ভণ্ড, লুটেরা, তস্কর বেনিয়া বৃটিশ ও তাদের সহযোগীদের কর্তৃক উপমহাদেশের ঐতিহ্য, প্রত্ন লুণ্ঠনের বিষয়টি নিয়ে এসেছেন |

কৃতজ্ঞতা জানিয়েও বিনীত আবেদন রাখছিঃ এ বিষয়ে দীর্ঘ বিস্তৃত স্থান ও সময়কেন্দ্রিক কথা হোক | তবে প্রথমেই দিল্লীতে মোগল ঐতিহ্যে দৃষ্টি দিলে সময়ের বিচার আর বাংলাভারতে বৃটিশ-ইউরোপীয় লুণ্ঠন, ধ্বংসকরণের কুকর্মের খতিয়ান সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবে |

তাই অনুরোধ করিঃ সময়কালটা বাংলার সুলতানী শাসন ঐতিহ্য থেকে শুরু করা হোক | কেমন করে গৌড়ের সুলতানী বহু স্থাপত্য ঐতিহ্যকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হলো ? কেমন করে সেখানকার সুলতানদের বাসবভন, দুর্গ, নগর রক্ষা প্রাচীর, সুফিদরবেশদের কবর, পাকা সেতু ধ্বংস করা হলো ? সেসব ধ্বংস করে সেগুলোর কোন কোনটা থেকে প্রাপ্ত সোনা,দানা,গহনা, মুদ্রা, পুঁথিপুস্তকাদি লুটে নেওয়া হলো ? লুটে নেওয়া সেই বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও ঐতিহ্য দিয়ে পূর্ণ করা হলো বৃটিশ লাইব্রেরি, মিউজিয়াম | বাংলার স্বর্ণালী সমৃদ্ধির যুগ, সুলতানী রাজধানী গৌড়ের ইট, কাঠ, পাথর শত শত নৌকা ভর্তি করে কলকাতা, হুগলী, চুচূঁড়ার ইংরেজ দুর্গ তৈরি করা হলো | এমন কি সুলতানী বাংলার সবচেয়ে উজ্জ্বল শাসক আলাউদ্দিন হোসাইন শাহর সমাধিসৌধটিতে হীরেজহরত থাকতে পারে, কেবলমাত্র এই লোভী সন্দেহে গৌড়ের বাংলাকোট থেকে চিরতরে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো | আদিনা মসজিদের গ্রানাইট পাথরের কারুকার্যময় থাম (যা এই বাংলার গ্রামীণ নিপুণ কারিগররাই তৈরি করেছিলেন), শত শত দৃষ্টিনন্দন ফুলেল নকশা, গৌড়ের কিয়দংশ, বর্তমান বাংলাদেশের সোনা মসজিদের প্রস্তর মিহরাব, ফ্লোরাল মটিফ মসজিদগাত্র থেকে উপড়ে নিয়ে ইংল্যান্ডে চালান করা হয়েছে | কার্জনামলে প্রত্নজরিপের নামেও এসব অপকর্ম চলেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে | বলুন, এসব কথাও বলুন |

মাত্র বছর চার আগে, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের একটি সেমিনারে যোগদানের সৌভাগ্য হয়েছিলো | বাংলার হেরিটেজের উপর প্রবন্ধ পাঠ করছিলেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাজ্ঞজন, জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ | প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তাঁর কণ্ঠে ঝরে পড়ছিল প্রচ্ছন্ন ক্ষোভ, কষ্ট | কারণটা ছিলোঃ তৎকর্তৃক ফ্রান্সের ল্যুভ, গিমে জাদুঘর দর্শনের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা | তিনি সেগুলোতে প্রত্যক্ষ করেন বাংলা থেকে লুণ্ঠিত অজস্র সুবর্ণ ও রজত মুদ্রা, শিলালেখ, নানা ঐতিহ্যিক নিদর্শন | সুফিয়া আপার কণ্ঠ খানিকটা ভারি হয়ে আসছিলো অক্ষমতার কষ্টে |

তাঁর কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাসঃ আমার গৌরবের সম্পদ আজ অন্যের গোলায় !

No comments: