আমরা আগে দেখেছি চন্দ্র ভানের সঙ্গে আবদ অল করিম মামুরির সম্পর্ক ছিল। আর ছিল ইনায়ত খাঁ ইনায়ত আল্লা, লাহোরের সুবাদারের সঙ্গে। চন্দ্র ভান লিখছেন, ইনায়ত খাঁর সঙ্গে পরিচিত হণ তাঁর বন্ধু মৌলানা আবদ অল করম মার্ফত। ইনায়ত খাঁকে তিনি গজল উতসর্গ করলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক বেশি দিন থাকে নি। হয়ত ১৬১৮ সালে অত্যধিক মদ্য আর অন্যান্য নেশ দ্রব্য সেবনের জন্য ইনায়ত খাঁয়ের মৃত্যু হয়। আমাদের মনে হয় এই সময়ের আশেপাশের চন্দ্র ভান মুঘল দরবারে প্রবেশ করেন।
খুব কম সময়ের সম্পর্ক হলেও মৃত্যুর আগে ইনায়ত খাঁ চন্দ্র ভানকে বৃহত্তর রাজ পরিবারের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, পাদসাহের ডান হাত(য়ামিন অল দৌলা) আবু অল হাসান আসফ খাঁয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে যান। হয়ত ইনায়েত খাঁএর(যার প্রশস্তিতে চন্দ্র ভান লিখেছেন, দর রাস্তি ওয়া দুরুস্তি আদিল ওয়া নজর নাদাস্ত) কোন সময়ে মনে হয়ে থাকবে চন্দ্র ভানএর প্রশাসনিক প্রতিভার বিকাশে আরও বৃহত্তর মঞ্চ প্রয়োজন। চন্দ্র ভানের আক্ষেপ সেটি দেখার জন্য তিনি আর রইলেন না - আজ ইত্তিফকত-ই রোজগার ইন মানি দস্ত বা-হম নাদাদ। তিনি লিখছেন আসফ খাঁ মার্ফত তিনি যেহেতু দরবারে প্রবেশ করেছেন, তাই তিনি নিজেকে আসফ খানেরও কর্মচারী মনে করেন।
আসফ খাঁ যেহেতু সাম্রাজ্ঞী নুর জাহানের দাদা, জাহাঙ্গীরের শালা, আর্যমন্দ বানু বেগম ওরফে তাজ মহল খ্যাত মুমতাজ মহলের বাবা এবং শাহ জাহানের শ্বশুর, চন্দ্র ভান রাজ দরবারে নানান ধরণের কৃষ্টি মানুষের সঙ্গে মেলামেশার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন এবং তিনজন সম্রাটের সময় নিজের চোখে দেখেছেন। ১৬২৮ সালে শাহ জাহান ক্ষমতায় এলে বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে ওঠেন আসফ খাঁ, সম্রাট আর সাম্রাজ্ঞীর মধ্যে ক্ষমতার টানা পোড়েনের মধ্যস্থ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ উকিল(পরামর্শ দাতা) হিসেবে কাজ করতে থাকেন। তাঁর সময়ে আরেক অভিজাত ইরাদত খাঁ উজির(প্রধানমন্ত্রী) ছিলেন।
মনে রাখতে হবে আসফ খাঁয়ের আরও একজন অমুসলমান কায়স্থ কর্মচারী রায় মুকুন্দ দাস ছিলেন। যিনি বরাবরই আসফ খানের পক্ষে ছিলেন(ওয়া রায় মুকুন্দ দাস কায়স্থ হমদস্ত ওয়া হাম জামান(জবান?)ই আসফ খাঁ বুদ)। শেখ ফরিদ ভক্করির জাখিরাত অল খাওয়ানিন সূত্র জানা যাচ্ছে মুকুন্দ দাস আসফ খানের কর্মী হিসেবে বিপুল ঐশ্বর্য আর সম্মানের মালিক হন এবং ১৬৪১এ আসফ খাঁয়ের মৃত্যুর পরও শাহ জাহানের প্রশাসনে কাজ করতে থাকেন - প্রথমে কারখানার গুদাম(দিওয়ানইবুয়ুতাত)এর প্রধান, তার পরে কর্মচারীদের বেতনের(সাহিবইতন) হিসাব রক্ষক রূপে।
No comments:
Post a Comment