চন্দ্র ভান পাঞ্জাবের এক সাধারণ ঘরের সন্তান।পাঞ্জাবে করণিক হিসেবে কাজ শুরু করে, আকবরএর রাজত্বের শেষ সময়, জাহাঙ্গির হয়ে শাহজাহানএর সময় মুঘল দরবারে উচ্চপদে কাজ করেছেন।আওরঙ্গজেবএর রাজত্বের প্রথম কিছু বছর চিঠিপত্রে নবীন সম্রাটের সঙ্গে চন্দ্র ভানের ভাবনার আদানপ্রদান হয়।
পারসি ভাষায় লিখে গিয়েছেন দরবারি স্মৃতিকথা চার চমন(চার বাগান) এবং বিভিন্ন নামে লেখা ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে, বিশেষ করে মুনসাতইব্রাহ্মণএ। চন্দ্র ভানের পদ্যের লিখন শৈলী(ইনশা) কয়েক প্রজন্মের লেখকের আদর্শ ছিল।অষ্টাদশ শতকের শেষেও ১৭৯৫ সালে ফ্রান্সিস গ্লাডউইন রচিত পারসি পাঠ্যপুস্তক দ্য পারসিয়ান মুন্সিতে চার চমন থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। এই বইটি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি এবং প্রাচ্যবিদদের অবশ্য পাঠ্য ছিল।
চার চমন এবং মুনসাতইব্রাহ্মণএ চন্দ্র ভান বিশদে ইন্দো-পারসি প্রশাসনিক দায় দায়িত্বের চরিত্র ইত্যাদি বিষয়ে শুধু লেখেন নি, তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শিল্প সৃজনের সামাজিক মূল্য, জন জীবনে সাহিত্য, অতীন্দ্রিয়বাদের গুরুত্ব, জনজীবনকে আরও ভাল ভাবে সেবা দেওয়ার জন্য মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনে কি কি পরিবর্তন আনা দরকার সে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও যথাযোগ্য মন্তব্য করে গিয়েছেন।
মুন্সি, উজির এবং অন্যান্য প্রশাসক, তাঁদের কৃষ্টিগত ভূমিকা এবং নৈতিক দায় দায়িত্ব জানতে গভীর ইন্দো-পারসি কবিতা এবং নসিহত-নামা আঙ্গিকের পরামর্শ সাহিত্য জাতীয় যে সব পুঁথি অনুসরণ করতেন, চার চমন সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল।
সম্রাটের ব্যক্তিগত সচিব এবং দিনপঞ্জী লেখক(ওয়াকিয়ানবিশ) থাকার দরুণ, মুঘল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে তিনি রাজ পরিবারের সদস্যদের গৃহস্থি, দরবার এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম ইত্যাদি নিজের চোখে দেখেন। বিভিন্ন সম্রাটের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে চন্দ্র ভানের দরবারি রাজনীতি, বিভিন্ন মুঘল অভিজাতর সঙ্গে তার সম্পর্ক, বিভিন্ন দৌত্য এবং সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়ার যে বিপুল অভিজ্ঞতাি পারসিক ভাষায় অসামান্য আঙ্গিকে লিখে গিয়েছেন। চার চমন পড়লে আন্দাজ করা যায় মুন্সি বা উজির যেমন রাজা টোডরমল্ল, আফজল খাঁ শিরাজি, সাদ আল্লা খাঁ এবং রাজা রঘুনাথ হতে গেলে কি ধরণের কৃষ্টিগত এবং প্রশাসনিক দক্ষতার মিশেল থাকা চাই।
তিনি বুঝিয়ে গিয়েছেন প্রশাসনিক সাফল্য শুধু সামরিক কর্তৃত্বে(ইমারত) তৈরি হয় না, তার সঙ্গে জুড়তে হয় প্রশাসনিক দক্ষতা(উজিরত) এবং গভীর অতীন্দ্রিয়বাদ এবং সাহিত্যিক সংবেদনশীলতা(মারিফত) এবং স্বস্বার্থের ওপরে উঠে গভীরভাবে জনকল্যান কর্ম বিষয়ে নজরদারি।
চন্দ্র ভান বিষয়ে লিখছি এটা বোঝাতে যে, মানুষটা সারাজীবন নিজের নামের পিছনে ব্রাহ্মণএর মত সামাজিক পদমর্যাদা বোঝানোর উপসর্গ নিয়ে কাটিয়েছেন মুঘল দরবারের উচ্চপদে ধর্ম পরিবর্তিত না হয়েই। অথচ মুঘল সম্রাটেরা ঔপনিবেশিক ঐতিহাসিকদের কলম পেষায় নিন্দনীয় হয়ে রয়েছেন ধর্ম পরিবর্তনকারী হিসেবে।
উপনিবেশ বিরোধী চর্চায় সাহিত্যিক প্রশাসক চন্দ্র ভানের গুরুত্ব ইতিহাস পুনর্লিখনে।
(রাজীব কিনরার রাইটিং সেলফ, রাইটিং এম্পায়ার, চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণ এন্ড দ্য কালচারাল ওয়ার্ল্ড অব দ্য ইন্দো-পারসিয়ান স্টেট সেক্রেটারি অনুসরণে)
No comments:
Post a Comment