আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞ বা বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের প্রখ্যাতি তাদের জ্ঞানচর্চায় নয় রাজনেতাদের কাছাকাছি থাকার সুবাদে। ঠিক সেই জন্যই কেন একজন অবসরপ্রাপ্ত খগোলবিদ(astrophysicist যতদূর সম্ভব জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর) মাধ্যমিক স্তরের অঙ্কের বই সম্পাদনার দায়িত্ব পাবেন সে প্রশ্ন আজও কেউ সুশীল 'বৈজ্ঞানিক' সমাজের মানুষেরা তোলে নি। বিনা প্রশ্নে সব কিছুই মেনে নেওয়ার 'অশিক্ষার পরিবেশ illiterate attitude' আমাদের সমাজকে অদক্ষতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ক্রমশঃ। সমাজে ঐতিহাসিকদের বাড়বাড়ন্ত থাকলেও একজনও বিজ্ঞানের দর্শন আর বিজ্ঞানের ইতিহাসের ঐতিহাসিকের দ্যাখা মেলে না।
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা মূলত পশ্চিমি জ্ঞানের দালাল।ফলে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা যে কোন পশ্চিমি সূত্র উল্লেখ করে যে কেউ বিশেষজ্ঞর মর্যাদা অর্জন করে ফেলে। আমাদের দেশ তাই পশ্চিম-জ্ঞান কৃষ্টির(soft power) লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠছে। এই জ্ঞান-দালালদের ধারণাই থাকে না যে পশ্চিমও নিজেদে্র গৌরব প্রচারে চরম মিথ্যা ও জাতিবাদী ইতিহাস প্রচার করে।
এর একটা বড় উদাহরণ এনসিআরটির নবম শ্রেণীর অঙ্কের বই। সেখানে গ্রিক অঙ্কবিদ, পিথাগোরাস, ইওক্লিডদের ছবি ছাপা হয়েছে। কিন্তু সব গ্রিক অঙ্কবিদ কেন এক চেহারার হবে? রাস্তার ধারে আমরা যেমন দেবদেবীর ছবি দেখি এই ছবিগুলোও তাই - শিল্পীর কল্পনা।অঙ্ক বইএর ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সূত্র নয় শিল্পীর জাতিবাদী কল্পনাই স্থান করে নিয়েছে। ইউক্লিড আলেকজান্দ্রিয়া, আফ্রিকার অধিবাসী তারা কি করে ককেসাসিয় চেহারার হয়? আমরা আরবি কিফতি(Qifti) সূত্রে জানতে পারছে ইওক্লিডের গ্রিসিয় জাতিয়তা এবং তিনি টায়রেতে জন্মান, সেখানে অধিবাসীদের আলেকজান্ডার দাস করে রেখেছিলেন।
যেমন ভারতে আর্যভটকে পৈতে পড়া ব্রাহ্মণ বলে দেওয়া হয়েছিল তেমনি ইউক্লিডকেও ককেসাসিয় বলে দেওয়া হল। লক্ষ লক্ষ মাধ্যমিকস্তরের ছাত্রছাত্রীরা জানলেন পড়াশোনা মানেই ব্রাহ্মণ আর সাদা ইওরোপিয়।
জ্ঞানের ইতিহাসকে ইওরোপিয়রা সাদা গ্রিসের ইতিহাস হিসেবে দেখিয়ে আসছে ১১২৫এর ধর্মযুদ্ধের পর থেকে। সে সময় বিপুল আরবি টোলেডোর গ্রন্থাগারের জ্ঞানচর্চার বই ল্যাটিনে অনুদিত হল। চার্চ স্বীকার করতে চায় না যে তারা ইসলাম সূত্রে জ্ঞানার্জন করছে। তারা তাই গ্রিসের দিকে মুখ ফেরাল। সেটা হল আরবি সূত্র ধরে, যেটা আরব বহুকাল ধরে সংরক্ষিত করেছিল। শুধু গ্রিসিয় জ্ঞানচর্চা নয় বাগদাদ বা আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারসমূহে জ্ঞান আর্জিত হয়েছিল সারা বিশ্ব থেকেই।
কিন্তু ইওরোপ গ্রিসের নামই রাখল আর সব ছেঁটে ফেলে। পরের দিকে চার্চ বিরোধী থেরন, হাইপাশিয়া বা প্রোক্লাসের জ্ঞানচর্চার ধারা উড়িয়ে দিয়ে তাদের শুধু জ্ঞানের ধারক দাগিয়ে দেওয়া হল।
পশ্চিমি জ্ঞানচর্চা শিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের তৈরি জ্ঞানচর্চায় প্রবেশের আগে একবার ঝালিয়ে নেবেন আপনি জাতিবাদী জ্ঞানচর্চা করছেন না তো!
(চন্দ্রকান্ত রাজুর Teaching racist history অবলম্বনে)
No comments:
Post a Comment